অভাগার জন্ম অভাবের সময়। অভাবের সময় জন্ম হয়েছে বলেই তাঁর নাম রাখা হয় অভাগা। অভাগা মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার পরপর দেশে চরম অভাব দেখা দেয়। এরপর থেকে অভাগা অভাবের মাঝেই বড় হয়ে উঠে। অভাগার জন্ম তারিখ মায়ের মুখে শোনা। মা বলতেন, ‘তোর জন্মটাও ছিল শনিবার। লোকে বলে এই বারটি নাকি শনিতে ঘেরা। শনিবারে জন্ম নিলে নাকি কপালে শনি লেগেই থাকে।’ মায়ের মুখে এসব কথা শুনে অভাগা মন খারাপ করে বাড়ি থেকে মাঠে চলে যেত। ভাবতো! চিন্তা করতো নিজের কপালে নিজেই থাপ্পড় মারতো! এতকিছুর পরও অভাগা নিজের জন্ম তারিখটা মনের ডায়েরিতে লিখে রেখেছিল। তারিখ ছিল ১৯৬৩ ইং ৮ই জুন শনিবার। বর্তমানে এই দিনটিই অভাগার জন্মদিন হিসাবে মনের ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করা। যাকে বলে শুভ জন্মদিন। কিন্তু অভাগার জীবনে জন্মদিন কখনো পালন করে দেখেনি। করতেও পারেনি।
অনেক সময় অভাগা মনে মনে বলে, ‘অভাব যার বারোমাস তাঁর আবার কিসের জন্মদিন? এমনিতেই অভাগার সংসারে নুন আনতে যার পান্তা ফুরায়, তার উপর আবার জন্মদিন!’ মানুষের জীবনে নাকি সুখের একটা সময় থাকে। সেই সময়টা হলো যুবককালে কামাই রোজগার, নাহয় বিয়ে। বিয়ে করে অনেকেই সুখ করে। সুখে থাকে। শান্তিতে থাকে। আবার অনেকেই সুখী থেকে দুখি হয়। সংসারে জ্বালা বাড়ে। অশান্তি বাড়ে। স্ত্রীর জ্বালায় আত্মহত্যা করে। কেউ আবার ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়। যাকে বলে বিয়ে। যাকে বলে সংসার!
অভাগার জীবনে অভাগার মত অনেক অভাবি মানুষ দেখেছে। যাঁদের অবস্থা ছিল অভাগাদের সংসারের অভাবের চেয়ে বেশি অভাব। সেসব ঘরের ছেলে-পেলেরা বড় হয়ে বিয়ে-সাদী করার পর বিত্তশালী বনে গিয়েছে। কিন্তু অভাগার জীবন থেকে অভাব আর শেষ হয়নি। মা-বাবা স্বর্গে পাড়ি জমিয়েছে। বিয়ে করেছে। ছেলে হয়েছে। মেয়ে হয়েছে। কষ্টে-সৃষ্টে মেয়েকে বিয়েও দিয়েছে। অভাব রয়েই গেছে। অভাব যেন অভাগার জীবনসঙ্গী। মানে জীবন যতদিন থাকবে, অভাবও ততদিন থাকবে। তাই অভাব নিয়ে অভাগা এখন আর বেশিকিছু ভাবে না। শত অভাবের মাঝেও অভাগার মন খারাপ হয় না।
অভাগার মন খারাপ হয় তখন, যখন কারোর বাড়িতে জন্মদিনের আয়োজন দেখে। অভাগার জীবনের এতোটি বছর গত হয়ে গেল, অথচ কোনদিন জন্মদিন পালন করতে পারেনি। নিজের জন্মদিন তো দূরের কথা, ছেলে-মেয়ের জন্মদিনও পালন করেনি। এই ডিজিটাল যুগে জন্মদিন কীভাবে পালিত হয়, আর কেন-ই-বা পালন করে তা অভাগা বুঝে। কেউ নাম ফুটায়। কেউ জন্মদিন নিয়ে ব্যবসা করে। কেউ জন্মদিনের অনুষ্ঠান করে মানুষের কাছে পরিচিত হয়। তা করুক! তাতে অভাগার কিছু আসে যায় না। অভাগার দিনও থেমে থাকছে না। একভাবে-না-একভাবে অভাগার দিন যাচ্ছেই। অভাগার দিনগুলো আরও অন্যান্য দিনের মত অতিবাহিত হচ্ছে। সুখে থাকুক আর দুখে থাকুক, একভাবে-না-একভাবে দিন-মাস-বছর অতিবাহিত হচ্ছে। এদিকে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার পর অভাগার একমাত্র ছেলেটাও দিনদিন বড় হচ্ছে। ছেলেটাই অভাগার একমাত্র আশা-ভরসা। অভাগার দুই ভাই। বড় ভাইয়ের ছেলে নেই বলেই বংশের বলতে অভাগার ছেলেটাই। অভাগার মৃত্যুর পর ছেলেটা মাসে নাহয় বছরে একবার হলেও অভাগার সমাধিতে প্রদীপ জ্বালাবে।
ছেলেটাকে নিয়ে অভাগার অনেক আশা। ছেলে এখন বড় হয়েছে। লেখা-পড়া করছে। একদিন ছেলেটা কামাই রোজগার করবে। চাকরি-বাকরি করবে। এসব আশা বুকে ধারণ করেই অভাগা ছেলে মুখপানে চেয়ে থাকে। ছেলে কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাসা থেকে কলেজ প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। ছেলের আসা-যাওয়ার গাড়ি ভাড়া লাগে। অভাগা তখন শহরে দিনমজুরের কাজ করে। কাজ শেষে বাসায় আসার সময় ছেলের পছন্দ করা খাবার কিনে আনে। নতুন টাকা হাতে পড়লে সেই টাকা অভাগা সহজে খরচ করে না। রেখে দেয় ছেলের জন্য। ছেলে প্রতিদিন কলেজে যাবার সময় গাড়ি ভাড়ার জন্য নতুন টাকা বের করে দেয়। অভাগার স্ত্রীও একটা প্রাইভেট ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। সেও প্রতিমাসে বেতন পেয়ে ছেলের নানারকম চাহিদা মেটায়। ছেলেকে খুশি রাখার চেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর এভাবেই চলছিল, দিনের পর দিন মাসের পর মাস।
কিন্তু সবার কপালে যে সুখ সয় না, তাও ঠিক! ছেলেকে মানুষ করতে এত রকমের চেষ্টার পরও অভাগার সব আশা আকাঙ্খা একদিন শেষ হয়ে গেল। তখন দুপুরের লাঞ্চের সময়। সেদিন অভাগা কাজে থেকে বাসায় আসতে একটু সময় লেগেছিল। এরমধ্যেই অভাগার বাসার সামনে লোকে লোকারণ্য। দূর থেকে বাসার সামনে অনেক লোকের জটলা দেখে অভাগার পা আর চলছিল না।
অভাগার এইরকম অবস্থা দেখে কয়েকজন মানুষ সামনে গিয়ে অভাগাকে ঝাপটে ধরলো। অভাগা জিজ্ঞেস করলো, আমার বাসার সামনে এতো মানুষ কেন? কী হয়েছে? আমার খোকা কোথায়? অভাগার জিজ্ঞাসার উত্তর আর কেউ দিচ্ছিল না। সবাই চুপ করে রইল। চুপ থাকার মাঝেই একজন কাঁদা কাঁদা স্বরে অভাগাকে বলল, ‘কাকা কাকী মাকে খবর দেন। তখন আর অভাগার বুঝতে অসুবিধা হলো না। অভাগা বুঝতে পেরেছে, শেষ বয়সে অভাগাকে দেখার মত আর কেউ রইল না। অভাগা অভাগাই রয়ে গেল। অভাগার সব স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা ভেঙে গেল। শেষতক হয়ে গেল অভাগার স্বপ্নের সমাধি।
অভাগার জন্য মনে কষ্ট হলেও এই আমি নামক অভাগারও একই স্বগোক্তি …
রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী !! ভালো থাকুন মি. নিতাই বাবু।
সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু অর্থাৎ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক- এটি বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধের মূলমন্ত্র। তিনি মানুষকে কর্মময় জীবনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, জগতে কর্মই সব। মানুষ তার কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করবে। ভালো কাজ করলে ভালো ফল এবং খারাপ কাজের জন্যে খারাপ ফল পাবে। কর্মানুসারে মানুষ অল্প আয়ু, দীর্ঘ আয়ু, জটিল ব্যাধিগ্রস্ত, নীরোগ, বিশ্রী-সুশ্রী, সুখী-দুঃখী, উঁচু-নিচু, জ্ঞান-মূর্খতা ইত্যাদি প্রাপ্ত হয়। মানুষ কর্মের অধীন।
আমিও তাতে বিশ্বাসী। জয় হোক মানবতার।
একটি জীবনের প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির কথা। খুঁজলে আমাদের মধ্যে এমন গল্প নায়কের মানে অভাগাদের দেখা অনেক পাওয়া যাবে। পার্থক্যা এক জায়গায়, আপনি গুছিয়ে প্রকাশ করেছেন, অন্যেরা পারেন নি।
মানুষ তার কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করবে। ভালো কাজ করলে ভালো ফল এবং খারাপ কাজের জন্যে খারাপ ফল পাবে। কর্মানুসারে মানুষ অল্প আয়ু, দীর্ঘ আয়ু, জটিল ব্যাধিগ্রস্ত, নীরোগ, বিশ্রী-সুশ্রী, সুখী-দুঃখী, উঁচু-নিচু, জ্ঞান-মূর্খতা ইত্যাদি প্রাপ্ত হয়। মানুষ কর্মের অধীন। আমিও তাতে বিশ্বাসী।
অভাগার জন্য পরামর্শ থাকবে তিনি যেন সব ভুলে ভালো থাকার পথ খুঁজে নেন। হোক শুভযাত্রা।
সুন্দর মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
লেখাটি পড়ে বুকটা শূন্য হয়ে গেলো নিতাই দা। আমরা এভাবেও বেঁচে থাকি কিছু না পেয়ে।
ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় কবি সৌমত্র দাদা।
যেমনটা পড়লাম। জীবনের এমন অপ্রাপ্তি আমাকে ক্ষয় করে ফেলতো। হতাশ হয়ে পড়তাম। অভাগা হয়তো মনের জোড়ে টিকে আছেন; আমি হলে সার্ভাইব করতে পারতাম না। অভিনন্দন কবি দাদা।
আপনাকে শুভেচ্ছা শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
অনেক অনেক শ্রদ্ধার সাথে এক নদী ভালোবাসা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।
মনটা বিষণ্ন হয়ে গেলো দাদা। দোয়া করি ভালো থাকুন।
লেখাটি কিন্তু কাল্পনিক নয় দিদি। বাস্তব গল্প।
সমবেদনা জানানোর ভাষা জানা নাই দাদা এই শোক ভুলবার নয়
আমার মহান স্রষ্টা বড়ই দয়াবান। আবার বড়ই নিষ্ঠুর!
শুভ কামনা সতত




আপনার জন্যও শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।