ফেইসবুকের কল্যাণে লেখা চুরি বা নকলবাজির ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। কেউ হুবহু নকল করে, কেউ বিদঘুটে কিছু শব্দ যোগ করে মূল লেখায় একটু পরিবর্তন এনে অন্যের লেখাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়। কেউ আবার থিমটা চুরি করে। এসব প্রতিদিনই দেখছি। এদের আবার গ্রুপ আছে; ভক্তগ্রুপ। কিছু বলতে যাবেন তো ভক্তকুল নাকানি চুবানি খাওয়ায়ে ছাড়বে; নানান রকমের যুক্তি দিয়ে চুরির সংজ্ঞা বদলে দেবে।
বহু পুরানো একটা গল্প; যারা স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিয়েছেন তারা সবাই হয়ত সেটা জানেন। গল্পটার সারাংশ মোটামুটি এমনঃ প্যারেন্টের ট্রাঙ্কের ভিতর মূল্যবান কিছু আছে এই লোভে সন্তানেরা ফন্দি আঁটে এবং শেষে ওতে আত্মার সম্পদ ছাড়া বৈষয়িক কিছুই খুঁজে পায়না। এমন অতি পরিচিত একটা গল্পকেও অল্প বদলে নিজের করে ফেলেছে এমন একটা “চুরি-মাল” ফেবুতে জাস্ট দেখে এসেই এই কথাগুলি লিখছি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঐ চুরি-মালের ভূয়সী প্রশংসা করে এখন অবধি হৃৎপিণ্ড চাপড়াচ্ছে! কী লজ্জার!
এই লজ্জাজনক চুরির ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হল, এদের ভক্তের অভাব নেই। কেউ না জেনে এদের ভক্ত হয়; কেউ জেনে। দ্বিতীয় জনেরা এই চোরদের মতই পাপী।
ওপরে যা বললাম তা আসলে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা মাত্র। মূল বিষয় হল, কালের কন্ঠ পত্রিকায় আজ প্রকাশিত একটা খবর। “একজনের লেখা চুরি করে আরেকজন প্রকাশ করলেন আস্ত বই”। পত্রিকার এই সংবাদ এবং ফেবুতে একটু আগে দেখা চুরির মালটার কারণে আমার পুরানো প্রশ্নের একটা আপাতঃ জবাব পেয়েছি, “ফেবুতে চোর-চোট্টার সংখ্যা নেহায়েত কম না।“ এদের কেউ আবার ভক্তদের কাছে “জিনিয়াস” হিসেবে স্বীকৃত। ফেবুতে এখন যাকে দেখে এলাম এবং পত্রিকায় যার কথা উল্লেখ আছে তারা দুজনই দেখলাম তাদের নিজ নিজ ভক্তদের কাছে খুব সমাদৃত।
কোন সন্দেহ নেই, লেখা চুরির দায়ভার মূলত চোরের। কিন্তু পুরোটাই কী? যারা জেনে শুনে এইসব চোরকে সাধু সাধু বলছে তারা কী এই দায় এড়াতে পারবে?
লেখা চুরির দায়ভার মূলত চোরের। কোন সন্দেহ নেই। যারা জেনে-শুনে প্রমাণাদি থাকা স্বত্তেও এইসব চোরকে সাধু সাধু বলবে তারা কোনভাবেই এই দায় এড়াতে পারেন না। কিন্তু আফশোস এমনটাই যে, তোষামোদ আর চাটুকারদের শব্দ ভাণ্ডারে এতো এতো শব্দ জমা থাকে; তারা জেনে বুঝেই হাতিয়ার তাক্ করেন না। বরং মর্যাদা আর সুরক্ষা দিতেই ব্যস্ত তারা। এমন সব সভ্যদের ভীড়ের জালে আটকে আছি আমরা সবাই।
মি. মিড ডে ডেজারট … আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন এবং সচেতন দৃষ্টি রাখেন এমনটা মনেই হয়নি আমার। স্বনামে নিঃশর্তের বন্ধু হতে পারলে ভালো লাগতো।
লেখা চুরির বিষয়ে যথার্থেই বলেছেন সম্মানিত লেখক “ কিছু বলতে যাবেন তো ভক্তকুল নাকানি চুবানি খাওয়ায়ে ছাড়বে; নানান রকমের যুক্তি দিয়ে চুরির সংজ্ঞা বদলে দেবে। ” কোন কিছু নিয়ে যখন কোন লেখক, গবেষক, কবি লেখেন তখন তার সমস্ত চেতনার বাস্তবায়ন সেখানে ঘটাতে চান। কিন্তু আমরা– কিছু পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে মালিকানা বদলে ফেলি। এ জন্য আমাদের সকলেরই দায়িত্ববান হওয়া দরকার।