জীবনে সর্বপ্রথম সৌমিত্রের আয় হয়েছিল জয়েন করার দ্বিতীয় দিনে। তখন স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। শিক্ষক-প্রভাষকগণ এক এক শ্রেণীর ইনভিজিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সৌমিত্র নিজেও সেদিন স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব নিয়েছিলো।
পরীক্ষা শেষ হলে শহরের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবার আগে হেড ক্লার্ক শরৎ বাবু ওর রুমে আসেন। এবং ত্রিশটি টাকা দিয়ে রেজিস্টারে ওর স্বাক্ষর নিয়ে নেন। কিসের টাকা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন,
– ইনভিজিলেটর হিসেবে আপনার আজকের সম্মানী, স্যার।
একটু অবাক হয়েছিল সৌমিত্র। ভালোও লাগছিল। নিজের প্রথম সলিড আয়! যদিও চট্টগ্রাম থেকে এই প্রতিষ্ঠানে সে এসেছে ঢাকাগামী বাসের ডাইরেক্ট প্যাসেঞ্জার হিসেবে। তখন ভাড়া ছিল একশত পনের টাকা। সেই ১৯৯৮ ইং সালের কথা। আবার ফিরবার পথেও একইভাবে যাওয়া। তখন অবশ্য এতো টাকা লাগে না। কারণ ফিরতি পথে পথের মাঝ থেকে সৌমিত্রকে উঠতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম আর ঢাকার মধ্যবর্তী এক সীমান্ত এলাকায়।
সেদিন বাসায় ফিরে মায়ের হাতে জীবনের প্রথম উপার্জন তুলে দিয়েছিল সৌমিত্র। মা কতটা খুশী হয়েছিলেন? তবে তাঁর ঝলমলে চেহারায় যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল সে দৃশ্য কি ভুলবার মতো? মা সেই টাকাগুলো খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন। নিজের প্রথম সন্তানের প্রথম আয় বলে কথা! হোক না পরিমাণে সেটি খুবই কম।
হঠাৎ করে নিজের মনে বেহায়া ভাবনাগুলো আরো কিছু চিন্তার উদ্রেক করায়!
– আচ্ছা চিত্রা কি এই ত্রিশ টাকা পেলে খুশী হতো?
– মা আর চিত্রা থাকাবস্থায় সে কাকে টাকাটা দিতো?
– মাকে দিলে কি চিত্রা মেনে নিতো? কিংবা চিত্রাকে দিলে মা?
উফফ! অসহ্য।
নিজের রিভলবিং চেয়ার থেকে উঠে পড়ে রুমের ভিতরে পায়চারি করে সৌমিত্র। বেহায়া ভাবনাদের ততোধিক কুচক্রীসুলভ প্রশ্নগুলো থেকে নিস্তার পেতে চায় হয়তো। কিন্তু প্রশ্নগুলোও ওর পিছু পিছু সাথে সাথে থাকে। এদেশের একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মতই বিশ্ব-বেহায়া সেগুলোও। তাই এতো সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না।
বহুদিন পর আপনার লিখার দেখা পেলাম মি. মামুন। লিখায় আমার শুভেচ্ছা রইলো।