নক্ষত্রের গোধূলি-৪২

৫৭।
রাশেদ সাহেব উপরে এসে নিজের বিছানায় বসলেন সারা দিনে নামাজ পড়া হয়নি। তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে ওজু করে রুমে আসতে আসতে পানি শুকিয়ে গেছে আর তোয়ালে বের করার দরকার নেই। কিন্তু জায়নামাজটা মনে হয় বের করতে হবে। একটু এদিক ওদিক তাকাতেই চেয়ারের উপর দেখলেন জায়নামাজ। দেখে বুঝলেন নুরুল ইসলামের হয়তো হবে এটা। এখন কেবলা? না এবার তো নিচে যেতেই হবে। নিচে গিয়ে দেখে সবাই তাস নিয়ে বেশ ভাল জমিয়ে নিয়েছে।
-আচ্ছা ভাই কেবলা কোন দিকে?
নুরুল ইসলাম ওই ঘরেই দেখিয়ে দিল এই যে এই দিকে।
উপরে এসে নামাজ পড়ে নিলেন।
এতো রাত হয়েছে তবুও বাইরে নারী পুরুষের হৈ চৈ হাসা হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। জানালার ডবল কাচ ভেদ করে সে শব্দ আসছে। দেখার মত কৌতূহল নেই। বেশিক্ষণ বসলেন না। উঠে সুটকেসটা খুলে লুঙ্গি আর শোবার কাপর চোপর টুকি টাকি বের করে টেবিলের উপর রাখলেন। কাপর বদলে বিছানায় বসে একটা সিগারেট বানালেন। ঘরটা বেশ ঠাণ্ডা, মনে হয় হিটার নেই। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে তার বেডের পাশেই তো হিটারের রেডিয়েটার। রেডিয়েটার ছুঁয়ে দেখলেন ঠাণ্ডা। তার মানে কাজ করছে না। যাক এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। তেমন ঠাণ্ডা লাগছে না গায়ে তো থার্মাল পাজামা আর থার্মাল ফুল স্লিভ গেঞ্জি রয়েছে। বালিশে হেলান দিয়ে সিগারেট টানতে টানতে আস্তে আস্তে একটা একটা করে সারা দিনের সব ছবি গুলি মাথায় এসে ভিড় করলো। মনি কোথায়? ঘড়ির দিকে তাকাল। দেড়টা বাজে। মনি এখন কুয়ালালামপুরে। ও কি ঠিক ঠাক মত চেক আউট করতে পেরেছে? হোটেলে যাওয়া এসব কি করতে পেরেছে? প্লেনে কি শ্বাসকষ্ট হয়েছিলো? কি করেছে তা হলে? না কিছুই হয়নি, মনি ভালোই আছে এবং কুয়ালালামপুরে হোটেলে শুয়ে আছে। তবে ঘুমুতে পারছেনা। যাক ও ভাল থাকুক ভাল ভাবে দেশে গিয়ে পৌঁছুক। একটু চা হলে ভাল হোত। আবার নিচে গিয়ে কবিরকে বললো –
-ভাই চায়ের ব্যবস্থা আছে নাকি?
-নিচে যান, লাইট জ্বালাতে পারবেন? নেমেই ডান দিকে সুইচ, লাইটটা জ্বালিয়ে সামনে টেবিলের পাশে দেখবেন কেটলি আর পাতা দুধ চিনি এগুলি আছে। কেটলির নিচের সেলফের ভিতর কফিও আছে যা ইচ্ছা খেয়ে আসেন।
-আপনারা কেও খাবেন?
-এইতো একটু পরেই তো সেহেরি খাবো তখন একবারে খাবো।
-তাহলে আমি এখন একটু খেয়ে আসি তখন না হয় আপনাদের সাথে আবার এক কাপ খাবো।
-তা খাবেন। খাবার ব্যাপারে কোন নিষেধ নেই। যখন যা ইচ্ছা খাবেন তবে একটা কথা মনে রাখবেন এখানে সবাই কাজের জন্য বলবে কিন্তু কেও আপনাকে খেতে বলবে না কাজেই সেটা নিজেকেই করতে হবে।
-হ্যাঁ ঠিক বলেছেন এটাই স্বাভাবিক, ঘরের বাইরে এমনই হয় এতে কিছু মনে করার মত নেই।

আসাদ যে ভাবে বলে দিয়েছে সেভাবেই চা, কেটলি, কাপ সব পেয়ে কেটলিতে পানি দিয়ে সুইচ অন করে দিয়ে কিচেনটা আবার একটু চোখ মেলে দেখে নিলেন। এর মধ্যে পানি ফুটে উঠলে কাপে ঢেলে লাইটটা নিভিয়ে চামচ দিয়ে নারতে নারতে উপরে নিয়ে এলেন। সে ডায়াবেটিস রুগী, সুইট্যাক্স নিচে নিয়ে যায়নি। উপরে এসে ব্যাগ থেকে সুইট্যাক্স বের করে কাপে দিয়ে নেরে নিয়ে চামচটা পিরিচে নামিয়ে রেখে একটা চুমুক দিতেই মনটা বেশ ভাল লাগল।

14 thoughts on “নক্ষত্রের গোধূলি-৪২

  1. রাশেদ সাহেবের সাথে আজকের সন্ধ্যাটি কাটলো। শুভেচ্ছা জানবেন।

  2. ধারবাহিকটি গতকাল পড়া সম্ভব হয়নি খালিদ ভাই। আজকে পড়লাম। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।