লাশের গন্ধ

কোনো কিছুই ব্যক্তিগত নয়
আহাম্মকের মাথায় ভর্তি একের পর এক
গুনতির বস্তা এখন রাষ্ট্রের সম্পত্তি,
সমস্ত দ্বৈত ও অদ্বৈত দ্বন্দ্ব
ক্রমশঃ বেড়ে যাওয়া ধর্ষকাম
অন্ত্র থেকে জরায়ুমুখে সূচের বিছানায়
ছটপট করতে থাকা নাদান কিশোরী
আর বন্ধ এটিএমের খাঁজে
কাকুতি লুকোনো বলিরেখা
একদিন যারা বাঁচতে চেয়েছিল।

আরেকটা নির্ঘুম রাত পেরিয়ে গেলে
নিজের অজান্তে রাতচরা পাখি হয়ে যাই,
তৃতীয় প্যাকেট সিগারেট শেষ হয়ে গেলে
অ্যাশট্রেতে তাকিয়ে থাকে অন্ধ আগুন:
সেদিনের বৃষ্টি ভেজা মাসুল
একশো দুই তিন গুনতে গুনতে বোবা
থার্মোমিটারের হার্ডল টপকায়
জ্বরতপ্ত ঠোঁট চেপে ধরে বালিশের
শেষ ঠান্ডাটুকু শুষে নিতে চাইলে রক্তচোখ
রাত্রি ধমকায় কাঠফাটা বিকট আওয়াজে।

মেয়েটার ব্যাথাক্লান্ত শরীর পড়ে থাকে
লোহার খাটের এক পাশে প্রাচীন মমি হয়ে,
কামুক হাতের সংখ্যা কেবলই
গুনতিতে বেড়ে ব্যঙ্গ করে নিখুঁত ভোগব্যবস্থাকে
চন্ডীদাসের রজকিনী শতভোগ্যা হয়ে উলঙ্গ জ্ঞানহীন
পড়ে থাকে পুকুরের আগাছা আড়ালে।

রাত্রি গড়িয়ে যে সকাল আসে
সেখানে সূর্য আসে না, শুধু জলবাস্পের উনকোটি
চৌষট্টি ভয়াল ছায়া উড়ে বেড়ায়
অন্ধকার আরও জম্পেশ শিকড় ছড়ায়;
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এঁটো বাসনা
পড়ে থাকে বন্ধ ভ্যাটের দুর্গন্ধী চৌহদ্দির বেড়ায়,
পার্লার ফেরত ফ্লুরোসেন্ট আলো অবজ্ঞায়
লাথি মেরে সরায় বিগত জন্মের
অকালে খুন হয়ে যাওয়া যাযাবরী প্রেম,
সূর্য ভয়ে পিছিয়ে যায়, রাত্রি জেঁকে বসে সকালের গায়ে।

কান্নার শেষ জলটুকু শুকিয়ে আসছে
চোখের কোল আর গাল বেয়ে
রেখে গেছে অন্তিম মিনতির রঙশূন্য দাগ
যুদ্ধের ক্ষতবিক্ষত উঠানে এক পাশ
ফিরে পড়ে আছে হার না মানা আন্তিগোনে
চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা অজস্র সহচরের
লাশের ঠোঁটে লেগে আছে না ফুরানো
একচিলতে বাদামী হাসির টুকরো
কান্নার শেষ অক্ষর দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে আন্তিগোনে
দ্রুত সেই জায়গার দখল নিচ্ছে ভিসুভিয়াসের রাগ

কোন দূরে টুই টুই ডেকে চলে একটানা
অলীক পাখিছানা নিবিড় একাত্মন্
মাঝরাতে প্যাঁচা, রাষ্ট্রনিয়ন্তা আর সুপ্ত বিবেক
ক্যাবিনেট মিটিংয়ে বসে, যুদ্ধ শুরুর আগে
খতিয়ে দেখে নেওয়ার অন্তিম চেষ্টা
মার্ডারার আর ভিকটিমের মধ্যে কার পাল্লা ভারী:
বুরবক পাখি দিন রাতের তফাৎ বোঝে না
জ্বর বাড়ে মৃত্যুর ফিতে ছোঁয়ার আকুল ইচ্ছেয়।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

1 thought on “লাশের গন্ধ

  1. একচিলতে বাদামী হাসির টুকরো
    কান্নার শেষ অক্ষর দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে আন্তিগোনে
    দ্রুত সেই জায়গার দখল নিচ্ছে ভিসুভিয়াসের রাগ … https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Frown.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।