বৃষ্টি শুরু হলো। এ বাংলা বছরের প্রথম বৃষ্টি। প্রায় দুশো বছরের পুরনো এই কাঠের বনবাংলোর টালির চালে বেশ একটা মৌতাত জমানো কনসার্ট। হাওয়ার গোঁ গোঁ শব্দ, ভয়ার্ত পাখিছানার অস্ফূট কিচমিচ, দূরের আদিবাসী গ্রামে ঘুমন্ত গেরস্তর দরজায় শুয়ে থাকা বার্ণিশ করা কালো কুকুরের ডাক, গম্ভীর মেঘের তাল – সুর – লয় মেলানো ডাক মিলেমিশে মোৎসার্টের সিক্সথ সিম্ফনি কেও পেছনে ফেলে দিচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলো। এ বছরের প্রথম বৃষ্টি।
প্রত্যেক টুকরো মিলিসেকেন্ড জুড়ে এক আশ্চর্য নক্সায় বোনা হয়ে যায় এক আস্ত জীবন। সিগারেটের নীল ধোঁয়া আবছায়া নারী অবয়ব তৈরী করতে করতেই যেমন হঠাৎই ভেঙে এদিক ওদিকে বিস্তার করে তার লাইটইয়ার গতির অয়েলপেন্টিং। তারপর টুকরো হতে হতেই মিলিয়ে যায়, রেখে যায় কিছুটা কটু কিছুটা মিষ্টি গন্ধ, তেমনি অনেক আঁচড়ের দাগ দেহে স্বাক্ষর না রেখে লাবডুবডুব ছন্দের মেশিনের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কের আবোলতাবোল সরণীর এ গলি ও গলি বেয়ে কুমির তোর জল কে নেমেছি খেলায় মেতে ভুলেই যায় সারাদিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে কোন অন্ধ বনে এক কাঠুরিয়া একমনে লোহার কুড়াল কে আদর করে আর মুখ তুলে অন্যমনস্ক চোখে আকাশ দেখে।
বৃষ্টি এলো কি মহাজন! বছরের প্রথম বৃষ্টি!
পাঁচশো কোটির একমাত্র সবেধন নীলমনি প্রাণী ইউনিভার্সে একা রাজত্ব করে অন্যদের মাথায় ছড়ি ঘুরিয়ে। তার ঘরকুনো স্বভাব, তার মুসাফিরি, তার বৈপরিত্য, তার অসূয়া, তার তীব্র পাহাড় ফাটানো গলিত লাভার মতো ভালোবাসা আছড়ে পড়ে বৃষ্টির প্রথম দমকে তেতে থাকা ফুটিফাটা মাটির ওপরে। একা রাত্রির অনাদর সহ্য করে ভাবনারা নিউরন ভেদ করে উঠে আসে, সূর্য লাল না হলে গাছেরা সবুজ হতো না। অন্ধকালো একপাশে সরিয়ে আকাশ লাল আভায় পেতে দিচ্ছে ইচ্ছে আসন। সাইবেরিয়ান অতিথি ফিরে গেছে তার নিজস্ব চঞ্চু নির্মানে প্রিয় মুখ ঢলঢল আবেগ শিবিরে। এসেছে নতুন অতিথি, বহুদিনের অপেক্ষার মেঘের গর্ভ ফাটিয়ে।
ওরে শাঁখ বাজা! ও গ্রাম্য ছলাৎ ছল কালো নষ্টস্বপ্ন পারিস কি এই সাইবার সময়ে এখনো উলু দিতে!
বৃষ্টি এলো রে! এ বছরের প্রথম বৃষ্টি!
লোহার কুড়াল কে আদর করে আর মুখ তুলে অন্যমনস্ক চোখে আকাশ দেখে।
বৃষ্টি এলো কি মহাজন! বছরের প্রথম বৃষ্টি!
___ দারুণ আকর্ষণে নিজস্ব স্টাইলে শৈল্পিক এক ধরণের চেতনা বোধ ফুটে উঠেছে।
অসাধারণ ভাবে বৃষ্টির আগমনী বার্তা তুলে ধরলেন প্রিয় কবিদা! পাশাপাশি এর সাথে সংশ্লিষ্ট টুকরো টুকরো বিভিন্ন বিষয় যেমন- হাওয়ার গোঁ গোঁ শব্দ, ভয়ার্ত পাখির ছানার অস্ফুট কিচমিচ, বার্ণিশ করা কালো কুকুরের ডাক, গম্ভীর মেঘের তাল, লয়, সুর ইত্যাদি।
মোটকথা একজন দর্শক নিজে বৃষ্টির মুহুর্তগুলোয় নিজে যা অনুভব করে, আপনার অক্ষরে সেটা মূর্ত হলো।
শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
