কুকুরের সাথে আমার আলগা খাতির নাই, পছন্দ করি না আবার অপছন্দ করি না। তবে কুকুর দেখলে পাড়তপক্ষে এড়িয়ে যাই, নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীদের বিশ্বাস করতে নাই, কখন দৌড়ে এসে কামড়ে দেয়। পাড়ার চায়ের দোকানে তেমন যাওয়া হয় না। দোকান ঘিরে অকর্মা, অলসদের আড্ডা। চব্বিশ ঘন্টাই চলতে থাকে, অহেতুক সময় নষ্ট করার সময় আমার নাই। আরেকটা কারণ একটা কুকুর দোকানের আশেপাশে বসে থাকে।
অনেকদিন আগে কি এক কারণে চায়ের দোকানে গেছি, মফিজ চা দিয়েছে। বেঞ্চে বসে চা খাচ্ছি হঠাৎ কুকুর হাজির, এসেই আমার পা শুঁকা শুরু। আমি ভয়ে শেষ। পা দুটো বেঞ্চে উঠিয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছি। আমি ভয় পাচ্ছি দেখে মফিজ দুর দুর করে তাড়িয়ে দিতে গেলে আমি বললাম তাড়াতে হবে না এক টুকরো বিস্কিট দিয়ে দেখ।
মফিজ বিস্কিট আমার হাতে দিলে আমি একটু দূরে ছুড়ে দিলাম। পা শুঁকা ছেড়ে কুকুর বিস্কিটে মনোযোগ দিলে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এরপর থেকে এই কুকুর আমাকে দেখলেই দৌড়ে আসে, পাড়ার মোড় থেকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যায়। যদিও আমার পিছন পিছন হাঁটে তবু আমি ভয়ে থাকি, স্বস্তি পাই না। যদি কোন কারণে চায়ের দোকানে যাওয়া হয়, গিজগিজ লোকের মাঝে আমাকে ঠিক চিনে নেয়। হয়তো একটু দূরে শোয়ে আছে আমাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে আসে। তার এই আগলা প্রেম আমার পছন্দ হয় না, অস্বস্তি বোধ করি তবু এড়াতে পারিনা। পাড়ায় সবাই এখন এই কুকুর কে আমার কুকুর হিসাবে চিনে, আবুলের কুকুর। ফাজিল দুয়েকজন আড়ালে আমার নাম ধরে কুকুর কে ডাকে, আবুল নাম শুনে কুকুর তাকায় ঠিকই কিন্তু সাড়া দেয় না।
সেদিন কি কারণে চায়ের দোকানে গেছি। তুমুল আড্ডা চলছে, চা চলছে, চলছে বিস্কিট। পুবের বাসার মোখলেস চায়ে টোস্ট ভিজাতে গিয়ে বেখেয়ালে মাটি ফেলে দেয়, মাটি থেকে উঠাতে গিয়ে দূরে কুকুর কে দেখে টোস্ট ছুড়ে মারে। বলে ‘নেরে আবুল এটা তোর ভাগের বিস্কিট।’
মোখলেসের পিছনে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সরাসরি অপমান সহ্য না হওয়ার তুমুল ঝগড়া বাধে। ঝগড়া যখন হাতাহাতির পর্যায়ে হঠাৎ কুকুর আমাদের দিকে দৌড়ে আসে কেউ কিছু বুঝার আগেই মোখলেসের পায়ে কামড়। তারপর দৌড়ে পালায়।
মোখলেস ঝগড়ায় ক্ষান্ত দিয়ে বাবাগো, মাগো বলে লাফাতে থাকে। কুকুরের কামড়ে তার মরণ অবস্থা হয়। আটাশ দিন হাসপাতাল থাকতে হয়, যখন ফিরে তার চেহারা দেখে মায়া জাগে।
মোখলেস কে কামড়ানোর রাতেই আবুলের কুকুর বন্দি হয়। লাওয়ারিশ কুকুরকে বাড়তে দিলে কামড়াতেই থাকবে এই ভেবে বিনাশই সঠিক সিদ্ধান্ত। কুকুর কে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়, তার মৃত্যুর খবরে কারো কোন ভাবান্তর হয় না, কেউ কোন মায়া অনুভব করে না। আমিও কোন মায়া অনুভব করি না।
অসাধারণ চেতনা বোধনের লিখা।