পেতিইন্যি_বন্ধু_আমার_মামুনের_অণুগল্প

আমার এক পেতিন্যি বন্ধু ছিলো!

চাটগাঁর বন্ধুরা!
শব্দটা পরিচিত না?
তবে বন্ধুর ‘অরিজিন’ চাটগাঁয়ের না। দেশের অন্য আরেক জেলায়। মায়ের দিক থেকে খুলনায় তাঁর জন্ম বসবাস.. শেষ ও।

ভদ্দরলোকদেরকে সে পেতিন্যি বলতো। শেষে বন্ধুমহলে এই নামই হয়ে গেলো ওর। আসল নামটা জানার প্রয়োজন দেখি না।

আমার নেংটা কালের বন্ধু। একই খালের কাদা পানিতে উলংগ হয়ে ঝাঁপিয়েছি কতো! শ্মশানঘাটেও শক্তি অর্জনে ন্যাংটো হয়ে ঘুরেছিলাম। কয়েকরাত। দু’জনেই।

এমন পেতিন্যি বন্ধু আমার। আমায় বড্ড ভালোবাসতো! আমিও বাসতাম অনেক! তবে ওরা বড্ড গরীব ছিলো। আর বন্ধুর ছিল ভদ্দরলোকদের প্রতি প্রচন্ড রাগ। ঘৃণা। শিরায় শিরায়। প্রতিটি কোষের অণুতে অণুতে।

ভদ্দররলোকেরা ওর বোনকে ‘রেপ’ করেছিলো।গোয়ালের গরুর গলার রশি তার সেই বোনটির বুকের জ্বালা মিটিয়েছিলো। বড় আদরের বোন ছিলো ওর। সেদিনই চোখের জল সব শুকালো বন্ধুর। সেই দিনই সে নিজের ভেতর থেকে বের হয়ে এলো। মানুষের ভিতরে আর এক মানুষ। অন্য মানুষ!

এখন মাঝে মধ্যে ভাবি, সেই অন্য মানুষ হবার সময়টায় আমার কাছে কি বন্ধুকে অপরিচিত লেগেছিলো একটুও?

প্যান্টের জিপার খুলে রাখতো সে ভদ্দরলোকদের দেখলে। এমনই তীব্র ছিলো। বন্ধু আমার।

চরমপন্থী দলগুলোর একটির আঞ্চলিক কমান্ডার হয়েছিলো সে। শুনেছিলাম পরে। পড়ালেখায় ভীষণ ব্যস্ত আমি তখন, হয়নি সময় এক জেলে পরিবারের ভূমি থেকে উচ্ছেদের খবর জানার। কেউ বলেও নাই আমায়। আমি তখন চারশো’ কিলোমিটার দূরের আরেক শহরে। এক অবাক হৃদয় নিয়ে নিজের জীবনে বড্ড ব্যস্ত।

বন্ধু গলা কাটছে। ভেতরের পুঞ্জীভূত ক্রোধ ঘৃণার আগুনে আরো কালো হয়েছে তাঁর। মিটছে জিঘাংসা। হাতে কচকচে কালো টাকা। অত্যাধুনিক অস্ত্র। দ্রুতগামী বাহন। বাহিনী। রোমাঞ্চকর জীবন!

আসলেই কি?

বন্ধুকে আমার চেয়ে কে বেশী জানতো? ও কি চাইতো কিংবা চাইতে পারতো আমি জানতাম। আমি আমার পেতিন্যি বন্ধুকে জেনেছিলাম। সব রুপেই তাকে চিনতে পেরেছিলাম। বন্ধু আমার এটা জেনে যেতে পারলো না।

এক পরিত্যক্ত জুট মিলের ভেতর আমার বন্ধুকে টুকরা করা হয়েছিলো। বস্তাবন্দী লাশ কালের অতলে হারিয়েছে শেষে। অন্য একটি দল একাজ করেছিলো। এমনই হয়। এই পথ ভালো না। ছিলো না। কখনও ভালো হয়ও না।

আমার পেতিন্যি বন্ধু ভদ্রলোকদের ঘৃণা করলেও, আমায় বড্ড ভালোবাসতো!

আমি ভদ্দরলোক নই বলে?

ভদ্দরলোক কখনও ছিলামও না আমি… এখনও নই।।

#পেতিইন্যি_বন্ধু_আমার_মামুনের_অণুগল্প

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

8 thoughts on “পেতিইন্যি_বন্ধু_আমার_মামুনের_অণুগল্প

  1. সরল আপনার লেখা। পড়তে ভাল লাগে গল্প দা। আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. দারুণ অনুগল্প পড়লাম মহ. আল মামুন ভাই। শুভেচ্ছা রাখি আপনার জন্য। 

  3. সবসময় আপনার লিখায় আমার মুগ্ধতা থাকে মি. মামুন। গুড জব। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।