ধর্ষন: কিছু মিথ -১

৭৭ এর দিকে মিশেল ফুকোঅদ্ভুত একটা যুক্তি দিলেন। নারী পুরুষের যৌনপ্রক্রিয়া কখনোই অপরাধতুল্য হতে পারে না। কারন এটা একটা আদিমতম জৈবিক প্রক্রিয়া যা স্বতঃস্ফূর্ত কিন্তু ধর্ষন অবশ্যই অপরাধতুল্য কেননা এটা জোর করে তার ওপর শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনেকটা এমন যে আপনি কাউকে সাকার পাঞ্চ বা সজোরে মুস্টিবদ্ধ ঘুষি মারলেন। সেভাবে কারো জননাঙ্গের ভেতরে জোর করে নিজের যৌনাঙ্গ প্রবেশ করা অবশ্যই সেরকম একটা উদাহরন ধরা যেতে পারে কিন্তু আপনি যখনই সেটা শুধু মেয়েদের জননাঙ্গ হিসেবে তুলে ধরবেন যা সুরক্ষা করা দরকার (যেমন টাকা পয়সা ইত্যাদির মতো বিশেষ লিঙ্গের জননাঙ্গকে অস্পৃশ্য মনে করা), বস্তুত আপনি তখনই ট্যাবুতে নিয়ে গেলেন। আসলে এটা তা না, এটা হলো একধরনের সহিংসতা। তার এই যুক্তিটি তৎকালীন নারীবাদের মেইনস্ট্রিমের সেক্সিট জনপ্রিয় ধারার থেকে সমালোচিত হয়। ফুকোর এই বক্তব্য অনুযায়ী আধুনিক সময়ে যৌনতাকে ট্যাবু হিসেবে দেখার যে ভ্রান্তি এবং তা থেকে সুযোগ নেয়া সুবিধাবাদীদের আঁতে বেশ ঘাঁ দিতে এখনো সক্ষম। হয়তো ২০২০ এর দিকে #MeToo এর সেকেন্ড ওয়েভে ধর্ষক বা নীপিড়কদের উল্টো প্রতিবাদী হয়ে ওঠা অথবা বাংলাদেশে সুবিধাবাদী সুশিল ধর্ষকদের কন্ঠে পুরুষ নির্যাতনের যে বুলি শোনা যায় এটা তারই ফল।
দ্বাদশ শতকে রোমানরা ধর্ষনকে অপরাধ গন্য করে সংজ্ঞায়িত করে এভাবে যে যৌনমিলন হোক বা না হোক নারীর ওপর ধর্ষনের উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ করা হলেই সেটা ধর্ষন বলে গন্য হবে। সম্প্রতি এফবিআই তাদের ধর্ষনের সংজ্ঞাকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে যার মাধ্যমে ভিক্টিম শুধু নারী হতে পারেন না, একটি শিশু, হিজড়া অথবা একজন পুরুষ বা সমকামী অথবা বিবাহিতা স্ত্রীও (যদি তার স্বামীর দ্বারা ধর্ষিত হন) হতে পারেন।

তারপরও ধর্ষন থেমে নেই। ধর্ষন কেন হয় সেটা নিয়ে একটা ব্লগ লিখেছিলাম চাইলে এখানে পড়ে আসতে পারেন। পুরোটাই মানসিক বিকৃতি সংশ্লিস্ট ব্যাপার।

ধর্ষন নিয়ে যখনই কোনো আলোচনা হয় তখন এর দুটো দিক নিয়ে কথা হয় সেটা হলো ধর্ষিতা নারী সাহসী হয়ে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জনসম্মুখে বলবে যাতে সবাই সচেতন হন এবং এটা যে আসলেই কত খারাপ সেটা নিয়ে সবাই ভাবতে পারে, এর মূল উদঘাটনে ডিসকোর্স হতে পারে। আরেকটি দিক হলো প্রশাসনিক যারা মূলত ধর্ষনের কোনো ঘটনা ঘটলে তার তদন্ত, আসামী পাকড়াও, ভিক্টিমের পুনর্বাসন এবং তার উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন।কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ হচ্ছে না, মূল সমস্যা যেখানে সেটা হলো ধর্ষনের সংজ্ঞা একেক দেশে একেক রকম। আমেরিকার এফবিআই ধর্ষনকে যে সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করেছে, মুসলমান দেশগুলো সেভাবে সংজ্ঞায়িত করে না কারন সেখানে দাসী আর স্ত্রী ধর্ষন হুদুদ আইনেই বৈধতা দিয়ে দিয়েছে এবং হ্বদের ধারায় ধর্ষনকে কোনোভাবেই সুস্পস্টরূপে ব্যাখ্যা করে নাই। আবার অনেক দেশে সমকামীরা নিজেদের পরিচয় জানালেই তাদের মৃত্যু অনিবার্য, আবার বাচ্চাবাজী ও বাল্যবিবাহের নামে শিশুধর্ষন বা স্টাচুয়ারী র‌েপ রাস্ট্রিয় ভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

১) সুইডেন ধর্ষনে এত উপরে কেন?

যদি আমরা ধর্ষনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে সুইডেনের অবস্থান পাবো ষষ্ঠ স্থানে। প্রশ্ন আসতে পারে সভ্যতার ধারক বাহক বলে খ্যাত এবং শান্তির দেশ হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয় তাদের সমাজ ব্যাবস্থা এত খারাপ কেন! তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
এর কারন হলো সুইডেনের অতিরিক্ত উদ্বাস্তু থাকার কারনে সেখানে যে সামাজিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত ধর্ষনের সংজ্ঞার পরিবর্তন।
বিশ্বের নানা জায়গায় যুদ্ধবিগ্রহ,অযাচারের কারনে উদ্বাস্তুরা যেসব উন্নত দেশে নিরাপদে থাকার অনুমতি পায় তাদের মধ্যে সুইডেন শীর্ষস্থানীয়। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে এসভিটির তথ্যমতে ধর্ষনকারীদের ৫৮ শতাংশের জন্মই সুইডেনের বাইরে যার ৪০ শতাংশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বর্বর মুসলমান দেশগুলো থেকে। বাকীরা আফগানিস্তান আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপ থেকে। আর বাকী যারা সুইডেনে জন্মেছে তাদের ৮০ ভাগ এসেছে ইমিগ্রান্ট ফ্যামিলির থেকে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, আফগানিস্তানের যুদ্ধের কারনে চলে আসা উদ্বাস্তুদের জন্য তার দুয়ার খুলে দেয়ার ফলে গত এক দশকে সুইডেনে বেড়েছে ৮০ শতাংশের ওপরে। ।

এখন আসি ধর্ষনের সংজ্ঞাতে তাদের কি বিবর্তন হয়েছে।ত্রয়োদশ দশক থেকেই স্টাচুয়ারী রেপ অর্থাৎ শিশু বা কিশোরের সাথে যেকোনো প্রকারের সহবাসকে ধর্ষন হিসেবে গন্য করে আসছে এবং সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এর শাস্তি মৃত্যুদন্ড ছিলো। ১৯৬৫ সালে সুইডেন বিশ্বে সর্বপ্রথম ম্যারিটাল রেপ অর্থাৎ স্ত্রীর অনুমতি ব্যাতিত সহবাসকে ধর্ষন হিসেবে গন্য করা শুরু করে। সমকামী এবং লিঙ্গ নিরপেক্ষ সংজ্ঞাকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করে ১৯৮৪ সাল থেকে। অজ্ঞান অবস্থায় কারো সাথে সহবাস করলে তা সে স্ত্রী হোক অথবা গার্লফ্রেন্ড সেটাকেও ধর্ষন হিসেবে গন্য করা শুরু করে ২০০৫ সাল থেকে। সুইডিশ পুলিশের ওয়েবসাইট অনুযায়ী বর্তমানে ধর্ষনের সংজ্ঞা অনেকটা এমন:

যেকেউ যদি কাউকে শক্তির মাধ্যমে যৌনক্রিয়া করা হুমকি দিলে যদি ভিক্টিম অপমানিত বোধ করেন তাহলে তাকে ধর্ষনের দায়ে ২ থেকে ৬ মাসের জেল খাটতে হবে।ধর্ষনের জন্য জেল কখনোই চার বছরের নীচে এবং ১০ বছরের ওপরে হবে না

যৌনক্রিয়া, হতে পারে তা সহবাস, কিন্তু অন্যান্য যৌনক্রিয়া ও এর তালিকাভুক্ত এবং তার জন্য যদি কাউকে হুমকি বা ঝগড়ার মাধ্যমে বাধ্য করা হয় বা তার চেস্টা করা হয় তাহলে সেটাও ধর্ষনের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি অরাধী কাউকে ড্রাগ, মানসিক প্রতিবন্ধী বা মাতাল অথবা অন্যান্য মাদকের মাধ্যমে তার দুর্বলতার সুযোগ নেয় তাহলে তাকে ধর্ষনের দন্ডে দন্ডিত করা হবে।

২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে স হবাস বা পেনিট্রেট যেকোনো অবস্থাতে করলেও সেটা ধর্ষন বলে গন্য করা হবে।
সুইডেনে ধর্ষনের পরিসংখ্যান এমন ভাবে করা হয় যে যখনই উপরোক্ত সংজ্ঞানুসারে কোনো অভিযোগ রিপোর্ট করা হয় তখনই সেটা পরিসংখ্যান বিভাগে চলে যায়। পরে যদি কেসটা অপ্রমানিত বা ডিশমিশ হয়ে যায় তাতেও সে পরিসংখ্যানে কোনো প্রভাব পড়ে না যেটা অন্যান্য ইউরোপীয়ান দেশে হয়ে থাকে। আবার কোনো স্ত্রী যদি অভিযোগ করেন যে তার স্বামী মাসে প্রতিদিন তাকে ধর্ষন করে তাহলে সেখানকার পুলিশ তা ৩০ বার হিসাব করে।
আরো একটি কারন না বললেই নয় যে ২০০০ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ভিক্টিম সার্ভের তথ্যানুযায়ী ধর্ষনের মতো ঘটনা সুইডেনের পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ গোপনীয়তা এবং ভিক্টিমের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এবং শূন্য দুর্নীতি থাকায় সেখানে ধর্ষিতা বা অভিযোগকারীর সন্তুষ্টি বেশ ভালো কারন লিঙ্গ সাম্যতায় সুইডেন বিশ্বে শীর্ষস্থানে আছে।

ইউএনওডিসির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১ লক্ষ জনে ৬৫ জন ধর্ষনের অভিযোগ করে যেখানে ১২৯ টা দেশের মধ্যে ৬৭ দেশে ধর্ষনের কোনো ডাটাি পাওয়া যায় না। এর অন্যতম প্রধান কারন সেসব দেশের দুর্নীতি, প্রশাসনের ওপর অনাস্থা। আবার এই ৬৭ টা দেশের ৯০ ভাগ দেশই হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আবার অনেক দেশে ধর্ষন নামে কোনো টার্ম নাই কারন কোরানে ধর্ষন নামের কোনো শব্দ নাই যেমন মিশর। মিশর এটাকে শারিরীক আঘাতের তালিকাভুক্ত করে। এমনকি বাংলাদেশ চায়নার মতো দেশে গত দশকে ধর্ষনের হিসাবটাও ঠিক মতো পাওয়া যেতো না। সৌদিআরবের ঘটনা আরো ভয়ঙ্কর

যাই হোক উদ্বাস্তু সমস্যার কারনে গত ৫ বছরে তাদের দেশে ধর্ষনের পরিমান ভয়াবহ পরিমানে বেড়েছে। এবং শাস্তি প্রদানের হার ১৩% যা অন্যান্য নরডিক দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন। এ নিয়ে এয়ামনেস্টি ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে তারা। আরো ভয়াবহ ব্যাপার হলো ২০১৩ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এত কিছুর পরও প্রায় ৮০শতাংশ ধর্ষনের ঘটনাই রিপোর্টে করা হয় না।

সে হিসেবে বলা যেতে পারে প্রশাসনিক সততা স্বচ্ছতা ও পরিপূ্র্ন সংজ্ঞায়িতকরন এবং উন্নত সমাজ ব্যাবস্থার সাথে বর্বরতম জঙ্গী সভ্যতার অসততাই দায়ী সুইডেনের এমন উচ্চ পরিসংখ্যানের পিছে।

২) বাংলাদেশ ধর্ষনে ভারত থেকে পিছিয়ে।

২০১৯ সালে ধর্ষন পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ তম যেখানে সুইডেনের অবস্থান ৬। ভারতের অবস্থান হলো ৯১ তম। পরিংখ্যানে বলা হয় বাংলাদেশে ভারতের থেকে ৫ গুন বেশী ধর্ষন হয়। শুধু ধর্ষনই নয়, সার্বিক অপরাধচিত্র কতটা ভয়াবহ ভারতের তুলনায় সেটা এখানে ক্লিক করলেই বোঝা যাবে। তাই কেউ যদি বলে ভারতের থেকে বাংলাদেশে ধর্ষন কম হয়, তাহলে নিশ্চিত থাকুন সে একজন জ্ঞানপাপী মিথ্যুক বা অজ্ঞ। যে দেশে বাল্যবিবাহকে সুন্নত হিসেবে দেখা হয় এবং ইসলামী স্কলাররা শিশুধর্ষনের চর্চায় মত্ত তাদের কাছ থেকে সত্য কখনো জানবেন না।

চলবে……

উদাসী স্বপ্ন সম্পর্কে

ছেলেটি নেমেছিলো পথে নীল মায়ার হাতছানিতে। প্রথমে বোঝেনি জোছনা কি চায়! উদাসী স্বপ্নগুলো উজার করে তাই আজ নিঃস্ব হয়ে হিসাবের দেনা গুনে যায়। যদি কোনোদিন হিসাব মেলে, তাহলে প্রমেথিউসের মত ভালোবাসা চুরি করে বিলিয়ে দেবে সর্বহারাদের দলে। নির্মোঘ ঘোরে কাটিয়ে দেয়া ইউটোপিয়া তাই আজ খুব আপন....

4 thoughts on “ধর্ষন: কিছু মিথ -১

    1. মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

       

      এসব নিয়ে বেশী বেশী ডিসকোর্স হওয়া উচিত নইলে সমাধান মিলবে না

    1. প্লিজ পরের প্যারাটা ‌‌‌পড়তে ‌‌‌‌‌‌অনুরোধ করছি

       

      লাইনটা শুধুই মিথ

       

      ধন্যবাদ

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।