অজয় নদীর জলধারা……. বয়ে চলে বারো মাস (নবম পর্ব)

অজয় নদীর জলধারা……. বয়ে চলে বারো মাস (নবম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

অজেয় অজয়। অজয়ের তীরে আজও ইতিহাস কথা কয়। ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষের লেখা থেকে জানা যায় রাঢ়বঙ্গের তৎকালীন অধীশ্বর মহিপালের অধীনস্ত সামন্তরাজা ইছাই ঘোষ ছিল বর্ধমানের ঢেক্কুর গড় বা ঢেকুর গড়ের একচ্ছত্র আধিপতি। অজয় নদের তীরে ইছাই ঘোষের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এখনও দৃষ্টিগোচর হয়, হাণ্টার সাহেব কৃত ‘রুরাল বেঙ্গল” নামক পুস্তকে তা উল্লিখিত আছে। অজয় নদীর তীরে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরনির্মিত সুদর্শনা দুর্গামুর্তি। উচ্চতায় প্রায় দশ বার ইঞ্চি। মন্দিরপ্রাঙ্গণে রয়েছে একটি হাড়িকাঠ। লোকমুখে শোনা যায়, আগে এখানে কাপালিকেরা নরবলি দিতেন। একবার অজয় নদের ওপারে অবস্থিত কেন্দুলি গ্রাম থেকে ‘গীতগোবিন্দের’ রচয়িতা বৈষ্ণব কবি জয়দেব আসেন এই মন্দির দর্শনে।

তিনি কাপালিককে প্রস্তাব দেন যদি তিনি তাঁকে চাক্ষুষ মাতৃদর্শন করাতে পারেন তবেই প্রমাণ হবে যে কাপালিকের উৎসর্গীকৃত নরবলি দেবী গ্রহণ করেন। যদি কাপালিক তা না পারেন তা’হলে কবি জয়দেব তাঁকে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্যাম রূপ দর্শন করাবেন। তবে তাতে শর্ত আছে একটা, নরবলি বন্ধ করতে হবে। ভক্ত কবি জয়দেবের এই প্রস্তাবে রাজি হলেন কাপালিক। চেষ্টা করলেন তাঁর উপাস্যদেবীকে দর্শন করাতে। ব্যর্থ হলেন। এরপর জয়দেবের ভক্তিপূর্ণ আকুল প্রার্থনায় শ্যামামা শ্যাম রূপ ধারণ করে দর্শন দিলেন কাপালিককে। আনন্দে আবেগে কাপালিক লুটিয়ে পড়লেন প্রেমিক সাধক জয়দেবের চরণতলে। সেই থেকেই মন্দিরে পূজিত দেবীর নাম হল ‘শ্যামরূপা’ দুর্গা আর বন্ধ হল নরবলি।

স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, লাউ সেনের সঙ্গে যে যুদ্ধে ইছাই ঘোষ পরাজিত ও নিহত হন তার আগে দেবী শ্যমরূপা ইছাই ঘোষকে স্বপ্নাদেশ দেন যে, সপ্তমীতে যুদ্ধে না গিয়ে অষ্টমীতে যেতে কিন্তু দেবীর কথা অমান্য করে তিনি সপ্তমীতেই যুদ্ধে যান এবং পরাজিত হয়ে প্রাণহারান। ইছাই ঘোষ নিহত হলে তার লাউসেনের অনুচরেরা দেবী মূর্তিকে গড় জঙ্গলের ধারে অজয় নদে বিসর্জন দেয়। পরে সেখানে একটি অষ্টধাতুর মূর্তি স্থাপন করা হলে ইছাই ঘোষের পালিত কন্যা কল্যাণী নিজের শ্বশুরবাড়ী যাবার সময় সাথে করে ওই অষ্টধাতুর মূর্তি নিয়ে যান।

আসানসোলের বরাকরের কাছে হঠাৎই সেই মূর্তি তাঁর হাত থেকে পড়ে যায়। ‘দেবী মূর্তি সেই স্থানেই থাকতে চাইছেন’ – এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি ওখানেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বরাকরের সেই দেবীই আজ কল্যানেশ্বরী নামে পরিচিত। তবে গড় জঙ্গলের নবনির্মিত মন্দিরে পরে একটি প্রস্তরমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা আজও পূজো হয়।

অজয় নদীর জলধারা…….বয়ে চলে বারো মাস
অজয় নদীর কবিতা-৯ (নবম পর্ব)

কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

অজয় নদীর চরে পড়ে আসে বেলা,
সরু বালুচরে বসে পাখিদের মেলা।
পশ্চিমে অরুণ রবি দেখি অস্ত যায়,
পাখিসব দিনশেষে ফিরিছে বাসায়।

মাঠ হতে আসে ফিরে কিষাণের দল,
একা নদী বয়ে চলে কল কল কল।
নির্জন অজয় ঘাটে নামে অন্ধকার,
জোনাকিরা আলো দেয় ঘাটে চারিধার।

পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে আকাশের কোলে,
চাঁদ তারা সারারাত একসাথে খেলে।
জোছনায় সরু বালি চিক চিক করে,
বহিছে অজয় নদী সারা রাত ধরে।

পূবের আকাশ দেখি হয়ে আসে লাল,
রাত কেটে আসে রোজ নতুন সকাল।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

12 thoughts on “অজয় নদীর জলধারা……. বয়ে চলে বারো মাস (নবম পর্ব)

  1. অজেয় অজয়। অজয়ের তীরে আজও ইতিহাস কথা কয়।

    অজয় নদীর চরে পড়ে আসে বেলা, সরু বালুচরে বসে পাখিদের মেলা।
    পশ্চিমে অরুণ রবি দেখি অস্ত যায়, পাখিসব দিনশেষে ফিরিছে বাসায়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  2. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম। আগামীকাল এর শেষ পর্ব প্রকাশিত হবে।
    ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
    জয়গুরু।

  3. পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে আকাশের কোলে,
    চাঁদ তারা সারারাত একসাথে খেলে।

    দারুণ কবি ভাণ্ডারী দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif
    বেশ কিছুকাল আসা হচ্ছে না শব্দনীড়ে, আজ সকাল সকাল ব্লগে এলাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_bye.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম। 
      জয়গুরু।

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম। 
      জয়গুরু।

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম। 
      জয়গুরু।

  4. বরাকরের সেই দেবীই আজ কল্যানেশ্বরী নামে পরিচিত। তবে গড় জঙ্গলের নবনির্মিত মন্দিরে পরে একটি প্রস্তরমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা আজও পূজো হয়। জয়গুরু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম। 
      জয়গুরু।

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত হলাম। 
      জয়গুরু।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।