দুইটি অণুগল্প

এক.
বারো ঘন্টা কঠিন ডিউটি করে কাপড় পাল্টানোর মেলে না অবকাশ। ম্যাসেঞ্জারে মৃদু আওয়াজ। আমান ডিভাইস হাতে নেয়। সদ্য বন্ধু হওয়া এক নারীর মুখ ডিসপ্লেতে গোলাকার।

আয়নায় বিস্মৃত বন্ধুর মুখ? স্মৃতির প্ল্যাটফর্মে ঘুরে আসা ..পলকেই! নাহ! এই মুখ কষ্ট দেয়নি আগে।

অচেনা নারী শুধায় কালো অক্ষরে আলো জ্বেলে,
– কেমন আছ?

পরিচিত কোনো টোন কি ছুঁয়ে যেতে চায় আমানকে?
নাহ! এই টোন আগে কখনো কষ্ট দেয়নি আমানকে।
নির্জলা সত্যি বের হয় আমানের বুক চিরে,
– খুব খারাপ আছি। তুমি কে?

ওপাশে নীরব নারী।
জানার তীব্রতা মানুষেরই থাকে। একজন নামানুষ হয়েও এই আকাংখাটা আমানেরও বড্ড তীব্র। তাই কি ব্যাকুল হওয়া?
– বললে না, কে তুমি?
– বললাম তো ফেসবুক বন্ধু।

সরব হয় নারী।

– তা তো জানি। তুমি দেখতে নারীর মতো- বলছ বন্ধু। আসলেই কি তুমি তাই? তুমি কি নারীর আদলে সত্যিই নারী?
– হ্যা!
– শুনে খুশী হলাম। বন্ধু বুঝে আসে? না এমনিতেই বলছ ‘বন্ধু’?
– বুঝিনি তোমার কথা। কি করছ এখন?
– এক অচেনা নারী যে বলছে বন্ধু, কিন্তু বন্ধু তার বুঝে আসে না, তাকে নিয়ে অণুগল্প লিখছি। বলতো, নারী বন্ধু হতে পারে? না বন্ধু কখনো নারী হয়?
– বুঝি না আমি।
– হ্যা! এটা সত্য বলেছ। কখনোই বুঝ নি তুমি! বুঝলেও বুঝার মাঝে কিছু বাকি রয়ে যায় তোমার। নও রহস্যময়ী তবু ভান কর যেন রহস্যময়ী। তোমার কোন কোন রহস্যটা বুঝতে বাকি রয়েছে, বলতো আমায়?

ওপাশে শ্মশান নীরবতায় অচেনা নারীর নীরব প্রস্থান। আমান কি ব্যথিত হয়?
নাহ! ব্যথাগুলি তো সেই কবে পারুকে খুঁজতে চলে গেছে.. পারুর পিছুপিছু। ফিরেনি আজো।
তাই ব্যথা নাই।
বোধ নাই.. কিছুই নেই এখন আর।।

#নারী_রহস্যময়ী_মামুনের_অণুগল্প
______________________

দুই.
কাছে ঘেষত না সে, সব সময় শিহাবের থেকে দূরে দূরে। বিষাক্ত প্রাণীর সতর্কতা অবলম্বন করত পারু শিহাবের কাছে এলে। শিহাব যেন অমৃত বিষে পূর্ণ নীলকন্ঠ।

‘খবরদার শরীরে হাত দিবি না’
– নাহ, যা ভাবছেন তা নয়। কাছে থাকার সময়ের কথা না এটা। নিভৃতে ফোনালাপের সময়েই এই নিষেধাজ্ঞার বেড়ি।

দূরালাপনীতে পারুর সাথে কথা বলার সময়েও শিহাবকে, আরো অনেক কিছুর মত হাতের ব্যবহারেও সংযত হতে হতো। অনুভবে এক অদৃশ্য বেড়ি থেকেই যায়! নারীর পক্ষ থেকে পুরুষের প্রতি.. সবসময়।।

#বেড়ি_মামুনের_অণুগল্প

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

7 thoughts on “দুইটি অণুগল্প

  1. বরাবরের মতো সুন্দর অণুগল্প। ভালো লাগার অন্যতম কারণ প্রিয় চরিত্র শিহাব। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. অনেকদিন পর মামুন ভাইয়ের দুটি অণুগল্প এক সাথে পড়ার সুযোগ হলো। :)

  3. ফেবুতে পড়েও ভালো লেগেছিলো। শুভেচ্ছা মহ. আল মামুন ভাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।