১.
প্রতিদিনের মত জীবন। একই। বোধের পাল্লায় মেপে, নির্বোধ অনুভবটুকুই অনুভূত হয়। এভাবেই আছি এখন। জীবন আমার এরকমই অনেকটা আজকাল।
ব্যাংকে কাটালাম লাঞ্চের আগ পর্যন্ত। যাবার পথে বিড়ম্বনা। চলছে চার লেইনের রাস্তার কাজ, সাথে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল পর্যন্ত উড়াল সেতু। ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম। হেমন্তের দুপুরে ফিরবার কালে, অনেকটা পথ হেঁটে ফিরেছি। একা নই। আরো অনেকে এমন সঙ্গী হয়েছেন আমার।
আমার সাময়িক বসবাসের জেলখানার মোড়ের রাস্তার মাথায় চা’র দোকানটি। একটা সিগ্রেট পোড়ানো যেতে পারে ভেবে সামনে আগাই। রাস্তায় প্রচুর মানুষ। কিন্তু দোকানটিতে ভিড় নেই। মোবাইলে সময় দেখি এক পলক। একটা দশ। চোখ ফিরাতেই লোকটিকে দেখি। মাথা নিচু করে বসা। পাশে শূণ্য চা’র কাপ। একটা মাছি উড়ছে। নির্লিপ্ত দোকানদার। রাস্তার জ্যামে আটকে পড়া শ্লথ যানবাহনগুলির দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলির দিকে তাকিয়ে আছে। ইদানিং প্রতিদিনই এই দৃশ্য দেখে সে। তাই ওর ঘষা কাঁচের দৃষ্টিতে কোনো বোধের স্ফুরণ জাগে না।
একটা কুকুর কুণ্ডলি পাকিয়ে শুয়ে আছে। আমার উপস্থিতিতে একটু যেন বিরক্ত মনে হল ওকে। একবার চোখ মেলে নিরবে তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে, আবার চোখ বুজল। গভীর কুকুরীয় ভাবনাবিলাসে ডুবে গেল সে।
দোকানদারের কাছে এক শলাকা গোল্ড লিফ চাইলাম। সে সিগ্রেট না দিয়ে- নিজের বাম পাশের ট্যাকে গোঁজা গুলের কৌটা বের করে। তর্জনীতে যতটুকু উঠে গুল নিয়ে, নিচের মাড়িতে রেখে ঠোঁট বন্ধ রাখে। গুলের কটু তামাক বাতাসে ভেসে আমার নাসা:রন্ধ্রে সুড়সুড়ি দেয়। এলার্জি আছে গুলে আমার। এখুনি নন-স্টপ হাঁচি শুরু হবে।
লোকটার বাম কানের ওপর সর্বশক্তি দিয়ে একটা বাম হাতের জোর ঝাপর মারার ইচ্ছেটা দমন করলাম। সাধারণত কোনো দোকানদার খদ্দেরের চাহিদা পূরণ না করে, নিজের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেয় না। তবে খদ্দেরটা আমি বলে কথা। এমনই হয় আমার সাথে সবসময়। কুকুরটার সাথে থেকে ব্যাটার ভিতরেও ওর স্বভাব চলে আসছে হয়ত। কুকুরটা যেভাবে আমাকে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখেছিল, দোকানদারের নির্লিপ্ততার মাঝে ও একই জিনিস দেখলাম আমি।
বেঞ্চে অল্প পরিচিত লোকটির পাশে বসি। পকেট থেকে সুদৃশ্য লাইটার বের করে, ক্যান্সার স্টিকটি জ্বালাই। একমুখ ধুঁয়া ছেড়ে পাশের রশিদ সাহেবের দিকে তাকাই। এতক্ষণে মুখ তুলে তাকিয়েছেন তিনি। হাসেন। হাসি হাসির জন্ম দেয়। আমাকে ও অর্থহীন হাসি হাসতে হয়। একেবারে অর্থহীন ও নয়। এটা স্বল্প পরিচিত মানুষদের কথোপকথন শুরুর প্রারম্ভিক ওয়ার্ম-আপ হিসেবে ধরা যেতে পারে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
– কি ব্যাপার, সেদিন ফোন করে বললেন জরুরী কথা আছে- বাসায় আসবেন, এলেন তো না?
– জরুরী একটা কাজ পড়েছিল ভাই তাই আসতে পারিনি।
– এখন ফ্রি আছি কিছুক্ষণ। বলতে পারেন। চা খান আরেক কাপ? সিগ্রেট.. আপনার ব্রান্ড কি?
– জি না, এখন আর চা খাব না। আর আমি ধুমপান করি না। ধন্যবাদ।
একটু থমকে গেলাম। আমার সাথে সময় ও। কিন্তু একপলক-ই। থমকেই ভাবি, একজন লোক ভর দুপুরে চা’র অফার ফিরিয়ে দেয়, আর সে ধুমপান করে না জেনে তোমার এবং সময়ের থমকানোর কি আছে?
আজকাল একটু বেশী-ই কি ভাবা শুরু করেছি আমি?
মনের বিব্রত ভাবটা কাটিয়ে উঠতেই বুঝি কন্ঠে একটু বিরক্তি টেনে এনে তাকে বলি,
– এর আগেও দুইবার চলতি পথে আমাকে থামিয়ে কিছু বলতে চেয়েছেন, বলতে পারেন নি। তিনদিন রাতে ফোন করেছেন, দিনে কখন ফ্রি থাকব জানতে চেয়েছেন। আমি সময় দিতে চেয়েছি, আপনি সময় মত আসেন নাই। ভিন্ন একটি নাম্বার দিয়ে একবার রাতে ফোন করে চুপ থেকেছেন, আমি বুঝতে পেরেছি ও পাশে আপনি ছিলেন। সমস্যাটি কোথায়?
– আমি দু:খিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে আপনার সাথে খুবই জরুরী একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন.. আজ রাতে আসব অবশ্যই।
আমাকে সালাম দিয়ে রশিদ নামের লোকটি চা’র দোকান থেকে বের হয়ে যায়। তার পিছন দিকটার দিকে চেয়ে থাকি আমি। তিনি সরু পায়ে চলা পথের বাঁকে মোড় ঘুরে অদৃশ্য হবার আগ পর্যন্ত ওভাবেই তাকিয়ে থাকি। দোকানদারও থাকে। চেয়ে দেখি কুকুরটি ও চেয়ে আছে সেদিকে। কখন যেন ঘুম ভেংগে গেছে ওটার ও।
এক মধ্যদুপুরে আমি এক চা’র দোকানে বসে, দোকানদার এবং এক কুকুরকে সাথে নিয়ে, রশিদ নামের একজন মানুষের চলে যাওয়া দেখি। রাস্তায় ট্রাফিক তখন আরো বেড়েছে।
২.
প্রচন্ড গরমে ঘেমে গোসলের মত অবস্থা হয়েছে ফারাহর। যদিও এখন গরমকাল না, তারপর ও। বাসের ভিতরে দাঁড়ানো মানুষ রয়েছে প্রায় সিটে বসা মানুষের সংখ্যার কাছাকাছি। মহিলা সিটে মহিলা এবং শিশুরা বসে আছে। সে নিজে এমন এক স্টপেজ থেকে উঠেছে, ওখান থেকে কখনো-ই সিট খালি থাকে না। মধ্যবর্তী স্টপেজ। আগে থেকে ভর্তি হয়েই বাস আসে।
ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। বিশাল বিশাল ক্যাটারপিলার ট্রাক এবং অন্য সব পাইলিংয়ের যন্ত্রপাতিগুলির দিকে অধিকাংশ যাত্রী-ই তাকিয়ে দেখছে। বিস্ময় তাঁদের চোখেমুখে। রাস্তার ধূলা বাসের জানালা দিয়ে আসছে। কয়েকজন চীৎকার করে জানালা বন্ধ করতে বলতেই, বাকিরা ক্ষেপে ওঠে। ভিতরের গরমে প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যামে মন্থর গতির বাসে বসে বসে সবাই মনে মনে ক্ষিপ্ত। তাই কারও ভাল কোনো কথাও কারোর ভাল লাগে না।
মধ্যবর্তী স্টপেজ শব্দটি কিছুক্ষণ আগে ফারাহর মনে এসেছিল। সে নিজেও কি জীবনের এই পর্যায়ে এসে, জীবনের মধ্যবর্তী স্টপেজের অপেক্ষামান একজন যাত্রী নয়? দু’পাশে যাত্রীদের চাপাচাপির ভিতরে যতটুকু নিজেকে রক্ষা করা যায়। বিভিন্ন মানুষ। পুরুষই বেশী। আমাদের এই পুরুষশাসিত সমাজে চলাফেরাটা তাদেরই আয়ত্তাধীন। নারীর বাসায় ফেরা কিংবা বাসা থেকে বের হওয়াটা শারীরিক এবং মানসিক ঝুঁকির মাত্রায় সর্বোচ্চে অবস্থান করে। বাসের হেল্পার কি কন্ডাক্টর, মহিলা যাত্রীদের উঠা-নামার ক্ষেত্রে সাহায্যের নামে হাত ধরে। ফারাহর ও এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রথম দিকে রশিদের সাথে যখন একটু একটু বাইরে বের হতো, তখন ওর হাত ধরার মানুষ ছিল বিধায় এই বিব্রতকর অনুভবে বিলীন হতে হতো না ওকে। ধীরে ধীরে সময় পার হয়। অনেক কিছু আজ আর আগের মত নেই। একসময় নিজেও সে স্কুলের চাকরিটা অনেকটা সময় কাটানোর জন্যই বেছে নেয়। স্কুলের কাজের প্রয়োজনে প্রায় সময়ই ওকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। সেই সুবাদে এমন নোংরা স্পর্শের অভিজ্ঞতা ওর নিজেরও হয়েছে। আর ভিড়ের ভিতর পুরুষ কেন জানি কোমল নারীদেহের পরশ লাভে খুবই উন্মুখ থাকে। শিকারির মত যেন পুরুষগুলো। অবশ্য সবাই নয়। ব্যতিক্রম সবক্ষেত্রেই আছে। সেটাকে উদাহরণ হিসেবে আনা যায় না।
নিজের এলাকার মোড়ের ফিলিং ষ্টেশনের একটু সামনে বাস থামে। ফারাহ নামে। বাইরের রোদের আঁচ একটু গালকে ছুঁয়ে দিলেও, এতক্ষণের বদ্ধ আবহাওয়া থেকে মুক্তি সারা শরীরে কেন জানি আনন্দের কোমল পরশ বইয়ে দেয়! ঘর্মাক্ত শরীরে ধুলা উড়া বাতাসের ছুঁয়ে দেয়াটা উপভোগ করে সে। শরীরের পরিচ্ছদের বিশেষ বিশেষ জায়গা ঘামে ভিজে গেছে। পথচলতি পুরুষগুলি নির্লজ্জ কামুক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। আগে বড্ড কষ্ট হতো। এখন হাসি পায়। শরীরের শরীর সংক্রান্ত অনেক কিছুই তো বিয়ের পরের গত আট বছর ধরে সে দেখছে। এখন তাই রাস্তার পুরুষগুলিকে ‘মানুষ’-ই মনে হয়না ফারাহর। নারীর ভয়তো আসলে ‘পুরুষের’ কাছে নয়। যারা নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করে, এদেরকে কখনো-ই ওর পুরুষ কিংবা মানুষ মনে হয়না। এরা আসলে যে কী, সে নিজেও ভেবে পায় না।
সামনে পি.এস.সি পরীক্ষা। এই কাজেই ওদের স্কুল ও কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম, রেজিষ্ট্রেশনের কিছু পেন্ডিং কাজ সমাধার ভার দিয়েছিলেন ওর উপর। সেটা শেষ করেই আসছে এখন। হাত ঘড়ির ছোট্ট ডায়ালে সময় দেখে। একটা কুড়ি। পায়ে পায়ে স্কুলের দিকে আগায়। খিদে লেগেছে অনেক আগে। সে আবার রাস্তা-ঘাটের কি হোটেলের খাবার খেতে পারে না। এই নিয়ে রশিদের ও কত অনুযোগ। ফারাহকে নিয়ে সে বাইরে কোথায়ও গেলে, তাঁকে একা-ই খেতে হয়। নিশ্চুপ ফারাহ প্রিয় মানুষটার একাকি খাওয়া দেখে কষ্ট পায়। তীব্র মমতা নিয়ে দেখে। কিন্তু রশিদ কেন জানি বিব্রত বোধ করে।
আচ্ছা, রশিদ কি ভাবে- ইচ্ছে করেই ফারাহ এমনটি করে?
ভাবনার জগতে এতটা-ই বুঁদ হয়ে আছে যে, একেবারে সামনে থেকে একটা অটোরিক্সা তীব্র আওয়াজে বেল বাজায়। চমকে উঠে দিশে হারিয়ে ফেলে ফারাহ। অটো রিক্সাটি প্রাণপনে চেষ্টা করেও তাল সামলাতে পারে না। এক পাশের চাকার আঘাতে ফারাহ গলির মোড়ের চা;র দোকানের সামনে পড়ে যায়। একটা আতংক, ভয় আর ব্যথার সম্মিলিত ভজঘট অনুভবের ভিতরে সবকিছু ফারাহর কাছে ধোঁয়াশা লাগে। রিক্সাওয়ালা রিক্সা উলটে রাস্তার অন্য পাশে পড়ে আছে। চা’র দোকানদার নিজের জায়গায় বসে বসে সব দেখে। এইটুকু সময়ের ভিতরে ফারাহ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সেখানে বিকৃত আনন্দের ঝিলিক দেখতে পায়। স্যাডিস্ট ব্যাটা নিশ্চয়-ই। পথচারি দু’একজন রিক্সাওয়ালাকে বকা এবং গালিগালাজ দিতে থাকে। তবে রাস্তায় পড়ে থাকা ওদের দু’জনকে একটু সাহায্য করতে কেউ-ই এগিয়ে আসে না।
– নিন, আমার হাতটি ধরুন। উঠুন।
বক্তার কথায় উপরের দিকে চোখ তুলে তাকায় ফারাহ। এক সুদর্শণ হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে। বাম হাতে তখনো তাঁর জ্বলন্ত সিগ্রেট। ডান হাত বাড়িয়ে রেখেছেন ওর জন্য। ফারাহর দৃষ্টি বাম হাতের সিগ্রেটের উপর দিয়ে ঘুরে আসতেই বক্তা একটু লজ্জা পায়। আলগোছে জ্বলন্ত সিগ্রেট হাত থেকে রাস্তায় পড়ে । পায়ের পাতার চাপে ক্যানসার স্টিকটিকে পিচের সাথে মিশিয়ে দিয়ে তিনি বলেন,
-স্যরি ম্যাডাম। উঠুন।
শিহাব নামের এই ভদ্রলোকের হাত ধরে ফারাহ উঠে দাঁড়ায়। উঠতে গিয়ে ডান পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভব করে। শিহাবের ধরে থাকা হাতে ধীরে ধীরে চাপ বাড়ে। একটু অবাক হলেও শিহাব বুঝতে পারে মহিলা বেশ ব্যথা পেয়েছেন। সে চা’র দোকানের বেঞ্চটির কাছে নিয়ে যায় ফারাহকে। একটু আগে তাঁর স্বামী রশিদ যেখানে বসেছিলেন, সেখানে বসে ফারাহ। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে শিহাবের দিকে তাকায়। মনে ভাবে এইটুকু সাহায্য না পেলে হয়ত রাস্তা থেকে সে উঠতেই পারত না। চকিতে অন্য একটা ভাবনায় কেন জানি ভিতরের ফারাহ লাল হয়ে উঠে।
স্কুলে যাওয়া-আসার চলার পথে শিহাব নামের এই মানুষটির সাথে দেখা হলেও এভাবে কখনো কথা-বার্তা হয়নি ওর। শিহাব ও কখনো চোখে চোখ পড়লে চোখ নামিয়ে নিজের মনে চলে গেছে। অন্য পুরুষদের মত না সে। আজ হাত বাড়িয়ে দেয়া এবং এরপর ফারাহর সেই হাত শক্ত করে ধরায়, লোকটির ভিতরের এতটুকুও উষ্ণতর কাঁপন অনুভব করেনি সে। অন্য কেউ হলে এমন সুযোগে অন্তত নারীর পেলব ছোঁয়ার সামান্য আমেজটুকু ও উপভোগ করতে ছাড়ত না।
একটা খালি রিক্সা ফারাহর বাসার দিকেই যাচ্ছে। শিহাব রিক্সাটিকে থামায়। নীরবে ফারাহর পানে চায়। কিছু বলতে হয় না। সামান্য এইটুকু বিশ্রামে নারী দেহ তাঁর ভিতরের সহিষ্ণুতার রিজার্ভ ফাণ্ড থেকে শক্তি ধার করেছে। এবার আর সাহায্যের প্রয়োজন হয় না ফারাহর। রিক্সায় ওঠার কষ্টটুকু সহ্য করে সে মনের দাঁত চেপে। মুখে ম্লান হাসিটুকু তবু লেগে থাকে। এভাবেই আমাদের নারীরা প্রতিটি পদে পদে পুরুষদেরকে নিজের কষ্টগুলি বুঝতে দেয় না। কষ্ট-ই যদি সহ্য করতে না পারবে, তবে ঈশ্বর নারীকে ‘মা’ বানাতেন না!
রিক্সায় উঠে ফারাহ আর একবার শিহাবের দিকে তাকায়। চোখের তারার আলোয় সে সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন পুরুষটিকে বিদায় জানায়। হাসে শিহাব। রিক্সাওয়ালা রিক্সার হুড ফেলতে চাইলে ফারাহ নিষেধ করে। থাক না অন্তত এইটুকু পথ উন্মুক্ত। এ দেশে নারীকে সবসময় ঘেরাটোপের ভিতর রেখে দেবার যে প্রবণতা আমাদের অণূতে অণুতে মিশে রয়েছে, আজ কেন জানি সেটার বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদমূখর অনুভবের সামান্য ঝলক,ওর এই হুড খোলা রাখতে চাওয়ার ভিতরে প্রকাশ পায়।
শিহাব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে ফারাহর চলে যাওয়া। বাতাসে ওর চুল উড়ে। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজের দিকে তাকায় শিহাব। কি দেখে? পর নারীর শরীরের সাথে সামান্য স্পর্শে ওর ভিতরের কালো সাপ ঠিক কতটুকু জেগে উঠেছে, সেটাও অনুভব করে কি?
৩.
চাঁদেরকণায় ছুঁয়ে থাকা রাতের প্রহরগুলিতে শরীরের সাথে শরীরের মাখামাখি, আদিম হিংস্রতায় জমাট বাঁধা বুনো শিল্পকলায় মেতে ওঠা এক জোড়া নরনারী। ছায়ার উপর থেকে কায়া বার বার স্থান পরিবর্তন করে নিজেদেরকে নিজেদের মতো ফিরে পেতে। নিজেকে ফিরে পাওয়া যায় কি?
যায় না বলেই হয়তো ফিরে যাই আমি শিহাব ফারাহ’র কাছে। ওকে একান্ত কাছে পাবার সময়গুলিতে কেমন এক অপরাধবোধ জাগে মনে, ‘আমাদের সম্পর্কটাকে কিভাবে দেখবো? একি ভালোবাসা নাকি প্রেম- কীভাবে ব্যাখ্যা করবো?’ সেদিন রাস্তায় পড়ে যাওয়া ফারাহকে হাত ধরে তুলতে গিয়েই মনের ভিতরের সুপ্ত আগুনে পুড়ে গিয়ে যে সম্পর্কের সূচনা, এরপর অনেকগুলি রাত, নিঃসংগ বিকাল এবং বিষণ্ন দুপুরে আমরা মনকে দূরে ঠেলে শরীরে জড়িয়ে গেলাম ধীরে ধীরে! নিজেরা নিজেদের শরীরকে ওলটপালট করে খুঁজেছি উদভ্রান্তের মতো; কিন্তু কি খুঁজতে চাই আদৌ সেটা ভাবিনি একটুও।
একি ভালোলাগা? ভালোবাসা? নাকি প্রেম!
ভালোবাসা হলো মনের মিলন। বাবা-মেয়ে, ছেলে-মা কিংবা বাবা-ছেলে কিংবা মেয়ে-মা একে অন্যকে ভালোবাসে। এখানে ভালোবাসা হলো এদের ভিতরের মন ও আত্মার সম্পর্ক। যেখানে দেহের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু প্রেম হলো ভালোবাসা সহ শারিরীক এবং জৈবিক সম্পৃক্ততা।
ফারাহ’র চোখের নীল জোছনা, ওর বুকের উপত্যকার আতরের ঘ্রাণ, আমাকে ক্ষণে ক্ষণে প্রলুব্ধ করেই চলে। আমার রাতের প্রহরগুলি এখন চাঁদের কণায় ছুঁয়ে যাওয়া। আমরা প্রেম করি… ভালোবাসি না… ফিরেও আসি না।
হায় প্রেম!
অসাধারণ সব অণুগল্প উপহার দিয়ে চলেছেন মি. মামুন। পাঁচ তারকা উপহার।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার অণুপ্রেরণা আমার লেখার পাথেয়।

জীবন ঘেঁষা লেখা গুলো সরাসরি পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। শুভেচ্ছা গল্প দা।
সময় নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ রিয়াদি'।
শুভেচ্ছা আপনার জন্যও নিরন্তর।
লিখাটি পড়ে নিয়েছি মহ. আল মামুন ভাই। ভালো হয়েছে।
লিখাটি পড়ে আপনার সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার শুভেচ্ছা রইলো কবিদা'!
ধন্যবাদ।

* হৃদয় ছোঁয়া অনুগল্প…
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
শুভেচ্ছা।