ভাবতে পারো তোমার দেখায় আমি হলাম অভিমানী

50063

ভাবতে পারো তোমার দেখায়
আমি হলাম অভিমানি
আমি অভিমানী হয়ে
অভিমানে প্রস্থান করবনা
আমি সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গ পার হতে শিখেছি।
স্রোতস্বিনী নদীর বিপরীতমুখী স্রোতের পথ ধরে চলতে শিখেছি।

আমি জীবনের অলিগলিতে
পদচারণার পর অনেক পথিকের পথ চলাকে উপলব্ধি করতে পেরেছি।

তুমি ভাবছো আমি কোন কিছুতে ভয় পাই
হা হা হা…
এটা তোমার ভুল ধারণা
আমি সোজা পথে চলতে চলতে
বাঁকা পথে হাঁটতে শিখেছি
তুমি ভেবো না আমি বাঁকা পথে থমকে গিয়ে
নিজেই নিজের দায় এড়াবো।

তবে এটুকু মনে রেখো
ভুল করেও আমার এই তৃষ্ণার্ত জনমে
তোমায় না পাবার ব্যথায় ভেঙে পড়বো না।

আমি লোকারণ্য দেখেছি
লোকারণ্যে সব অন্ধকার দেখেছি
লোকারণ্য একসময় আলোকিত থাকে
সেই লোকারণ্যকে অন্ধকার হতে দেখেছি
নির্জন হতে দেখেছি, নিরব নিস্তব্ধ হতে দেখেছি।

আমি মন্দির মসজিদ গির্জা দেখেছি প্যাগোডা দেখেছি এইসব জায়গায় এইসব পবিত্র স্থানগুলোতে একইভাবে বিচরণ ছিল আমার
আমি সকল ধর্মের মানুষকে দেখেছি
সকল ধর্মের মানুষকে চিনেছি।

আমি দেখেছি, এমন অনেক কিছুই দেখেছি
আমি ঘরের মানুষ পর হতে দেখেছি
যেখানে একজন মানুষ আশা নিয়ে এসেছিল
সেখান থেকে প্রস্থান করা ও দেখেছি।

আমি দেখেছি, সত্যিই আমি দেখেছি
হ্যাঁ আমি আমি দেখেছি
আমি দেখেছি নৈসর্গিক এই জীবনের অস্তমিত
মানুষ যেখানে ঐশ্বর্যের খোঁজে
প্রতিনিয়ত নিজেকে শেষ করে
আমি সেখানে ভাঙ্গন দেখেছি
আমি সেখানে চোখের অশ্রু দেখেছি
আমি সেখানে হাহাকার দেখেছি।

দেখেছি,
একে-একে, ধীরে-ধীরে, সব কিছু দেখেছি;
তুমি ভাবছো ভেঙে পড়বো!
তুমি ভাবছো শেষ হয়ে যাব,
ধীরে-ধীরে, তিলে-তিলে শেষ হয়ে যাবো;

যেভাবে শেষ হয় সুন্দরী হরিণীটি
যেভাবে নীড়হারা যাযাবর পাখি
উড়ে বেড়ায় পৃথিবীর পথে পথে
খালে বিলে নদীতে সাগরে
শহরে বন্দরে বিচ্ছেদের ডালে!
তুমি ভাবছো সে রকমই হওয়া উচিত!
হা হা হা….

তবে জেনে রেখো
আমি কোন কিছুতে ভেঙে পড়বো না;
নতুন করে হারাবার ভয়ে
তোমার জন্য কোন ব্যথায় ভেঙে পড়বো না।

ভেবেছ নতুন কোনো কষ্ট পাব
নতুন কোন কষ্ট পেয়ে নতুন করে আরেকবার
চোখের জল ঝরাবো।

আমি এমনটা সাহসিনী না
নতুন করে কোনদিন চোখের জল ঝরাবোনা
আমি পাথরের বুঁকে ফুল ফুটতে
দেখিনি বটে দেখেছি মানুষের হৃদয়
পৃথিবীর পথে পথে লক্ষ্য বার হেঁটেছি
কিন্তু নিজেকে করিনি ছোট
তবুও নিজেকে দেখিনি অসহায়
আমি অসহায়ের পাশে থেকে
বরং পেয়েছি সহায়ক শক্তি।

আমি পবিত্রতা দেখেছি,
আমি অন্তর দেখেছি
অন্তর ছুঁয়ে দেখার প্রমোদ বাসনা নিয়ে
মানুষের হৃদয়ে মানুষ হয়ে দেখেছি
কিন্তু অন্তর খুঁজে পাইনি তো কারো।
একলা চলা জীবনের এই অলিগলিতে ভীষণভাবে
পথের বাঁকে থমকে যেতে দেখেছি।

আমি পথের শুরু দেখেছি
আমি পথের শেষ দেখেছি
সামনে আঁধার জড়ানো সব নিরবতা দেখেছি
নিস্তব্ধতা দেখেছি নির্জনতা দেখেছি
আবার নির্জনতাকে ভেঙ্গে মানুষের
সমারোহ দেখেছি
কোলাহল দেখেছি
আমি দেখেছি পথের শেষের শেষ লেখাটি
যেখানে ব্যর্থতা বলে কোন শব্দ খুঁজে পাইনি!!

তুমি ভেবো না আমি তিলে-তিলে শেষ হয়েছি
তুমি ভেবনা ধীরে-ধীরে আমি দুর্বল হয়েছি
এই সকল উঁচু-নিচু বিস্তৃত অন্ধকার
আর নিরবতার পথ পার হতে
নিজেকে আরও দৃঢ় আরও শক্তিশালী
করে নিজের পথ উন্মোচন করেছি।

তুমি কি জানো এই পথের শেষ কোথায়?
হয়তো আমি জানতাম
এই পথের শেষ কোথায় গিয়ে হবে…

এত দীর্ঘ লড়াইয়ের বিস্তৃত পথ
পার হতে ভেবো না আমি ক্লান্ত হই নি,
কিন্তু নিজেকে আমি বারংবার ভেঙ্গে চুরমার করে আবার নতুন করে করতে শিখেছি
এভাবেই প্রতিদিন গড়েছি আর প্রতিরাতে ভেঙ্গেছি
তবুও আমি আমার প্রস্থানের ব্যথা
কাউকে বলতে পারিনি।

সূর্যোদয় দেখেছো কখনো!
তুমি শুধু সূর্যাস্ত দেখেছো;
গোধূলির সেই হলুদ রাঙা মেঘ দেখেছো বটে
কিন্তু তার ভেতরের বিষাদ দেখনি
তাইতো আমি তোমার হৃদয় দলিত করে
নিজের পথ বেছে নিতে পারিনি।

আমি জগতের এইসব সুশৃংখল পথে
অসংখ্যবার দেখেছি উশৃংখলতা…
তবুও কোথাও থমকে যাইনি
তবুও নিজেকে অসহায় মনে হয় নি,
তবুও নিজেকে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করিনি।
তুমি ভেবেছিলে আমি পিঞ্জিরার পাখি হলেই বেশ ভালো মানাবে তোমার জন্য।

তুমি কি জানো পিঞ্জিরার পাখিটিও
একসময় জঙ্গলে বাস করত?
তাদের আদি নিবাস এ জঙ্গলই
পিঞ্জিরা টি তুমি সোনাদানা দিয়ে
যতই ভরে দাও না কেন
সেই বৃষ্টি ভেজা বনাঞ্চল’টাই তার পছন্দের জায়গা।

তবু আমি তোমার পথে হাঁটিনি
তবুও আমি সকল দুঃখ সয়ে
নিজেকে করেছি গ্রহণ
বাঁকা পথ দেখেছি অন্ধকার দেখেছি
আমি আলোর আলোর খোঁজে বের হয়ে কখনো দিশাহারা হইনি।

আমি বাঁকা অন্ধকার পথেই বের হয়েছি
আর বের হয়েছি এই ভেবেই
হয়তো এ পথ শেষে পাবো নতুন প্রদীপ।

এটা আমার জীবনের দায় নয় জনমের দায়
আমি আমার জীবন পথে নিজের
সিদ্ধান্তকে ছুঁয়ে দেখেছি
তবুও আমি পৃথিবীকে বলিনি কিছু
আমার যত ব্যর্থতা একে একে সব পাড়ি দিতে শিখেছি।

আমি এখন লড়াই করছি দাঁড়ানোর জন্য
আমি আমার জীবন পথে এমন কিছু পেয়েছি
যা আমার অন্য কোন জনমের ফল
আমি আমার জীবনে এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি
তা আমার আজন্মের সাধনা আজন্মের ইচ্ছা
আমি আজ দুর্বল নয়,

কোন এক স্বপ্ন পুরুষের হাত ধরে
বাস্তবের এই জীবন পথে চলতে শিখেছি।
আমি অন্ধকারে আলোর মুক্তি দেখেছি
আমি প্রিয়জন ছেড়ে প্রস্থান দেখেছি
আমি বাঁকা পথের শেষে,
নতুন সূর্যোদয় দেখবো বলে বাঁকা পথেই হেঁটেছি।।

.
হ্যাপি সরকার
দ্বিতীয় সংস্করণ ১৪.০৭.২০২১

8 thoughts on “ভাবতে পারো তোমার দেখায় আমি হলাম অভিমানী

  1. কবিতা বা শব্দ কাব্য তৈরী করার আগে নিজেকেও অন্যের লিখা দেখে বা থেকে শিক্ষা নিতে হয়। উপস্থাপন করার আগে কিভাবে উপস্থাপন করা সেটাও শিখে নিতে হয়। অর্থ্যাৎ পাঠক না হলে বা পাঠক হৃদয় না থাকলে; নিজ লিখার সৌকর্যও বেড়ে উঠে না।

    শেয়ার করা লিখাটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. শব্দনীড়ের নতুন বন্ধু কবি স্বয়ং হ্যাপি সরকার। স্বাগতম জানালাম।
      নিয়মিত লিখুন। সম্ভব হলে আপনার সতীর্থ ব্লগার বন্ধুদের লিখা পড়ুন …
      কথা দিচ্ছি আপনার ভালো লাগবে। প্রাণঢালা শুভকামনায় শুধু ই সম্মান। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

      1. জ্বি ভাইয়া সবার লেখা পড়ার সুযোগ করে দিলেন আপনি। এবং আমাকেও লেখার সুযোগ করে দিলেন এমন সুন্দর একটা প্ল্যাটফর্ম।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif থ্যাংক ইউ সো মাচ

    2. অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার অনুপ্রেরণা আমার লেখার অগ্রগতি। এমন একটা প্লাটফর্মে লেখা প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্য। আমি কৃতজ্ঞ❤

  2. দীর্ঘ সময় নিয়ে “হ্যাপি সরকারের একটি কবিতা” পড়লাম। খুবই ভালো লেগেছে।
    কবির জন্য শুভকামনা।

    1. অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা আমি আপনাদের মাঝে নতুন একজন অতিথি। আশা করছি সবার লেখাপড়ার সুযোগ হবে আমার। দীর্ঘ কবিতাটি ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য কৃতজ্ঞ। অনেক অনেক ভালো থাকুন। ❤

  3. কবিতার কাব্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন একই ধারাবাহিকতায় যার প্রকাশ ঘটেছে এবং জীবনের একটা চালচ্চিত্র ফুটে উঠেছে যা দৈনন্দিন জীবনে একজন মানুষের মধ্যে ঘটে চলে এভাবে যদি একটা কবিতাকে দারুণভাবে রূপ দেয়া যায় তাহলে মনে করব এই কবিতাটা অত্যন্ত সফলতা অর্জন করেছে সাহিত্যের ক্ষেত্রে যা নিজ ভূমিকায় অবতীর্ণ। তবে কবিতাকে নান্দনিক করতে গেলে নিজ ভূমিকা কে অবশ্যই বাদ রেখে একটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিনন্দন ভূমিকার মাধ্যমে গঠন করলে তবে কবিতাকে অবশ্যই আরো উজ্জ্বল থেকে আরও উজ্জ্বলতর মনে হবে বলে আশা করি। লেখককে অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনেক অনেক শুভকামনা রইল ❤

    1. থ্যাংক ইউ সো মাচ।
      আপনার মত করে সুন্দর করে বলার ক্ষমতা আমার নেই।
      আশাকরছি পাশে থেকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।