(চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণাম
যারা প্রতিদিন প্রাণীকুলের প্রাণ বাঁচিয়ে চলেছেন)
এক
বড় বড় গাঢ় কোঠাবাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছে অসুখেরা
বেদনার হাত ছাড়িয়ে আমাদের বেদানার দানায় নিয়ে তুলছে
এক একটা রোগশয্যা হাজার সুস্থকে আলো দেখায়
আর ভিড়ের ভেতর দিয়ে কেটে পড়তে পড়তে সময়
মানুষের পকেটে রেখে যাচ্ছে ফাটাফাটা নিয়তিমুখ
দুই
অসুখ একটা মাকড়সাজালের সেতু বুঝে নাও
ফ্রিজের সঙ্গে জুড়েছে ইঞ্জেকশান অ্যাম্পুল
অসমিয়া দাঁতের সঙ্গে তামিল সিনেমার হাসি
আবার, অনুগ্রহপূর্বক-এর পাশে নীরবতা-কে
বসিয়ে দিচ্ছে থমথমে বিবাহবার্ষিকীতে
আমার ডানদিকে একটা রাতচরা কাশি
তো বাঁয়ে স্যাট করে পর্দা টেনে দেওয়া সংকটের মুখের ওপর –
“বিপি পাওয়া গেছে? অ্যাট্রোপিন কোথায়!”
হলদিঘাটের বাংকারে মাথা গুঁজে লিখে যাচ্ছি এইসব :
কোনটা হাহাকার, কোনটা মেশিনের বিপ,
কোনটা বিদেশি পুঁজির হাতে ব্যাংক তুলে দেওয়া
বুঝতেই পারছি না
ভিজে বিছানার ওপর টগবগ করছে রুম ফ্রেশনারের ফুলকি
তিন
আপনাকে এক্ষুনি ঘুমের স্যুপ দেওয়া হবে
আপনাকে এক খনি দেওয়া হবে লৌহ আকরিক
দেয়ালঘড়ি বেয়ে জীবনে এলাম
আমি শান্ত টিকটিকি
অথচ অনেক বেশি সময় লাগছে পেন্ডুলামে
ঝুল হয়ে জমে যেতে
ভেন্টিলেটরই মন্দির, তার ঘন্টা সারারাত
গায়ে লেখা: যন্ত্রণা সেভাবে শুরু হয়নি বলেই ওষুধব্যবস্থা টিকে আছে
চার
দিনরাত চিরঅমঙ্গলে কেটে যায়
আমি একবার বাঁদিকে প্রার্থনা করি
একবার ডানদিকে প্রার্থনা
ওই বৃদ্ধের বুক-ধুকধুকি অ্যাকাউন্ট থেকে
বাড়তি তিরিশ তুলে নাও, অর্ধেক
দান করো বেড নাম্বার এগারো-তে
এভাবে আয়ু-সমবায় গড়ে তোলো অভিযাত্রীগণ — যারা মেসোপটেমিয়া থেকে অলীক উটে চেপে
দু’বছর পরে মহাচিনে পৌঁছবে ভেবেছিলে
যদিও যথেষ্ট লড়ছেন ম্যাডাম মুর্মু
আমি একবার বাঁদিকে সেজদা করি, একবার ডানদিকে…
আমার সেজদাও এভাবে নানা নলে অস্থিময় হয়েছিল তো!
সেই তখন থেকে লম্বা মানুষ জন্ম নেয়
স্যালাইনের বোতল আকাশে তুলে ধরবে ব’লে
অক্সিজেন পদভারে কাঁপছে মেদিনী
যারা দায়িত্ব থেকে পালনের দিকে যায়
দেখি তাদের চোখমুখ সোনায় বাঁধানো
পাঁচ
যন্ত্রণায় গোঙাতে গোঙাতে লোকটা কেঁদে উঠছিল — মাদারচোদ
শব্দটায় হয়তো ওর ব্যথা কম লাগে
কিন্তু আমি অসহায়ভাবে দেখছিলাম
ঝকঝকে নার্সিংহোম সাহিত্যে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ছে
একজন পেশেন্ট খাটের বাজুতে পা আছড়ে কেটে ফেলল
আমি দেখছিলাম তার বুড়ো আঙুলে এখনও বেগুনি নখপালিশ
লোকটা আবার ক্ষ্যাপার মতো চেল্লায় — মাদারচোদ
ভাষাঅভাবী পুরুষ, হয়তো মাকেই ডাকছে
ছয়
তৈরি হয়ে বসে আছি, এসো প্রেম
মন টিপে টিপে অনেকটা অবসাদক্রিম
বের ক’রে দেওয়ার পরেও
তোমারই পদরেণু আমি
এসো ট্রপোনিন মাপবে না!
এখানে জঞ্জালের মধ্যে দেবশ্রী ফুটে আছে
মেয়েদের স্তনেই শুধু নয়, ডাক্তারের চিজেলেও
ভালোবাসা থাকে যেন ভুলে না যাই
এসো কেশমুক্ত করো গোপন এরিয়া
আমি শুধু দ্বিরাগমনে ফিরে গিয়ে
মাসতুতো বোনকে চোখ টিপে বলব
তোর রাহুলদা ওটার কি হালত করেছে দেখবি?
সাত
নাও রক্ত। যত পারো টিভি চ্যানেল বসাও দুহাতে
ধমনীর ভেতরে ক্যাথিটার চালিয়ে চলে এসো
তোমার এইচআইভি নেই তো ক্যাথিটার?
আর তুমি কই কন্ডোম পরলে, পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন!
অথচ সবাই সঙ্গমমাত্র পয়সা বুঝে নিয়ে চলে যাবে
নার্সিংহোম নতুন জিগোলো
আট
আজ বিভাগীয় প্রধান কবিকে স্যার বলে ডেকে দিয়েছি।
উনি খেয়াল করেননি, খুব
সংশোধনও করে দেননি কলজে — আমার দেবদাসটাকে।
“ঠিকই তো লেখেন… তবে আত্মবিশ্বাস নেই…
রাখী দাশগুপ্তকে দেখুন… আপনাদের বিজয় রাহাকে,
প্রেসার সুগার সব আছে — ওরা তো কখনও
ভয় পায় না কবিতার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিতে?
তিন দিনের কর্মশালা। সকালে দুটো
কবিতাপাঠের পর চাবিস্কুট
লাঞ্চ শেষ হতে আবার গোল গোল দুটো
যাতে মন একটু গড়ায়,
কবজিতে ব্লেড ঘোরালেই চট ক’রে
ভাসিয়ে দিতে পারে ল্যাপটপ
সন্ধেবেলা বিশেষ ভ্রূকুটি পাওয়া কবিদের
সেমিনারঘরে এনে কুঁচকিতে আলো প্রবেশ হ’ল, বুকের ওপরে হস্তীমুখ। তারপর মাস্ক খুলে ফেললেন কবিবিজ্ঞানী — “উঠে পড়ুন। তলপেটে দুটো ছন্দ লিখে দিচ্ছি। বাকি জীবন একদম অক্ষরে অক্ষরে…।”
যেটুকু সময়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেবো, গট গট ক’রে ছাপা হচ্ছে আমার চার ফর্মা প্রেমের সামারি। বিকেলের আলোয় পরপর বেডে ভুল কবিদের ড্রিপ চালু হল
নয়
কোনও কিছুই ঠিক না থাকার পরেও কিছু কিছু
ঠিক থাকতে পারে আমরা সন্দেহ করছি।
সারারাত রক্ত চোঁয়ানোর পর সকালবেলা ট্রলির হাসিমুখ
কারা মৃত ফিরে গেল, প্রতিবাদে বেঁচে ফিরল কারা – তফাত বুঝতে চিকিৎসাশালায় এসে গেছি আমি রাণা প্রতাপ সিং। এমন একটা ঘড়ি পরেছি – অর্ধেক শরীরের ভেতরে ডোবানো,
আমার পায়ের ভাঁজ করা কনুই বুদ্ধিমান অথবা প্লাটিপাসের মতো ঘুরে ঘুরে দেখছে জগতকারখানা :
যদিও সবাই সবার হাতের আংটি হয়ে ওঠেনি এখানে, অসুখের সা থেকে আরোগ্যের রে পর্যন্ত গলাসাধা চলছে
ওগো সেবক সেতু, হ্যাঁগো সেবিকা সরণি,
নীল ইউনিফর্ম পরা মনে ছুটে এসো অসুখভ্রমণ বাংলোয়
মানুষের ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুতেই
চায়ের জল গরম হয় না
পূর্ণ কাব্য-উপাখ্যান। কিছু লিখার সম-আলোচনা করা খুব দূরহ বিষয়। যেমন এই লিখা। এক কথায় অসাধারণ এই উপহারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ প্রিয় কবি চন্দন দা।
পড়তে পড়তে কখন যে কবিতার শেষে এসে পড়েছি মনেই আসেনি।
অনেককাল পর মুগ্ধপাঠ প্রিয় কবি দা। নমস্কার।
সুনিপুণ প্রকাশ I
ভালো লাগলো।
ভালো থাকুন।