দেশ বিদেশ – জার্নাল ডায়েরি

১. বন্ডাই জংশনে আমার খুব একটা কাজ পড়ে না। মাঝে মাঝে সেখানে যখন লোক থাকে না বা কেউ সিক কল দেয় তখন হাতের পাঁচ হিসেবে সম্ভবত আমার ডাক পড়ে। ভোর ৫ টা বাজে এক শিফট শেষ করে ঘরে ফেরার সময় মেইন কন্ট্রোল রূম থেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হয় – হাই নাজমুন তুমি কি ছয়টা বাজে বন্ডাই এর শিফট টা করতে পারবে ?
না বলতে না পারা আমার আর একটা অক্ষমতা। সারা রাত কাজ করে চুড়ান্ত রকমের ক্লান্ত হলেও আমি হাসিমুখে বলছি – না সমস্যা নেই। আমি পারবো – অতএব ছুটতে ছুটতে যাচ্ছি বন্ডাই জংশনে –

বন্ডাই কিন্তু খুবই সুন্দর এলাকা। বন্ডাই এ রয়েছে চমৎকার সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রসৈকতের কারণেই এখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। নাভিটাস থেকে আমাদের সাঁতার শেখানো হয়েছিলো। সেই সময় বন্ডাই এর সমুদ্র সংলগ্ন সুইমিং পুলে আমরা সাঁতার কাটতে এসেছিলাম। সাধারণ সুইমিংপুলের পানির চাইতে সমুদ্র সংলগ্ন সুইমিং পুলের পানি অনেকটাই ভারী। সাঁতার কাটতে গেলে অনুভব করি যে আপনা আপনি ভেসে আছি অনেকটাই। সমুদ্রের পানিতে লবন আছে বলে সাঁতার কাটা অনেকটা সহজ বুঝলাম।
বন্ডাই জাংশনে প্রায় সময় কাজ শেষ হয় সকাল ন’টায়। চুড়ান্ত রকমের ক্লান্ত পা আর একটুও চলছে না তবু উপরে যাই খেতে। সেখানে ম্যাকডোনাল্ডসে খেতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখছি সেখান থেকে সমুদ্র দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়া বৃক্ষের দেশ। দূর থেকে দেখছি সমুদ্রের নীল পানি। সারি সারি বৃক্ষ – বন নাকি ?
আহা এতো সুন্দর – মন চোখ দুইই জুড়ায় —

২.
অস্ট্রেলিয়া শুধু সমুদ্র বৃক্ষের শহর না। পাখির ও শহর। কত যে হরেক রকমের পাখি – সাদা, নীল, সবুজ, গেরুয়া ছোট ছোট পাখি কিচির মিচির করে উড়ে যাচ্ছে। সকাল সন্ধ্যায় কিচির মিচির করে করে মাথা খারাপ অবস্থা –
এক সকালে দেখি অনেকগুলো গাছের মধ্যে শুধু একটা গাছেই পাখিরা এসে বসছে। বিষয়টা কিছুতেই বুঝে আসলো না – কি আছে ঐ বৃক্ষে যা আর সব বৃক্ষে নাই ?

একদিন নেভিটাসে যাবার সময় ছোট একটা গাছে এতো চমৎকার পাখি বসেছে – পাখির গায়ের রঙ পালক নানা বর্ণে বিচিত্র এক সুন্দর রূপ পরিগ্রহ করেছে। এক ভদ্রলোককে দেখলাম নানাভাবে এই পাখির ছবি তুলছেন। আমারো ইচ্ছে করলে ফ্রেমে আটকে রাখি – কিন্তু ইচ্ছে মাঝে মাঝে জোরালো হয় না – যেভাবে হাঁটছিলাম এভাবেই হেঁটে গেলাম।

এই গাছে অনেকগুলো সবুজ নীল গেরুয়াতে মেশানো পাখি বসে আছে – আচ্ছা পাখি যখন সবুজ পাতার সাথেই মিশে একাকার হয়ে যায় তখন মনে হয় এই ক্যামোফ্ল্যাজ তাকে শিকারীর আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যই হয়তোবা – কিন্তু এই যে এখানে অসংখ্য পাখি বসে আছে এদের বোঝা যাচ্ছে কি ?


বৃক্ষের পাতার আড়ালে বসা পাখি।

16 thoughts on “দেশ বিদেশ – জার্নাল ডায়েরি

  1. প্রবাসের ডায়েরি আমার ভীষণ পছন্দের একটি বিষয়। যতটা পারি মন দিয়ে পড়ি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  2. অস্ট্রেলিয়া শুধু সমুদ্র বৃক্ষের শহর না। পাখির ও শহর। সুন্দর বর্ণনা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

  3. লেখনী পড়ে মন চাইছে উড়ে গিয়ে দেখি। কিন্ত পারি না, পাখির মতো ডানা নেই বলে। তবুও আপনার পোস্টে অনেকক্ষণ উড়াউড়ি করেছি। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয়।           

    1. হয়তো একসময়  অস্ট্রেলিয়াতে ওড়াওড়ি করবেন।আপনার জন্য শুভকামনা রইলো      

  4. ডাইরি পড়ে মনে হচ্ছে মনের জানালা খুলে উকি দিয়ে দেখছি আকর্ষণীয় কিছু একটা।…

     

    Anotorik শুভেচ্ছা জানাই প্রিয় প্রবাসী বোন নাজমুনকে।  ভালো থাকুন অনন্তকাল ধরে।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।