মামুনের অণুগল্পঃ শেষ পাতা

মামুনের অণুগল্পঃ শেষ পাতা

প্রচণ্ড শীত। উত্তুরে বাতাস কিছুক্ষণ পর পর দিকভ্রান্ত হয়ে চারদিক থেকে হীমেল পরশ নিয়ে সেনাবাহিনীর মত জনজীবনে ঝাপিয়ে পড়ছে। কাঁপতে কাঁপতে আমান নিজের মেসে ঢুকে। এতো উপরে বাতাসের আক্রমন হাড়েও কাঁপন ধরিয়ে দেয়।

মনের ভেতরটা বাইরের শীতল পরিবেশ থেকে আরো হীম হয়ে আছে। মাটি ছেড়ে কংক্রিট জীবনে অভ্যস্ত হয়েও মায়ের দিকে, নাড়ির দিকে একটা আকর্ষণ সব সময়ে অনুভব করে সে। তাই না পেয়েছে নগর না পেয়েছে মাটি। এক দোআঁশলা জীবনের অধিকারী হয়েছে। জীবন নদীর শীর্ণ দু’কূল!

জীবনে মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকাও একটা আশা। আবার আশায় আশায় বাঁচা। দুইয়ে পার্থক্য কতটুকু?

জীবনের নদীটি শীর্ণ হলেও কিছুটা প্রবাহ এখনো রয়েছে। নইলে জীবন থেমে যেত- মানুষ বেঁচেই না থাকলে সুখ-দু:খ অনুভব করবে কিভাবে? তাই জীবন নদীর এক পাড়ে আমান..অন্য পাড়ে না পাওয়া জীবনের হাতছানি।

এপারে বসে আমান হৃদয়ের খেরো খাতা থেকে আশার লিস্টের পাতাগুলি একে একে ছুড়ে ফেলে.. উড়ে উড়ে আশা জলে পড়ে.. ক্ষীণ প্রবাহ ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। এক একটি আশার মৃত্যু জীবন নদীতে জোয়ার এনে দেয়.. জীবনের বিস্তার ঘটে।

সব পাতাগুলি উড়ে যেতে যেতে একটি পাতা অবশিষ্ট থেকে যায়। একে কোনোভাবেই ছেড়া যায় না। নাকি আমান ছিড়তে চায় না? তাই জীবন নদীতে পুর্ণ জোয়ার আসে না। ওপারে যাওয়াও হয় না।

– কি হবে ওপারে গিয়ে? ওখানে কি পারু থাকে?

সেই একটি পাতায় কি রয়েছে আমান তা কখনো কাউকে বলে না! কিন্তু পৃথিবীর একজন বাদে আর সবাই কিভাবে যেন তা জেনে যায়।

শুধু পারু জানে না!

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

6 thoughts on “মামুনের অণুগল্পঃ শেষ পাতা

  1. 'জীবনে মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকাও একটা আশা। আবার আশায় আশায় বাঁচা। দুইয়ে পার্থক্য কতটুকু !!' ___ বস্তুত আমার কাছে তেমন পার্থক্য মনে হয় না।

    শুভ সকাল মি. মামুন।

  2. খানিক বিরতির পর আপনার গল্প পড়লাম মহ. আল মামুন ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

    1. ধন্যবাদ প্রিয় কবিদা'। আপনার অনুভূতি জেনে ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা…https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. অণুগল্পটি পড়ে আপনার অনুভূতি রেখে যাবার শুভেচ্ছা রইলো রিয়া দিদি। ভালো থাকুন সবসময়।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।