সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের- শরতে কাশফুল নয়, প্রিয় ছিলো পূজোর ছুটি। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা, প্রতীমা দর্শন। অনিন্দ্য সুন্দরী কত দেবী, আহা জীবন্ত। বুকের ভেতর মোচর, মনের আকাশ জুড়ে প্রেমমেঘ, শর্তহীন সমর্পণের আরতি পাঠ।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের- ঈদের নামাজ শেষে কদমবুসি। এরপর কোনো এক শাদা দোতালা বাড়ি বা হলুদ দালানের পাশে ঈদ। যদি তারে দেখা যায় জানলায় এক পলক। যদি দুপুরের কড়া রোদে হেসে ওঠে চাঁদ। “আজ ভুলে যা তোর দোস্ত দুশমন/হাত মেলা হাতে” দর্শনে অপার বিশ্বাস ও আস্থা এনে তার হাত স্পর্শের গাঢ় প্রতিজ্ঞা আমাদেরই। প্রতিজ্ঞার মুখোমুখি সব দুষমন প্রেমিকার ছোটো বড় সব ভাই- আমাদেরই সম্ভাব্য শালা-সমুন্দী সকল।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের- পৃথিবীর যত প্রেম, পৃথিবীর যত বিরহ, পৃথিবীর যত বিচ্ছেদ, যত নিদ্রা ও নিদ্রাহীনতা, যত জীবনানন্দ দাশ আর কারো নয়, শুধু আমাদের। পরীক্ষার ফল দেখে যত উচ্ছাস ও হতাশা সব আমাদের। সরল অঙ্ক, ইংরেজী ব্যাকরণ আর জ্যামিতির যত বিরক্তি সেও আমাদেরই।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের- শোক আর দ্রোহ মিলেমিশে একাকার। “আমার ভাই মরলো কেনো, খুনী এরশাদ জবাব চাই” শ্লোগানে শ্লোগানে, “এরশাদ তুই স্বৈরাচার, এই মুহুর্তে গদি ছাড়” দাবীতে দাবীতে, “স্বৈরাচারের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও”, মিছিলে মিছিলে মুষ্টিবদ্ধ সব হাত আমাদের, রাজপথে অক্লান্ত সব পদছাপ আমাদের।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের- পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে দু’দিনের অসহ্য যন্ত্রণা সয়ে ফের মিছিলে মিছিলে যত মুখ সব আমাদের, যত কণ্ঠ সব আমাদের। সব ক্রোধ ও জেদ নিম্নচাপের মত ঘণীভূত – “স্বৈরাচারের আস্তানা ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও” এবং একদিন পৃথিবীর আয়ুর সমান উল্লাস জুড়ে “এইমাত্র খবর এলো, খুনী এরশাদ পালিয়ে গেলো”।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের- শরীরে ধরেছে জরা, মনে ভয়, মগজে গুণগুণায় আতঙ্ক- শামুকের মত ঢুকে পরো খোলসে, নিরাপদে থাকো। শুধু বয়সটাই বাড়লো না- অসহ্য বয়স, আমাদেরই অসহ্য বয়স।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের। মগজে গুণগুণায় আতঙ্ক- শামুকের মত ঢুকে পরো খোলসে। অসহ্য বয়স, আমাদেরই অসহ্য বয়স। আমাদের এই সব দিন রাত্রি।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের।
ভীষণ ভালো লাগলো আপনার এই অকবিতাটি হরবোলা আবু সাঈদ ভাই।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের- শরতে কাশফুল নয়, প্রিয় ছিলো পূজোর ছুটি।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের।
আমাদের সময়ের কথা।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের- পৃথিবীর যত প্রেম, পৃথিবীর যত বিরহ, পৃথিবীর যত বিচ্ছেদ, যত নিদ্রা ও নিদ্রাহীনতা, যত জীবনানন্দ দাশ আর কারো নয়, আমাদের।
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের।
অসহ্য বয়স
সে এক অসহ্য বয়স ছিলো আমাদের।