পাশাপাশি দু’টি বিল্ডিং। ছ’তলা। নির্বিকার দাঁড়িয়ে। পথ চলতি মানুষের বিস্ময় উদ্রেককারী না হলেও, ভবন দুটির মুখ দেখতে তাদের ঘাড় ভেঙ্গে যাবার আশংকায় তারা উপর দিকে তাকায় না। নগর জীবনের ভেতর আরেক নগর যেন। গল্প সমৃদ্ধ জীবনের প্ল্যাটফর্ম।
দক্ষিণের ছ’তলার ব্যালকনিওয়ালা রুমটিতে তিনি থাকেন। একা। পাশের ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। পরিবার ভিন্ন এক শহরে থাকে। তিনি একা এই শহরে।
এখন অনেক রাত। গ্রিলের ওপারে নিচের জীবন অনেক জটিল। নিচু সামাজিক পদমর্যাদাধারীদের সাময়িক আবাসভূমি বলেই কি? উঁচুমনের উঁচুতলার মানুষেরা এই যে এদেরকে ‘নিচুতলার মানুষ’ তকমা এঁটে দিয়েছেন, দিচ্ছেন! তবে কে নিচু মনের? তিনি বিব্রত হন।
সিগ্রেট বাদ দিয়েছিলেন। এই বদ অভ্যাসটি আবার শুরু হয়েছে। তবে তা রাতের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে। চোরের মত সংলগ্ন ওপাশের ব্যালকনির দিকে তাকান। নাহ! কেউ নাই। এতো রাতে অবশ্য থাকার কথাও না কারও।
এখন রাত দেড়টা।
সামনের বিল্ডিংটির দিকে তাকান। তখুনি মেঘ সরে যায়। চাঁদের রুপালি স্রোতে ভেসে যায় চরাচর। নারী তার এলোচুলে আঁধারের আড়াল নিয়ে নিজের অতি স্বাভাবিক পরিচ্ছদে-নিজ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। নিজের ভুবনে একা। কোথায়ও হারিয়ে যাচ্ছিল আনমনে। রুপালী ঝলকে ওপাশের তিনি বেশ স্পষ্ট হতেই, নারীর মনে পড়ে তিনি আলুথালু বেশে আছেন। কিছু পরিচ্ছদ গরমে খুলে এসেছেন, রেখেছেন গোপন জায়গায়। চোখের আড়ালে। তিনি যে আলোয় প্রতিভাত সাময়িক নিঃসঙ্গ মানুষটার কাছে- ‘কাছের নারী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, নারী তা জানেন না। যেমন পুরুষ তিনি জানেন না, পাশের নারীর মনে তিনি ‘ব্যালকনির মানুষটা’ হিসেবে পরিচিত ছাপ ফেলে চলেছেন।
পাশের নারী গরম সহ্য করতে পারেন না। আর রাত বাড়তেই তিনি ক্রমশঃ যুবতী হতে থাকেন। গরম হন। তৃষ্ণা জাগে। নিজের মানুষটা তাঁর দূরের শহরে থাকে। তাই ‘ব্যালকনির মানুষটা’ ‘দুরের মানুষ হয়ে’ পাশের নারীর হৃদয় ছুঁয়ে থাকেন। অনুভবে- কল্পনায়! যেমন থাকে ব্যালকনির মানুষটার ভিন্ন এক দূরের শহরে- ‘দূরের নারী’ হয়ে তারও প্রিয় একজন! অর্ধাঙ্গিনী। ইদানিং ছায়াসংগী?
কতটা জিঘাংসা নিয়ে এই পাথর জীবন সব কাছের সম্পর্ক গুলিকে একাধারে কাছে-দূরের অনুভূতিতে আনা- নেওয়া করে চলেছে! হায়! কেউ জানতে চায়?
নাহ!
পাশের নারী এখন যুবতী। ব্যালকনির পিছনের তিনি তখন যুবক। যার যার দূরের প্রিয় মানুষ দু’জনও যুবক-যুবতী। মনে কষ্ট। শরীরে জ্বালা। সমাজ ভ্রষ্ট। এ অনুভব-শরীরের যন্ত্রণার। এক চরম নষ্ট কষ্ট। সব ভুলিয়ে দিতেই বুঝি বয়ে চলা বাতাস, পাশের নারীর দেহে পরম তৃপ্তির সুখানুভূতি এনে দিয়ে যায়। তিনি শীতল হন। ঘেমে যাওয়া তপ্ত শরীর জুড়িয়ে যায়। নিজের দেহের পরিচিত সৌরভ প্রিয় দূরের মানুষটার কথা মনে করিয়ে দেয়। মানুষটা তার দেহের এই ঘ্রাণ পছন্দ করে। রাতের গভীরে সময় গড়ায়- তপ্ততা বাড়ে- ঘ্রাণ বাতাসে মিলায়। ভালোবাসা বাড়ায়।
আজ তিনি কেন জানি বড্ড অস্থির। ভিতরে কোথাও আগুন লেগেছে। ফায়ারব্রিগেড এসেও নেভাতে পারবে না। এমন আগুন! প্রচুর বৃষ্টি দরকার। ভালোবাসার ঝিরঝিরে বর্ষণ। দূরের নারীর কথা মনে পড়ে তাঁর। কাছের নারী দূরের নারীতে পরিণত হন। এক নিষিদ্ধ লোবান!
নগর জীবনে দুটি ভিন্ন পাথরজীবন, কাছে-দূরের তীব্রানুভূতিতে বিলীন হয়ে কখন যে এক হয় নিজেরাও ওনারা জানতে পারেন না। অনুভবে একে অন্যের খোলস খুলে ভিতরের সুখগুলোকে অনুভবের চেষ্টা করেন।
সুখ তো ওখানে থাকে না।
ওরা ওখানে কেন ‘সুখের সন্ধানে’ ধায়!
সুখ কোথায়?
ভালোবাসার ঝিরঝিরে বর্ষণ। দূরের নারীর কথা মনে পড়ে তাঁর। কাছের নারী দূরের নারীতে পরিণত হন। এক নিষিদ্ধ লোবান!
সুখহীন সুখই একমাত্র ভরসা। শুভেচ্ছা আল মামুন ভাই।
অণুগল্পটি পড়লাম।
গল্পটি সুন্দর মহ. আল মামুন ভাই।
দারুণ প্রিয় গল্প দা।