প্রতিদিনকার মতো বাসার গেট দেখতেই মনটা ছটফটিয়ে নেচে উঠলো কখন ঘরে যাবো। এতোবার মা সাবধান করে তবুও এই সময়টাতে কোন বারণ শুনতে কেন জানি মোটেও ইচ্ছা করে না। রিকশা থামতেই আমি এক ঝাঁপে গেটের কাছে চলে এলাম, তারপর কয়েক লাফে সিড়ি ভেঙে ডোর বেল চাপতেই পারভীনের মা দরজা খুলে দিলেন। মা আসতে একটু দেরী তার ফাঁকে আমি সব কটি ঘরে খানিক বাঁদর নাচ নেচে নিলাম। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
পারভীনের মা আন্টি আমায় খুব আদর করে। আমাদের বাড়ির অনেক বছরের পুরানো মানুষ। কখনো কখনো বেশি দুষ্টুমি হয়ে গেলে তিনি আমায় শাসন ও করেন। মা শোনেন কিন্তু কিছুই বলে না। পারভীনের মা আন্টি কখনো অন্যায়ভাবে আমায় বকে না। ঠিক তেমনি ভাবে এখন যেমন বললেন,
-বাবাই দুষ্টুমি হচ্ছে কেন। সব ঘর কিন্তু আমি একটু আগেই পরিষ্কার করেছি। মোটেও নোংরা করা চলবে না, আগে স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করো।
কে শোনে কার কথা, মা এলেই তো আবার বকাঝকা, লক্ষীবাবু হয়ে থাকার চেষ্টা করা। আমার না একটুও চুপচাপ থাকতে ভালো লাগে না।
এ ঘর ও ঘর করছি কিন্তু একটা জিনিস দেখে বেশ বিরক্ত বোধ করছি সব ঘর গুলোতে বিশেষ বিশেষ জায়গাতে প্রচুর ধুলো। আমি তো ধুলো আনিনি তবে এতো ধুলো কে ছিটালো।
অমনি পাশের ফ্লাটের বুবলির কথা মনে পড়ে গেলো, ও কিন্তু খুবই দুষ্টু। যাকে বলে দুষ্টুর শিরোমণি। এ নিশ্চয় ওরই কাজ। কিন্তু মা তো আমাকেই বকবে। এসব ভাবকে ভাবকে অমনি মায়ের ডাক কানে এলো।
-বাবাই, বাবাই।
-আসছি মা
-তাড়াতাড়ি এদিকে আয়।
-আসছি আসছি, কি হলো আবার। যদিও জানি কি জন্য ডাক পড়েছে। মায়ের কাছে দ্রুতই পৌছে গেলাম ভয়ে ভয়ে।
যা ভেবেছিলাম তাই, আমায় দেখে মা তার চোখ দুটোকে ডিম পোচের মতো করে বললেন
-বাসায় ফিরতে না ফিরতে দুষ্টুমি করা হয়ে গেলো।
আমি কিছু না জানার ভান করে বললাম,
-কই মা আমি তো কিছু করিনি।
-এই যে বেডরুমে, ড্রইং রুমে এতো ধুলো,কে ছড়ালো? তুমি ছাড়া কে আনবে শুনি?
-তুমি বিশ্বাস করো মা আমি কিছু জানি না। আমার রুমেও না ধুলো ছিটানো। আমার মনে হয় এসব বুবলির কাজ।
মা বিরক্ত হয়ে বললেন,
– এর মধ্যে আবার বুবলি কিভাবে এলো। ওতো কাল বিকালে নানাবাড়ি গেছে।
আমি চরম হতাশ হলাম, আজ নির্ঘাত কপালে রাম ধোলাই আছে। মা কিছুতেই ছাড়বে না। একথা ভাবতেই আমার ভয়ে গা কাটা দিয়ে উঠলো। অথচ এর জন্য আমি মোটেও দায়ী নই। মা তো আমায় ছেড়ে দেবে না এমনি তে আমি ক্লাস টেষ্টে নাম্বার কম পেয়েছি, তার উপর আবার এই কাণ্ড। আজ ধোলাই খেতেই হবে। ইশ কি যে করি…..।
কিন্তু আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। ঠিক তখনই এমন একটা দৃশ্য চোখে পড়লো যে, ধুলো রহস্য আমার কাছে পানি হয়ে গেলো। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,
-ইউরেকা।
মা মনে হয় আরো বেশি বিরক্ত হলেন, রান্নার খুন্তি উঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,
-বাবাই, ভালোয় ভালোয় সব দোষ স্বীকার কর, না হলে তোর একদিন কি আমার একদিন।
-আমিও বেশ গোয়েন্দা চাল চেলে বললাম সে যাই তুমি আমায় বলো না কেন মা, সব আমি মাথা পেতে নেবো,তবে তার আগে আমার একটা কথা আছে।
-কি? বাপরে মায়ের মুখ থেকে যেনো বাঘের গর্জন বের হলো। তবুও আমি একটুও ভয় না পেয়ে বেশ জোরেই বললাম,
-তোমার বাসার ধুলো রহস্য আমি বের করে ফেলেছি।
-কিভাবে?
-আসল কালপ্রিট কে জানো?
-কে?
-তার আগে তুমি বলো ওদের তুমি কিছু বলবে না। ওদের তুমি তাড়িয়ে দেবে না।
-ঠিক আছে ঠিক আছে অনেক সাসপেন্স তৈরি করা শিখেছো। এবার ঝেড়ে কাশো, না হলে প্যাঁদানির জন্য তৈরি হও।
আমি বেশ অভিমান নিয়ে বললাম,
-মা তুমি না আমায়, একটু ও ভালোবাসো না।
-একদম ইমোশনাল ব্লাকমেইল করা চলবে না। ওসব চালাকি করলেই শাস্তি। তোমার অনেক দুষ্টুমি আমি সহ্য করেছি আর নয়। আর মিথ্যা আমি একেবারে সহ্য করতে পারি না তুমি সেটাও ভালো করেই জানো।
-সত্য জানলে আমাকে একটু আদর করবে তো।
-যদি তুমি দোষী না হও সে ক্ষেত্রে ভেবে দেখা যাবে।
-খুব আদর করবে কিন্তু।
-আরেকটা কথা বাড়ালে কিন্তু বাদরের মতো বাঁদরামির জন্য মার খাবি।
-ওপরে তাকাও।
-কোন ওপরে?
-মাথার ওপরে ?
মা উপরে তাকালেন।
-কি দেখছো?
-দুটো চড়ুই।
-কি মিষ্টি দেখতে না।
তো?
-তোমার ঘর ওরাই ময়লা করেছে। ঘুলঘুলির ধুলো বাসা বানাতে গিয়ে ছড়িয়ে নিচে ফেলেছে। আজ মনে হয় প্রথমদিন তাই এ ঘুলঘুরি ও ঘুলঘুলি ঘুরে ফিরে দেখতে গিয়ে এই কাণ্ড। ওরা মনে হয় তোমার বেডরুমের ঘুলঘুলিটা পছন্দ করেছে। ওই দেখো ওদের মুখে খড় কুটো।
মা খানিক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। মাকে এতটা অবাক হতে আমি কখনো দেখিনি। তারপর মা আমায় জোরে জড়িয়ে ধরে এতো আদর কললো যে কি বলবো। না কিছুই বলবো না কারণ শুনলে তোমার খুব হিংসা করবে। হিংসা করে জ্বলে পুড়ে মরবে। আর জানোই তো হিংসা করা ভালো না।
দৈনিক এই দুঃসময়ে হালকা মেজাজের গল্প আসলে মনটাকে সামান্য হালকা করে দেয়। ধন্যবাদ মি. ইসিয়াক। শুভ সকাল। নিরাপদে থাকবেন।
লেখা। শুভেচ্ছা । দোয়া করবেন।