অজয় নদীর জলধারা……. বয়ে চলে বারো মাস (পঞ্চম পর্ব)

অজয় নদীর জলধারা……. বয়ে চলে বারো মাস (পঞ্চম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।

নদীমাতৃক দেশ ভারত। নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক মানব সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই। নদীকে কেন্দ্র করেই সভ্যতার বিকাশ। মানুষের স্থায়ী বসবাসের সূত্রপাত নদীর ধারে। আফ্রিকার হাড্ডার অঞ্চলে কাডগোনা নদীর তীরে বসবাস করা মানুষই প্রথম স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মানবজাতি। মিশরের নীল নদের তীরে গড়ে ওঠা মিশরীয় সভ্যতার কথা সুবিদিত। আদি অনন্তকাল ধরে নদ-নদীই যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা বানিজ্য, জনবসতি স্থাপন, সেচ ব্যবস্থার বিকাশের প্রধান ভূমিকা নেয়। নদীর সঙ্গে তাই মানুষের সম্পর্ক নিবিড় ও আত্মিক। নদীকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী নানা উৎসব-অনুষ্ঠানের কথা সুবিদিত। এক কথায় অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে নদীর ভূমিকা অসীম।

বীরভূম জেলার উল্লেখযোগ্য নদ-নদীগুলি হল ব্রাহ্মণী, অজয়, হিংলো, কোপাই, দ্বারকা, বক্রেশ্বর ও ময়ূরাক্ষী। এই অজয় নদী বীরভূমের বৃহৎ অংশের মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী। নানা ঋতুতে এই নদীর নানা রূপ। বারো মাসে এই নদীর বর্ণনায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
“আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকেবাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।
আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর-ভর-
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।”
দুইকূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
বরষার উত্সবে জেগে ওঠে পাড়া ।

পরিশেষে বলা প্রয়োজন এই নদীটিকে নিয়ে আমাদের ভাবনা দরকার। দরকার সচেতনতার। আর দরকার তার দিকে দৃষ্টি ফেরানোর। সকলকে উপলব্ধি করতে হবে অজয় নদীও আমাদের দেহের মতোই এই প্রকৃতির শিরা উপশিরা। এগুলি শুকিয়ে গেলে বিপন্ন হবে মানুষ, আর প্রকৃতি, সেই সাথে এ অঞ্চলের কৃষ্টি, সভ্যতা ও শিল্পসংস্কৃতি।

অজয় নদীর জলধারা…….বয়ে চলে বারো মাস
অজয় নদীর কবিতা-৫ (পঞ্চম পর্ব)

কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

অজয় আপন বেগে বহে অবিরাম,
বহে অজয়ের ধারা নাহিক বিরাম।
দুইতীরে তরুশাখে পাখী গীত গায়,
নদীতটে শালিকেরা ডানা ঝাপটায়।

সকালের সোনা রবি ওঠে পূবাকাশে,
ফুলবনে ফুল ফোটে ভোরের বাতাসে।
সোনারোদ পড়ে ঝরে অজয়ের চরে,
শীতল বাতাসে প্রাণ আনচান করে।

ওপারে আমের বন এ পারে কাঁঠাল,
রাঙাপথে দুই গাঁয়ে সারি সারি তাল।
দুই ধারে সোনাধান, ধান কাটে চাষী,
গরুপাল চরে মাঠে সুরে বাজে বাঁশি।

দিবা অবসানে রবি যায় অস্তাচলে,
সাঁঝের আঁধার নামে অজয়ের কূলে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

3 thoughts on “অজয় নদীর জলধারা……. বয়ে চলে বারো মাস (পঞ্চম পর্ব)

  1. কবির লেখায় অজয় নদীর জলধারা বয়ে চলুক! আমারও সাথে আছি সারাক্ষণ। শ্রদ্ধেয় কবিকে শুভেচ্ছা।      

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম।
      সাথে থাকবেন এটাই প্রত্যাশা করি।
      জয়গুরু।

  2. দুই ধারে সোনাধান, ধান কাটে চাষী,
    গরুপাল চরে মাঠে সুরে বাজে বাঁশি।

    অসাধারণ দৃশ্য। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।