“বিদ্যাপতি, চণ্ডী, গোবিন, হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন
ঐ ফুলেরই মধুর রসে বাঁধলো সুখে মধুর বাসা।।
আ মরি বাংলা ভাষা!”
বাংলা আমার মাতৃভাষা। এই মাতৃভাষা নিয়ে আমি গর্বিত, কেননা এই ভাষার রয়েছে গৌরবময় ঐতিহ্য। জনসাধারণের কথ্য ভাষা থেকে এই ভাষার জন্ম। বাংলা ভাষার ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, এটি জন্মলগ্ন থেকেই কথ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে এ ভাষা প্রথম ব্যবহৃত হয়। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন ‘চর্যাপদ’। লিখিত সাহিত্য ছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা লোকসাহিত্য তথা প্রবাদ প্রবচন, ছড়া, রূপকথা, পাঁচালী, লোকগাঁথা ইত্যাদিতে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত সাহিত্যের বাহন হিসেবে বাংলা ভাষা প্রাচীন, মধ্য এবং আধুনিক যুগে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় অবিভক্ত বাংলা পূর্ব ও পশ্চিম ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি ভারত অপরটি পাকিস্তানের অংশ হয়ে উঠে।
ফাগুনের এমনই শিমুল, পলাশ ফোঁটা দিনে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শহীদ হয়েছেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং নাম না জানা আরো অনেকে। বাঙালির রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। সেই অমর শহীদদের স্মরণে আমাদের প্রাণে বারবারই বেজে ওঠে গানের একটি কলি …
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কী ভুলিতে পারি।”
সাধারণভাবে ভাষা আন্দোলন বলতে আমরা ১৯৫২ সালের আন্দোলনকে বুঝি; যা শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সাল থেকে। এই ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অনেক কবিতা, গল্প-উপন্যাস, নাটক এবং প্রবন্ধ-নিবন্ধ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে সর্বপ্রথম কবিতা রচনা করেন চট্টগ্রামের ‘সীমান্ত’ পত্রিকার সম্পাদক মাহবুবুল আলম চৌধুরী। তার কবিতার নাম…
“কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।”
ঢাকায় পুলিশের গুলি চালানোর খবর একুশে ফেব্রুয়ারির বিকালে চট্টগ্রামে পৌঁছালে এই কবিতাটি সন্ধ্যার মধ্যেই রচিত হয়। সেই রাতেই কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসে কবিতাটি ছাপানো হয়। পরের দিন বাইশে ফেব্রুয়ারি লালদীঘির ময়দানে আয়োজিত বিশাল প্রতিবাদ সভায় ওই ‘কাব্যপুস্তিকা’ বিলি করা হয় এবং কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনানো হয়। সেই সময়ের সরকার এক আদেশবলে কবিতাটি প্রায় সাথে সাথে বাজেয়াপ্ত করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
“বাংলা শিক্ষা যখন বহুদূর অগ্রসর হইয়াছে তখন আমরা ইংরেজি শিখিতে আরম্ভ করিয়াছি।”
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
“আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এমনই হউক, যাহা আমাদের জীবন শক্তিকে ক্রমেই সজাগ, জীবন্ত করিয়া তুলিবে।”
শৈশবে স্বপ্ন দেখেছি যে ভাষায় কৈশোরে কল্পনার মায়াজাল বুনে এই পৃথিবীকে রঙিন করে দেখেছি যে ভাষার আলেখ্যে, সে ভাষা আমাদের বাংলা। স্মরণ করি তাদের, যারা আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের জন্য জীবন দিয়ে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। পরিশেষে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই তাদের যারা বহুদুরে থেকেও বাংলা ভাষার দাবীতে অনড় থেকেছেন। ক্যানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব এর কাছে ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিনটি জাতিসংঘের সদস্যদেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শুধু আমার ভাষাকেই নয়, পৃথিবীর সমস্ত মাতৃভাষাকেই শ্রদ্ধা জানাই…
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শুধু আমার ভাষাকেই নয়,
পৃথিবীর সমস্ত মাতৃভাষাকেই শ্রদ্ধা জানাই। শুভেচ্ছা অগনন প্রিয় কবিবন্ধু রিয়া রিয়া।