কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর জন্মদিন এ বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি

734377_569240303137283_740797596_n

আজ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর জন্মদিন।
সুকান্ত ভট্টাচার্য এর জন্ম : ১৫ই আগস্ট ১৯২৬। মৃত্যু : ১৩ই মে, ১৯৪৭।
বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাব ধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি।

আজ যদি তিনি আমাদের মাঝে জীবিত থাকতেন তবে তাঁর বয়স হতো অনেক কিন্তু তিনি যে প্রৌঢ়ত্বের কবি নন। আমরা মনে করি কবি তিনি আঠারোর। অবাধ্য, স্পর্ধিত, দুর্যোগ প্রতিপালিত আঠারোর দীপ্ত জয় ঘোষণা তিনি নিজেই করে গেছেন তাঁর কবিতায়। আঠারো তিনি পার হয়েছিলেন, মারা গেছেন একুশে, কিন্তু আঠারো অক্ষয় হয়ে আছে তাঁর বক্তব্যে, ভাষায়, ছন্দস্পন্দে, উপমায়। তারুণ্যের মধ্যে গুণ আছে কিন্তু ঋণও আছে এক প্রকারের। তারুণ্য চপল হতে জানে, সে হতে পারে বুদ্ধিতে অপরিণত, আবেগে অশিক্ষিত। কিন্তু সুকান্তের তারুণ্যে গুণ আছে, ঋণ নেই। তাঁর মধ্যে তারুণ্যের উদ্দীপনা ও উত্তেজনা আছে কিন্তু উদ্দীপনা ও উত্তেজনাকে তিনি কাব্যের শৃঙ্খলার ভেতর রেখেছেন। যেমন রেখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, আরো অনেক বেশি সময় নিয়ে, আরো অনেক অধিক সংখ্যক কবিতায়।

রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যের একটি অবিস্মরণীয় নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য। দাদামশাই সতীশচন্দ্র ভট্টাচার্যের ৮২ নং মহিম হালদার স্ট্রিটের বাড়ির দোতলায় একটি ছোট্ট ঘরে জন্মগ্রহন করেন সুকান্ত। ১৯২৬ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলা ১৩৩৩ সালের ৩০ শ্রাবণ। পিতা নিবারণ ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সুনীতি দেবীর দ্বিতীয় পুত্র তিনি। জেঠতুতো দিদি রাণীদি নাম রাখের সুকান্ত, ‘রমলা’ খ্যাত সাহিত্যিক মনীন্দ্রলাল বসুর গল্প ‘সুকান্ত’-এর নামে। বাগবাজারের নিবেদিতা লেনের বাড়ির একান্নবর্তী পরিবারে কাটে তাঁর ছেলেবেলা। এরপর সেই বাড়ি ছেড়ে আসা হয় বেলেঘাটার ৩৮ নং হরমোহন ঘোষ লেনে।

সুকান্ত তাঁর সংগ্রামী চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন তাঁর অবিস্মরণীয় সাহিত্য-সৃষ্টির মাধ্যমে। দেশের মানুষকে বিদেশী শাসনের বিরূদ্ধে উৎসাহিত করেছিলেন তাঁর লেখনীর দ্বারা। বিদ্রোহী কবি সুকান্ত গেয়েছিলেন জীবনের জয়গান। গোলাম কুদ্দুস সম্পাদিত ‘একসূত্রে’ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সুকান্তের ‘জনযুদ্ধের গান’, বাংলা ১৩৫১ সালের মন্বন্তর-এর ফলশ্রুতি হল ‘আকাল’ নামক কবিতা সংকলন। সাথে সাথে তাঁর রাজনৈতিক কর্মী জীবনে তিনি সারা বাংলার কিশোরদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘কিশোর বাহিনী’।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আমরা যে ভবিষ্যৎ কবির সন্ধান পাই
তাই মূর্ত হয় সুকান্তের মাধ্যমে –
“এসো কবি অখ্যাতজনের
নির্বাক মনের।
মর্মের বেদনা যত করিয়ো উদ্ধার”।

বিশ্বকবির এই দায়িত্ব পালনে ব্রতী সুকান্ত লিখলেন-
“যে শিশু ভূমিষ্ট হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুমঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে”

অথবা

“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার”

সুকান্তের সমস্ত জীবনটাই ছিল কবিতার সাথে একাত্ম। তাঁর আগুন-ঝরানো কলমে ফুটে ওঠে বিদ্রোহের গান-
“আমার দিন পঞ্জিকায় আসন্ন হোক
বিস্ফোরণের চরম, পবিত্র তিথি”
তাঁর বিদ্রোহ সকল মানুষের জন্য, জীবনের জন্য –
“হে সূর্য।
তুমি আমাদের স্যাঁতসেতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও,
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে”।

1184904_10200960823921298_229026701_n জনগণের কবি সুকান্তের সমাজ-সচেতনতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহসী কলমে তাঁর শক্তির প্রকাশের সাথে যদি যুক্ত হত তাঁর বয়সের পূর্ণতা ও অভিজ্ঞতা, তাহলে বাংলা সাহিত্য জগৎ বৃহৎ ক্ষেত্রে পূর্ণতা লাভ করতে পারতো। তা সত্ত্বেও সুকান্ত তাঁর অপরিণত যৌবনেই এমন কবিতা লিখে গেছেন যা সুপরিণত এবং এই সকল রচনার মাধ্যমেই তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘যে আছে মাটির কাছাকাছি, সে কবির বাণী লাগি কান পেতে আছি’। সুকান্ত ছিলেন সেই মাটির কবি, তাই তাঁর কবিতা আমাদের হৃদয়ের এত কাছাকাছি। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যাধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। জন্মদিনে আমাদের এই প্রিয় কবিকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তথ্য সূত্র এবং শব্দ বিন্যাসের পূর্ণ কৃতিত্ব : রিয়া দাশগুপ্তা।

মুরুব্বী সম্পর্কে

আমি আজাদ কাশ্মীর জামান। আছি মুরুব্বী নামের অন্তরালে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখার চেষ্টা করি। ভেতরে আছে বাউল মন। খুঁজে ফিরি তাকে। জানা হয়নি এখনো। ঘুরতে ঘুরতে আজ পৃথিবীর স্বর্গে। এখানেই পরিচয় হয়েছিলো, কবিতা পাগল এক মানুষের সংগে। নাম জিয়া রায়হান। যার কিছু শব্দকথা, এ্যাতোদিন ভরেছে আমার পাতা। উথাল পাথাল হাওয়া, হৃদয়ে জাগালো দোলা পেলাম কিছু সমমনা মানুষের দ্যাখা। দিনভর আর রাতভর শুধু কবিতায় গেলো বেলা। সব ছেড়েছি- সব পেয়েছি- ভুলতে পারিনি শুধু কবিতার অশ্রুসজল চোখ। ভালো লাগা থেকেই দু’ একটা শব্দ সাজাবার চেষ্টা করি। মাতাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মাটির কলসে, তবলার ধ্বণী তুলে গাইতে পারি বেসুরো গান- সুর নামের অন্তরালে। ভালোলাগে পোষা কবুতরের পালক ললাটে ছোঁয়াতে। ফুল থেকে রং নিয়ে, খেলি হোলিখেলা, হৃদয়ের উঠোনে। আজ তারি ধমকে এলাম স্বরূপে- স্বকথায় ভরাবো পাতা।   hits counter

1 thought on “কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর জন্মদিন এ বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।