৪৩।
বাসায় এসে ওরা উপরে গিয়ে শীতের কাপড় বদলে নিচে নেমে এসে দেখে ফিরোজ একটা বাংলা পত্রিকা নিয়ে বসে আছে। রাশেদকে দেখে বললো-
-দেখ এখানে রেস্টুরেন্টের কাজের অনেক বিজ্ঞাপন আছে, কিছু জব সেন্টারের ঠিকানাও আছে। তুমি কাল কোন একটা জব সেন্টারে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখ কি বলে। এই সব জব সেন্টারে রেস্টুরেন্টের কাজের চাহিদা আসে, ওরা কোথাও প্রোভাইড করে দিতে পারবে তবে ওরা একটা ফি নিবে। আমি এই ব্যবসা অনেক আগে ছেড়ে দিয়েছি বলে এই লাইনের কারো সাথে যোগাযোগ নেই না হলে আমিই করে দিতে পারতাম। এখানে এই কাজই বাঙ্গালিদের জন্য সবচেয়ে ভাল। থাকা খাওয়ার কোন চিন্তা নেই, সপ্তাহ পার হলেই কিছু বেতন পাবে, সপ্তাহে এক দিন ছুটি। তোমার কোন অভিজ্ঞতা নেই বলে প্রথম দিকে বেশ কম দিবে তবে আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা বাড়বে সে সাথে বেতনও বাড়বে। আমার মনে হয় এটাই ভাল, ভাবী কি বলেন?
-আমি আর কি বলবো ভাই আপনি যা ভাল মনে করেন তাই করেন। কাল কিন্তু আমার যাবার ব্যবস্থা করবেন।
-আচ্ছা সে দেখা যাবে আগে ওর কিছু হোক, তারপর আপনি যাবেন। ওর কিছু হওয়া পর্যন্ত আপনি থাকেন।
এমন সময় ভাবী কিচেন থেকে খাবার জন্য ডাকলেন।
পরদিন সকালে রাশেদ সাহেব ওই পত্রিকাটা হাতে নিয়ে বের হয়ে টিউবে করে ইস্ট লন্ডনের ব্রিক লেনের দুই একটা জব সেন্টারে গেলেন। তাদের কাছে কাজের কথা বলতেই বলে ফেলল আপনার বয়স হয়েছে এখন আর এসব কাজ আপনাকে দিয়ে হবে না, রেস্টুরেন্টের মালিকেরা সবাই ইয়াং ম্যান চায়। রাশেদ সাহেবের মনটা দমে গেলো। সেখান থেকে বের হয়ে পত্রিকা দেখে ঠিকানা বের করে আর একটা সেন্টারে গেলো। কাজের কথা বললো।
-আপনার কি কোন অভিজ্ঞতা আছে?
-না।
-ইংরেজি জানেন?
-কোন রকম কাজ চালাতে পারব মনে হয়।
-কি কাজ করবেন?
-দেখুন আমার কিছুই জানা নেই, যা হয় তাই দেন।
-আচ্ছা কিচেন পোর্টারের কাজ করতে পারবেন?
-এটা আবার কি কাজ?
-তাও জানেন না?
-কিচেন পোর্টার হলো হাড়ি পাতিল ধোয়া, বাসন পেয়ালা ধোয়া, আলু পিঁয়াজ ছিলবেন আর সেফ যা হুকুম করে তাই করবেন, পারবেন?
-রাশেদ সাহেব না বুঝেই বলে ফেললো, হ্যাঁ পারবো।
লোকটা একটা ডাইরি উল্টিয়ে ফোন নম্বর বের করে ফোন করে জানতে চাইল আপনারা একজন কিচেন পোর্টার চেয়েছিলেন, নতুন এসেছে কোন অভিজ্ঞতা নেই, চলবে? হ্যাঁ নেন আপনি নিজেই কথা বলেন বলেই রিসিভারটা রাশেদ সাহেবের হাতে দিয়ে দিলো।
রাশেদ সাহেব ফোন হাতে নিয়ে সালাম জানালো, কি বলতে হবে কিছুই জানে না।
ওপাশ থেকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় জানতে চাইল -কবে এসেছেন?
-এইতো তিন দিন।
-ভিসা আছে?
-হ্যাঁ আছে।
-কাজ করতে পারবেন তো?
-চেষ্টা করে দেখব।
-আমাদের এখানে থাকবেন, খাবেন, সপ্তাহে একদিন ছুটি আর সপ্তাহে একশত বিশ পাউন্ড মজুরী পাবেন।
-আছা ঠিক আছে।
-কবে আসতে পারবেন?
এবার রাশেদ সাহেব একটু মনির কথা ভেবে নিলেন হয়তো তিন চার দিনে ও যেতে পারবে, ভেবে নিয়ে চার দিন সময় চাইলো।
বলেই ফেললো -দেখুন আমার স্ত্রী চলে যাবে সে গেলেই আমি আসতে পারব। এখনও তার টিকেট কনফার্ম করা হয়নি, আজ করবো।
-আছা ঠিক আছে যেখান থেকে কথা বলছেন ওদের কাছে আমাদের ফোন নম্বর ঠিকানা সব আছে আপনি এখানে এসে ফোন করলে আমাদের লোক এগিয়ে নিয়ে আসবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-তাহলে এই কথা রইলো, আপনি চার দিন পর আসছেন।
-হ্যাঁ ঠিক আছে।
ফোন রেখে দেয়ার পর এক লোক এসে জানতে চাইল, আচ্ছা আমাদের যে কিচেন পোর্টার চেয়েছিলাম তার কি করেছেন? হ্যাঁ এইতো, বলে রাশেদ সাহেবকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন এই যে ইনি।
আপনি যেখানে যাবেন ইনি সেখানকার কুক, এনার সাথে কথা বলেন।
-আচ্ছা, আমি রাশেদ।
-আমি মারুফ বলে দুই জনে হ্যান্ড সেক করে আলাপ শুরু করলো।
-ভাই আমিতো একেবারে নতুন কি ভাবে যেতে হবে, ওখানে কি কাজ করতে হবে একটু দেখিয়ে দিতে হবে।
-হ্যাঁ সব দেখিয়ে দিব নেন এই ঠিকানাটা রাখেন। কোথা থেকে যাবেন, ভিক্টোরিয়া?
-না সম্ভবত আমাকে হিথরো থেকে যেতে হবে।
-আচ্ছা ঠিক আছে যেখান থেকেই যান অক্সফোর্ড নেমে বের হয়ে এসে আবিংডনের বাস ধরবেন, যেখানে এসে থামবে তার কাছেই রেস্টুরেন্ট। তাহলে কবে আসছেন?
রাশেদ সাহেব সব খুলে বললো,
-সে যাবার সাথে সাথেই আমি আসতে পারব। আজই টিকেট কনফার্ম করবো দেখি কবে সিট পাই। বুঝতেই তো পারছেন ভাই আমি এ লাইনে একেবারে নতুন কাজেই আমাকে সব শিখিয়ে নিতে হবে।
-হ্যাঁ হ্যাঁ সে জন্য ভাববেন না। আপনি সময় মত চলে আসবেন। তাহলে ভাই আসি।
পড়লাম খালিদ ভাই।
বহুত আচ্ছা বাত হায়।
উপন্যাসের সাথে আছে কবি খালিদ উমর ভাই।
তাই থাকুন৷ ধন্যবাদ।
চলুক মেগাসিরিয়াল….
মগা সিরিয়াল চলছে চলবে চলুকনা!
চলমান।
চলতেই থাকবে, চলুক ক্ষতি কি!