অণুগল্পঃ মায়াবী কোমল আদর

নিজের টাইমলাইন একান্ত নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করার একটা শক্তিশালী প্ল্যাটফরম। কিন্তু গল্প লিখতে লিখতে নিজের কথাই বলা হয়ে ওঠে না।

আমি মিস করি আমার ছোট ভাইকে। ‘ইমিডিয়েট’ ছোট ভাই। আমার জীবনের অধিকাংশ সময় ওর সাথে কেটেছে। সেই ছেলেবেলা থেকে একসাথে স্কুলে যাওয়া, এক সাথে বেড়ে উঠা, কলেজ-ভার্সিটির সময়গুলোতেও কাছাকাছি ছিলাম। মুসা ভাই চবিতে যখন গুলিবিদ্ধ হলেন, আমি তখন সেই দোকানটির সামনে বসে চা পান করছিলাম। হঠাৎ সিনেমা স্টাইলে ক্রলিং করে ফায়ারিং শুরু হলো। দেখছিলাম সব চুপচাপ। দৌঁড়াতে বা পালাতে তখন লজ্জা লাগতো। আমার সাথের সবাই হাওয়া। ভাই ছিল পাশে তখনো। পাশে ফিরে ছোট ভাইকে দেখে এবং আমাকে ছেড়ে তার না যাওয়াটা দেখে বড্ড ভালো লেগেছিল সেদিন।

এরকম অনেক ভালোলাগা রয়েছে আমার চিন্তার গোপন আলমিরায় এই ভাইটিকে ঘিরে।

সে আমার দেখা দুর্দান্ত মটরবাইক চালক। আমাদের আব্বাও ছিলেন তাই। আমার ভাই আর আমি চট্টগ্রাম থেকে মটরবাইকে করে খুলনায় নিজেদের বাড়িতে এসেছিলাম একবার। ওর সাথে এবং আরো কয়েকজন ভাই-বন্ধুদের সাথে বাইক বহর নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি যশোহর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, কালিগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, বরগুনা, পটুয়াখালী।

নিজেকে একজন রাজপুত্র মনে হতো তখন। আব্বার সাথে ছিলাম যে তখন!

এখন কি মনে হয় নিজেকে?
কিছুই না।
‘নাথিং এট অল।’

জীবনের খারাপ এবং ভালো সময়গুলো আমরা দুই ভাই আরো ভাইদেরকে নিয়ে একত্রে কাটিয়েছি। যদিও তৃপ্ত সময়গুলো কিছু অতৃপ্তিও বুকে নিয়ে চলেছিল তখন।

সারা রাত জার্ণি করে ঢাকা থেকে ফজরের আজানের একটু আগে বাড়ি পৌঁছে মেইন গেটের সামনে একটুও অপেক্ষা করতে হয়নি আমাকে। চাবি হাতে ভাইকে দাঁড়ানো পেয়েছি! যতবার গেছি ঠিক ততোবারই এভাবেই পেয়েছি। বউয়েরা সবাই তখন ঘুমে বিভোর।

আর ঘুরে ঢুকে পেয়েছি আম্মাকে। সোজা তাঁর বিছানায় আমার জন্য রাখা খালি জায়গাটায় গিয়ে শুয়ে পড়েছি। মা আরো অনেকক্ষণ জেগে থাকতেন। আমি তখন ঘুমে বিভোর।

সেই শুণ্য জায়গাটি আজো শুণ্য আছে। কেবল আমি নেই। মায়ের আঁচলের আদর এখনো শীতের নরম রোদের মত বড্ড মায়াবী কোমল! কিন্তু অনুভব করার জন্য সেখানে আমি নেই। আমি আছি এই কংক্রিট নগরে। ইউনিটে আবদ্ধ বাসা পরিবারে।

আমার মাটি নেই। মাটি মায়ের কাছে। মা নেই এই কংক্রিট নগরে।

ভাই মায়ের কাছে। আমার আদরের অংশটুকু বড্ড যত্ন করে পাহারা দিচ্ছে।

সব পাখি একসময় নীড়ে ফিরে। মানুষ ও বাড়ি ফেরে। কিন্তু আমি বাড়ি ফিরবো কখন?

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

4 thoughts on “অণুগল্পঃ মায়াবী কোমল আদর

  1. হৃদয় কেমন যেন করে উঠলো। ভালো থাকবেন সবাইকে নিয়ে এই শুভ কামনা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।