আমার প্রিয় ফুলের নাম লজ্জাবতী ফুল। অন্য অনেক ফুল থাকতে লজ্জাবতী কেন প্রিয় বন্ধুরা প্রায়ই এমন প্রশ্ন করে থাকে। কোন ফুল কার প্রিয় হবে তার কোন ব্যাখ্যা থাকে না, যুক্তিও থাকে না।
লজ্জাবতী প্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে আমার গভীর বিপদের সময় সে তার ডানা বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি তিপান্ন পেরিয়েছি। তিপান্ন থেকে পঞ্চাশ বিয়োগ করলে যা অবশিষ্ট থাকে তাও আমি পেরুতে পারতাম না যদি লজ্জাবতী দেবদূত হয়ে আমাকে উদ্ধার করতে না আসতো।
বাসায় উঠানের শেষে পুকুর। আমি উঠানে ফুটবল চর্চা করি ভবিষ্যতের সালাহউদ্দিন কিংবা পেলে। ফুটবলের সাথে পানির সখ্যতা এত বেশি কেন এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি। আমি যতই পুকুর এড়িয়ে যেতে চাই ফুটবল ততই পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ে।
ফুটবল পুকুরে পড়ে গেলে আমি চিৎকার করি; চিৎকার শুনে ঘর থেকে কেউ না কেউ এসে ফুটবল উদ্ধার করে দিয়ে যায়। একদিন বাসায় কেউ নেই। আম্মা রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। একা আমি উঠোনে গোল প্রাকটিস করছি। পুকুরের উল্টো দিকে গোলপোস্ট। তবু কিক মারার সাথে সাথে বেয়াদব ফুটবল ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে পুকুরে লাফিয়ে পড়ে। পুকুরের পানিতে ফুটবল পড়ে গেছে কয়েকবার চিৎকার করে দেখলাম কেউ সাড়া দেয় না।
নিজের কাজ নিজেকে করতে হবে ভেবে ফুটবল উঠাতে পুকুরের পাড়ে গেছি; দেখলাম পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি। পুকুরের পাড় থেকে পানিতে কিভাবে এলাম বুঝতে পারলাম না।
বয়স তিন সাড়ে তিন তবু আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। হয়তো পাড় থেকে খুব বেশি দূরে যাইনি তাই রক্ষা পেলাম। পুকুরের চারপাশ ঘেঁষে অসংখ্য লজ্জাবতী। তাদের ডানা পুকুরের পানি পর্যন্ত বিস্তৃত। বাঁচার জন্য মানুষ খড়কুটো আঁকড়ে ধরে। আমি আঁকড়ে ধরলাম লজ্জাবতী।
লজ্জাবতী আঁকড়ে ধরে উপরে উঠে এলাম। পুকুরের চারপাশে অসংখ্য লজ্জাবতী লতা কোনদিন তাদের দিকে গভীর মনোযোগে তাকানো হয়নি, এবার তাকালাম। দেখলাম ছোট ছোট অসংখ্য গোলাপি ফুল ফুটে আছে। লজ্জাবতীর গায়ে হাত ছোঁয়ালাম লজ্জায় তারা গুটিয়ে গেল কিন্তু ফুলগুলি ঠিকই আমার দিকে তাকিয়ে রইল। যেন বন্ধুত্বের আহ্বান জানাচ্ছে। আমি সকৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে লজ্জাবতী ফুল দেখতে থাকলাম। মনে হলো জগতে এর চেয়ে সুন্দর কোন কিছু নাই। মনে হলো ঈশ্বর লজ্জাবতীর গায়ে ফুল হয়ে ফুটে আছেন।
লজ্জাবতী ফুল আমার প্রিয় ফুল। তাদের দিকে তাকালেই ঈশ্বরের প্রতিরূপ দেখি।
লজ্জাবতী ফুল আমার প্রিয় ফুল। তাদের দিকে তাকালেই ঈশ্বরের প্রতিরূপ দেখি।