যেখানে করোনা’র লড়াইয়ে গরিব মানুষ সেখানে দর্শকের সারিতে দেশের বিত্তশালীরা

সময় সময় দেশে যখন কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিতো, সেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তখন সরকার আন্তরিকতার সাথে সেসব ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিভিন্নরকম ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যেতো। সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে টিন, চাল, ডাল, তেল, লবণ-সহ নানারকম খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতো। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন-সহ দেশের বিত্তবান, রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিভিন্ন সমাজসেবী ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতো। যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা খুব তাড়াতাড়ি সংকটময় সময় থেকে সেরে ওঠতে পারে। মহান সৃষ্টিকর্তা না করুক- এখনও যদি এদেশে কোনও প্রাকৃতিক ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতন এমন দুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে কিন্তু সরকার হাতপা গুটিয়ে বসে থাকবে না। শত সমস্যার মাঝেও সরকার দুর্যোগ মোকাবিলা করা-সহ দেশের জনগণকে বাঁচাতে এগিয়ে যাবে। এটাই কিন্তু সব দেশের সরকারের দ্বায়িত্ব কর্তব্য।

বর্তমানে মহান সৃষ্টিকর্তার দয়ায় আমাদের দেশে সেসব ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতন কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়নি। তবে ইদানিংকালে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে যেই মরণঘাতী করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছে, সেটা এখন আমাদের দেশেও মহামারি আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। বর্তমানে এটাও আমাদের জন্য একরকম দুর্যোগ। এই দুর্যোগের কবলে পড়ে সারাবিশ্বের সব দেশের মতো আমারও কাবু হয়ে যাচ্ছি। এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে অনেকজন। এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।

বর্তমানে আমাদের দেশের সরকার এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে এবং দেশের জনসাধারণকে এই রোগ থেকে বাঁচাতে নানারকম পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি রোগ বিশেষজ্ঞ-সহ চিকিৎকরাও নানারকম পরামর্শ দিচ্ছে। যাতে সচেতনতার সাথে ধৈর্যসহকারে খুব তাড়াতাড়ি এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস কেভিড-১৯ রোগ প্রতিহত করা যায়।

কিন্তু দুঃখের কথা দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, এর আগে আমাদের দেশে যখন কোনও দুর্যোগ দেখা দিতো; তখন সরকারের আদর- সোহাগ ভালোবাসা পাবার জন্য দেশের অনেক জননেতা, জননেত্রী ব্যানার টানিয়ে দুর্যোগ এলাকায় পরিদর্শন করতো এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করতো। পাশাপাশি দেশের বিশিষ্ট সমাজসেবকরাও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের লক্ষ্যে নিজ নিজ তহবিল থেকে নানারকম সাহায্য করতো। অনেকেই দিতো নানারকম খাদ্যসামগ্রী-সহ টাকা পয়সাও।

কিন্তু বর্তমান এই সংকটময় সময়ে দেশের নির্বাচিত সরকার ছাড়া এই সংকটময় সময়ে কোনও বিত্তবানদের দেখা যাচ্ছে না। এদেশের কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকেও তাঁদের নিজ এলাকায় কেউ দেখছে না। শোনা যাচ্ছে না যে, এই নেতায় ওটা দিচ্ছে। সেই নেতায় সেটা দিচ্ছে। কই, কেউ তো এখন পর্যন্ত কোনও জায়গায় গিয়ে কাউকে একটি মাস্কও কারোর হাতে তুলে দেয়নি? বরং ক্ষমতার আসনে বসে বসে বড় বড়ে বুলি ছাড়ছে। আর আমরা তাঁদের সেসব বড় বড় বুলি ভক্তিভরে শ্রবণ করছি, আর করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে মরছি। আর তাঁরা বিত্তবান, বিত্তশালীরা নীরব দর্শকের ভুমিকা নিয়ে টিভির পর্দায় গরিবদের দুর্দশার খবর শুনছে। আবার কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে অসহায় মানুষদের পেটানোর দৃশ্য দেখছে।

এই সংকটময় সময়ে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, তাঁরা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, ব্যবসায়ীরা, সমাজসেবকরা মানবাধিকারের মহান মানবগোষ্ঠীরা এখন কোথাও? তাঁরা কি নভেল করোনাভাইরাসের ভয়ে হাতপা গুটিয়ে ঘরবন্দী হয়ে আছে? সরকারের পাশাপাশি তাঁরা কি পারে না জায়গায় জায়গায় গিয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিহত করার জন্য কিছু প্রতিরোধক উপকরণ এদেশের জনগণের হাতে তুলে দিতে? যেখানে এদেশে শীত মৌসুমে সামান্য শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলে কত নামীদামী ব্যক্তিবর্গ ছোঁড়া-ফাঁড়া কিছু কম্বল বিতরণ করার জন্য মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল, আজ দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে কেউ হাতপা গুটিয়ে ঘরে বসে, কেউ নীরব দর্শকের মতো করোনাভাইরাসের ভয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে করুণা চেয়ে চেয়ে মরছে।

পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, তা-হলো আপনারা বিত্তবান বিত্তশালীরা নিজ ঘরে বসে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদি মজুদ করে ঘরেই বসে থাকুক! নীরব দর্শকের মতো তামশা দেখুন! আর বসে বসে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন, যাতে আমরা এদেশের গরিব মানুষেরা করোনাভাইরাসের সাথে লড়াই করে আপনাদের বাঁচতে পারি।

মনে রাখবেন এদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ-সহ বিত্তবান ব্যক্তিরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর মহামারি রোগ কোনও দেশের ধর্ম, বর্ণ, জনগোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত হয়ে জন্য আসে না। যখন আসে তো ধনী গরিব সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। বর্তমান সময়ের এই মহামারি করোনা ভাইরাসও কিন্তু গরিব মানুষদের জন্য নির্ধারিত নয়। এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের কবলে পড়েছে সারাবিশ্বের মতন এদেশের সবাই। তবে এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি এদেশের অসংখ্য গরিব মানুষ। মানে নিত্যদিন যাঁদের নুন আনতে পানতা ফুরায় তাঁদের অবস্থাই বেশি বেগতিক।

কিন্তু এদেশের এসব গরিব মানুষদের কথা এই সংকটময় সময়ে এদেশে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ-সহ বিত্তবান ব্যক্তিরাও একটু ভেবে দেখছেন না। বরং বর্তমানে রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে সবস্থানে এইসব গরিব খেটে খাওয়া মানুষগুলোর উপরই চালাচ্ছেন লাঠিপেটা। তাঁদের অপরাধ হলো, ঘর থেকে বেরিয়েছে কেন? কিন্তু কেন বেরিয়েছে, সেই খবর আপনারা কেউ রাখছেন না। গরিবরা ঘর থেকে না বেরুলে ঘরে বসে খাবে কী?

হয়তো এর জবাবে এদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ-সহ বিত্তশালীরা শান্তনা দিবেন, “আমরাও তো বর্তমানে ঘর থেকে বেরুচ্ছি না! একটু কষ্ট হলেও আপাতত ঘরেই থাকুন!” কিন্তু খাবারের নিশ্চয়তা কেউ দিচ্ছেন না, বিন্দুমাত্র সাহায্য সহযোগিতাও কেউ করছেন না।

তাহলে আবারও শুনে রাখুন! আপনারা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ-সহ বিত্তবান ব্যক্তিরা এদেশের গরিব মানুষকে এমন সংকটময় সময়ে সাহায্য সহযোগিতা না করে; প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের ভয়ে ঘরে বসে যতই মহান সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন-না-কেন– মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে এদেশের গরিব মানুষেরাই মুক্তি পাবে। হয়তো আপনারই এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তা যেন না হয়! মহান সৃষ্টিকর্তা যেন এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করে। মহান স্রষ্টা সবার সহায় হোক!

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

4 thoughts on “যেখানে করোনা’র লড়াইয়ে গরিব মানুষ সেখানে দর্শকের সারিতে দেশের বিত্তশালীরা

  1. বিত্তবান বা বিত্তশালীদের চেহারা অভিন্ন। প্রয়োজনীয় মজুদ শেষে ঘরেই তারা বসে থাকে। তামাশা দেখে। এরা মুনাফা ছাড়া আর কিছু ভাবে না। ২/৪ জন ভিন্ন চেহারার বিত্তশালী স্বনামে এলে বুঝতে হবে তারা ইনভেস্ট করলেন, মুনাফার আশায়।

    মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, আমি সহ এদেশের কোটি গরিব মানুষেরা করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে সবাই যেন বাঁচতে পারি। উঠুক নতুন স্বচ্ছ সূর্য। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. আমিও আপনার মতো একরকম প্রার্থনা করি। যাতে অতি তাড়াতাড়ি এই প্রাণঘাতী রোগের মরণ থাবা থেকে আমরা দেশবাসী রেহাই পাই। 

      শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।             

  2. https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gifভালোবাসা ও শুভ কামনা আপনার জন্য। বেশ মন ছুঁয়ে গেল লেখা।

     

    1. এই সময়ে সপরিবারে ভালো থাকার জন্য কামনা করি। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে সুস্থ রাখবেন। স্রষ্টা সবার সহায় হোক!                   

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।