৩৬।
ওরা বের হয়ে কাছের যে টিউব স্টেশন সেটা ফিরোজের বাড়ি থেকে মাত্র দুই মিনিটের পথ, ওখানে যেয়ে ফিরোজের কথা মত দুইটা ডে টিকেট নিয়ে একটা টিউব ম্যাপ নিয়ে সেন্ট্রাল লাইনে চেপে বসল। ইস্ট একটন স্টেশনটা টিউব স্টেশন হলেও মাটির উপরে। তবে ট্রেন মিনিট তিন চারেক চলার পরেই সুরঙ্গের মত লাইনে ঢুকে পরে। ওখান থেকে স্টার্টফোর্ড স্টেশনে নেমে জুবিলী লাইন ধরে ক্যানিং টাউন স্টেশনে নেমে উপরে উঠে ভদ্র মহিলার কথামত পূর্ব দিকে কিছুটা যাবার পর ম্যাকডোনাল পার হয়ে চার মিনিট হেঁটে বাসা পেল।
-মনিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো তুমি চিনলে কি ভাবে?
-তুমি তো হারিয়ে যাবার ভয়ে আমার সাথে আসতেই চাইছিলে না। এখন বল তোমাকে অযথা হাঁটিয়েছি?
-না।
-তাহলে আসতে চাওনি কেন? মনে নেই সেবার কলকাতায় কি করেছিলে? ওই যে চুরির দোকান থেকে ভিড়ের জন্য বাইরে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর তুমি আমাকে দোকানের ভিতর না দেখে কাঁদতে কাঁদতে বাইরে চলে এসেছিলে, মনে আছে?
-সেই কথা বলছ? ইস সেদিন যে আমি কি ভয় পেয়েছিলাম!
-তুমি ভাবলে কি করে তোমাকে ফেলে আমি চলে যাব? এত ভয় কিসের?
পথে যে স্টেশনেই থেমেছে বিভিন্ন বর্ণের, বিভিন্ন গড়নের, বিভিন্ন ভাষার মানুষ শুধু দৌড়াচ্ছে। কারো এক মুহূর্ত সময় নেই। এই বুঝি কি যেন চলে গেলো এমন ভাব। ট্রেনে উঠে সবাই যার যার মত হাতের ব্যাগ থেকে বের করে বই বা পত্রিকা পড়ছে। কারো অন্য দিকে তাকাবার মত সময় বা ইচ্ছা কোনটাই নেই প্রয়োজনও নেই অবাঞ্ছিত কৌতূহলও নেই।
-মনিরা জিজ্ঞেস করলো ওরা দৌড়াচ্ছে কেন?
-ওদের কাজ আর কাজ, একটা মুহূর্ত নষ্ট করার মত এতো সময় ওদের নেই তাই এমন করে দ্রুত হাঁটছে দৌড়াচ্ছে না। আশে পাশে কে কি করছে তা দেখার মত সময় বা ইচ্ছা কোনটাই ওদের নেই সবাই নিজের মাথা ব্যথা নিয়েই ব্যস্ত। দেখেছ, পুরুষ মহিলার মধ্যে কোন তফাত আছে? সবাই সমান তালে হাঁটছে। বাড়ি থেকে নাশতা করার সুযোগ বা সময় পায়নি তো কি হয়েছে, স্টেশনের দোকান থেকে স্যান্ডউইচ বা অন্য কিছুর সাথে একটা পানীয় কিনে খেতে খেতে হাঁটছে, কোথাও বসে খেতে গেলে সময়ে কুলাবে না। এটা তো আর আমাদের ঢাকা শহর নয়, এটা হচ্ছে লন্ডন মহা নগরী!
* শুভ কামনা সুপ্রিয়….
শ্রদ্ধেয় কবিকে শুভেচ্ছা। সাথে শুভকামনা।
শুভেচ্ছা খালিদ ভাই।