কিছু কিছু গল্প আছে, যা বছর ঘুরে বার বার সামনে এলেও পড়তে বিরক্তি আনে না। কয়েক বছর আগের আমার লেখা এই পুরনো গল্পটিও তেমনই একটি… আবার শেয়ার করলাম।
_____________
ছাব্বিশ বছর!
অনেক সময় তাই না? দুই লক্ষ সাতাশ হাজার সাতশত ষাট ঘন্টা! অসহ্য অলস আবেশে কেটেই গেলো।
ছাব্বিশ বছর আগে তাঁর মনে হতো, সেই মেয়েটির সাথে তার সম্পর্ক ছিলো। ভালোবাসা ছিলো কিনা কখনো মনকে সেভাবে জিজ্ঞেস করা হয়নি। কি মন, ছিলো কি?
মন কোনো উত্তর দেয় না। বরাবরের মতো নিশ্চুপ থাকে। হ্যা! তখন সে মেয়ে-ই ছিলো। বালিকা বয়স থেকে ভালোলাগতো ওকে তাঁর। সে কি জানতো?
হ্যা, ঠিক ধরেছেন- বালিকার জানার ব্যাপারে বলছেন তিনি। আজো জানো হলো না তাঁর।
সময় ঘুরে ঘুরে, অনেক অসময় আর দু:সময়ের পিঠে চড়ে বর্তমান সময়ে এসে হাজির হয়। জিন্স পরতে বলেছিলো মেয়েটি তাকে ‘ম্যানলি’ লাগবে বলে। এমনই আনুষঙ্গিক আরো অনেক টুকরো টুকরো মেয়েটির চাহিদায় (নির্দেশই ভাবতেন তখন তিনি ওগুলো) তাকে চলনসই মেয়ে বলেই মনে হতো তখন। ‘আপটুডেট’ বললে কি একটু শ্রুতিমধুর হয়? এই ভাষাটির প্রতি আমাদের অনেকেরই কেন জানি ঈর্ষণীয় আনুগত্য রয়েছে
নিজের জনক চলে গেলেন। অনেকেই এলো মাকে দেখতে, দু:খ শেয়ার করতে। অপ্রত্যাশিত ভাবে সেই মেয়েটিও এসে আচমকা সামনে দাঁড়ালো! সময় ইতোমধ্যে সেই একদার বালিকাকে মেয়েলি অপভ্রংশ স্তরের ভিতর দিয়ে নিয়ে, মহিলায় রুপান্তরিত করে ফেলেছে! এখন সে একজন সম্পুর্ণ মহিলা। পূর্ণ রমনী হতে পেরেছে কি? রমনীয় তো ছিলোই সে।
নাহ! ওভাবে ভাবনাটা এলো না তাঁর নিজের বাড়িতে বসে। এক মুখ দাড়ি গোঁফের জঙ্গলাবৃত তিনি মায়ের পাশে বসে আছেন। দরোজা দিয়ে কালো নেকাবে মুখ আবৃতা সে শ্রেফ চোখ দু’টি দৃশ্যমান রেখে, জীবনের এই প্লাবন পর্বে আবারো একবার প্রবেশ করলো! এক পলক সেই চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি উঠে গেলেন অন্যরুমে। চার চোখের মিলন হলো কি হলো না ঠিক অনুভবে এলোনা তাঁর।
মিষ্টি এক সময়ের ঘ্রাণে ভেসে ভেসে, স্বপ্ন প্রহরগুলি মনের চারপাশে দৃষ্টিকটু নির্লজ্জতায় উঁকি দিতে শুরু করলো
এখন প্লাবন প্রহর! বড্ড দু:সময়। তাই মনকে কঠোরভাবে দমিয়ে রাখতে চাইলেন তিনি।
ভ্যাপসা মধ্য ভাদ্রের অসহ্য গরম আরো তেজোদীপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে.. গলার কাছে কিছু একটা আটকে আসতে থাকে.. দমবদ্ধ এক তীক্ষ্ণানুভূতিতে আচ্ছন্ন হৃদয়, তীব্র সাইনাস পেইনে খাবি খেতে থাকে। অসহ্য অলস আবেশে সহস্র ধারালো তরবারির আঘাত হৃদয়কে ফালা ফালা করে চলে।
রাস্তা ধরে প্রিয় অনুজকে সাথে নিয়ে, নি:শব্দে পিচের পথ ধরে হাঁটতে থাকেন তিনি। বিরক্ত বিবর্ণ বিস্মিত সময় বিরহে কাঁপতে থাকে। সময়ের ঘ্রান প্রথম প্রেমের মৌময় আবেশে আচ্ছন্ন করতেই, নিজের বউয়ের কথা মনে পড়ে! মোবাইলের দ্বারস্থ হয়ে বউকে কাছে টানার কি এক প্রবল আবেশে ভেসে যান। আসলেই কি এভাবে ভাসা যায়? মনের ভিতর-বাহির তন্ন তন্ন করে খুঁজলে হয়তো উত্তর পাওয়া যেতো। কিন্তু বিহ্বল তিনি উত্তর খুঁজতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না।
মায়ের পাশে পরিবর্তিত সময়ের সেই মহিলা যখন নিজের ঘ্রাণে সময়কে আপ্লুত করে চলেছিলো, তিনি তখন তাঁর নিজের শরীর ছাপিয়ে, মনের অনেক দূর দূর পর্যন্ত নিজের বউয়ের শরীরের পরিচিত ঘ্রাণ খুঁজে ফিরছিলেন!
– কেন এমন করছো?
গহীন মনের পরিচিত কণ্ঠের এমনতর বিব্রতকর প্রশ্নে ব্যথিত হয়ে একটু রাগান্বিত হন তিনি।
– কেনো করছি বুঝিস না?
মনকে ধমক মারার অপপ্রয়াস কি নিজের থেকে পালানোর চেষ্টা?
তীব্র ইলেক্ট্রিক ব্লু ফ্রেমে ছাব্বিশটি বছর আগের সময়ের এক ফ্রেমবদ্ধ জীবন্ত তৈলচিত্র, আজ কালো নেকাবে আবৃতা মহিলার দৃশ্যমান দুটি চোখ! শুধুই চোখ? পলকের তরে থমকে থাকা দৃষ্টিতে শত সহস্র অ-অনুভবেয় সময় কি ছিলো না? যা চিৎকার করে করে বলছিলো.. ‘কেনো থাকলে না.. কেনো থাকলে না আমার হয়ে?’
ম্লান হাসেন তিনি
– একটু বেশী ভাবা শুরু করেছিস নাকি আজকাল!
মনও ম্লান হেসে ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর দেয়। শেষে জানতে চায়,
– বেশী ভাববার মতো কিছুই কি ঘটেনি? চারিদিকে কি হৃদয় পোড়া ঘ্রাণ পাওনা?
– নাহ! হৃদয়ের পুনর্গঠন চলছে.. আমার বউময় জীবনে কোনো পোড়া ঘ্রাণের স্থান নেই। সব তোর কল্পনা। আমার দেহমন জুড়ে এখন কেবলি আমার বউ আর ওর ঘ্রাণ..! অফ যাও।
এক পড়ন্ত বিকেলে নিজের অনুজের পাশাপাশি হেঁটে চলেন তিনি… নিজের মনের ভিতর-বাহির তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেরেন.. কিন্তু কি যে খুঁজেন, তিনি আর মন, কেউই বুঝে ওঠে না!
কোথায় যেনো চিনচিনে ব্যথা.. নি:সীম নিঃসঙ্গতায় তীব্রতর কষ্টের প্রক্ষেপণে ক্রমশ: বেড়েই চলে…।।
সময় ঘুরে ঘুরে, অনেক অসময় আর দু:সময়ের পিঠে চড়ে বর্তমান সময়ে এসে হাজির হয়। এরই নাম জীবন মি. মামুন। চলতে দিন যেভাবে চলতে চায়। শুভ দিন।
জি ভাইয়া, এরই নাম জীবন। হ্যা! আমি নিজেকে জীবনের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক ভালো থাকুন।

জীবন মানে কোনও-না-কোনও এক জীবন্ত কাহি!! এরই নাম জীব!
ভালো লিখেছেন শ্রদ্ধেয় লেখক। শুভেচ্ছা জানবেন।
সময় নিয়ে গল্পটি পড়ে আপনার অনুভূতি রেখেন, অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনাকে। ভালো থাকুন সবসময়।

পুনরায় পড়লাম প্রিয় গল্পকার মহ. আল মামুন ভাই। ভালোবাসা।
আবারও সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা প্রিয় কবিদা'। শুভেচ্ছা..

মাঝেমাঝে পুরানো লেখা শেয়ার করলে মন ভাল থাকে প্রিয় গল্প দা।
লিখতেই পারি না এখন আর দিদি। তাই পুরনো লেখা পোষ্ট করে শব্দদের আবার কাছে ডাকার চেষ্টা করছি। ধন্যবাদ দিদি।

মন্তব্য করা হয়না হয়তো তারপরও জানবেন আপনার লিখা অফলাইনে থাকলেও পড়ি। শুভেচ্ছা মামুন ভাই।
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই। সাথে থাকার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো।
