দুর্গাপুজোতে ঈদে নতুন জামা পড়ি, বড়দিনে কেক কাটি, সরস্বতী পুজোয় আর ভ্যালেন্টাইন দিনে নিয়ম মেনে প্রেম করি, একুশে ফেব্রুয়ারী এলেই বাংলাভাষী হয়ে যাই।
সারাটাবছর আমরা, শহুরে বা স্বচ্ছল গ্রামীনেরা ছেলেমেয়েদের সাহেব মেম বানাতে চাওয়ার চেষ্টায় প্রাণপাত করি। ‘বাংলা মাধ্যম শিক্ষায়তনকে আমাদের পূজনীয় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলেছে’, এই দোহাই যথেষ্ট, যেন নাগরিক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত কোনো কর্তব্য থাকতেই পারেনা। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
কি খুশিই না হই, যখন দেখি সন্তান একটা ছয় শব্দের বাক্যে চারটে ইংরেজি শব্দ ঢুকিয়েছে। বাংলা গান কানে গেলে একখানা ইংরেজি গালাগাল ঝেড়ে ছিটকে সরে যাচ্ছে একমাত্র মেয়ে। বাপের জম্মে যে কখনো ইউরোপ যায়নি, সে দেখছে কাঁধ ঝাঁকানি কায়দার কি দুরন্ত নকল।
বাংলায় দরখাস্ত লিখতে পারিনা, কিন্তু আমি বাঙালি। খাস কলকাতার ৬০ শতাংশ বাসিন্দা এখন অবাঙালী, আমি গর্বিত বাঙালি ওদের চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটি বিক্রি করে ব্যান্ডেল বা বারুইপুরে সস্তায় ফ্ল্যাট কিনেছি।
অন্ততঃ একটা দিন, একটাও ইংরেজি না বলে কাটাব, এই শপথ করার সত্যিকারের হিম্মত আছে আমার? আর একদিন বাংলা বললেই বা মহাভারত কি সত্যিই শুদ্ধ হয়ে যাবে?
আসলে মেরুদণ্ডটাই কখন যেন হাত ফসকে হারিয়ে ফেলেছি। বাঙালি হিসেবে গর্বিত হতে রীতিমতো লজ্জা পাই। মা শব্দকেও বদলে নিয়েছি অন্য ভাষায়। শেকড় ভুলে গিয়েছি, জানিনা গন্তব্য। ক্রমশঃ এক দিশেহারা জাতিতে পরিণত হতে চলেছি আমরা। এখনো যেটুকু বাংলা ধরে রেখেছেন তা ওপার বাংলার কৃতিত্ব। এপার তো মেতেছে বাংলা ধ্বংসে।
কিন্তু পরিচয়হীন জাতি কোথাও সম্মান পায়না এটা যেন মাথায় রাখি। জাপানিরা এক অক্ষর ইংরেজি না জেনেই আজ অন্যতম উন্নত জাতি।
'আসলে মেরুদণ্ডটাই কখন যেন হাত ফসকে হারিয়ে ফেলেছি। বাঙালি হিসেবে গর্বিত হতে রীতিমতো লজ্জা পাই। মা শব্দকেও বদলে নিয়েছি অন্য ভাষায়। শেকড় ভুলে গিয়েছি, জানিনা গন্তব্য। ক্রমশঃ এক দিশেহারা জাতিতে পরিণত হতে চলেছি আমরা। এখনো যেটুকু বাংলা ধরে রেখেছেন তা ওপার বাংলার কৃতিত্ব।' ___ ঠিক তাই।
দাদা, কি আর কইবো দুঃখের কথা, আজকাল কি দেখছি, কি হচ্ছে এসব? আমাদের এই মতিভ্রম কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারিনা। কান্না আসে যখন একজন উচ্চ শিক্ষিত লোকে বলে আমিতো বাংলায় লিখতে পারি না!
অথচ কি কোমল ভাষা আমাদের, কি সুন্দর বাচন ভঙ্গী, কি মিষ্টি!

দীপ্তিময় লেখনী ।
আমরা দিন দিন ইংরেজ হয়ে যাচ্ছি। এটাও কিন্তু একটা সুখের খবর। পুরোপুরিভাবে ইংরেজি ভাষা না জানলেও সারাদিন হাফপ্যান্ট পরে ঘুরি আর মাকে বলি মম। বাবাকে বলি ড্যাডি। আর বর বোনকে বলি আপ্পি। কিন্তু বাঙালি হয়েও ঠিকমতো শুদ্ধ বাংলা লিখতে পড়তে বলতে পারি না। দুঃখ শুধু এখানেই থেকে যায়।