বিভাগের আর্কাইভঃ জার্নাল ও ডায়েরী

শেখ হাসিনা, বেচে থাকুন বাংলাদেশের জন্য

Poli

মানবতার জননী
দেশরত্ন, বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন!..
দীর্ঘায়ু লাভ করুন
বেঁচে থাকুন বাংলাদেশের জন্য!..

আজ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠা কন্যা, স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক, মাদার অফ হিউম্যানিটি, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য স্টাটিসটিকস্ এর সেরা প্রধানমন্ত্রী জরিপে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্মদিন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নব পর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা। হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কাণ্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্নসারথি। বিশ্বরাজনীতির উজ্জ্বলতম প্রভা, বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনগ্রসর জাতি-দেশ-জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র, বিশ্বনন্দিত নেতা। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ‘নীলকণ্ঠ পাখি’, মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্ত মানবী। তিমির হননের অভিযাত্রী, মাদার অব হিউম্যানিটি। আত্মশক্তি-সমৃদ্ধ সত্য-সাধক। প্রগতি-উন্নয়ন শান্তি ও সমৃদ্ধির সুনির্মল-মোহনা। এক কথায় বলতে গেলে সমুদ্র সমান অর্জনে সমৃদ্ধ শেখ হাসিনার কর্মময় জীবন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রাজ্ঞতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার মুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতে হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। এই নিভৃত পল্লীতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মাতার নাম বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। তিনি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। শৈশব কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায় বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলে-পিঠে। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি, রাজরোষ আর জেল-জুলুম ছিল তাঁর নিত্য সহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং রাজনীতি নিয়েই শেখ মুজিবুর রহমানের দিন-রাত্রি, যাপিত জীবন। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতার দেখা পেতেন কদাচিৎ। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জ্যেষ্ঠা সন্তান। তার কনিষ্ঠ ভাই-বোন হলেন- শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন। গ্রামের সাথে তাই তাঁর নিবিড় সম্পর্ক।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তাঁর পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসনে। পুরানো ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস শরু করেন ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর। এ সময় শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেত্রী হিসাবে তিনি আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন-নিপীড়ন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দায়ের করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তাঁর জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর শঙ্কা, অনিশ্চয়তা ও অসহনীয় দুঃখ-কষ্ট। এই ঝড়ো দিনগুলিতেই, কারাবন্দী পিতার আগ্রহে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় বাঙালি জাতির ১১-দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকহানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যায় তখন বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই গৃহবন্দি থাকাবস্থায় শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে তিনি মুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর তার কন্যা সন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল জন্ম লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এসময় বিদেশে থাকায় পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক কাউন্সিল অধিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশ-মাতৃকার হাল ধরার। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর ধরে সামরিক জান্তা, স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চলে একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেলজুলুম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাঁকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাঁর সরকারের আমলেই ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি। সম্পাদিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। বাংলাদেশ অর্জন করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতি নেমে আসে ১.৫৯ শতাংশে। দারিদ্র্য হ্রাস পায়। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় ’৭৫ পরবর্তী সময়ের স্বর্ণযুগ হিসেবে।

২০০১ সালের ষড়যন্ত্র ও কারচুপির নির্বাচনের পর বিএনপি-জামাত অশুভ জোট ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ সময় দমন-নিপীড়নের মাধ্যমে জোট সরকার সারাদেশে কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। হত্যা করা হয় ২১ হাজার দলীয় নেতা-কর্মীকে। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট তদানীন্তন বিএনপি-জামাত জোটের সরকারি মদদে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে চালানো হয় পরিকল্পিত নারকীয় গ্রেনেড হামলা; যার প্রধান লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। গুরুতরভাবে আহত হলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তবে এই হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন অসংখ্য নেতা-কর্মী। বাংলাদেশ পরিণত হয় এক মৃত্যু উপত্যকায়। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের মদদে সারাদেশে ধর্মীয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ব্যাপক উত্থান ঘটে। আর তাদের এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান অকুতোভয় শেখ হাসিনা। বাংলার আপামর মানুষ তাঁর আহবানে রাজপথে নেমে আসে। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনের অবসান হলেও সংবিধান লঙ্ঘন করে বিএনপির রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করেন। হাওয়া ভবনের নির্দেশে চলতে থাকে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নির্বাচনী প্রহসনের প্রস্তুতি। গর্জে উঠে বাংলাদেশ। জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। শুরু হয় গণ-আন্দোলন। বাতিল হয় পাতানো নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ইয়াজউদ্দিন। ঘোষিত হয় জরুরি অবস্থা। ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

১/১১-এর পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে আসার সময় বেআইনিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু সাহসিকা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা, ষড়যন্ত্র ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের ৭ মে ফিরে আসেন প্রিয় স্বদেশ ভূমে। কিন্তু এর মাত্র দু’মাস পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে শেখ হাসিনাকে দানবীয় কায়দায় গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা। কারাগারে তাঁর জীবননাশের ষড়যন্ত্র চলে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে চলতে থাকে গণসংগ্রাম ও আইনি লড়াই। আওয়াজ ওঠে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন নয়। বদলে যায় দৃশ্যপট। জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। গঠিত হয় মহাজোট সরকার। জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অমিত সম্ভাবনার শক্তিশালী ভীত রচিত হওয়ায় জনপ্রিয়তার অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যান শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নের্তৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আজ সফলতার সাথে টানা তৃতীয় মেয়াদে চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনা করছেন। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে দেশবাসী আজ সুফল পাচ্ছে। অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে সকল প্রতিবন্ধকতা সমস্যা-সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ থেকে বিগত এক দশকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বিনির্মাণের অভিযাত্রায় যুক্ত হয়েছে অজস্র সাফল্য-স্মারক।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চুড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত, প্রবৃদ্ধি ৮.১ শতাংশ, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়া, ৯৪ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, স্বাক্ষরতার হার ৭৩.৯ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন জননেত্রী শেখ হাসিনার। সাফল্য গাঁথা এই কর্মময় জীবন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাকীর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারা নির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বার বার তাঁর জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।

সহজ সারল্যে ভরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। মেধা-মনন, সততা, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। পোশাকে-আশাকে, জীবন-যাত্রায় কোথাও কোন প্রকার বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার কোনো প্রকার ছাপ নেই। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও ধার্মিক। নিয়মিত ফজরের নামাজ ও কোরান তেলওয়াতের মাধ্যমে তাঁর দিনের সূচনা ঘটে। পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন কয়েকবার।

একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে।

নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাঁকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির সকল আশা-ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ’৭৫ পরবর্তী বাঙালি জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন তা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ গোটা বাঙালি জাতির জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন।

২৮.৯.২২
দাউদুল ইসলাম
( কবি ও প্রাবন্ধিক)

মুহূর্তের ডাক!

আমি মাবিয়া, আমার তেমন ভাবে বড় কোনও বর্ণনা না দিলেও চলবে। কারণ নিজেকে বর্ণনা করতে গেলে দেখা যাবে তখন মূল কথায়ই আসা হবে না। তবে এই টুকু বলতে পারি আমি অন্য সব সাধারণ মানুষদের থেকে একটু বেশি সাধারণই বটে।

আসলে কেও যদি আমাকে হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করে আমার জীবনের সব থেকে খুশির মুহূর্ত কি? তবে সত্যি বলতে আমি একটু ঘাবড়ে যাই। আমি তখন কিছুক্ষণ ভাবি। ভাবতে ভাবতে জীবনের একটু পেছনে চলে যাই। আমার অতীতের মুহূর্তগুলো বইয়ের পাতার মতো ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকি। আসলে কি, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার মধ্যেও কিন্তু একটা সুন্দর মুহূর্ত আছে। অজান্তেই এর মধ্যে কতো ঘটনা এই মস্তিস্কের মনে পরে যায়। যেমনটা এখানেরই উদাহরণ দিলাম। লিখাটা লিখার আগে মুহূর্ত খুঁজতে যেয়ে কতো সুন্দর মুহূর্তের সাথে পুনর্মিলনী করে নিলাম। মনটা তাই ভালো লাগছে।

যাই হোক আমার সুন্দর মুহূর্তটা একটু তুলে ধরি। জীবনে অনেক সুন্দর মুহূর্ত আছে তবে তুলে ধরার জন্য বেছে নিলাম আমার প্রথম মেলায় যাওয়া আমার দাদির সাথে। খুব ছোট্ট ছিলাম আমি। জীবনে তখন দুঃখের বলতে কোন অনুভব বা অনুভূতি ছিল না। চোখের সামনের যা আসত সবই সুন্দর ছিল।

আমি আমার দাদির হাত ধরে ছিলাম যেন কোন ভাবেই ভিড়ের মাঝে হারিয়ে না যাই। রঙ বেরঙ এঁর জিনিস গুলো আমার চোখকে মুগ্ধ করে দিলো। আমি প্রচণ্ড অবাক হয়ে এদিক সেদিক দেখেও যেন দেখার শেষ করতে পারলাম না। এতো মানুষ ছিল আমার চারো পাশে। সবার ভিড়ের মাঝে হঠাৎ দূরে একটা অদ্ভুত শব্দের বেশ বড় একটা বস্তু দেখতে পেলাম।

দাদি! দাদি! দাদি! আমাকে ঐ বড় বস্তুটার দিকে নিয়ে যাও না প্লিজ। আমি আমার দাদির হৃদয়। হাঁটা ধরলাম বলা মাত্র। আমার ছোটো ছোটো পা হাঁপাতে হাঁপাতে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলল। আমার খুশি ছিল আকাশ সমান। আমি এখন যেমন ছোট্ট বাচ্চাদের খুশি মুখটার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি সেদিন দাদিও হয়তো আমার দিকে বার বার তাকিয়ে হাসছিল। বাচ্চাদের মনটা কতো পবিত্র হয় তাই না? নতুন কিছু একটা দেখলেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।

সে দিন আমার সাথে ঠিক এমনটাই হয়ে ছিল। আস্তে আস্তে আমি গেলাম, হ্যাঁ! আমার জীবনের প্রথম অন্যতম খুশির মুহূর্ত। বড় একটা হা করে বস্তুটা ঘুরতে দেখছি আর তার অদ্ভুত শব্দে বুকের হার্ট বিট যেন ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। ভয় হচ্ছে খুব শব্দের উপর। কিন্তু বস্তুটার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে।

“এটাকে নাগর দোলা বলে” দাদি বলল আমাকে। আমি তেমন করে দাদির কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম না। আসলে কানের সামনে বাহারি শব্দের সাথে দাদির প্রতিটা কথা গুলো শুধু বাতাস এঁর মতো কথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে আমার কাছে আস্তে পারছিল না।

হঠাৎ বস্তুটা থেমে গেল! আমি কৌতূহলী… নষ্ট হয়ে গেল নাকি? ভাবছিলাম আর দাদি আমাকে বস্তুটার সামনে নিয়ে যেয়ে বসিয়ে দিলো। আমার সাথে আরো তিনটা মানুষ। আমি তাদের বেশি একটা মনোযোগ দিলাম না।
হঠাৎ লোকগুলো হাত দিয়ে বস্তুটাকে ঘুরানো শুরু করল। চোখের এক পলকেই আমি আকাশ এঁর দিকে উঠে গেলাম। আমি অবাক! হুট করে নিছে নেমে যাচ্ছি আবার হুট করে আকাশ এঁর দিকে উঠে যাচ্ছি।

এতো সুন্দর কেনো অনুভূতিটা? আমি নিজেই হতভম্ভ! উপরে উঠলেই সারাটা মেলা দেখা যায়। জমকালো আলোতে বাহারি রঙ্গের জিনিস গুলো আমার চোখকে ধাঁধিয়ে দিলো! পৃথিবী কি এতোই সুন্দর?

সব কিছুর মাঝে একটা অপরূপ হাসি নিয়ে আমার দাদি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ কতোটা বছর হয়ে এলো নাগর দোলায় চড়তে পারি কিন্তু এই হাসিটা আর দেখতে পাই না!

জনস্বার্থে : সংক্রমণ ঠেকাতে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন

Loc

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পুনরায় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস ও কারখানা অর্ধেক জনবল দ্বারা পরিচালনা, উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা, জনসমাগম সীমিত করা, গণপরিবহনে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনসহ ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এসব সিদ্ধান্ত এখন থেকে সারা দেশে কার্যকর হবে এবং আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো—

১. সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ যে কোনো উপলক্ষে জনসমাগম সীমিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে উচ্চ সংক্রমণ এলাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকবে।

২. মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।

৩. পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করতে হবে এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করা হবে।

৪. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।

৫. সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আন্তজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ করতে হবে।

৬. বিদেশফেরত যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা ও উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. শপিং মলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
১০. দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
১১. অপ্রয়োজনে রাত ১০টার পর ঘর থেকে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

১২. প্রয়োজনে বাইরে গেলে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাস্ক না পরলে বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৩. করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা করোনার লক্ষণ রয়েছে—এমন ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

১৪. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা ৫০ শতাংশ লোকবল দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা, অসুস্থ, ৫৫ বছরের অধিক বয়সী ব্যক্তিদের বাসায় থেকে কাজের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৫. সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজন করতে হবে।

১৬. সশরীরে উপস্থিত হতে হয়—এমন যেকোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

১৭. হোটেল, রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার অর্ধেক মানুষ প্রবেশ করতে পারবে।
১৮. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবস্থানের পুরোটা সময়ই বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

জনস্বার্থে : করোনাভাইরাস : প্রথম আলো। সোমবার, ২৯ মার্চ ২০২১

যাপিত জীবন দেশ বিদেশ

hqdefault

”চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারী.ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি।

জবে গেলে প্রায় মালা নামের নেপালি মেয়েটার সাথে দেখা হয়। মালা এখানে ক্লিনিং এর কাজ করে। আমাজনে প্রচুর নেপালি মানুষজন কাজ করে। ক্লিনিং থেকে শুরু করে আইটি তে সব জায়গায় ওরা আছে। আমার কাজে যেতে হলে ব্যাংকসটাউন স্টেশন থেকে লিভারপুল স্টেশন এরপর ৯০২ নং বাসে করে মুরব্যাংকে নেমে ৪ মিনিট হাঁটার রাস্তা। উইকেন্ড গুলাতে ট্রেন চালু থাকলেও বাস চালু থাকে না। তাই ট্রেন থেকে নেমে উবারে করে যাই।

এক রোববারে ট্রেন থেকে নেমে উবার কল করে উবারের অপেক্ষায় আছি। পাশে মালা এসে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো তুমি কি উবার কল করছ ?
আমি ওকে বললাম কল করেছি। তুমি চাইলেও যেতে পারো আমার সাথে।
ও জিজ্ঞেস করলো কতো দিতে হবে উবারকে ?
আমি বললাম যাই দিতে হয় তুমি টেনশন করো না।
কিন্তু মালা অস্থির হয়ে গেলো।
আমার কাছে কয়েন আছে, ক্যাশ আছে – আমি দিচ্ছি।
আমি ওকে থামালাম।
লিসেন – আজ আমি দেই – অন্য সময় তুমি দিও।
সে এরপর থামলো।

এরপর দেখা হলেই সে অস্থির হয়ে যায়। শুনো আমার কাছে ক্যাশ আছে – আমি তোমাকে দিয়ে দেই সেদিনের টাকাটা। আমি যতই বুঝিয়ে বলি আরে আমি তো একাই যেতাম – তুমি যাওয়াতে এক্সট্রা বিল পে করতে হয় নি। অবশেষে একদিন যখন সুযোগ পেলো আমাকে তার সাথে নিয়ে যাবার -এরপর শান্তি হলো তার। বোধকরি অস্বস্তিও দূর হলো। মালা এরপর আমার খুব বন্ধু হয়ে গেলো। মালাসহ এরকম আরো অনেক নেপালী ছেলেমেয়ে স্টুডেন্ট হিসেবে আসে কিন্তু ওরা সাবকন্ট্রাকটারের অধীনে কাজ করে। স্টুডেন্ট বলে ট্যাক্সে ২০ ঘন্টার বেশি কাজ করতে পারে না। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ওরা ক্যাশে কাজ করে।
জিজ্ঞেস করলাম – অস্ট্রেলিয়া কেমন লাগে ?
ও বললো অস্ট্রেলিয়া খুব ভালো দেশ, সুন্দর দেশ কিন্তু আমি নেপালে গেলে আর আসবো না। আমার দেশেই ভালো লাগে।

—————–

মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো
দোলে মন দোলে অকারণ হরষে –

এখন অস্ট্রেলিয়ার সিজন হেমন্ত। এতো সুন্দর ওয়েদার। মাঝে মাঝে সকাল থেকে দুপুর তিনটা বা চারটা পর্যন্ত একটু গরম লাগে এরপর ঝিরঝির বাতাসে গা জুড়ায়। অন্যরকম ভালো লাগায় মন শরীরে একধরনের শান্তি আসে।
ছোটকালে আমার সেজখালার বাড়িতে যেতাম। সেজখালার স্বামী মারা গেছেন খালার বিয়ের বছর চারেক পরেই। কিন্তু খুব সুন্দর একটা ঘর করে গেছিলেন উনি। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অপজিটে ওনাদের বাড়িটা। ঘরটার শেষের দিকের রূমটা একটু নির্জন। ছায়া সুনিবিড় অনেকটা। সকাল বিকেল দুপুর শীত গ্রীষ্ম সবসময়ই কেমন শান্ত ভাব। ঘরটার সামনে পেছনে সবুজ গাছ আর ঝির ঝির বাতাসে মন আপনাতেই শান্ত হতো। অস্ট্রেলিয়ার এই শান্ত ওয়েদার, গাছের ডালের পাতাদের দুলুনি মন পেছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সেজখালার বাড়ির সেই কোনার রূমটার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় –
জীবন পুরোটাই ভ্রমন –
কখনো শান্ত কখনো অশান্ত সমুদ্রের মতন –
তবু এই জীবনকেই ভালোবাসা –
——————–

শনিবারে সিডনী ট্রেনের সাথে কাজ করলাম। যদিও এগুলা আমার ফিক্সড কাজ না অনেকটা অনুরোধে করা। জায়গাটার নাম ওবার্ণ। ওবার্ণ ইয়ার্ডে গিয়েই মন ভালো হয়ে গেলো। এতো সবুজ চারপাশে ! আমার সহকর্মী একজন বললেন দেখো এখানে স্নেক ডিটেক্টর আছে। এখানে গরম আসলেই সাপ বের হয়। তাই পুরো ইয়ার্ডেই জায়গায় জায়গায় স্নেক ডিটেক্টর দেয়া আছে। আমাকে স্নেক ডিটেক্টর দেখিয়ে বললেন বলোতো কি এগুলা ?
আমার মনে হয়েছিলো পানির পাইপের মতো – ছোট একটু পাইপ মাটির সাথে এটাচ করে দেয়া উপরে সবুজ কর্কের মতো –
আমি পানির পাইপ বললে সে বললো – এগুলাই স্নেক ডিটেক্টর।
এক জায়গায় সাপের খোলস পড়ে থাকতে দেখলাম।
বুঝলাম যা বলছে কথার কথা না। আসলেই এখানে সাপ আছে।
যে ভদ্রলোক সব দেখাচ্ছিলেন উনি সুপারভাইজার। ইন্ডিয়ান।
জিজ্ঞেস করলাম – ক্যাজুয়েল নাকি পারমানেন্ট করো ?
উনি বললেন ক্যাজুয়েল করি। কারণ ক্যাজুয়েলে টাকা বেশী। পারমানেন্ট হলে আওয়ারলি ২৮ আর পারমানেন্ট হলে ৩৩ করে। এতে ইনকাম ভালো হয়। বললাম তাহলে ছুটি বা এসবে ক্যাজুয়েল জবে একটু প্রবলেম হয়।
ভদ্রলোক বললেন – আই ম্যানেজ ইট।
————–
আজ ছিলো আমার ডে অফ – কি করলাম সারাদিন !!
ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে এগারটা বাজে –
একটু খেয়ে দেয়ে সিনেমা দেখলাম ,ঘর ক্লিন করলাম। এরপর গেলাম ব্যাংকস্টাউন সেন্ট্রালে – শপিং এ। এটা সেটা কেনাকাটা করলাম। ট্রলিটা টানতে টানতে দেশের রিকসার সুবিধার কথা ভাবলাম। আহারে একটুও হাঁটতে হতো না – এই কষ্টে কিছুক্ষন মনোকষ্টে থাকলাম এরপর ড্রাইভিং না শেখার দুঃখে ড্রাইভিং শেখার পণ করলাম। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিক্রমা। প্রথমে লার্নার টেস্ট দাও – এরপর সেটা পাস করার পরে ড্রাইভং শেখার পরে ড্রাইভিং টেস্ট দাও। সেই কঠিন পরীক্ষায় পাশ করার পরেই ড্রাইভিং করা যাবে।

কিছুদিন আগে লার্নিং টেস্ট দিলাম। ৪৫ টা প্রশ্ন। ৪৫ টা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে নইলে ফেল। যাক এক চান্সে পাশ করে গেলাম। খুব তাড়াতাড়ি পরীক্ষা শেষ করলাম দেখে সেখানের মেয়েটা বললো -তুমি কি ফেল করেছ ?
আমি বললাম – পাশ করেছি –
এখন সময় দিতে হবে ড্রাইভিং শেখায় –
দেখা যাক কতটুকু পারি –
বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সুচাগ্র মেদিনী –

প্রেম প্রবঞ্চিতকে কী দেয় ?

প্রেম আপন গভীরতায় নিজের মধ্যে একটি মোহাবেশ রচনা করে। সেই মোহের দ্বারা যাকে ভালোবাসি আমরা তাকে নিজের মনে মনে মনোমত গঠন করি। যে সৌন্দর্য তার নেই, সে সৌন্দর্য তাতে আরোপ করি। যে গুণ তার নেই, সে গুণ তার কল্পনা করি। সে তো বিধাতার সৃষ্ট কোনো ব্যক্তি নয়, সে আমাদের নিজ মানসোদ্ভূত এক নতুন সৃষ্টি। তাই কুরূপা নারীর জন্য রূপবান, বিত্তবান তরুণেরা যখন সর্বস্ব ত্যাগ করে, অপর লোকেরা অবাক হয়ে ভাবে, “কী আছে ঐ মেয়েতে, কী দেখে ভুললো?” যা আছে তা তো ঐ মেয়েতে নয়– যে ভুলেছে তার বিমুগ্ধ মনের সৃজনশীল কল্পনায়। আছে তার প্রণয়াঞ্জনলিপ্ত নয়নের দৃষ্টিতে। সে যে আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তাহারে করেছে রচনা। জগতে মূর্খরাই তো জীবনকে করেছে বিচিত্র; সুখে দুখে অনন্ত মিশ্রিত। যুগে যুগে এই নির্বোধ হতভাগ্যের দল ভুল করেছে, ভালোবেসেছে, তারপর সারা জীবন ভোর কেঁদেছে। হৃদয় নিংড়ানো অশ্রুধারায় সংসারকে করেছে রসঘন, পৃথিবীকে করেছে কমনীয়। এদের ভুল, ত্রুটি, বুদ্ধিহীনতা নিয়ে কবি রচনা করেছেন কাব্য, সাধক বেঁধেছেন গানচিত্র, ভাষ্কর পাষাণ-খণ্ডে উৎকীর্ণ করেছেন অপূর্ব সুষমা।

জগতে বুদ্ধিমানেরা করবে চাকরি, বিবাহ, ব্যাংকে জমাবে টাকা, স্যাকরার দোকানে গড়াবে গহনা; স্ত্রী, পুত্র, স্বামী, কন্যা নিয়ে নির্বিঘ্নে জীবন-যাপন করবে সচ্ছন্দ সচ্ছলতায়। তবু মেধাহীনের দল একথা কোনদিনই মানবে না যে, সংসারে যে বঞ্চনা করল, হৃদয় নিয়ে করল ব্যঙ্গ, দুধ বলে দিল পিটুলী– তারই হলো জিত, আর ঠকল সে, যে উপহাসের পরিবর্তে দিল প্রেম। অতি দুর্বল সান্ত্বনা। বুদ্ধি দিয়ে, রবি ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করে বলা সহজ–

জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা
ধূলায় তাদের যত হোক অবহেলা।

কিন্তু জীবন তো মানুষের সম্পর্ক বিবর্জিত একটা নিছক তর্ক মাত্র নয়। শুধু কথা গেঁথে গেঁথে ছন্দ রচনা করা যায়, জীবন ধারণ করা যায় না।যে নারী, প্রেম তার পক্ষে একটা সাধারণ ঘটনা মাত্র। আবিষ্কার নয়, যেমন পুরুষের কাছে। মেয়েরা স্বভাবত সাবধানী, তাই প্রেমে পড়ে তারা ঘর বাঁধে। ছেলেরা স্বভাবতই বেপরোয়া, তাই প্রেমে পড়ে তারা ঘর ভাঙ্গে। প্রেম মেয়েদের কাছে একটা প্রয়োজন, সেটা আটপৌরে শাড়ির মতই নিতান্ত সাধারণ। তাতে না আছে উল্লাস, না আছে বিষ্ময়, না আছে উচ্ছ্বলতা। ছেলেদের পক্ষে প্রেম জীবনের দুর্লভ বিলাস, গরীবের ঘরে ঘরে বেনারসী শাড়ির মতো ঐশ্বর্যময়, যে পায় সে অনেক দাম দিয়েই পায়। তাই প্রেমে পড়ে একমাত্র পুরুষেরাই করতে পারে দুরূহ ত্যাগ এবং দুঃসাধ্যসাধন।জগতে যুগে যুগে কিং এডওয়ার্ডেরাই করেছে মিসেস সিম্পসনের জন্য রাজ্য বর্জন, প্রিন্সেস এলিজাবেথরা করেনি কোনো জন, স্মিথ বা ম্যাকেঞ্জির জন্য সামান্য ত্যাগ। বিবাহিতা নারীকে ভালোবেসে সর্বদেশে সর্বকালে আজীবন নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছে একাধিক পুরুষ; পরের স্বামীর প্রেমে পড়ে জীবনে কোনদিন কোনো নারী রয়নি চিরকুমারী। এমন প্রেমিকের জন্য কোন দিন সন্ধ্যাবেলায় তার কুশল কামনা করে তুলসীমঞ্চে কেউ জ্বালাবে না দীপ, কোন নারী সীমন্তে ধরবে না তার কল্যাণ কামনায় সিদুরচিহ্ন, প্রবাসে অদর্শনবেদনায় কোন চিত্ত হবে না উদাস উতল। রোগশয্যায় ললাটে ঘটবে না কারও উদ্বেগকাতর হস্তের সুখস্পর্শ, কোনো কপোল থেকে গড়িয়ে পড়বে না নয়নের উদ্বেল অশ্রুবিন্দু। সংসার থেকে যেদিন হবে অপসৃত, কোন পীড়িত হৃদয়ে বাজবে না এতটুকু ব্যথা, কোনো মনে রইবে না ক্ষীণতম স্মৃতি।

প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা। কিন্তু প্রবঞ্চিতকে দেয় কী? তাকে দেয় দাহ। যে আগুন আলো দেয়না অথচ দহন করে।সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দাহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন বহু কাণ্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য পুরুষ।। (দৃষ্টিপাত)

=====
লেখকঃ কাতার প্রবাসী সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী।

স্মৃতিকথন অনলাইন গ্রুপ প্রাতিষ্ঠানিক রূপে আত্মপ্রকাশ করলো

সন্মানিত সুধী,
গত ৩১ শে অগাস্ট ২০২০, সোমবার রাজধানীর বনানী ডিওএইচএস-এ সারাদিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্মৃতিকথন অনলাইন গ্রুপের মিলনমেলা। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মৃতিকথন গ্রুপ সাংগঠনিকভাবে আত্মপ্রকাশ করলো। উক্ত অনুষ্ঠানে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পথিক মুসাফিরের ৪৫তম জন্মদিন উৎযাপন করা হয়। সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক সৈয়দ আশরাফ মহি-উদ্-দ্বীন, জনাব এ কে এম তারেক, ডেপুটি সেক্রেটারী, কৃষি বিপনন অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রাণালয় এবং কণ্ঠশিল্পী কাজি আরিফ।

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের কারণে সবাই যখন ঘরে বসে অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন ঠিক তখনি অন্যান্য অনলাইন গ্রুপের মতো স্মৃতিকথনের যাত্রা শুরু হয় এই বছরের মে মাসের ১৭ তারিখ। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে বিপুল সংখ্যক সাহিত্য অনুরাগী এবং সংস্কৃতিকর্মী উক্ত গ্রুপে জয়েন করেন, অন্যান্য গ্রুপের সাথে স্মৃতিকথন গ্রুপের পার্থক্য হলো – গ্রুপে বা পেইজে পোস্ট করা লেখা নিয়ে আগামী বছর অমর একুশে বইমেলায় গল্প ও কবিতা সংকলন ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা হবে।

গ্রুপের কর্ণধার পথিক মুসাফির স্মৃতিকথনের কার্যক্রমকে সর্বত্র পৌঁছে দেবার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে এলে দাতা সংস্থার মাধ্যমে দেশের দুস্থ শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেন; শুধু অনলাইন কেন্দ্রিক আড্ডা বা বিনোদনে স্মৃতিকথনকে আবদ্ধ না রেখে মাঠ পর্যায়ে সমাজ সেবামূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে চান।

লেখক সৈয়দ আশরাফ মহি-উদ্-দ্বীন বলেন, স্মৃতি কথনের সাথে যুক্ত হয়েছি মাস তিনেক হলো। স্মৃতি কথনের উদ্দেশ্য অনেক মহৎ এবং সুদূর প্রসারী। এঁরা মানুষের কল্যাণে, সমাজের উন্নতিতে আর নতুন প্রজন্মের মেধা বিকাশে কাজ করে যাবেন বলে সবাই এক হয়েছেন। প্রবাসে বসে আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব এই মহতী উদ্যোগে একজন সহযাত্রী হয়ে থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমি আশা করি স্মৃতিকথন নিয়মিত মানুষের পাশে থেকে মেধা এবং ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কণ্ঠশিল্পী কাজি আরিফ ‘স্মৃতিকথন’ সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি ভবিষ্যতে অন্যান্য সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন করবার প্রত্যাশা রেখে বলেন, দেশের শিক্ষা, দারিদ্রতা দূরীকরণ, পরিবেশ রক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালনের পরিকল্পনা আছে স্মৃতিকথন পরিবারের। তিনি আরো বলেন, ছোট্ট একটা বীজ থেকেই একদিন বিশাল মহীরুহ তৈরী হয়। আমি আশা করি তারুণ্যের শক্তি নিয়ে ‘স্মৃতিকথন’ একদিন এই দেশে এই সমাজে বিশাল মহীরুহ হয়ে একটা ইতিবাচক অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হবে।

জনাব এ কে এম তারেক স্মৃতিকথনের সফলতা কামনা করে বলেন, ‘স্মৃতিকথন’ একটি সাংস্কৃতিক পরিবার। লেখালেখি এবং ভার্চুয়াল আড্ডার মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে প্রতিনিয়ত। তরুণ লেখকদের একটি একক প্লাটফর্মে এনে তাদের প্রতিভাকে ছড়িয়ে দেওয়া, আবার ভার্চুয়াল জগতে সংগীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তিকে আড্ডার ছলে বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষীদের নিকট পৌঁছে দেয়া নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। এ পরিবারটি বর্তমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতেও নতুন নতুন সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।

গ্রুপের এডমিনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কথা সাহিত্যিক তাহমিনা খলিল, অবঃসিনিয়র শিক্ষক ভিকারুননিসা নুন স্কুল ও কলেজ, জনাব মুক্তাদিরুল আলম ডলার, কবি – লেখক ও আবৃত্তিকার শাইনি শিফা এবং গল্পকার ও নাগরিক সাংবাদিক রোদেলা নীলা। এডমিন প্যানেল থেকে তাহমিনা খলিল বলেন, সমাজের ক্ষয়িষ্ণু নৈতিক মূল্যবোধের উন্নতিতে স্মৃতিকথন পরিবার কাজ করছে, কর্মদ্যম মানুষের পাশে থেকে এই পরিবার অনেক দূর এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

মডারেটরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী আব্দুর রহিম রুবেল, সুজিত রঞ্জন সরকার এবং রজনী মিম। সংগীতশিল্পী সাহিদা স্মিতা’র আধুনিক গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।

ধন্যবাদান্তে
রোদেলা নীলা
সমন্বয়ক, স্মৃতিকথন পরিবার।

ফেসবুক পেজ : স্মৃতি কথন

একটি রূঢ় বাস্তবতার গল্প

নাম তার সুদীপ্ত চৌধুরি। তিনি একজন শিক্ষক। তাও আবার প্রবাসী বিদ্যায়তনে চাকরি করেন। স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। স্যারের আত্মসম্মান বোধটা একটু বেশি। কোন অভাব অভিযোগ কারো সঙ্গে সহজে শেয়ার করতে পারেন না। তাই সবাই ভাবে, স্যারের অনেক কিছু আছে। প্রবাসের মাটিতে কোন কিছুর অভাব হয় নাকি?
কিন্তু করোনা যে, সব গ্রাস করে নিয়েছে! সে গল্প সবার অজানা! গত মার্চ থেকে তিনি পঁয়ত্রিশ শতাংশ বেতন পেয়ে বেশ আরামেই আছেন। বিষয়টিকে তিনি বেশ উপভোগ করছেন। আত্মসম্মানবোধের কারণে কারোর সঙ্গে শেয়ার করতে না পারার কারণে যারা জানে না, তারা স্যারের শম্বুকগতির পথ চলা কিংবা মুখোশের আড়ালে আত্মগোপন করার কারণে বন্ধু-সজ্জন তার থেকে ধীরে ধীরে মুখ সরিয়ে নেওয়াকেও তিনি বেশ উপভোগ করছে। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন সুদিন আসতে বাধ্য।
সে সুদিনে তার কোন দেনা থাকবে না। থাকবে না কোন দায়বদ্ধতা। সে সোনালি ভোরে নিঃসঙ্গ হলেও মুক্তির আনন্দে ভাগ বসানোর কেউ থাকবে না। সে মুক্তি হবে একান্তভাবে তার নিজের।

রিপোর্টারের ডায়েরী : ব্লগার থেকে সংবাদকর্মী

প্রত্যেক সাফল্যের একটা লক্ষ্য থাকে। আমারও ছিল। তবে কখনোই সংবাদমাধ্যমে কাজের লক্ষ্য ছিল না তখন। ২০০৪ সালে দৈনিক ভোরের কাগজ (পাঠক ফোরাম) ও যুগান্তরের স্বজন সমাবেশে লিখি। স্বপ্ন ছিল লেখক হওয়ার। এ সময় হতেই নিয়মিত পত্রিকায় লিখতে থাকি।

২০০৪ সাল হতেই বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ছাড়াও সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকায় সাহিত্য নিয়ে লেখালিখি করি। কলাম ও চিঠিপত্র বিভাগেও লিখি। যদিও লেখালেখি শুরু হয় আরো পাঁচ বছর আগে। সে সময় অনেকেই বলতেন, পত্রিকায় লিখি, সাংবাদিকতায় আসি না কেন, সাংবাদিক হতে চাই না কেন। কেন যেন একটা অনীহা ছিল এ পেশায়। বলতাম, আমার দ্বারা সম্ভব নয়।

তাই জাতীয় পত্রিকাগুলোতে সাহিত্য নিয়ে লিখলেও ৮ বছর পর সংবাদমাধ্যমে আসি। আসার কথাও ছিল না। ২০১১ সালে ব্লগিং লেখা শুরু করি। এর ফাঁকে দু’তিনটা ম্যাগাজিনও বের করি। ব্লগ ও ফেসবুকে প্রথম আইডি খুলে দেন সীমান্ত পথিক। তাকে আমরা ঢাকা হুজুর বলে জানি। সর্বপ্রথম শব্দনীড়, পরে প্রথম আলো ব্লগ, বদলে যাও বদলে দাও আইডি খুলে লিখতে শুরু করে। পরে আরো এক ডজন ব্লগে লিখি। চলতে থাকে ব্লগিং। বাড়তে থাকে ভার্চুয়াল পরিচিতি। এসময় অনেক নামি-দামী লেখকের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। পরে না হয় আরেকটি পর্বে তাদের নামসহ আপডেট করবো।

এরই মধ্যে খাদেমুল ভাই (সাংবাদিক) আমার কম্পিউটার ব্যবহার করে নিয়মিত পত্রিকায় নিউজ পাঠান। বাংলাবাজার পত্রিকায় লিখেন ওই সময়। সাংবাদিকতা পেশায় আসবো না ভেবেই নিউজ লেখা তেমন ভালো লাগতো না আমার। সে সময় তেঁতুলিয়ার অনেকেই আমার এখান থেকে পত্রিকায় নিউজ পাঠান। সাহিত্যে অত্যাধিক ঝোঁক থাকায় সাংবাদিকতা পেশাটাকে সেভাবে পছন্দ হয়নি। পছন্দ না হওয়ারও অনেক কারণ ছিল। সেটা না বলি। কিন্তু খাদেমুল ভাই নাছোর বান্দা। আমাকে শেষ পর্যন্ নিউজ লেখানো ও শেখানোর উঠে পড়ে গেলেন। সৃজনশীল হওয়াতে বেশি দিন লাগলো না নিউজ লিখতে।

আর যখনই সাংবাদিকতার পেশায় পা বাড়ালাম, তখন দেখি প্রতিদ্বন্ধী ভেবে অনেকেই হিংসায় জ্বলতে শুরু করলেন। সামান্য ভুল করলেই তীব্র অপমান করতে শুরু করলেন। চলতে ফিরতে যেন কেটে ফেলবেন। নয়তো ল্যাং মেরে ফেলে আহত করবেন। যেখানে সেখানে তাও। যেকোন অনুষ্ঠানে গেলে তিরস্কার স্বরে বলতেন, ও তো ফেসবুকে লিখে। ব্লগার। কিসের সাংবাদিক? কোন কাগজ আছে? ভাবলাম, এজন্য কী এ পেশা আমার পছন্দ ছিল না। এতে আমার মনে একটা ক্ষোভ তৈরি হলো। প্রতিদ্বন্ধীর সাথে লড়তে হলে তো লড়াই করার সাহসও লাগে। হাল ছাড়লাম না। ধীরে ধীরে লেখার হাত শক্ত হতে লাগলো। চর্চা বাড়াতে লাগলাম।

পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। হয়তো বড় কিছু হওয়া সম্ভব হয়নি। সামান্য একটি বালুকণা হয়ে সমুদ্রে প্রবেশ করেছি মাত্র। সমুদ্রে কতো রাশি রাশি বালুকণা। হতে পারি আমি তার চেয়েও নগণ্য। তবুও তো চেষ্টা করতে পেরেছি। ইচ্ছার প্রতি ফলন ঘটাতে পেরেছি।

আজ খাদেমুল ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। যার হাত ধরে সাংবাদিকতা শেখা। আর প্রিয় বন্ধুবর সীমান্ত পথিকের প্রতি ভালোবাসার মাত্রা তো সীমাহীন। আর যারা সেদিন আর আজও আমাকে সহ্য করতে পারেন না তাদের প্রতিও সম্মান ও ভালোবাসা দুটোই। কারণ নেতিবাচক ব্যক্তি ছাড়া পজিটিভের গুরুত্ব বুঝা যায় না।

বায়োলজিক্যাল উয়েপন পার্থিব জগতের জন্য হুমকি

বায়োলজিক্যাল উয়েপন পার্থিব জগতের জন্য এবং মানবাধিকারের খেলাপ সভ্যতার জন্য হুমকি। মানবসৃষ্ট এই জৈব রাসায়নিক উয়েপনের হাত থেকে সভ্যতার বিশ্ব দরবার রক্ষা পাবেতো? ঠিক আছে ধরে নিলাম আমরা এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম।

আবার নতুন করে সূর্যোদয় হবে, নতুনভাবে আবার সূর্যাস্ত যাবে, প্রকৃতিতে বসন্ত আসবে, গাছে গাছে ফুল ফুটবে, আবারও একদিন সভ্যতার বুকে অন্ধকার ছেয়ে যাবে, মানুষ অতীতের পথ ধরে আবারও হাঁটা শুরু করলো “করোনা” এর চেয়ে ভয়ংকর জৈব মারনাস্ত্র পৃথিবীর বুকে “তৈরি করলো” বায়ুমণ্ডলে আঘাত হানলো। নতুন করে শুরু হতে চললো সভ্যতার পতন।

মানুষ তাঁর কর্মের দ্বারা নিজেদের বিলুপ্তি নিজেই ডেকে আনলো। এভাবেই চলতে থাকলো বিনাশের এক মহাযজ্ঞ। তখন মানবের এই জৈবাস্ত্র দেখার আর কেউ থাকবে না। প্রকৃতির এই প্রাণকেন্দ্রে ধার্মিক অধার্মিক নাস্তিক সন্দেহবাদী, নিরাঈশ্বরবাদী, বৈজ্ঞানিক অবৈজ্ঞানিক প্রকৃতি প্রেমি অপ্রকৃতিপ্রেমী রাজনৈতিক অপ-রাজনৈতিক অপরাধী নিরাপরাধী সাধারণ অসাধারণ কেউতো আর বিচরন করতে পারবে না?

তাহলে কিসের জন্য এই উয়েপন? কিসের জন্য এই মানব সভ্যতার আগ্রাসী আগ্রাসন চালানোর মতো উয়েপন? এসবের কি কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে? আর কোনো ক্ষমতার দ্বন্দ্বে, ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে এমন মারনাস্ত্রের? (The biological threat).

আমরা কেনইবা পরিকল্পনা করি, যে মারনাস্ত্র হতে পারে সভ্যতার সমাপ্তকারী “বিলুপ্তকারী” এমন অস্ত্রের কি প্রয়োজন? ক্ষমতাই যদি সভ্যতাকে টিকে রাখতে পারে তবে, তাহ‌লে মানুষের বিরুদ্ধে মানুষ কেন? আমাদের হাতে কি অন্য কোনো পৃথিবী এসে গেছে যা ছিনিয়ে নেবার আশায় আমরা আমাদের তাবৎ জ্ঞান মানব হত্যার কাজে ব্যাবহার করছি? আমরা কি একবারের জন্যেও ভেবেছি যে এটি ভুল না ঠিক? ঠিক হলে প্রশ্নঃ আমরা এই উয়েপন কার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছি?

আমরা কি আমাদের নিজেদের অজান্তেই সভ্যতার পতনের দ্বার অতীব দ্রুতগতিতে উন্মোচন করছি না !! তবে তাই যদি হয় সেটা কি প্রয়োজনে? এই পৃথিবীতে যদি মানব সভ্যতাই না টিকে তাহলে কি দরকার এই মারনাস্ত্রের? আমরা কি এমন একটি পৃথিবী বস্তুত তৈরি করার কোনো ক্ষমতা রাখি?

আমরা কি প্রস্তুত ধ্বংস হওয়ার জন্য?
আমরা কি প্রস্তুত নিজেদের অস্তিত্বকে নিজেদের অজান্তে ধ্বংসের জন্য?

আমরা একবার ভেবে দেখেছি যে, আমরা কি করছি?
কিসের প্রয়োজনে করছি?
আমরা কি সত্যিই বুঝতে পেরেছি টিকে থাকার লড়াইয়ে ক্ষমতাই সব?
বেঁচে থাকার মুলমন্ত্র?
তাহলে আমরা ভুল!

আমরা ক্ষমতাকে গুলিয়ে ফেলেছি আরেকটি উচ্চতর ক্ষমতা বিশিষ্ট ক্ষমতার সাথে! আমরা এই দুইয়ের ক্ষমতার পার্থক্য বুঝতে পারিনি অথচ দাবী ধরে বসে আছি আমরা সভ্য জাতি! আমরা এই দাবি ত্যাগ এখনও করছি না কেনো যে যোগ্যতা আমরা নিজেদের ধ্বংস করার জন্য অর্জন করে থাকি সেই যোগ্যতা কিভাবে সভ্যরূপ হয়? এটি সভ্যতার সাথে নেহাতই ধোঁকা, নেহাতই প্রতারণা। এই প্রতারণার জাল যতক্ষণ পর্যন্ত ছিন্ন করা হবে ঠিক ততোটা পর্যন্ত আমরা নিজেরাই নিজেদের নিজেকে কোনো ভাবেই সভ্য বলে দাবি করতে পারিনা।

(What is the history of biological weapons and what is the meaning of biological weapons). আমরা কার সভ্যতা রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের তৈরি ফাঁদে নিজেরাই আটকা পড়ছি? হে বিশ্ব বিবেক আমরা কি তা একবারের জন্য হলেও ভেবে দেখেছি?

যদি তা না করে থাকে তাহলে এখনি ভেবে দেখার সময় আমরা কি করতে যাচ্ছি আমরা কি করছি আর আমরা কি করব। শুধু এটুকু মনে রাখতে হবে (The world’s most dangerous biological weapon).

দেশ বিদেশ ডায়েরী

গত বছর কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর মৃত্যুর পর পর কবি মুনীরা চৌধুরী মারা গেলেন। যদিও মৃত্যুর কারণ রহস্যাবৃত তবু কবির মৃত্যু কাম্য না। ভালোবাসা অধরা। ছাই হয়ে যাবার পরেও জ্বলতে থাকে। বেদনাবোধে আক্রান্ত হয়েছিলাম। কোথা থেকে যেনো এক সুক্ষ্ণ ব্যথা বুকের ভেতর চিন চিন করে।

শাইমা আর ইসরা দুজন জমজ বোন। শাইমা পুলিশ হতে চায় তাই সে ব্যাচেলার অব পোলিসিং এ পড়ছে। ইসরা পড়ছে ফ্যাশন ডিজাইনিং এ সে তার ক্যারিয়ার ফ্যাশন ডিজাইনিং এ গড়তে চায়।

কবি মুনিরা চৌধুরীর মৃত্যুর খবর শুনে মনে হচ্ছিল এমন তীব্র সুন্দরী, যার জীবনে আপাত দৃষ্টিতে দেখলে সফল জীবন বলা যেতেই পারে। তিনি কেন এভাবে মরবেন ! শাইমাকে বললাম জানো সুসাইড করা খুব সাহসের কাজ। সে বলে তুমি কি তাই ভাবো ? আমি বললাম তাই তো হবার কথা। মৃত্যু যন্ত্রনা সইবার ও সাহস লাগে। মরলে তো মরেই গেলাম। শাইমা তখন বললো তার বাঁচতে ইচ্ছে করে না। সে কয়েকবার সুসাইডের এটেম্পট নিয়েছিলো। একবার গাড়ির সামনে দৌড় দিয়েছিলো আর একবার ঘুমের অষুধ খেয়ে – কিন্তু দুবারই বেঁচে গিয়েছে।

শাইমা বেশ সুন্দর। ওরা সিরিয়ান। সিরিয়ানরাও জাতিতে আরব। ওরা আরবী ভাষায় কথা বলে। দুইবোন ক্লাসে আসলেই হা হা হিহি করে অস্থির। সারাক্ষণ মোবাইলে কি সব দেখে আর হাসাহাসি করে। কিন্তু ওদের ভেতরের কষ্টটাকে দেখা যায় না। শাইমা বললো ওরা ৯ ভাইবোন। এক ভাই বিয়ে করে বউ বাচ্চা সহ মা বাবা ভাইবোনের সাথেই থাকে। বললাম শাইমা এত বড় পরিবার তোমাদের। বেশ আনন্দে কাটে সময় তোমাদের তাই না ?
শাইমা বললো না আনন্দে কাটে না। প্রতিদিনই নতুন নতুন ড্রামা। তাছাড়া ওর বাবা ভাই খুব সামান্য কারণে গায়ে হাত তুলে। সে তার স্ত্রীর উপর ও কারণে অকারণে গায়ে হাত তুলে – এসব কারণে সুসাইড করতে গিয়ে বিফল হয়েছিলো। শাইমা হিজাব পড়ে কিন্তু ওর বোন ইসরা এসব পড়ে না। তো আমি বললাম শাইমা তুমি হিজাব পড়ো তোমার বোন পড়ে না। এতে কি তোমার বাবা ভাই রাগ করে না ?
সে বলে যে করে কিন্তু ইসরা কথা শুনেনা কারো। ইসরার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু ওর স্বামী কথায় কথায় ইসরাকে মারে। অনেকদিন সহ্য করেছিলো কিন্ত সহ্যের সীমা অতিক্রান্ত হবার পরে ইসরা চলে এসেছে। ইসরার এক ছেলে আছে। সে আর স্বামীর ঘরে ফিরবে না। ইসরা দেখতে অসামান্যা সুন্দরী। ভাবলেও অবাক লাগে কি করে এমন অদ্ভুত সুন্দর মেয়ের গায়ে হাত তুলতে পারে !!

মজার কথা হলো ইসরা শাইমার বাবাও দুই বিয়ে করেছেন। আগের সংসারেও নয় ছেলেমেয়ে আবার ইসরা শাইমারাও নয় ভাইবোন। শাইমা বললো আগের সংসারের ভাইবোনরা তার মা’কে পছন্দ করে না। আমি বললাম দেখো তোমার বাবা যদি আবার বিয়ে করেন তোমরাও কিন্তু তার পরের স্ত্রী এবং তাদের ছেলেমেয়েদের পছন্দ করবে না। এটাই স্বাভাবিক।
সে মাথা নাড়লো – হুম ঠিক বলেছো –

ভাবছিলাম ওরা অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে এসেও কেনো সভ্য হতে পারে না। কিন্তু ভেনেসা আমার অস্ট্রেলিয়ান বন্ধুর স্বামী লেবানিজ আরব। সে জানালো সে বরং পরিবারে আধিপত্য খাটায়। সত্যি হলো মানুষ পরিবেশে এসেও পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু রক্তের যে পূর্বপুরুষের ধারা অব্যাহত আছে তা থেকে মুক্তি পেতে তাদের কত সময় লাগবে ?


অস্ট্রেলিয়ার জারাকান্দা ফুল। নভেম্বরে এই ফুলের সিজন।

দেশ বিদেশ – জার্নাল ডায়েরি

১. বন্ডাই জংশনে আমার খুব একটা কাজ পড়ে না। মাঝে মাঝে সেখানে যখন লোক থাকে না বা কেউ সিক কল দেয় তখন হাতের পাঁচ হিসেবে সম্ভবত আমার ডাক পড়ে। ভোর ৫ টা বাজে এক শিফট শেষ করে ঘরে ফেরার সময় মেইন কন্ট্রোল রূম থেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হয় – হাই নাজমুন তুমি কি ছয়টা বাজে বন্ডাই এর শিফট টা করতে পারবে ?
না বলতে না পারা আমার আর একটা অক্ষমতা। সারা রাত কাজ করে চুড়ান্ত রকমের ক্লান্ত হলেও আমি হাসিমুখে বলছি – না সমস্যা নেই। আমি পারবো – অতএব ছুটতে ছুটতে যাচ্ছি বন্ডাই জংশনে –

বন্ডাই কিন্তু খুবই সুন্দর এলাকা। বন্ডাই এ রয়েছে চমৎকার সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রসৈকতের কারণেই এখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। নাভিটাস থেকে আমাদের সাঁতার শেখানো হয়েছিলো। সেই সময় বন্ডাই এর সমুদ্র সংলগ্ন সুইমিং পুলে আমরা সাঁতার কাটতে এসেছিলাম। সাধারণ সুইমিংপুলের পানির চাইতে সমুদ্র সংলগ্ন সুইমিং পুলের পানি অনেকটাই ভারী। সাঁতার কাটতে গেলে অনুভব করি যে আপনা আপনি ভেসে আছি অনেকটাই। সমুদ্রের পানিতে লবন আছে বলে সাঁতার কাটা অনেকটা সহজ বুঝলাম।
বন্ডাই জাংশনে প্রায় সময় কাজ শেষ হয় সকাল ন’টায়। চুড়ান্ত রকমের ক্লান্ত পা আর একটুও চলছে না তবু উপরে যাই খেতে। সেখানে ম্যাকডোনাল্ডসে খেতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখছি সেখান থেকে সমুদ্র দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়া বৃক্ষের দেশ। দূর থেকে দেখছি সমুদ্রের নীল পানি। সারি সারি বৃক্ষ – বন নাকি ?
আহা এতো সুন্দর – মন চোখ দুইই জুড়ায় —

২.
অস্ট্রেলিয়া শুধু সমুদ্র বৃক্ষের শহর না। পাখির ও শহর। কত যে হরেক রকমের পাখি – সাদা, নীল, সবুজ, গেরুয়া ছোট ছোট পাখি কিচির মিচির করে উড়ে যাচ্ছে। সকাল সন্ধ্যায় কিচির মিচির করে করে মাথা খারাপ অবস্থা –
এক সকালে দেখি অনেকগুলো গাছের মধ্যে শুধু একটা গাছেই পাখিরা এসে বসছে। বিষয়টা কিছুতেই বুঝে আসলো না – কি আছে ঐ বৃক্ষে যা আর সব বৃক্ষে নাই ?

একদিন নেভিটাসে যাবার সময় ছোট একটা গাছে এতো চমৎকার পাখি বসেছে – পাখির গায়ের রঙ পালক নানা বর্ণে বিচিত্র এক সুন্দর রূপ পরিগ্রহ করেছে। এক ভদ্রলোককে দেখলাম নানাভাবে এই পাখির ছবি তুলছেন। আমারো ইচ্ছে করলে ফ্রেমে আটকে রাখি – কিন্তু ইচ্ছে মাঝে মাঝে জোরালো হয় না – যেভাবে হাঁটছিলাম এভাবেই হেঁটে গেলাম।

এই গাছে অনেকগুলো সবুজ নীল গেরুয়াতে মেশানো পাখি বসে আছে – আচ্ছা পাখি যখন সবুজ পাতার সাথেই মিশে একাকার হয়ে যায় তখন মনে হয় এই ক্যামোফ্ল্যাজ তাকে শিকারীর আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যই হয়তোবা – কিন্তু এই যে এখানে অসংখ্য পাখি বসে আছে এদের বোঝা যাচ্ছে কি ?


বৃক্ষের পাতার আড়ালে বসা পাখি।

যা দেখার তা দেখে নাও

আজ কাজ করছিলাম বন্ডাই জাংশনে।
এক ভদ্রলোক নানাভাবে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন। কাজ শেষে ম্যাকডোনাল্ডসে খেতে বসলাম। ভদ্রলোককে দেখলাম পিছু পিছু এসে সামনে বসলেন। এবার ভদ্রলোকের দিকে ভালো করে তাকালাম। লম্বা চওড়া ভদ্রলোক। দাড়ি টাড়ি সহ ভদ্রলোক বেশ দেখার মতো। কিন্তু তার জ্যাকেটের কোনাটা ছেঁড়া। না আর কোনো ধরণের চোখে পড়ার মতন দারিদ্র্য তার মধ্যে নেই। কিন্তু কিভাবে যেন বুঝে গেলাম তার আসলে কাজ নেই। আয় ইনকাম ও নেই।

এটা সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করার পর নিজের পরিচয় নিজেই দিলেন। উনি গ্রীসের লোক। আগে কাজ করতেন এখন করেন না। বুঝলাম সেন্ট্রাল লিঙ্ক নিয়ে চলেন। কিন্তু সেন্ট্রাল লিঙ্ক কাউকে খাবার দাবারের বন্দোবস্ত করার টাকা দিলেও বাসা ভাড়া তো আর দেয় না। ভদ্রলোক শক্ত সমর্থ। তাকে সেন্ট্রাল লিঙ্ক এমনিতে টাকাও দেবে না।

আমি প্রাচ্যের মানুষ। মনে হলো ক্ষুধার্ত লোক। তাকে সাধলাম খেতে। উনি খাবেন না খাবেন না করে খেতে শুরু করলেন। হয়তো তারা বুঝেন আমরা এই নিন্ম আয়ের দেশের মানুষেরা মায়াবতী। ভদ্রলোক অনেক কথা বলতে শুরু করলেন। তোমার ফেইস সুন্দর। তোমার নোজপিনটা কি বিয়ে হয়েছে বলে পড়েছ নাকি এমনিতেই পড়েছ?

মনে মনে আশংকিত হলাম। এদেশে জলপরীর মতো মেয়েরা অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায় আর বেটা আমারে সুন্দরী বলে প্রেইজ করছে। বেটার মতলব তো ভালো না। কিন্তু আজকাল মোবাইলের একটা ভালো সুবিধা আছে। আপনি কাউকে এভোয়েড করতে চাইলে ভালো করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি ওনার দু’একটা কথায় হু হা করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
উনি আর সুবিধা করতে পারলেন না। কিন্তু নিজেই ভয় পাচ্ছিলাম ভদ্রলোক আবার পিছ নেয় কিনা।

ভদ্রলোককে উপেক্ষা করে বন্ডাই এলাকাটা দেখতে বের হলাম।
আহা এতো সুন্দর এই এলাকা। চাইনিজদের বড় বড় সব সুপার শপ। একটা কিনলে একটা ছাড় পাওয়া যাবে – এসব লোভনীয় অফারে ভর্তি সব প্রোডাকটস দেখতে দেখতে এসব আর টানে না। এই এলাকায় কোনো স্পেশাল মেলা নাকি – বুঝতে পারলাম না – আবার জিজ্ঞেস করার মতো ইচ্ছেও করছে না। যা দেখার তা দেখে নাও যা শোনার তা শুনে নাও – সেও কি আর মন্দ অভিলাষ !

নস্টালজিয়া

পা ব্যথা নিয়ে ডক্টরের কাছে গেছি। এর আগেও আর একজনের কাছে গেছি। সেই মেয়ে ইয়াং ডক্টর। অভিজ্ঞতা বলে কথা। সে কিছুই বুঝতে পারছে না কি হলো। কিন্তু আজকের উনি বয়স্ক হলেও খুব মিষ্টি। আর খুব মুরুব্বী ভাব।

এখানের ডক্টর রুম থেকে এসে ডেকে নিয়ে যায় রোগীকে। এতে ভালো যে ডক্টরের মধ্যে ইগো ভাবটা ভ্যানিস হয়ে যায়। রোগী গুরুত্বপূর্ণ। উনি আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে বললেন তুমি খুব মিষ্টি। এতো পোলাইটলি কথা বলো। তুমি খুবই কাইন্ড হার্টেড। আমি কিছুটা ইমোশনাল হয়ে গেলাম। আমি জানি এই গুণগুলো আমার আছে। কিন্তু অনেক মানুষ আছে এর সুযোগ নিয়েছে।


যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। নানীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন নানীর ঘরে আমার ছোট খালা আমি আর নানী। পাশের ঘরের আমাদের এক মামাত ভাই এর সাথে আমার প্রচণ্ড ভাব হয়ে গেলো। তার বয়েস সাত। যে কদিন নানীদের বাড়িতে ছিলাম সারাক্ষণ নিশাদের সাথে ঘুরি ফিরি গল্প করি। সপ্তাহ খানেক পরে বাসায় ফিরলে আমি নিশাদকে ভুলতে পারলাম না। প্রচণ্ড কষ্ট হতে লাগলো। নামাজ পড়ে দোয়া করতে লাগলাম নিশাদ যেনো আমাদের বাসায় আসে। আশ্চর্য – মানুষ এমন কেন ?


এই সিডনী শহরে হাঁটলে আমার কেনো জানি ছোটবেলার শহরের কথা মনে পড়ে। সরকারী কোয়ার্টার, এতো নির্জন কোলাহল বিহীন শহর। রাস্তার দুপাশে কৃষ্ণচুড়া গাছে লাল ফুল যেনো আগুন লাগতো গাছগুলোতে। পাহাড়ের কোলে আমাদের বাসাটা থেকে পাহাড়টাকে প্রচণ্ড কাছের মনে হতো। দুপুর হলে কি যে নেশা ছিলো – বেরিয়ে পড়তাম, তাতে আমার মা জননী যে অত্যাচারগুলা আমার উপর করতো সে নাইবা বললাম।

দেশ ছেড়ে এলাম। একা যখন হাঁটি তখন বুকের ভেতর চিনচিন করে। দেশ ছেড়ে আসা, কাছের মানুষজনের জন্য, দেশের জন্য বুকের গহীনে শব্দ করে ব্যথা জাগায়।
আহা !!
মানুষকে তো পৃথিবীও ছেড়ে যেতে হয় –

চূর্ণ-বিচূর্ণ ভাবনা থেকে-৩


ঢেউয়ের নৃত্য।

১. নিষ্কলুষ হৃদয়ে কলুষতা কখনও স্থান পায় না। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন আপনার হৃদয় কতখানি নিষ্কলুষ?

২. একজনের প্রোফাইলে ঘুরতে গেলাম। স্বাভাবিকভাবে তার বায়োগ্রাফী নজর কাড়লো আমার। বেশ অবাক হলাম দেখে। সেখানে লিখা ছিলো, “আমি সবার আগে মা, তারপর একজন ভালো ও গুণবতী স্ত্রী”।

এটা অসুন্দর কথা। বেশ অগোছালো ভাবনাও বটে। আমাদের উচিৎ যে কোন অঙ্ককে প্রশ্ন থেকে সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়া কারণ সমাধান থেকে প্রশ্নের দিকে নিয়ে আসা বোকামী ছাড়া আর কিছুই না।

৩. ভারতে একজন ট্রাফিক পুলিশের কন্সটেবল রাষ্ট্রপতি আসবে এই বিষয়টা জানতে পেরে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিলেন। শুধু একটি রাস্তা উন্মুক্ত রাখলেন যে স্থান দিয়ে রাষ্ট্রপতি সাহেব যাবেন। এমন সময়ে অন্য রুট দিয়ে একটি এম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে আসছিলো। এদিকে রাষ্ট্রপতির গাড়ি বহরও চলে আসলো। ঠিক সেই মুহূর্তে ট্রাফিক পুলিশের কন্সটেবল রাষ্ট্রপতির গাড়ি থামিয়ে দিয়ে এম্বুলেন্সকে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন। এম্বুলেন্স যখন চলে গেল তারপর রাষ্ট্রপতির গাড়িবহর ছাড়লেন। তার এই মহানুভবতা দেখে রাষ্ট্রপতি ঢের প্রশংসা করেছিলেন। বিষয়টা দাঁড়ালো, আগে মানবতা তারপর দায়িত্ববোধ। আর আমাদের দেশ হীতে বিপরীত।

৪. আমি একজন সোজা মনের মানুষ। ভালো লাগা খারাপ লাগা এসব আগে-পরে না ভেবেই সরাসরি বলে দিই। এতে কেউ মন খারাপ করলে সেটা তার সমস্যা। আর হ্যাঁ সোজা কথা শুনতে আমি নিজেও পছন্দ করি খুব।

৫. আপনি হজ্জ করতে যান? আপনি মানবতার কাজ করতে যান? দয়া করে নিজের ছবি তুলবেন না আর যদি ছবি তুলেও থাকেন অন্তঃতপক্ষে সেটা জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন না। এগুলো লোক দেখানো কাজ বলে বিবেচিত হয় আমার বিশ্বাস। আর মহান সৃষ্টিকর্তা লোক দেখানো কাজ পছন্দ করেন না।

আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯০ তম জন্মদিন

আজ ৩ মে। আজ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯০ তম জন্মদিন। ১৯২৯ সালের ৩ মে জননী পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় জন্ম নেন। ৪২ সালে এসএসসি, ৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। সেটা ১৯৪৫ সাল।এরপর ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড শেষ করেন। ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেন।

তাঁর কর্মজীবন কেটেছে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করে। ১৯৯১ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।

আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর ছেলে শাফী ইমাম রুমী শহীদ হন। কী দুর্ভাগ্য জননীর ! মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বামী শরীফ ইমামও মারা যান। ৭১ সালে স্বামী আর সন্তান হারানো জননী স্বাধীনতা উত্তর এদেশের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের পক্ষে তিনি ছিলেন প্রথম কাতারের সৈনিক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর উপন্যাস বা দিনলিপি যাই বলিনা কেন, একাত্তরের দিনগুলি ছিলো একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মায়ের দৃঢ়তা আর আত্মত্যাগের অনন্য উদাহরন।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে লেখক জাহানারা ইমামের আত্মপ্রকাশ। প্রথমে তাঁর পরিচয় ছিলো একজন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে। ছোটদের জন্যে খুব প্রয়োজনীয় কয়েকটি বই তিনি অনুবাদ করেন। বইগুলো পাঠক সমাদৃত হয়। তবে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনা করেই তিনি পৌঁছে যান পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জাহানারা ইমাম লেখালেখিতে ব্যস্ত সময় কাটান এবং তাঁর প্রধান গ্রন্থগুলি এ সময়ে প্রকাশ পায়।

গল্প, উপন্যাস ও দিনপঞ্জি জাতীয় রচনা মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: অন্য জীবন (১৯৮৫), বীরশ্রেষ্ঠ (১৯৮৫), জীবন মৃত্যু (১৯৮৮), চিরায়ত সাহিত্য (১৯৮৯), বুকের ভিতরে আগুন (১৯৯০), নাটকের অবসান (১৯৯০), দুই মেরু (১৯৯০), নিঃসঙ্গ পাইন (১৯৯০), নয় এ মধুর খেলা (১৯৯০), ক্যানসারের সঙ্গে বসবাস (১৯৯১) ও প্রবাসের দিনলিপি (১৯৯২)। জাহানারা ইমাম সাহিত্যকর্মের জন্য স্বাধীনতা পদক (১৯৯৭), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কমর মুশতরী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১), আজকের কাগজ হতে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কার (বাংলা ১৪০১ সনে), নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা (১৯৯৪), রোকেয়া পদক (১৯৯৮) প্রভৃতি পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগানের ডেট্টয়েট নগরীর সাইনাই হাসপাতালে ৬৫ বছর বয়সে জাহানারা ইমাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র শফি ইমাম রুমী গেরিলা বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কয়েকটি সফল অপারেশনের পর তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হন এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে শহীদ হন। জাহানারা ইমাম পরিচিতি পান ‘শহীদ জননী’ হিসেবে।

শহীদ জননীর নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠন করা হয়- ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এর পাশাপাশি ৭০ টি সংগঠনের সমন্বয়ে সেবছরই ১১ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। যার আহবায়কও ছিলেন জননী জাহানারা ইমাম।

এরপরের ঘটনা বড়ই নির্মম ! যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আমাদের জননীকে রাস্তায় নামতে হয়েছিলে। ততদিনে তাঁর সারা শরীরে দুরারোগ্য ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যায়। একদিকে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের রাজনৈতিক বান্ধব দলের মানূষরুপী পশুদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া, অন্যদিকে রাস্ট্রপক্ষের মদদপুষ্ট হয়ে সরাসরি আক্রমন করে বসে ৭১ সালের হায়েনাদের দল- গোলাম আযম নিজামী গং। জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে মামলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহীতার। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, জাতী হিসেবে কী অকৃতজ্ঞ, অসভ্য আর বর্বর আমরা !

অবশেষে, রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা মাথায় নিয়েই আমাদের জননী জাহানারা ইমাম ২৬ জুন ১৯৯৪ সালে দেশের বাইরে মিশিগানে ইন্তেকাল করেন। আজ তাঁর জন্মদিন। মাগো, তুমি যেখানে যে অবস্থায় আছো- ভালো থেকো মা ! শান্তিতে থেকো ! পারলে আমাদের মত অকৃতজ্ঞ জাতীকে ক্ষমা করে দিও মা ! তুমি জানো মা, তোমার দেখিয়ে দেয়া পথে এখনও আমরা হাঁটছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে হাজারো মানুষ আজ সোচ্চার। মনে রেখো মা, এদের বিচার হবেই এ মাটিতে… এ আমাদের দৃপ্ত শপথ।।