শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন দশম পর্ব- আগমনী কাব্য-১০

শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
দশম পর্ব- আগমনী কাব্য-১০

কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বাংলায় ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস শরৎকাল। শরতে মৃদু হাওয়ায় শুভ্র কাশবন দেখলে মনে হয় যেন প্রকৃতির তার অপরূপ সাদা কেশ নাড়ছে। এভাবেই বর্ণিল অনুপম সৌন্দর্য নিয়ে ঋতুর রানী শরতের আগমন ঘটে। কাশফুল ফোটে শরতের শুরুতেই। তবে শরৎকালের প্রকৃতি কাশফুলের মতোই কোমল মোলায়েম। শরতে বাতাস শান্ত-সুধীর। শরতের রঙ-রূপ স্নিগ্ধতায় মুগ্ধতায় অপরূপা। শরতের আকাশ উদ্দাম ও উদার। এই শরতে শারদীয় উদযাপন যেন উৎসবমুখরতার প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। শরৎ এসেছে মেঘের কোলে ভেসে। শরতের মোহন রূপে ভুলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রভাতের শুকতারাকে শরতের শিউলির সঙ্গে তুলনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। শরতের স্নিগ্ধতায় বিমোহিত হয়ে রবীন্দ্রাথ ঠাকুর লিখেছেন-

মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি।
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি।
কী করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন বনে যাই,
কোন মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলের জুটি…..

শিউলি ফুল যেন শরতের রানী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও মজেছেন শরতের রূপে। বিশেষ করে শরতের শিউলি তাকে দিয়েছিল অপার মুগ্ধতা। কবি আরো লিখেছেন-

‘আবার যেদিন শিউলী ফুলে ভরবে তোমার অঙ্গন
তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কন
কাঁদবে কুঠীর অঙ্গন,
শিউলী ঢাকা মোর সমাধি
পড়বে মনে, উঠবে কাঁদি
বুকের জ্বালা করবে মালা
চোখের জলে সেদিন বালা।
মুখের হাসি ঘুচবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।’

শিউলির গন্ধমাখা বাতাস জানায় শরতের আগমন। এ কারণেই হয়তোবা শিউলি ফুলে ঢাকা সমাধির কথা স্মরণে এনে নজরুল লিখেছেন-

‘এসো শারদপ্রাতের পথিক এসো শিউলী-বিছানো পথে।
এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে…।’
আবার শরতের মধুর সকালের অপরূপ বর্ণনাও মেলে বিদ্রোহী কবির সৃষ্টিতে। তিনি লিখেছেন-

‘শিউলি তলায় ভোর বেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।
শেফালি পুলকে ঝ’রে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা।।’

কবি মন, শিল্পী মন, প্রেমিক মন এমনকি কঠোর হৃদয়ের মানুষও শরতের অপরূপ রূপে গলে যেতে বাধ্য। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দের রূপসী বাংলায় যৌবন বিকশিত হয় শরতের আকাশে। প্রকৃতি এ সময় মহাকবি কালিদাসের ভাষায়, ‘নববধূর’ সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন তাই শরৎকে দেখেছেন ‘বিরহী নারী’ হিসেবে। শরতকাল উদ্যাপনে ভিন্নতা আছে দেশে দেশে। আমেরিকানদের চোখে শরৎটা মূলত কিছুটা নরম আর আরামদায়ক সময়। চায়নিজরা শরতের শেষপ্রান্তে শেষরাতে বৃষ্টির শব্দ শুনে ঘুমাতে পছন্দ করে। শরতের এত রূপ, এত ঐশ্বর্য, এত মোহ, এত ঋতুবৈচিত্র্য, এত রঙধনুর রঙ, আকাশের এত নীল, এত ছায়াপথের আলোছায়া, এত সূর্যাস্তের রক্তরাগ, এত ভোরের শিশির, এত কাশফুলের হেলাদোলা আর এই বাংলা ছাড়া কোথায় পাবে বল। কবি মন আজি বলতে চায়-

শরতের এই রূপ দেখে মোর চোখ জুড়িয়ে যায়,
মোর মন জুড়িয়ে যায়, মোর প্রাণ জুড়িয়ে যায়,
আমি সব পেয়েছি হেথায় সেথায়
আমার এই বাংলা মায়ের শ্যামল-অমল মায়ায়।’

শরতের রূপের অপরূপা স্নিগ্ধতায় আসুন সবে মুগ্ধ হই। শরতের রঙে প্রকৃতির মতো নিজেরাও সেজেগুজে উঠি। প্রকৃতির আলিঙ্গনে থাকি- প্রকৃতিকে ভালোবাসি, ভালোবাসি মানুষকে। সবাইকে শরৎ শুভেচ্ছাসহ মানবতাকে আলিঙ্গন করার আহ্বান।

শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
দশম পর্ব- আগমনী কাব্য-১০

কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

দেবী আগমনী আসে উমারানী
কৈলাস হতে ধরায়।
শিশিরে শিশিরে মুক্তারাশি ঝরে
তরুশাখে পাখি গায়।

শারদ আকাশে হিমেল বাতাসে
ফুলের সৌরভ ছুটে।
পূরব দিশায় অরুণ আভায়
শরতের রবি উঠে।

কালো দিঘি জলে শালুক ফুলেরা
অপরূপ শোভা ধরে,
দুই ধারে হেরি কাশ ফুল বন
অজয় নদীর চরে।

ফুটিল শিউলি টগর ও বেলি
মাধবী মালতী সাথে,
কেয়া ফুল যত হেরি শত শত
ফুটেছে শারদ প্রাতে।

শারদ ঋতুতে সরোবর জলে
ভাসে কুমুদ কমল,
কমল কাননে মধু আহরণে
ছুটে আসে অলিদল।

কচি ধানখেতে বায়ু উঠে মেতে
দোলা দেয় তনু মন,
আগমনী সাথে শারদ প্রভাতে
শরতের আগমন।

শিশির ঝরানো সকাল বেলায়
শরতের রবি হাসে,
বাতাসে বাতাসে মধুর সুবাসে
আগমনী সুর ভাসে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

12 thoughts on “শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন দশম পর্ব- আগমনী কাব্য-১০

  1. শারদ আকাশে হিমেল বাতাসে
    ফুলের সৌরভ ছুটে।
    পূরব দিশায় অরুণ আভায়
    শরতের রবি উঠে।

    শরত আলোচনা এবং আপনার কবিতার অংশ অসাধারণ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. সুন্দর মন্তব্যে তব মুগ্ধ হল মন
      শারদীয়ার শুভেচ্ছা করুন গ্রহণ
      জয়গুরু!

  2. প্রকৃতিকে ভালোবাসি, ভালোবাসি মানুষকে। সবাইকে শরৎ শুভেচ্ছাসহ মানবতাকে আলিঙ্গন করার আহ্বান আমারও কবি ভাণ্ডারী দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন
      শারদীয়া অভিনন্দন রইল
      জয়গুরু!

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন
      শারদীয়া অভিনন্দন রইল প্রিয়কবি বোন।
      জয়গুরু!

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
      শারদীয়া অভিনন্দন রইল কবি সাজিয়া আফরিন বোন।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।

      জয়গুরু!

  3. শরতের রূপের অপরূপা স্নিগ্ধতায় আসুন মুগ্ধ হই। শরতের রঙে প্রকৃতির মতো নিজেরাও সেজে উঠি। অভিনন্দন মি. ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  4. স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসী। ভালোবাসি আপনার সমস্ত লেখা। তাই অনাবিল শুভেচ্ছা আর শ্রদ্ধা।  

    1. আপনার জন্য রেখে গেলাম শারদ প্রীতি আর শুভেচ্ছা।
      জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।