আমাদের শহরে এক আধুনিক প্রেস ছিল
অনাধুনিক আমরা অকারণ উঁকিঝুঁকি দিতাম।
আমাদের কপালে তখন অক্ষর ফুটতে শুরু করেছে;
জন্ম-দাগের মত অক্ষর গুলো
মোছার হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ,
ব্যর্থতা ঢাকতে নিয়তি
কাগজে উৎকীর্ণ করতে প্রয়াস করি।
ডাকযোগে অক্ষরে লেখা ছড়া অমনোনীত হয়ে
ফিরে আসে; মনোক্ষুণ্ন আমরা
নিজেদের স্বাক্ষর নিজেরাই রাখবো, ভেবে
আধুনিক প্রেসে উঁকিঝুঁকি মারি।
প্রেসে লিফলেট ছাপা হয়, হ্যান্ডবিল ছাপা হয়।
অগ্রজ এক কবির আড়াই ফর্মার
কবিতার বই ছাপা হচ্ছে দেখে; আমরা নিজেদের
ছাপতে সচেষ্ট হই। অমনোনীত কতিপয় ছড়া
এর ওর কাছ থেকে চেয়ে নেয়া ছড়া নিয়ে
আমাদের পরিকল্পনা পেশ করলে, আধুনিকের
ম্যানেজার তাড়িয়ে দেয় না;
বরং কিভাবে কি করতে হবে
পরামর্শ দিয়ে আমাদের স্বপ্নকে
বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে।
একদিন আধুনিক প্রেসে আমরা স্বপ্ন গ্রন্থিত
করেছিলাম; ক্রমে এ স্বপ্ন বর্ধিত হয়েছে।
আমাদের স্বপ্নে এক ম্যানেজার পেয়েছিলাম
যে অমনোনীত আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে
সম্ভাবনার কিছুটা ছায়া দেখেছিল।
দুইশত সত্তর এর সত্তর কোনদিন পরিশোধ করতে পারিনি
তবু আধুনিকের ম্যানেজার আমাদের সম্ভাবনাকে
উস্কে দিতে দ্বিধা করেনি। ম্যানেজার আমাদের মাঝে
রবীন্দ্রনাথ দেখেছিল, নজরুল দেখেছিল।
রবীন্দ্র-নজরুল হয়তো হতে পারিনি কিন্তু আধুনিকের
ম্যানেজারের আশীর্বাদ আমাদের অমানুষ হতে দেয়নি।
আমাদের শহরে এক আধুনিক প্রেস ছিল
অন্য অনেক কিছুর মত এই প্রেস বিলীন হয়েছে
জানিনা প্রেসের ম্যানেজার কোথায়, কেমন আছে;
সেও বিলীন হয়ে গেছে কিনা, জানিনা।
তবে আমাদের প্রতিটি অক্ষরে সে বেঁচে আছে
আমাদের প্রাণে বেঁচে আছে। সে আমাদের বিশ্বাস করেছিল;
আমরা হয়তো মরে যাব, তার বিশ্বাস বেঁচে থাকবে।
বিশ্বাসের মৃত্যু নেই, ম্যানেজারের মৃত্যু নেই।
আমাদের প্রতিটি অক্ষরে সে বেঁচে আছে
আমাদের প্রাণে বেঁচে আছে। সে আমাদের বিশ্বাস করেছিল;
আমরা হয়তো মরে যাব, তার বিশ্বাস বেঁচে থাকবে।
বিশ্বাসের মৃত্যু নেই, ম্যানেজারের মৃত্যু নেই।