Bankstown এ এক বৃদ্ধার সাথে দেখা। সাথে দুজন ৬/৭ বছরের ছেলে। একজন চাইনিজ টাইপ চেহারা আর একজন অস্ট্রেলিয়ানদের মতই। জিজ্ঞেস করলাম কে হয় বাচ্চারা ? উনি বললেন একজন তার নিজের নাতি আর একজন নাতির বন্ধু। ওদের ছুটি চলছে। তাই ওদের নিয়ে উনি বেড়াতে যাচ্ছেন।
জিজ্ঞেস করলাম একাই থাকেন নাকি কারো সাথে থাকেন। উনি বললেন ছেলে ছেলের বউ এর সাথে থাকেন। বার বার বলছিলেন ওনার ছেলের বউ ওনাকে খুব পছন্দ করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমরা যেমন করে বলি আমার শ্বাশুড়ি আমাকে খুব পছন্দ করেন। আসলে পছন্দ করার কথা না কিন্তু করেন। বিষয়টা যেনো তেমনি।
–
আমি বৃদ্ধ বৃদ্ধা দেখলে কথা বলতে আগ বাড়িয়ে যাই। ওনারা বেশীর ভাগই একা থাকেন। একদিন বিরাশি বছরের এক বৃদ্ধা আমার সাথে হাঁটছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম একাই থাকেন কিনা ? বললেন যে হ্যাঁ একাই থাকেন। কিন্তু ওনার প্রতিবেশী ওনার খেয়াল রাখেন। বললাম খারাপ লাগে তোমার এই একাকী থাকা ? উনি বললেন না খারাপ লাগে না। ওনার অভ্যেস হয়ে গেছে।
–
এক চাইনিজ বৃদ্ধাকে স্টেশনে দেখলাম। উনি এটা সেটা বলার পরে বললেন বৃদ্ধ হওয়া খুব কষ্টের। বৃদ্ধ হইও না।
–
এক বৃদ্ধা প্রায় ৮৩/৮৪ বছর হবে। স্টেশনে নেমেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন। আই এম লস্ট – আই এম লস্ট। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কই যেতে চান কোথায় যেতে চান। উনি ওনার হাতের লাঠি ফ্লোরে বাড়ি দিয়ে বলছিলেন – খুব উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়া। ছেলে মেয়ে সব স্টুপিড। দেশ স্টুপিড, মানুষ স্টুপিড। উন্নত দেশ মানবিকতা শেখায় নাই কাউকে।
আমার ফেইস সম্ভবত একটু সহজ সরল। কণ্ঠস্বর ও নরম। উনি আমাকে খুব পছন্দ করলেন। নাম জিজ্ঞেস করলেন। দেশ জিজ্ঞেস করলেন। এরপর বললেন তুমি খুব ভালো মেয়ে। বাংলাদেশের মেয়ে খুব ভালো। কথা বার্তায় বোঝা গেলো একসময় ভালো চাকরী করতেন।
অস্ট্রেলিয়ায় বুড়িদের একটু সাহায্য করতে এগিয়ে আসলে ওরা খুব মাইন্ড করে। না সে পারবে। তার কারো হেল্প লাগবে না। উনি সিঁড়ি দিয়ে খুব কষ্ট করে নামছিলেন। কিন্তু কারো সাহায্য নেয়া ওনার জন্য অপমান সূচক মনে হয়েছে। বুঝলাম আসলে আত্মমর্যাদা বা সেলফরেসপেক্ট তাদের রক্তেই রয়েছে।
এখানে ৫০ বছরের উপরে পুরুষগুলোর স্ত্রী প্রায় ছেড়ে যায় তাদের। এটাই দেখেছি। আজ এক ইটালীয়ান মেয়ের সাথে কথা বলার পরে সেও বললো আশ্চর্য এই একটা ব্যাপার। অলমোস্ট সব বয়স্ক পুরুষের বউ তাদের ছেড়ে চলে যায়। ব্যপারটা যেনো কেমন –
নাভিটাসে আমাদের ইংলিশ শিক্ষক -ভেলোরা প্রায় ৬০ বছর বয়স্কা। উনি ছেলেদের প্রসঙ্গ আসলেই বিরক্ত হন। বলেন যে ছেলেরা খুব অকাজের। কিচেন নোংরা করে। নিজের কাজ নিজে করতে চায় না। ওদের ভার বহন করা দূরহ ব্যপার। উনি ওনার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ নিয়েছেন।
–
যদিও এই পুরুষদের স্ত্রীরা তাদের ছেড়ে গেছেন কিন্তু তারা তাদের মেয়ে নাতির সাথে থাকেন। আমার এক সুপারভাইজার ওনার বয়েস ৬০ হবে। উনি বললেন ছেলে তাকে দেখে না। তাতে কি ? তিনি কেয়ার করেন না।
–
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেও আজকাল ছেলেমেয়েরা যে মা বাবাকে দেখাশোনা করে তাও খুব না। মা বাবার উচিত সব টাকা পয়সা ছেলেমেয়ের পেছনে খরচ না করে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য রাখা। যাতে ছেলেমেয়েরা না দেখলেও তাদের যেনো সমস্যা না হয়।
–
(কারো লেখায় কমেন্ট করতে পারছি না এমনকি নিজের লেখায় মন্তব্যের উত্তর করতে পারছিনা। বিষয়টা দেখার জন্য অনুরোধ করছি )
সেলফরেসপেক্ট। সেলফরেসপেক্ট।
সঞ্চয় পত্র কিনে রাখছি ভয় তাড়াইছি। 
ভালো করছেন । নিজের ভবিষ্যতের সুরক্ষা জরুরী ।
ও বয়েস তুমি বইছো কেন। ভালো শিরোনাম দিয়েছেন আপা।
পোস্টে মন্তব্য বা প্রতি-মন্তব্য দিতে ক্যাপচা সলভ করতে হয়। চেষ্টা করুন, পারবেন।
ধন্যবাদ ।ভালো থাকবেন সুমন আহমেদ ।
আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন আপা। কারু হেল্প না চেয়ে নিজের জন্য নিজেকে তৈরী রাখা উচিত। নিজেদের বিকল্প অবলম্বন নিজেদের তৈরী করতে হবে। বৃদ্ধাশ্রম নামের গারদখানা গড়ে উঠবে না।
সেটাই । নিজেদের ব্যবস্থা অবশ্যই রাখা উচিত । ভালো থাকবেন ।
সেল্ফ ডিফেন্স গড়ে রাখতে হবে সময় থাকতেই। সময় গেলে সাধন হবে না।
আপনার জন্য শুভকামনা দিদি ভাই।
ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন।