আল মামুন খান এর এলেবেলে কথা

অভিযোগকারী সুনীল এবং আমরা

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মারা গেছেন। একজন ভালো লেখক, কবি, সাহিত্যিক- মোটকথা লেখার জগতে যা কিছু ভালোলাগা আছে, তার অনেকটাই আমি পেয়েছি তার লেখার ভিতর থেকে।

কিন্তু আজ তাকে এখানে নিয়ে আসা অন্য এক কারণে।

“… তেত্রিশ বছর কেটে গেলো
কেউ কথা রাখেনি…”

এই কবিতাটি শুনে নাই এমন মনে হয় খুব কমই আছে। আমার কাছে এই কবিতার জন্য সুনীলকে অভিযোগকারী হিসেবে মনে হয়। কে কি করে নাই এবং এ কারণে অতৃপ্তির অনুভব, সেটা ফলাও করে সবাইকে জানানো হয়েছে এই কবিতায়। আর সেটা পড়ে অনেকের ভিতরও একই না পাওয়ার ভাব জন্মে যায়, না পাবার অনেক অনেক অণুমুহুর্ত মানসপটে ভেসে উঠে। আমার ক্ষেত্রে এমন হয়েছে বিধায় বললাম। সকলের নাও হতে পারে।

তবে মানব প্রকৃতিই এমন। অন্যের চোখে নিজেকে দেখার প্রবণতা। আর সে জন্যই কেউ যে কথা রাখে নি, সেটা এবং ‘পাঠক আমার’ ক্ষেত্রে কে কি করেনি – কবিতাটি পড়ার বা আবৃত্তি শোনার সময়, চোখ এবং মন-দুইই খোলা থাকা অবস্থায় চোখের সামনে ভেসে উঠে। এ যেন ‘চোখ খুলে বন্ধ অবস্থায় দেখা’।

কিন্তু আমি আজ এই ৪৮ বছরে এসে একটু অন্য ভাবে ভাবতে চাই। কে কি কথা রাখে নি সেটা দেখার বা ভাবার আগে আমি কাকে কি কথা দিয়েছিলাম বা দিয়ে রাখি নাই- ওটা ভাবার প্রয়োজন বেশী। আমি নিজেই এই কবিতাটি যদি এখন লিখি তবে এটার কয়েকটা লাইন এমন হতে পারে-
… ৪৭ বছর পেরিয়ে এসেও আমি
কথা রাখতে পারি নি।
শুনেছি, কথা নাকি দেওয়াই হয় না রাখার জন্য! …’

এভাবে আমি আগাতে চাই। সুনীলের কবিতার নিরিখে যদিও অনেকের কাছে এটা উল্টা লাগতে পারে। কিন্তু ভাবনার জগতে বর্তমানে এটাই আসলে সোজা পথ। সবাই অভিযোগ করেই যাচ্ছি কেবল, কিন্তু ‘নিজ আমি’ যে অন্যের অভিযোগের নিমিত্ত হয়েছি বা হচ্ছি, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ আছে? আর কেউ কথা রাখেনি, আমিই বা ক’টা রেখেছি, রাখছি? জীবনের না’বোধক ভাবনায় নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে, এই মুহুর্ত থেকে হ্যাঁ’বোধক অনুভবে নিজে অণুপ্রাণিত হয়ে অন্যকেও অণুপ্রাণিত করা প্রয়োজন।

আসুন, সবাই একটু এভাবেই ভাবি। তাতে ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের অনেক না পাওয়ার বেদনা মুছে যাবে…।।

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

8 thoughts on “আল মামুন খান এর এলেবেলে কথা

  1. জীবনের না’বোধক ভাবনায় নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে, এই মুহুর্ত থেকে হ্যাঁ’বোধক অনুভবে নিজে অণুপ্রাণিত হয়ে অন্যকেও অণুপ্রাণিত করা প্রয়োজন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. জি ভাইয়া, সবার ভিতরে এই বোধ জেগে উঠুক, তাতে সবাই ভালো থাকবে।

      ধন্যবাদ আপনাকে।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. সুনীল এবং আমরা হয়তো কোথাও সমিল আছে হয়তো কোথাও দ্বিমত আছে। দারুণ একটি আলোচনা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।