ভালো থাকা না থাকা ১০

কোথায় যেন গম্ভীর সুরে একটানা একটা ঘন্টা বেজেই চলে, ঢং ঢং ঢং…। বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যে নামে, সন্ধ্যার আয়ু শেষে জড়ায় পরম আদরে রাত্রি। ঘন্টার শব্দের কম্পনাঙ্ক দিনের আলোয় চাপা পড়ে যায় ক্ষণভরি স্মৃতির মানুষের হৈ হট্টগোলে।

কিন্তু রাত্রি বাড়লেই দ্বিপদের তৈরী নকল আওয়াজ কমতে থাকে। আর রাস্তা, ঘাট, এই চরাচর, মহানগরের প্রান্তিক ফুটপাত, গ্রামীণ বাঁশের খুঁটির সাথে জোড় বাঁধা কুঁড়েঘর, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া কুয়াশায় মোড়া মাঠকুয়ো, কনফেশনে মগ্ন চার্চ, শীৎকার ভাসিয়ে খদ্দেরের মনোরঞ্জনে শস্তার মেকআপ নেওয়া বেশ্যালয়, একান্ত পীড়িত স্যালাইন চলতে থাকা হাসপাতালের ছমছমে করিডোর পেরিয়ে ছড়িয়ে যায়, দিগন্ত আবৃত করে সেই ভুবনডাঙ্গার ঘন্টা – ঢং ঢং ঢং…।

শব্দাঙ্কের গভীরতা ছিন্নভিন্ন করে স্বল্পদৈর্ঘ্যের হৃদবাস। হৈমন্তিক রাত্রির উটচরা মরুভূমির বালির পায়ের দাগে দাগ বুলিয়ে নেমে আসে হিম। শহুরে ছোটখাটো মানুষ, গ্রামীণ ছোটখাটো মানুষ ঘুমিয়ে পড়লে আখড়ার বেতলতা ঘেরা সীমান্ত ছাড়িয়ে চারপাশে খেলে বেড়ায় বাউলের মরমিয়া গলা, ‘কয় জনম পার হলি ও মন, মানুষ হলি কই…!’ আশ্চর্য সেই চাঁদক্ষরণে আপনমনে সঙ্গত করে অলৌকিক ঢং ঢং ঢং…।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

18 thoughts on “ভালো থাকা না থাকা ১০

  1. অসাধারণ বর্ণনায় লেখাটি ভীষণ মনোমুগ্ধকর। ভালো লাগা জানালাম সৌমিত্র দা। 

  2. রাস্তা, ঘাট, এই চরাচর, মহানগরের প্রান্তিক ফুটপাত, গ্রামীণ বাঁশের খুঁটির সাথে জোড় বাঁধা কুঁড়েঘর, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া কুয়াশায় মোড়া মাঠকুয়ো, কনফেশনে মগ্ন চার্চ, শীৎকার ভাসিয়ে খদ্দেরের মনোরঞ্জনে শস্তার মেকআপ নেওয়া বেশ্যালয়, একান্ত পীড়িত স্যালাইন চলতে থাকা হাসপাতালের ছমছমে করিডোর পেরিয়ে ছড়িয়ে যায়, দিগন্ত আবৃত করে সেই ভুবনডাঙ্গার ঘন্টা – ঢং ঢং ঢং…।

    মর্মস্পর্শী লিখা … ভাল থাকুন। শুভ কামনা 

  3. দিগন্ত আবৃত করে সেই ভুবনডাঙ্গার ঘন্টা – ঢং ঢং ঢং…। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_cool.gif

  4. শব্দাঙ্কের গভীরতা ছিন্নভিন্ন করে স্বল্পদৈর্ঘ্যের হৃদবাস। হৈমন্তিক রাত্রির উটচরা মরুভূমির বালির পায়ের দাগে দাগ বুলিয়ে নেমে আসে হিম।

     

    * অসাধারণ কথামালা…. https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  5. মর্মস্পর্শী লেখা কবিতা পড়ে কিছুক্ষণ হারিয়ে গিয়েছিলাম অন্য কোথাও। আবার ফিরে এলাম মন্তব্যের ছোট বক্সে। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।            

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।