যাও_সুখের_সন্ধানে_ধাও_মামুনের_অণুগল্প

পশ্চিম আকাশ লাল। আবির ছড়ানো আয়তাকার কোমল ‘দৃষ্টিসুখপ্রদ’ ডিসপ্লে’ (Display)। নির্ণিমেশ সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়, এরকম এক সময়ে বিশাল ‘সেন্ট্রাল ফিল্ডের’ এক টুকরা সবুজে বসে আছে সে। একা। কথা বলছে। একার সাথে একা।

প্রকৃতির এই সময়ের ‘কালার কম্বিনেশন’টা কেমন ‘হ্যালুসিনেটেড’! শিহাবকেও উদ্ভ্রান্ত করছে। ড্রাগস বা উত্তেজক কিছু গ্রহন করলে এই ‘উন্মাদনা’ আসে সাধারণত। তবে এই মুহুর্তে ড্রাগ বা মাদক ছাড়াই শিহাবের ‘চিন্তা জট’ পাকিয়েছে।

নির্বাচন। এবারে বেশ আমেজ আছে। উৎসবমূখর। অনুভব করা যায়। শিহাব অনুভব করে। ইদানিং যা দেখে, অনুভবের পথ ধরে সেটা সামনে এসে দাঁড়ায়। চলে অনুভবের ভাংগাচুরা। এভাবেই অনুভূতি রুপ লাভ করে।

অনুভবের ভাংগাচুরা কিভাবে ঘটে? এটা ‘ভিশন’ (Vision) এর সাথে সম্পৃক্ত। বাইরের এবং ভিতরের চোখ দিয়ে একইসাথে দেখবার সময় চলে বিশ্লেষণ। এটাই ভাংগাচুরা।

শিহাবের বসবাসের এলাকায় নানা বর্ণ-পেশার, ভিন্ন মানসিকতার, ইটপাথরের নগরজীবনে অভ্যস্ত এবং অনভ্যস্ত মানুষ। এখানে সবাই সবাইকে অন্তত দেখে। কিন্তু কতটুকু অনুভব করে সেটা কে ভাবে?

নির্বাচনকে ঘিরে এই মানুষগুলি কে কিভাবে কি ভাবে? অবাক হয় শিহাব যখন দেখে, এদের ভিতর অনেকেই গিরগিটির মত রঙ বদলায়। নিজেকে মুহুর্তেই অপর মেরুতে দাঁড় করানোয় বেশ ‘উস্তাদ’। তবে ভয়াবহ ব্যাপারটি হলো, নিজের ন্যুণতম নৈতিকতার ধার না ধারা এই মানুষগুলির লাজশরমেরও বালাই নেই। নির্বিকার মুখ দেখিয়ে যাচ্ছে। নেই কোনো দৃশ্যমান মুখোশও। তবে তাদের অদৃশ্য মুখোশগুলি ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। ফ্যাশন সচেতন মুখোশসমৃদ্ধ মানবকূল।

শিহাব দেখতে পেলো, মনোনয়ন ঘোষণার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত উত্তর মেরুতে অবস্থানরত সমর্থকদের অনেকেই, ঘোষণা পরবর্তী সময়েই দক্ষিণ মেরুতে দাঁড়িয়ে হাসছে। নির্লজ্জ। লজ্জাও লাগে না। পল্টিপ্রবণ মন বলে কথা। আর এতদিন যার চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করেছে, মুহুর্তেই সেই লোক ফেরেশতা হয়ে যায় এদের কাছে! চাটুকারিতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন কেউ এদের কাছ থেকে শিখতে পারবে।

ভাবছিলো মানুষের পল্টি দেয়ার প্রবণতা নিয়ে। অন্যভাবে বললে একে ‘ডিগবাজী খাওয়া’ কিংবা নিজের মতের উপর অটল না থাকা- মোটকথা নীতির পরিবর্তন করা। আমাদের ভিতরের অস্থিরতার কারণে এই নীতি মুহুর্তে মুহুর্তে পালটে যায়। যদিও প্রকৃতিগত ভাবেই মানুষ অস্থির, তবে এর ভিতরেও অনেক সুস্থিরতা থাকে। নাহলে মানুষ হওয়া যায় না।

এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই রাজনীতির চর্চাটা বেশী হচ্ছে। দল মনোনয়ন দেবার আগেই, ফেসবুকে মনোনয়নের খবর এসে যায়। আর অধিক উৎসাহী কিছু গণমাধ্যম তা ফলাও করে প্রচার করে। শেষে দেখা যায়, দল ভিন্ন আরেকজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। কারও কথার সাথেই কারও ন্যুণতম মিল নেই। সমাজটা চলছে যেন হাওয়ার উপরে।

মুখোশধারী মানুষের এসব কর্মকান্ড দেখে দেখে, সম্পূর্ণ উলংগ হয়ে মহাখালি রেল লাইন ধরে শিহাবের মাঝে মাঝে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে। অসভ্য এক সমাজে পোষাক পরার কোনো প্রয়োজন নেই। অধিকাংশই পশুমানব হয়ে জীবন পার করছে।

তবে এভাবে হেঁটে যেতেও সমস্যা। পোষাক পরিহিত পশুমানবদের একদল, উলংগ শিহাবকে দেখে হয় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকবে। নাহয় হাসবে, টিটকারি মারবে এবং এক পর্যায়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ভুলে যাবে। তবে শিহাবের পরিবর্তে বিনা কাপড়ে ওর জায়গায় কোনো নারী হেঁটে গেলে? আগ্রহের আর কমতি থাকবে না।

বং উপত্যকায় নির্লিপ্ত থাকার অভিনয়ে পারদর্শী একদল কামুক যান্ত্রিক পশুমানব, তাদের মন ও মননে বেঈমানী, চাটার স্বভাব, পল্টিবাজী ইত্যকার বদগুনে সমৃদ্ধ হয়ে নেতৃত্বের আসনে বসার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। আর নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে চলে এদের প্রতিস্থাপন পর্ব। সেখানে ভিতরের মানুষগুলির কদর্যতা একই থাকলেও, বাইরের পোষাক এবং প্রতীকের ভিন্নতায় আমজনতা তৃপ্তি লাভ করে।

এই উপত্যকায় বড্ড আবেগের ছড়াছড়ি। এখানে আবেগে মেখে মেখে, নির্দিষ্ট মেয়াদী মারা খেতে খেতে নাভিঃশ্বাস ওঠে আমজনতার। তারপরও খুব খুশী তারা। নেতা ছাড়া চলে না তাদের। লৌহমানবের লৌহদন্ড ছাড়া সুখ নাই বোধহয়। তাই তারা সুখের সন্ধানে ধায়।

সুখ পায়?

__________________________________
#যাও_সুখের_সন্ধানে_ধাও_মামুনের_অণুগল্প_৫০৫

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

6 thoughts on “যাও_সুখের_সন্ধানে_ধাও_মামুনের_অণুগল্প

  1. গল্প নায়ক শিহাব এর অনুভব আর অনুভূতি অথবা দৃষ্টিভঙ্গী আমার কাছে বরাবরই আমার নিজস্বতার কাছাকাছি মনে হয়। মিলিয়ে দেখা চেষ্টা করি।

    গল্পটি উহার দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ মি. মামুন। শুভ সন্ধ্যা।

    1. শিহাব জেনে খুশী হবে যে আপনার দৃষ্টিভংগীর সাথে তার মিল রয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভেচ্ছা…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  2. অনেকটাই পরিপাটি এবং সমকালীন চেতনায় অসাধারণ অণুগল্প।
    শুভেচ্ছা মহ. আল মামুন ভাই। নিরন্তর লিখুন।  

    1. জি দিদি। আমাদের দেশে এটা এক একঘেয়েমি জীবন যা আমরা যাপন করে চলেছি। কোনো পরিবর্তন নাই।

      ধন্যবাদ আপনাকে।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।