নাজমুন এর সকল পোস্ট

যাপিত জীবন দেশ বিদেশ -২

*** কোভিড ভ্যাক্সিন

গতকাল কোভিড ভেক্সিন নিতে গেলাম। আমি একটা ইভেন্টস এর সাথে মাঝে মাঝে কাজ করি। ইভেন্টস এর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য ফ্রী ভ্যাক্সিন প্লাস চার ঘন্টার পেমেন্ট দেয়া হবে। যাই হোক গেলাম ভ্যাক্সিন নিতে। প্রথমে আমাদের বিশাল এক হলরুমে অনেকটা অডিটোরিয়ামের মতো সেখানে বসানো হলো। প্রতিটা রোতে চারজন করে বসা। কিছুক্ষণ পরে ডাকা হলো আমাদের চারজনকে।

কিউ তে অপেক্ষা করে আমাদের সবার সব ধরনের ইনফরমেশন নেয়া হলো। এরপর যেতে হলো আর একটা রুমে। সেখানে আর একজনের সাথে বৈঠক। যেমন আমাকে বলা হলো ৮ নাম্বারে যাও। সেখানে একজন বসে আছেন যিনি আমার সব ইনফরমেশন ঠিক আছে কিনা সেগুলা চেক করে পাঠানো হলো আর এক রুমে। এবার সময় হয়েছে ভ্যাকসিন নেবার।
নার্স মহিলা বললেন রিলাক্স। ভয় পেয়োনা।
ভয় পেলাম না। কাজ সারা হলে এরপর আর এক রুমে যেয়ে আরো অনেকের সাথে বসতে হলো। সেখানে প্রত্যেকে ২.৫ মিটার দূরত্বে বসে আছে। টিভির হালকা মিউজিকের শব্দ ছাড়া এতোগুলা মানুষের একটা শব্দও নাই। যেনো পিন পতন নিরবতা নেমেছে সেখানে। আধা ঘন্টা পরে সেখানে অবজার্ভ করছিলেন যে মহিলা উনি জিজ্ঞেস করলেন কোনো সমস্যা ফিল করছো না তো! আমি মাথা নাড়ালাম। এরপর উনি হাতের ব্যাজ কেটে নিলেন। এরপর দেখিয়ে দিলেন কিভাবে আমাকে আবার যেতে হবে।

একটা ভ্যাক্সিন নেয়া নিয়ে এতো কথার অবতারণা করলাম এই কারণে যে – দেশে এই ভ্যাক্সিন নিয়ে যে হুলস্থুল যাচ্ছে আবার ভ্যাকসিন নেয়ার পরে ছবি তোলার যে কাণ্ডকারখানা – এটা দেশের জন্য হয়তো নরমাল। এখানে সেটাই এবনরমাল। সবকিছু এতো সুশৃঙ্খল ভাবে বিন্যস্ত করা যে মানুষেরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছে সিস্টেমের সাথে- বাংলাদেশের উশৃংখল অনিয়মের মানুষ অন্য দেশগুলাতে এসে খুব ভালো ভব্য হয়ে যায়। ভাবছি এটা কাদের দোষ! মানুষ নাকি দেশের সিস্টেমের দোষ!

ব্যাংক্সটাউন বাসস্ট্যান্ড
——————
দুপুর ২/৩ টা বাজে সব স্কুলের বাচ্চারা বাস স্ট্যান্ডগুলাতে ভির করে। স্কুলের বাচ্চাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয় ব্যাংকসটাউন বাস স্ট্যান্ড। ভালো লাগে দেখতে। আমার কলিগ এক আফগানী ভদ্রলোক। আমাকে বললো, দেখছেন এই ছেলেমেয়েগুলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আমি তো নষ্ট হবার মতো কিছু দেখলাম না। জিজ্ঞেস করলাম – কেন একথা বললেন?
এই বয়সে বাচ্চারা সিগারেট খাচ্ছে।
আমি অবশ্য দেখেছি – পিচ্চি কিছু ছেলেমেয়ে একধরনের পাইপ টানছে।
ভদ্রলোক বললেন – জানিনা তোমাদের দেশে কি অবস্থা কিন্তু আমাদের দেশে কোনো মুরুব্বীর সামনে এরকম সিসা টানতে দেখলে কারো পারমিশন ছাড়াই সেই মুরুব্বি মারবেন এসব বাচ্চাদের।

আমি চুপ রইলাম। কেননা ভদ্রলোক যেভাবে অভিযোগে করছিলেন সেভাবে বাচ্চাদের দেখিনি শিশা টানতে। দুই একজনের বিষয় উদাহারণ হতে পারে না। ভাবছিলাম আফগানিস্তান ছেড়ে আসলেও মাথাটা এখনো সেখানেরই রয়ে গেছে বেচারার।
—–

পিচ্চি এক বাচ্চাকে (৯/১০ হবে বয়েস) দেখলাম মোবাইলে গেম খেলছে। কি কি যেনো পট পট করে বলছিলো। সব বোঝা যাচ্ছিলো না। জিজ্ঞেস করলাম কি খেয়েছ?.
বললো – কিছু খাইনি। মা অবশ্য আমাকে ৫ ডলার দিয়েছে টিফিন করার জন্য। আমি খরচ করিনি। জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাবা মা কি তোমাকে স্কুলে আনা নেয়া করেন! নো নো – আই এম লারনিং।
বাব্বাহ! এই টুকু পিচ্চির কথায় চমতকৃত হলাম।
––—

Mardigras day

আজ মার্ডিগ্রাস ডে। আজকের দিন গে আর লেসবিয়ানদের জন্য বিশেষ দিন। মুরপার্কে দলে দলে মানুষ যাচ্ছে ওদের প্রোগ্রাম দেখতে। ওদের পোশাক আশাক এমন ঝলমলে, মুখে গালে গলায় শরীরে চকচকে রঙ, গ্লিটার – এসব দেখে মনেই হয়েছে আজ বিশেষ দিন। স্পেশাল লাইট ট্রেনের ব্যবস্থা, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, পুলিশ সব মিলে সাজ সাজ রব। এক ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার। এতো মানুষ কোথায় যাচ্ছে? বললাম – আজ মার্ডিগ্রাস ডে। সবাই স্পেশাল ইভেন্টে যাচ্ছে।

প্রায় ছেলে স্কার্ট পড়েছে। এক ছেলের এতো সুন্দর লম্বা চুল, আবার এতে সে দিয়েছে গ্লিটার। ভাবছিলাম একটা মেয়েকে এই সাজে দারুন লাগতো। ছেলেরা যতই মেয়ের মতো সাজুক ওদের শক্ত পোক্ত ভাবটা যায় না।

পাকিস্তানিরা বেশির ভাগই কট্টরপন্থী। আমার পাকিস্তানি সুপারভাইজার বললো, আল্লাহ লুত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিলেন সমকামের জন্য। এদেরও ধ্বংস করবে। তোমার কি মনে হয়?
আমি চুপ করে রইলাম।
মানুষ প্রকৃতির অংশ। তার ভেতরে তার যে স্বাভাবিক ইচ্ছে তা কিছুতেই আসলে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। একটা ছেলের পরনে ফুলেল স্কার্ট ফুলে ফুলে উঠছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো আসল এই মানুষটাই সে। প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় বাইরের মানুষ যা দেখছে সে তা নয়।
তবু মানুষের জয় হোক।

যাপিত জীবন দেশ বিদেশ

hqdefault

”চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারী.ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি।

জবে গেলে প্রায় মালা নামের নেপালি মেয়েটার সাথে দেখা হয়। মালা এখানে ক্লিনিং এর কাজ করে। আমাজনে প্রচুর নেপালি মানুষজন কাজ করে। ক্লিনিং থেকে শুরু করে আইটি তে সব জায়গায় ওরা আছে। আমার কাজে যেতে হলে ব্যাংকসটাউন স্টেশন থেকে লিভারপুল স্টেশন এরপর ৯০২ নং বাসে করে মুরব্যাংকে নেমে ৪ মিনিট হাঁটার রাস্তা। উইকেন্ড গুলাতে ট্রেন চালু থাকলেও বাস চালু থাকে না। তাই ট্রেন থেকে নেমে উবারে করে যাই।

এক রোববারে ট্রেন থেকে নেমে উবার কল করে উবারের অপেক্ষায় আছি। পাশে মালা এসে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো তুমি কি উবার কল করছ ?
আমি ওকে বললাম কল করেছি। তুমি চাইলেও যেতে পারো আমার সাথে।
ও জিজ্ঞেস করলো কতো দিতে হবে উবারকে ?
আমি বললাম যাই দিতে হয় তুমি টেনশন করো না।
কিন্তু মালা অস্থির হয়ে গেলো।
আমার কাছে কয়েন আছে, ক্যাশ আছে – আমি দিচ্ছি।
আমি ওকে থামালাম।
লিসেন – আজ আমি দেই – অন্য সময় তুমি দিও।
সে এরপর থামলো।

এরপর দেখা হলেই সে অস্থির হয়ে যায়। শুনো আমার কাছে ক্যাশ আছে – আমি তোমাকে দিয়ে দেই সেদিনের টাকাটা। আমি যতই বুঝিয়ে বলি আরে আমি তো একাই যেতাম – তুমি যাওয়াতে এক্সট্রা বিল পে করতে হয় নি। অবশেষে একদিন যখন সুযোগ পেলো আমাকে তার সাথে নিয়ে যাবার -এরপর শান্তি হলো তার। বোধকরি অস্বস্তিও দূর হলো। মালা এরপর আমার খুব বন্ধু হয়ে গেলো। মালাসহ এরকম আরো অনেক নেপালী ছেলেমেয়ে স্টুডেন্ট হিসেবে আসে কিন্তু ওরা সাবকন্ট্রাকটারের অধীনে কাজ করে। স্টুডেন্ট বলে ট্যাক্সে ২০ ঘন্টার বেশি কাজ করতে পারে না। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ওরা ক্যাশে কাজ করে।
জিজ্ঞেস করলাম – অস্ট্রেলিয়া কেমন লাগে ?
ও বললো অস্ট্রেলিয়া খুব ভালো দেশ, সুন্দর দেশ কিন্তু আমি নেপালে গেলে আর আসবো না। আমার দেশেই ভালো লাগে।

—————–

মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো
দোলে মন দোলে অকারণ হরষে –

এখন অস্ট্রেলিয়ার সিজন হেমন্ত। এতো সুন্দর ওয়েদার। মাঝে মাঝে সকাল থেকে দুপুর তিনটা বা চারটা পর্যন্ত একটু গরম লাগে এরপর ঝিরঝির বাতাসে গা জুড়ায়। অন্যরকম ভালো লাগায় মন শরীরে একধরনের শান্তি আসে।
ছোটকালে আমার সেজখালার বাড়িতে যেতাম। সেজখালার স্বামী মারা গেছেন খালার বিয়ের বছর চারেক পরেই। কিন্তু খুব সুন্দর একটা ঘর করে গেছিলেন উনি। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অপজিটে ওনাদের বাড়িটা। ঘরটার শেষের দিকের রূমটা একটু নির্জন। ছায়া সুনিবিড় অনেকটা। সকাল বিকেল দুপুর শীত গ্রীষ্ম সবসময়ই কেমন শান্ত ভাব। ঘরটার সামনে পেছনে সবুজ গাছ আর ঝির ঝির বাতাসে মন আপনাতেই শান্ত হতো। অস্ট্রেলিয়ার এই শান্ত ওয়েদার, গাছের ডালের পাতাদের দুলুনি মন পেছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সেজখালার বাড়ির সেই কোনার রূমটার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় –
জীবন পুরোটাই ভ্রমন –
কখনো শান্ত কখনো অশান্ত সমুদ্রের মতন –
তবু এই জীবনকেই ভালোবাসা –
——————–

শনিবারে সিডনী ট্রেনের সাথে কাজ করলাম। যদিও এগুলা আমার ফিক্সড কাজ না অনেকটা অনুরোধে করা। জায়গাটার নাম ওবার্ণ। ওবার্ণ ইয়ার্ডে গিয়েই মন ভালো হয়ে গেলো। এতো সবুজ চারপাশে ! আমার সহকর্মী একজন বললেন দেখো এখানে স্নেক ডিটেক্টর আছে। এখানে গরম আসলেই সাপ বের হয়। তাই পুরো ইয়ার্ডেই জায়গায় জায়গায় স্নেক ডিটেক্টর দেয়া আছে। আমাকে স্নেক ডিটেক্টর দেখিয়ে বললেন বলোতো কি এগুলা ?
আমার মনে হয়েছিলো পানির পাইপের মতো – ছোট একটু পাইপ মাটির সাথে এটাচ করে দেয়া উপরে সবুজ কর্কের মতো –
আমি পানির পাইপ বললে সে বললো – এগুলাই স্নেক ডিটেক্টর।
এক জায়গায় সাপের খোলস পড়ে থাকতে দেখলাম।
বুঝলাম যা বলছে কথার কথা না। আসলেই এখানে সাপ আছে।
যে ভদ্রলোক সব দেখাচ্ছিলেন উনি সুপারভাইজার। ইন্ডিয়ান।
জিজ্ঞেস করলাম – ক্যাজুয়েল নাকি পারমানেন্ট করো ?
উনি বললেন ক্যাজুয়েল করি। কারণ ক্যাজুয়েলে টাকা বেশী। পারমানেন্ট হলে আওয়ারলি ২৮ আর পারমানেন্ট হলে ৩৩ করে। এতে ইনকাম ভালো হয়। বললাম তাহলে ছুটি বা এসবে ক্যাজুয়েল জবে একটু প্রবলেম হয়।
ভদ্রলোক বললেন – আই ম্যানেজ ইট।
————–
আজ ছিলো আমার ডে অফ – কি করলাম সারাদিন !!
ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে এগারটা বাজে –
একটু খেয়ে দেয়ে সিনেমা দেখলাম ,ঘর ক্লিন করলাম। এরপর গেলাম ব্যাংকস্টাউন সেন্ট্রালে – শপিং এ। এটা সেটা কেনাকাটা করলাম। ট্রলিটা টানতে টানতে দেশের রিকসার সুবিধার কথা ভাবলাম। আহারে একটুও হাঁটতে হতো না – এই কষ্টে কিছুক্ষন মনোকষ্টে থাকলাম এরপর ড্রাইভিং না শেখার দুঃখে ড্রাইভিং শেখার পণ করলাম। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিক্রমা। প্রথমে লার্নার টেস্ট দাও – এরপর সেটা পাস করার পরে ড্রাইভং শেখার পরে ড্রাইভিং টেস্ট দাও। সেই কঠিন পরীক্ষায় পাশ করার পরেই ড্রাইভিং করা যাবে।

কিছুদিন আগে লার্নিং টেস্ট দিলাম। ৪৫ টা প্রশ্ন। ৪৫ টা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে নইলে ফেল। যাক এক চান্সে পাশ করে গেলাম। খুব তাড়াতাড়ি পরীক্ষা শেষ করলাম দেখে সেখানের মেয়েটা বললো -তুমি কি ফেল করেছ ?
আমি বললাম – পাশ করেছি –
এখন সময় দিতে হবে ড্রাইভিং শেখায় –
দেখা যাক কতটুকু পারি –
বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সুচাগ্র মেদিনী –

ইথাকার ঘোড়া

ইতিহাস খুন করে চলে গেলো ইথাকার ঘোড়া
আমার ছন দেয়া ঘরে কেউ নেই বৃত্তান্ত ছাড়া
তোমারে যে বলেছি আমি
ছেড়ে আসো পৃথিবীর বোরাক
যে আমারে ছেড়ে দেয়
আবার ধরে পেঁচায় ইত্যাকার বেলায়
ছেঁড়া চট – মাদুরের কোনায়
লেগে আছে প্রসূনের জ্বর
আমার শুধুই বিষাদ – অন্ধকার ঘর –

হাবিবি

জানি বেহেশত ঢুকে গেছে দক্ষিণে
আর হে রব তুমি ডাকছো আমাকে
বলছো আশিক ঘুমায় না, মাশুক ঘুমায় না
তুমি কেন ঘুমাও !!

হে আমার প্রতিপালক
একদিন মেঘস্বরে যে প্রেমিক ডেকেছিলো
তুমি বলেছিলে সেও ঘুমায় না –

আজ সে ঘুমে অধোবদন
আমি ডাকছি তাকে কুম কুম লাইয়ালামুনা
হে আমার প্রিয় উঠে যাও !!
এতো কেন ঘুমাও !!

যে রাত ঘুমায় না
যে সমুদ্র জেগে থাকে
যে বৃক্ষ রাতে বিজবিজ স্বরে বলে
সকলে ঘুমায় –
তুমি কেনো জেগে থাকো সই ?

দ্বৈপ

আহা এই করোনীয় যুগে
তুমি এতো নিশ্চুপ পাতার মতো হয়ে গেলে
ফুলে ফুলে রয়ে গেছে পাখিরা
বন্দে মাতরম বলেছিলো স্বদেশীরা
তারাও প্রয়াত
শুধু তুমি আমি কেমন নির্জন ঘেরাটোপে বন্দী –

বাতাসে ভেসে এসেছে দুঃখ
পাতার সাথে পাতার ফিসফিস
আর আমি তুমি দুদিকে বসে
মটরশুটির বীজ বুনেছি
তাহাদের বুকের কাছে অবদমন নিয়ে বলছি
আমাদের দেশ নেই
আহা আমাদের দুঃখও নেই –

আমরা এভাবেই থাকি
এভাবেই বাঁচি
শুধু আমাদের মধ্যখানে
এতগুলা মহাদেশ পিতার মতো শুয়ে থাকে —
Comments

ধর্ষন কেন বাড়ছে

এভাবে ভয়াবহ ভাবে ধর্ষন বাড়ছে কেন?
সম্ভাব্য কারণগুলি হতে পারে এরকম
১। আশে পাশে অসংখ্য রেপ ঘটছে, সব নজরে আসে না,মেয়েরাও কাউকে কিছু জানায় না, এভাবে নিরবে নিভৃতে যখন ঘটনা ঘটছে তখন রেপিস্ট ভাবছে এটাও কারো নজরে আসবে না।
২। রেপিস্টের জন্য এটাই প্রথম ঘটনা নয়।এরকম কুকর্ম সে প্রতিনিয়ত ঘটিয়ে যাচ্ছে, দু একটা জনসম্মুখে আসছে
৩।তথ্যের অবাধ প্রবাহ, ইন্টারনেট সার্চ দিলেই বেরিয়ে আসছে হাজার হাজার পর্ণ এর টুকরো টুকরো ছবি অথবা ভিডিও
৪। মেয়েদের জোর করাকে সে ভাবছে পৌরুষ,
মেয়েরা রাজি না, তারা ভাবে এই যে তার অসম্মতি এ আসলে বাহানা, সে আদতে সংগ চায় —
৫। সিনেমাগুলোতে সব সময় দেখানো হয় নারী রেপড হচ্ছে, হিংস্র উল্লাস করছে পুরুষ, নিজেদের সেজায়গায় ভেবে উল্লসিত হচ্ছে
৬। লজ্জাহীনতা, মেয়েরা ভাবছে সম্ভ্রম হারাচ্ছে, তার লজ্জা সারা দুনিয়ায়, সমাজে আর পুরুষ একে গৌরব অথবা বীরত্ব ভাবছে, যেমন প্রভাকে ছি ছি করেছে সবাই বিপরীতে রাজিব বীরপুরুষের মত বুক ফুলিয়ে চলেছে

৭। রেপ ঘটছে সমাজের উপরতলা থেকে নীচতলা। তবে একটা ভালো পরিবারে ছেলেমেয়েরা শেখে নীতি এবং নৈতিকতাবোধ।শিশু প্রথম পাঁচ বছরে তার জীবনের মূল শেখাটা শিখে যা তার অবচেতন মনে স্থায়ী হয়।পরিবারে মানুষের প্রতি সম্মানবোধ, আত্মমর্যাদাবোধ তার মধ্যে গ্রো না করলেও সে অন্যকে সম্মান করতে শেখে না।রেপিস্টের আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে এই বোধ তার মধ্যে না জাগাটাও রেপিস্টের রেপিস্ট হয়ে ওঠার কারণের মধ্যে পড়ে।
৮।সমাজের নিন্মবিত্ত শ্রেণীর যারা রাস্তায় বেড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে কি বোধ জাগার আশা করা যায়?
৯। বস্তিগুলোতে ছোট্ট একটা রুমে পরিবারের ৬/৭ জন থাকছে, রান্না করছে, ঘুমাচ্ছে, জীবনের ন্যুনতম চাহিদা যেখানে পূর্ণ হয় না তাদের কাছে কি আশা করা যায়?
১০। কাজ নাই।বেকার। অলস মস্তিষ্ক।

১১। এমন একটা দেশ যেখানে টাকার মূল্য মানুষের মূল্যের চাইতে বেশি হয়ে উঠেছে –
১২। বিনোদন বলতে বোঝায় হিন্দি সিরিয়াল,
নাটক হচ্ছে হাউকাউ, চিল্লাফাল্লা এক অবস্থা।
একসময় চমৎকার কাহিনী সমৃদ্ধ সিনেমা আজ আর নেই।সেই প্রেম আর প্রেম পাবার জন্য মরিয়া হওয়া!!

১৩। ইয়াবা, গাঁজা, ড্রাগে ছেয়ে গেছে দেশ।
১৪। হুজুর, স্কুল কলেজের শিক্ষক কম বেশি অনেকেই লাইমলাইটে আসছেন নারী লোভের কারণে,
এক্ষেত্রে যাদের আদর্শ মানা হয়েছিল এতোকাল তাদের এই অধপাতের বিষয় প্রভাবিত করছে মানুষকে

তোয়াফ

স্ফিংস নীরবে ধ্বংস হোক তোমার ঐ সিংহমুখ
পা গুলো ভেংগে যাক
তুমি ধীরে ধীরে মধুমক্ষিক বনে যাও
চোখ তোমার অন্ধ হোক
প্রেমিকারা তোমার অন্ধত্ব দেখে করুনা করুক –
আমি ইত্যবসরে তোমাকে আগলে রেখে
তোমার বাহু আর বুকে তোয়াফ করবো –

আগেই ভিখিরি হয়েছি
ছিন্ন হতে হতে নগ্ন হয়েছে আমার সমস্ত শরীর
সুতো ছাল বাকল সহ আছড়ে পড়ছে সুতিকাগার ।
তীব্র কষাঘাতে ক্লান্ত পথিক
তুমি ভিখিরি হয়ে আসো
আমরা দুজন একসাথে অন্ধ ভিখিরি হয়ে
ভিক্ষা করবো গাঁয়ের পথে পথে – –

দেশ বিদেশ ডায়েরী

গত বছর কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর মৃত্যুর পর পর কবি মুনীরা চৌধুরী মারা গেলেন। যদিও মৃত্যুর কারণ রহস্যাবৃত তবু কবির মৃত্যু কাম্য না। ভালোবাসা অধরা। ছাই হয়ে যাবার পরেও জ্বলতে থাকে। বেদনাবোধে আক্রান্ত হয়েছিলাম। কোথা থেকে যেনো এক সুক্ষ্ণ ব্যথা বুকের ভেতর চিন চিন করে।

শাইমা আর ইসরা দুজন জমজ বোন। শাইমা পুলিশ হতে চায় তাই সে ব্যাচেলার অব পোলিসিং এ পড়ছে। ইসরা পড়ছে ফ্যাশন ডিজাইনিং এ সে তার ক্যারিয়ার ফ্যাশন ডিজাইনিং এ গড়তে চায়।

কবি মুনিরা চৌধুরীর মৃত্যুর খবর শুনে মনে হচ্ছিল এমন তীব্র সুন্দরী, যার জীবনে আপাত দৃষ্টিতে দেখলে সফল জীবন বলা যেতেই পারে। তিনি কেন এভাবে মরবেন ! শাইমাকে বললাম জানো সুসাইড করা খুব সাহসের কাজ। সে বলে তুমি কি তাই ভাবো ? আমি বললাম তাই তো হবার কথা। মৃত্যু যন্ত্রনা সইবার ও সাহস লাগে। মরলে তো মরেই গেলাম। শাইমা তখন বললো তার বাঁচতে ইচ্ছে করে না। সে কয়েকবার সুসাইডের এটেম্পট নিয়েছিলো। একবার গাড়ির সামনে দৌড় দিয়েছিলো আর একবার ঘুমের অষুধ খেয়ে – কিন্তু দুবারই বেঁচে গিয়েছে।

শাইমা বেশ সুন্দর। ওরা সিরিয়ান। সিরিয়ানরাও জাতিতে আরব। ওরা আরবী ভাষায় কথা বলে। দুইবোন ক্লাসে আসলেই হা হা হিহি করে অস্থির। সারাক্ষণ মোবাইলে কি সব দেখে আর হাসাহাসি করে। কিন্তু ওদের ভেতরের কষ্টটাকে দেখা যায় না। শাইমা বললো ওরা ৯ ভাইবোন। এক ভাই বিয়ে করে বউ বাচ্চা সহ মা বাবা ভাইবোনের সাথেই থাকে। বললাম শাইমা এত বড় পরিবার তোমাদের। বেশ আনন্দে কাটে সময় তোমাদের তাই না ?
শাইমা বললো না আনন্দে কাটে না। প্রতিদিনই নতুন নতুন ড্রামা। তাছাড়া ওর বাবা ভাই খুব সামান্য কারণে গায়ে হাত তুলে। সে তার স্ত্রীর উপর ও কারণে অকারণে গায়ে হাত তুলে – এসব কারণে সুসাইড করতে গিয়ে বিফল হয়েছিলো। শাইমা হিজাব পড়ে কিন্তু ওর বোন ইসরা এসব পড়ে না। তো আমি বললাম শাইমা তুমি হিজাব পড়ো তোমার বোন পড়ে না। এতে কি তোমার বাবা ভাই রাগ করে না ?
সে বলে যে করে কিন্তু ইসরা কথা শুনেনা কারো। ইসরার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু ওর স্বামী কথায় কথায় ইসরাকে মারে। অনেকদিন সহ্য করেছিলো কিন্ত সহ্যের সীমা অতিক্রান্ত হবার পরে ইসরা চলে এসেছে। ইসরার এক ছেলে আছে। সে আর স্বামীর ঘরে ফিরবে না। ইসরা দেখতে অসামান্যা সুন্দরী। ভাবলেও অবাক লাগে কি করে এমন অদ্ভুত সুন্দর মেয়ের গায়ে হাত তুলতে পারে !!

মজার কথা হলো ইসরা শাইমার বাবাও দুই বিয়ে করেছেন। আগের সংসারেও নয় ছেলেমেয়ে আবার ইসরা শাইমারাও নয় ভাইবোন। শাইমা বললো আগের সংসারের ভাইবোনরা তার মা’কে পছন্দ করে না। আমি বললাম দেখো তোমার বাবা যদি আবার বিয়ে করেন তোমরাও কিন্তু তার পরের স্ত্রী এবং তাদের ছেলেমেয়েদের পছন্দ করবে না। এটাই স্বাভাবিক।
সে মাথা নাড়লো – হুম ঠিক বলেছো –

ভাবছিলাম ওরা অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে এসেও কেনো সভ্য হতে পারে না। কিন্তু ভেনেসা আমার অস্ট্রেলিয়ান বন্ধুর স্বামী লেবানিজ আরব। সে জানালো সে বরং পরিবারে আধিপত্য খাটায়। সত্যি হলো মানুষ পরিবেশে এসেও পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু রক্তের যে পূর্বপুরুষের ধারা অব্যাহত আছে তা থেকে মুক্তি পেতে তাদের কত সময় লাগবে ?


অস্ট্রেলিয়ার জারাকান্দা ফুল। নভেম্বরে এই ফুলের সিজন।

দেশ বিদেশ – জার্নাল ডায়েরি

১. বন্ডাই জংশনে আমার খুব একটা কাজ পড়ে না। মাঝে মাঝে সেখানে যখন লোক থাকে না বা কেউ সিক কল দেয় তখন হাতের পাঁচ হিসেবে সম্ভবত আমার ডাক পড়ে। ভোর ৫ টা বাজে এক শিফট শেষ করে ঘরে ফেরার সময় মেইন কন্ট্রোল রূম থেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হয় – হাই নাজমুন তুমি কি ছয়টা বাজে বন্ডাই এর শিফট টা করতে পারবে ?
না বলতে না পারা আমার আর একটা অক্ষমতা। সারা রাত কাজ করে চুড়ান্ত রকমের ক্লান্ত হলেও আমি হাসিমুখে বলছি – না সমস্যা নেই। আমি পারবো – অতএব ছুটতে ছুটতে যাচ্ছি বন্ডাই জংশনে –

বন্ডাই কিন্তু খুবই সুন্দর এলাকা। বন্ডাই এ রয়েছে চমৎকার সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রসৈকতের কারণেই এখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। নাভিটাস থেকে আমাদের সাঁতার শেখানো হয়েছিলো। সেই সময় বন্ডাই এর সমুদ্র সংলগ্ন সুইমিং পুলে আমরা সাঁতার কাটতে এসেছিলাম। সাধারণ সুইমিংপুলের পানির চাইতে সমুদ্র সংলগ্ন সুইমিং পুলের পানি অনেকটাই ভারী। সাঁতার কাটতে গেলে অনুভব করি যে আপনা আপনি ভেসে আছি অনেকটাই। সমুদ্রের পানিতে লবন আছে বলে সাঁতার কাটা অনেকটা সহজ বুঝলাম।
বন্ডাই জাংশনে প্রায় সময় কাজ শেষ হয় সকাল ন’টায়। চুড়ান্ত রকমের ক্লান্ত পা আর একটুও চলছে না তবু উপরে যাই খেতে। সেখানে ম্যাকডোনাল্ডসে খেতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখছি সেখান থেকে সমুদ্র দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়া বৃক্ষের দেশ। দূর থেকে দেখছি সমুদ্রের নীল পানি। সারি সারি বৃক্ষ – বন নাকি ?
আহা এতো সুন্দর – মন চোখ দুইই জুড়ায় —

২.
অস্ট্রেলিয়া শুধু সমুদ্র বৃক্ষের শহর না। পাখির ও শহর। কত যে হরেক রকমের পাখি – সাদা, নীল, সবুজ, গেরুয়া ছোট ছোট পাখি কিচির মিচির করে উড়ে যাচ্ছে। সকাল সন্ধ্যায় কিচির মিচির করে করে মাথা খারাপ অবস্থা –
এক সকালে দেখি অনেকগুলো গাছের মধ্যে শুধু একটা গাছেই পাখিরা এসে বসছে। বিষয়টা কিছুতেই বুঝে আসলো না – কি আছে ঐ বৃক্ষে যা আর সব বৃক্ষে নাই ?

একদিন নেভিটাসে যাবার সময় ছোট একটা গাছে এতো চমৎকার পাখি বসেছে – পাখির গায়ের রঙ পালক নানা বর্ণে বিচিত্র এক সুন্দর রূপ পরিগ্রহ করেছে। এক ভদ্রলোককে দেখলাম নানাভাবে এই পাখির ছবি তুলছেন। আমারো ইচ্ছে করলে ফ্রেমে আটকে রাখি – কিন্তু ইচ্ছে মাঝে মাঝে জোরালো হয় না – যেভাবে হাঁটছিলাম এভাবেই হেঁটে গেলাম।

এই গাছে অনেকগুলো সবুজ নীল গেরুয়াতে মেশানো পাখি বসে আছে – আচ্ছা পাখি যখন সবুজ পাতার সাথেই মিশে একাকার হয়ে যায় তখন মনে হয় এই ক্যামোফ্ল্যাজ তাকে শিকারীর আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যই হয়তোবা – কিন্তু এই যে এখানে অসংখ্য পাখি বসে আছে এদের বোঝা যাচ্ছে কি ?


বৃক্ষের পাতার আড়ালে বসা পাখি।

প্রেমিক

দেখুন আজ কেমন বড় চাঁদ উঠলো
চলুন আজ আমরা প্রমত্তা নদীর ধারে বসি
গ্রহান্তরে যাই
কেমন করে চোখ এলিয়ে দুটো প্রাডো শুয়ে দেখছে আমাকে
ঝমঝম করা ট্রেন নামছে গলিতে
ঝিরঝির করছে বৃক্ষ
বাতাসের আজ ঊর্ধ্বগতি
পতনের জন্য আপনার বন্ধু বলছে
জেনে নিও নারীরা
পৃথিবীর সকল নারীর প্রেমিক আমি
আপনিও প্রেম কাতর বন্ধুর সাথে
তীব্র ঈর্ষায় জানালার পাশে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন
অথচ আমি বসে আছি নদীর ধারে
এই তীব্র চাঁদ আমার সয়না
এই তীব্র বাতাসে আমার বুক এফোড় ওফোড় হয়
চলুন বসি চাঁদের পাশে
হাত রাখি বিশ্বকর্মার গায়ে
প্রার্থনা করি
আপনি গান ধরুন
আহা – আজি এ বসন্তে এতো ফুল ফোটে —

যা দেখার তা দেখে নাও

আজ কাজ করছিলাম বন্ডাই জাংশনে।
এক ভদ্রলোক নানাভাবে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন। কাজ শেষে ম্যাকডোনাল্ডসে খেতে বসলাম। ভদ্রলোককে দেখলাম পিছু পিছু এসে সামনে বসলেন। এবার ভদ্রলোকের দিকে ভালো করে তাকালাম। লম্বা চওড়া ভদ্রলোক। দাড়ি টাড়ি সহ ভদ্রলোক বেশ দেখার মতো। কিন্তু তার জ্যাকেটের কোনাটা ছেঁড়া। না আর কোনো ধরণের চোখে পড়ার মতন দারিদ্র্য তার মধ্যে নেই। কিন্তু কিভাবে যেন বুঝে গেলাম তার আসলে কাজ নেই। আয় ইনকাম ও নেই।

এটা সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করার পর নিজের পরিচয় নিজেই দিলেন। উনি গ্রীসের লোক। আগে কাজ করতেন এখন করেন না। বুঝলাম সেন্ট্রাল লিঙ্ক নিয়ে চলেন। কিন্তু সেন্ট্রাল লিঙ্ক কাউকে খাবার দাবারের বন্দোবস্ত করার টাকা দিলেও বাসা ভাড়া তো আর দেয় না। ভদ্রলোক শক্ত সমর্থ। তাকে সেন্ট্রাল লিঙ্ক এমনিতে টাকাও দেবে না।

আমি প্রাচ্যের মানুষ। মনে হলো ক্ষুধার্ত লোক। তাকে সাধলাম খেতে। উনি খাবেন না খাবেন না করে খেতে শুরু করলেন। হয়তো তারা বুঝেন আমরা এই নিন্ম আয়ের দেশের মানুষেরা মায়াবতী। ভদ্রলোক অনেক কথা বলতে শুরু করলেন। তোমার ফেইস সুন্দর। তোমার নোজপিনটা কি বিয়ে হয়েছে বলে পড়েছ নাকি এমনিতেই পড়েছ?

মনে মনে আশংকিত হলাম। এদেশে জলপরীর মতো মেয়েরা অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায় আর বেটা আমারে সুন্দরী বলে প্রেইজ করছে। বেটার মতলব তো ভালো না। কিন্তু আজকাল মোবাইলের একটা ভালো সুবিধা আছে। আপনি কাউকে এভোয়েড করতে চাইলে ভালো করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি ওনার দু’একটা কথায় হু হা করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
উনি আর সুবিধা করতে পারলেন না। কিন্তু নিজেই ভয় পাচ্ছিলাম ভদ্রলোক আবার পিছ নেয় কিনা।

ভদ্রলোককে উপেক্ষা করে বন্ডাই এলাকাটা দেখতে বের হলাম।
আহা এতো সুন্দর এই এলাকা। চাইনিজদের বড় বড় সব সুপার শপ। একটা কিনলে একটা ছাড় পাওয়া যাবে – এসব লোভনীয় অফারে ভর্তি সব প্রোডাকটস দেখতে দেখতে এসব আর টানে না। এই এলাকায় কোনো স্পেশাল মেলা নাকি – বুঝতে পারলাম না – আবার জিজ্ঞেস করার মতো ইচ্ছেও করছে না। যা দেখার তা দেখে নাও যা শোনার তা শুনে নাও – সেও কি আর মন্দ অভিলাষ !

মৌখিক ভাষা বনাম প্রমিত ভাষা

ভাষা সবসময় সহজবোধ্যতা দাবী করেছে। ব্রাত্য রাইসুরা সরবে প্রমিত ভাষাকে অস্বীকার করে একদমই মুখের ভাষাকে সাহিত্যের ভাষা / বই এর ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন এবং চেষ্টা করে যাচ্ছেন। লিটল ম্যাগে অনেক প্রাবন্ধিকই এই মৌখিক ভাষার ব্যবহার করেছেন। ফেসবুকেও অনেকেই সেই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। অনলাইন সাহিত্য পত্রিকাগুলোও ধীরে একই পথের পথিক যেনোবা।

প্রথমে অভ্যস্ত হতে কষ্টই হয় পরে ধীরে ধীরে যেনবা সয়ে যায়।
পত্রিকা বিশেষ করে দৈনিক পত্রিকার ভাষাকে, টেক্সট বই এর ভাষাকে যদি সেই আন্দোলনের শামিল করতে পারা যায় তখন সম্ভবত তারা পুরোই সফল হবেন। ভাবতে পারছিনা ইতিহাস পড়তে গেলে তখন কেমন লাগবে কিংবা বিজ্ঞান এর বইগুলোই বা কেমন লাগবে !!
শিশুদের জন্য লিখিত কবিতাগুলোর রূপই বা কেমন হবে !!
“অজগর ওই আইতাছে তাইড়া
আমটা আমি খামু পাইড়া” – ভাবলেই কেমন যেনো লাগে !!

প্রমথ চৌধুরীকেও চলিত ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথেষ্ঠ কাঠখর পোড়াতে হয়েছে। তবে চলিত ভাষার জন্য স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়েছিল ভাগীরথী তীরের মানুষের মুখের ভাষাকে।
এই যে মৌখিক ভাষা — এর স্ট্যান্ডার্ড কোনটা ধরা হয়েছে ?
সে কি শুধু ঢাকা বা তার আশেপাশে শহুরে লোকদের মুখের ভাষাকে ধরা হচ্ছে ?

কোহকাফ

কোহকাফ-
=======
কি করে মরে গেলে কোহকাফ নগরে এসে ?
কি ছিলো মৃত্যুতে ? বিষের চাইতে অমৃত অথবা বেশী কিছু ?
কেন ঠোঁটের কাছে নিয়ে এলে রাত্রি ?
সোপেন হাওয়ারকে বলা ছিলো – জীবন এক নৌকো –
পার হবো নদী – সমুদ্র হলেও ক্ষতি নেই –
বুক জ্বলে যায় এই নগরীতে –
বিষ এর নগরী কোহকাফ
এত ধীরে কেন যে হাঁটে ?

ক্ষরণ
======
আন্তিউস-চলো এলোমেলো হয়ে যাই —
চলো একটা থামের আড়ালে চুমু খাই –
বেনারসে রাধা যেমনি জঠরে পাকিয়েছিলো
দশটা সন্তান –
তেমনি সন্তান হোক তোমার –
আন্তিউস তুমি বেদনাহত পেঁচা –
রাত ঘন হলে হা হা করে পাখা মেলো –
চুপি চুপি ওদের সাথে কথা বলো –

ওরা তোমার চোখের মণিতে এঁকেছে ট্যাটু –
তুমি অন্ধ হয়েছ –
শালুকের দেশের পাখিদের বোবা কান্নার সাথে মিশেছে
নাজারাতের পরীদের অন্ত:ক্ষরণ —

নস্টালজিয়া

পা ব্যথা নিয়ে ডক্টরের কাছে গেছি। এর আগেও আর একজনের কাছে গেছি। সেই মেয়ে ইয়াং ডক্টর। অভিজ্ঞতা বলে কথা। সে কিছুই বুঝতে পারছে না কি হলো। কিন্তু আজকের উনি বয়স্ক হলেও খুব মিষ্টি। আর খুব মুরুব্বী ভাব।

এখানের ডক্টর রুম থেকে এসে ডেকে নিয়ে যায় রোগীকে। এতে ভালো যে ডক্টরের মধ্যে ইগো ভাবটা ভ্যানিস হয়ে যায়। রোগী গুরুত্বপূর্ণ। উনি আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে বললেন তুমি খুব মিষ্টি। এতো পোলাইটলি কথা বলো। তুমি খুবই কাইন্ড হার্টেড। আমি কিছুটা ইমোশনাল হয়ে গেলাম। আমি জানি এই গুণগুলো আমার আছে। কিন্তু অনেক মানুষ আছে এর সুযোগ নিয়েছে।


যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। নানীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন নানীর ঘরে আমার ছোট খালা আমি আর নানী। পাশের ঘরের আমাদের এক মামাত ভাই এর সাথে আমার প্রচণ্ড ভাব হয়ে গেলো। তার বয়েস সাত। যে কদিন নানীদের বাড়িতে ছিলাম সারাক্ষণ নিশাদের সাথে ঘুরি ফিরি গল্প করি। সপ্তাহ খানেক পরে বাসায় ফিরলে আমি নিশাদকে ভুলতে পারলাম না। প্রচণ্ড কষ্ট হতে লাগলো। নামাজ পড়ে দোয়া করতে লাগলাম নিশাদ যেনো আমাদের বাসায় আসে। আশ্চর্য – মানুষ এমন কেন ?


এই সিডনী শহরে হাঁটলে আমার কেনো জানি ছোটবেলার শহরের কথা মনে পড়ে। সরকারী কোয়ার্টার, এতো নির্জন কোলাহল বিহীন শহর। রাস্তার দুপাশে কৃষ্ণচুড়া গাছে লাল ফুল যেনো আগুন লাগতো গাছগুলোতে। পাহাড়ের কোলে আমাদের বাসাটা থেকে পাহাড়টাকে প্রচণ্ড কাছের মনে হতো। দুপুর হলে কি যে নেশা ছিলো – বেরিয়ে পড়তাম, তাতে আমার মা জননী যে অত্যাচারগুলা আমার উপর করতো সে নাইবা বললাম।

দেশ ছেড়ে এলাম। একা যখন হাঁটি তখন বুকের ভেতর চিনচিন করে। দেশ ছেড়ে আসা, কাছের মানুষজনের জন্য, দেশের জন্য বুকের গহীনে শব্দ করে ব্যথা জাগায়।
আহা !!
মানুষকে তো পৃথিবীও ছেড়ে যেতে হয় –

চলো হে রাজার কুমার

চলো সিদ্ধার্থ রাজার কুমার
বের হয়ে যাই
দেখো এমন চনমনে বাতাস
আকাশে ঘুড়ি উড়ছে
হিজাব পড়ে চোখ ভ্রুতে শিল্পের ছোঁয়ায়
আরব তরুণী কিনছে অগণিত লাশ
অজিরা ফুরফুরে মেজাজে খালি গায়েই
নেমে পড়েছে নগ্ন রাস্তায়
গেরুয়া পোশাক পড়ে ঝুকে ঝুকে হাঁটছে অসি বৃদ্ধ
তার হাজার বছরের দেনায় শনের মত সাদা চুল
পত পত করে উড়ছে
ভালোবাসার জন্যে ওর বুক জ্বলে ছাই হয়ে গেছে
ফিস ফিস করে বলছি
দোহাই তোমরা একটু চুপ থাকো –
আজ আমাদের ভালোবাসার রাত ঘনীভুত হয়েছে –
আমরা জমে যাচ্ছি শীতে
আরো ঘন হচ্ছি শীতের দুপুরে –
সিদ্ধার্থ আজ এমন ধোঁয়াশায়
হাত ধরো
ভালোবাসো –
প্রেম করো –
বৃক্ষের গায়ে গায়ে লতিয়ে পড়ছে
এমন গন্ধবিহীন লালচে ফুল
সাপের মতো চোখ তুলে তাকায়
আমি হিম হিম শীতে তার গায়ে হাত রাখি
সিদ্ধার্থ যদি শীত থাকে
উষ্ণ হয় বাতাস
আর একবার ঘন হয়ে বসো
সাইরেন বাজিয়ে বলো
আমাদের আর কত দেরী
জীবনের কাছে যেতে
আমরা যে মরে গেছি
সীমানা পার হতে হতে