মতি উদ্দিন শখের কবি। পান-সুপারি, বিড়ি-সিগারেট, শরাব কিংবা তহুরা অন্য কিছুতে তার আসক্তি নেই। শুধু কবিতা। কবিতা তার আরাধ্য। কবিতা ছাড়া অন্য কোন প্রার্থনা নেই।
মতি উদ্দিন নির্বিরোধী মানুষ; কারো সাতেপাঁচে থাকেন না। কাজ, ঘর এবং সংসার। এর বাইরে কবিতা।
তার সময় কম, কাজ এবং সংসারের বাইরে কবিতার জন্য সময় বের করা প্রায় সম্ভব হয় না। তবু তিনি কবি; আড়াই ফর্মার কবিতার বইয়ের জনক।
নতুন পাণ্ডুলিপি তৈরি হচ্ছে, কাজ সংসার সামলিয়ে পাণ্ডুলিপি সামলাতে তার গায়ের ঘাম ঝরছে। পাণ্ডুলিপি তৈরি করা পাহাড় কাটার চেয়েও কঠিন, ভারী পাথর বয়ে নিয়ে যাওয়ার চেয়েও কঠিন। গত কয়েকদিন ধরে এই কঠিন কাজ তিনি করছেন।
সব কাজ শেষ হলে স্ত্রী ঘুমিয়ে গেলে তিনি বসেন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাগজ একত্র করে মমতার অক্ষর সাজান। কাটাকুটি করেন।
দীর্ঘ আড়াই মাসের পরিশ্রমে পুনরায় আড়াই ফর্মা পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়ে গেল, আনন্দে তার চোখে জল এল। পাণ্ডুলিপির খুশিতে একটা সিগারেট ধরালেন; অথচ তিনি সিগারেট খান না। অনভ্যাসের দরুন ক্রমাগত কাশতে থাকলেন, স্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে গেল। স্ত্রী সাহিত্য প্রেমী নন কিন্তু স্বামীর কবিতা পাগলামিতে তার সায় আছে। বেচারা কবিতায় থাকলে ভাল থাকে। স্বামীর জন্য চা বানিয়ে আনলেন।
রাতের শেষ প্রহরে স্ত্রীর চায়ে চুমুক দিতে দিতে তার মাথায় নতুন কবিতা ভর করল, তিনি পুনরায় টেবিলে বসলেন।
পাশের মসজিদ থেকে ফজরের আযান ভেসে আসছে, স্ত্রী জেগে দেখলেন কবিতার টেবিলে মাথা রেখে স্বামী ঘুমাচ্ছেন। আহারে কবি, তার মায়া হতে লাগলো। তিনি ডাকতে গেলেন কিন্তু দেখলেন স্বামী জাগছেন না।
কবিতার টেবিলে মতি উদ্দিনের মৃত্যু হল। স্ত্রী দেখলেন সাদা কাগজে কবিতার এক লাইন; ‘মৃত্যু তুমি চায়ের কাপে এলে’… স্ত্রী ভয় পেলেন। তিনি গ্যাসের চুলায় কাগজ জ্বালিয়ে ফেললেন।
মতি উদ্দিনের স্ত্রীর পুনর্বিবাহ হলো মাস তিনেক পরে, ভদ্রলোকও কবি। সার্বক্ষণিক কবি। স্ত্রীকে সারাক্ষণ কবিতায় ব্যস্ত রাখেন… স্ত্রী মাঝেমধ্যে নতুন স্বামীকেও চা বানিয়ে খাওয়ান।
যাপিত জীবনের অসামান্য খণ্ডাংশ।