আমার আজকের লেখাটি সেই সব নবীন, প্রবীণ লেখক, কবি বন্ধুদের উদ্দেশ্যে যারা নিজ খরচে বই প্রকাশ করতে আগ্রহী কিংবা নিয়মিত নিজ খরচে বই প্রকাশ করে থাকেন। সম্ভব হলে লেখাটি পড়বেন। ফেসবুকে আমি দেখেছি অনেক প্রকাশনী পাণ্ডুলিপি চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় আর কিছু জানতে চাইলেই ইনবক্সে আসুন বা যোগাযোগ করুন। তারপর যোগাযোগ করা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয় তুলে ধরে।
আমি জানি অনেক সময় নবীন এমনকি কিছু প্রবীণ লেখক তার নিজের লেখা বই প্রকাশ করতে নানা প্রকাশনীতে যোগাযোগ করে থাকেন এবং ভালো মানের প্রকাশনী ছাড়া বাকি সবাই একটাই শর্ত দেয়, সেটা হলো বই প্রকাশের যাবতীয় খরচ লেখক/কবিকেই বহন করতে হবে। আবার ভালো মানের প্রকাশনীও ক্ষেত্র বিশেষে এমনটি করে। তবে তারা ভালো পাণ্ডুলিপি পেলে নিজ খরচেও প্রকাশ করে থাকে। যেমন ভূমি প্রকাশের সাথে একবার এসব নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম বই প্রকাশে আপনাদের নীতিমালা কী? তারা আমাকে বলেছিল পাণ্ডুলিপি পছন্দ হলে তারাই সব খরচ বহন করবেন আবার পাণ্ডুলিপি পছন্দ না হলে লেখক নিজে খরচ বহন করবে।
এই যে নবীন বা প্রবীণ লেখক/কবিদের বই প্রকাশে প্রকাশকগণ লেখক কবির উপর খরচ চাপিয়ে দেন এর জন্য কিন্তু আমি তাদেরকে দোষ দিতে চাই না। কারণ আপনি কোন মানের লেখক,আপনার পাঠক সংখ্যা কত, আপনার বইয়ে লগ্নি করে লাভের বদলে লসে পড়বেন কি না সেসব বিবেচনা করে একজন প্রকাশক অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটি তার ব্যবসা। এবং প্রত্যেক ব্যবসায়ী চায় তিনি লাভবান হবেন।
কিন্তু আমি দেখেছি নিজ খরচে বই প্রকাশ করতে গিয়েও লেখক, কবিরা অনেক সমস্যায় পড়ে। প্রকাশক কর্তৃক নাজেহাল হয়। সময় মত বই আসে না। বইয়ের বাইন্ডিং ঠিক থাকে না। প্রচ্ছদে সমস্যা থাকে। প্রুফ রিডারের অভাবে ভুল থাকে প্রচুর। কাগজের মান সমস্যা থাকে। আর সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা হয় সেটা হলো যত কপি বই প্রকাশ করার কথা ক্ষেত্র বিশেষে সেই পরিমান বই ছাপানো হয় না। যদিও লেখক/কবির কাছ থেকে সেই পরিমান বই ছাপার জন্য টাকা নেওয়া হয়ে থাকে। যেমন আমি নিজে অন্তত একজন প্রকাশককে চিনি যাকে আমি কয়েকজনের সম্মিলিত একটি গল্প সংকলন করতে দিয়েছিলাম আজ থেকে প্রায় ৮ বছর আগে। তারা ৩৫ হাজার টাকাও দিয়েছিল। কিন্তু তিনি কথা রাখেন নি। তিনি ২০০ কপি বই কম দিয়েছেন। সে অনেক কথা সেটা না হয় পরে বলবো কোনো এক সময়ে। আজকের লেখাটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে।
নিজ খরচে বই ছাপানোর পর উপরে বর্ণিত সমস্যার বাইরেও অনেক রকম সমস্যায় পড়ে থাকেন লেখক-কবিগণ। প্রথম বছর ছাপার পর সেই বইয়ের আর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না সেই প্রকাশনীতে। নিজ খরচে বই প্রকাশ করার পর সেই বইটা প্রকাশক অনেক সময় স্টলেও ঠিকমত রাখে না। যা বিক্রি হয় সেটা থেকেও লেখক কবিকে কোনো সম্মানি দেওয়া হয় না। যদিও প্রকাশককে অগ্রিম সব টাকা পরিশোধ করেই বই ছাপানো হয়েছে।
আমি জানি অনেক লেখক কবি নিজ খরচে বই ছাপার পর কখনো তা প্রকাশ করেন না যে তিনি নিজ খরচে বই প্রকাশ করেছেন। লেখক/কবিরা হয়তো মনে করেন নিজ খরচে বই করা হয়েছে এটা জানাজানি হলে তার প্রেস্টিজে লাগবে। আসলেতো তা নয়। আপনিতো চুরি করছেন না যে নিজ খরচে বই প্রকাশ করার কথাটা গোপনে রাখবেন।
এখন আসি মূল কথায়। এই যে যারা নিজ খরচে বই প্রকাশ করেন এবং অনেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হন তাদেরকে বলতে চাই আপনারা চাইলে আমি দারুণ একটি উদ্যোগ নিতে পারি। মানে সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রকাশনী শুরু করতে পারি। যে প্রকাশনীর মালিক আমি নই বরং আপনারা সবাই। মানে যাদের বই প্রকাশ হবে তারা প্রত্যেকেই এই প্রকাশনীর মালিক। বাংলা একাডেমীর নিয়ম অনুযায়ী বই মেলায় স্টল পেতে হলে একটি প্রকাশনী থেকে যতগুলো বই প্রকাশ হওয়ার পর তারা স্টল পাবে তা আমার মতে খুব সহজেই পূরণ করা সম্ভব।
এই প্রকাশনী হবে প্রাথমিক ভাবে অলাভজনক। ব্যবসার নিমিত্তে নয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই প্রকাশনীর সব লেখক তাদের বই নিজ খরচেই প্রকাশ করবেন। প্রকাশনী বাবদ খরচ বাদে বাকি সব লেখকরাই পাবেন। যেহেতু বই প্রকাশ বাবদ সব অর্থ লেখক কবি বহন করে থাকেন তাই কোনো লেখকের এক কপি বই বিক্রি হলে তার পুরোটাই অথবা নিজেদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৭৫% বা ৮০% টাকা লেখক পাবেন। বাকি ২৫ বা ২০% ফান্ডে জমা থাকবে। সাধারণত লেখককে প্রকাশনী গুলো ১০% থেকে ২০% পর্যন্ত রয়্যালটি দিয়ে থাকে। এখানে সেরকম কিছু থাকবে না। প্রকাশনী বাবদ যত খরচ তা যেহেতু লেখক পুরোটা বহন করে থাকে তাই বিক্রি হওয়া বইয়ের শতভাগই লেখক পাবেন। আবার তিনি যদি মনে করেন প্রকাশনীতো তারও। সুতরাং প্রকাশনীর একটি ফান্ড তৈরি করতে একটি নির্দিষ্ট অংশ তিনি দিবেন সেটাও দিতে পারবেন।
এটা করলে কী হবে? আপনি ঠকবেন না। কারণ আপনার বই অন্য কোনো প্রকাশক প্রকাশ করছে না বরং আপনি নিজেই প্রকাশ করছেন। আর যে প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশ হচ্ছে সেটাও আপনার নিজের। যদি আপনার মনে হয় আপনি আমার সাথে একমত তবে আমাকে নক দিতে পারেন। আমরা একটা গ্রুপ তৈরি করতে পারি। আমরা টার্গেট করতে পারি আগামী ২০২৪ বই মেলা। কমিটি গঠন থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ এর মাঝে আমরা করতে পারি। যেহেতু প্রত্যেকে তার নিজের বইটি প্রকাশের ব্যয় বহন করবে তাই ফান্ডের সমস্যা হবে না।
যদি ১০০ জন এমনকি ৫০ জন এমন লেখক কবি এক হতে পারেন তবে অনায়াসে একটি চমৎকার প্রকাশনী দাঁড় করানো সম্ভব। একটা বিষয় ভেবে দেখুন আপনি হয়তো এর মধ্যে একাধিক বই প্রকাশ করেছেন নিজ খরচে। কিংবা আগামীতেও একাধিক বই প্রকাশ করবেন নিজ খরচে। তাহলে আমি যে পদ্ধতির কথা বললাম সেটি করলেতো আপনার ক্ষতি নেই। আপনি নিজে তত্ত্বাবধায়ন করতে পারবেন। ফাঁকি দেওয়া বা ফাঁকে পড়ার কোনো সম্ভাবনা এখানে নেই।
উল্লেখ্য যদি আপনার লেখা প্রকাশকগণ তাদের খরচে প্রকাশ করে থাকে তবে এই লেখাটি আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়। আমি সেই সব লেখক, কবি বন্ধুদের একত্র করতে চাই যারা নিজ খরচে বই প্রকাশের কথা ভাবছেন। বই প্রকাশে এতো তাড়াহুড়ো না করে আসুন আলোচনা করি। ভিন্ন কিছু করি। উল্লেখ্য এটি কিন্তু প্রকাশকদের বিরুদ্ধে আমার কোনো আন্দোলন নয়। জাস্ট একটি ভিন্ন চিন্তার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
বই প্রকাশ করতে গিয়ে লেখক কবিদের বিড়ম্বনা দেখে আমার খারাপ লাগে। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনী থেকে সেরা সব লেখকদের বই প্রকাশ হওয়ায় নবীন লেখকদের বই প্রকাশ হলেও স্টলে জনপ্রিয় লেখকদের পাঠকের চাপে নবীণ লেখকদের বই আড়ালেই পড়ে থাকে। নবীন লেখকের দুই চারজন পাঠক স্টলে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে। আমি জানি ওই যে শুরুতেই বলেছি নিজ খরচে বই প্রকাশ করেছি এটা জানাজানি হলে লজ্জা পাবে এটা ভেবে এখনো অনেকেই চুপ থাকবে।
.
ফেসবুক ইনবক্স: জাজাফী
৩০ জানুয়ারি ২০২৩
পরিসর ছোট হলেও এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই চাই। শুভেচ্ছা মি. জাজাফী।
আপনার উদ্যোগের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। তবে আমি নিজে আপনার ক্রাইটেরিয়াতে পড়ছি না। এ পর্যন্ত আমার বইগুলো প্রকাশকরাই বের করেছে। গল্পের বই 'প্রত্যুষের গল্প' বের করেছে পেন্সিল পাবলিকেশন্স। আর উপন্যাস 'এমনি এসে ভেসে যাই' বের করেছে তাম্রলিপি প্রকাশন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইল।