শূণ্য বিষণ্ণ

বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে,
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে –
উদাস পথিক ভাবে।

‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে,
‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে;
পথের পথিক পথেই বসে থাকে,

গত কালের সন্ধ্যাটা আমার কিছুতেই কাটছিল না। কোন সন্ধ্যাই আমার কাটে না। প্রতিটি সন্ধ্যার গোধূলি বেলা আমার কাছে কেমন এক অজানা অক্ষরের বেদনা নিয়ে হাজির হয়। রাস্তার সোডিয়াম বাতির সাথে সাথে যখন সমস্ত বাড়ি ঘর আর বহুতল বিপনিবিতান গুলো রঙ-বেরঙের আলোয় ঝলমল করে উঠে আর শহরের কাক গুলো যখন কা কা করতে করতে দলবেঁধে ঘরে ফিরে আমার শুধু মনে হয় আমার কোথাও যাবার নেই। এতো আলো এত কথার ঝনাৎকারের মাঝে আমি দূর দিগন্তে দাঁড়িয়ে বৃক্ষ এক। কোন আড্ডা কিংবা রেস্তোঁরায় যাই না। একা একা এদিক সেদিক হেঁটে হেঁটে আর কাটছিল না সময়গুলো। কাল সন্ধ্যার পরেই তাই ট্রেনে চেপে বসলাম। সারারাত আমার একটুও ঘুম হয় নি। পাশের যাত্রীটি মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে আমার গায়ের উপর এসে পড়ছিল। সারারাত নির্ঘুম আমি যেন একটু ক্লান্ত হইনি। বরং বিশ্বাস কর, বহুদিন পর আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। আমার মত নিতান্ত নির্জীব ঘরমুখো একটা জীবের পক্ষে এ যেন এক বিরাট ঘটনা। মনে আছে একবার তুমি আমাকে বলেছিলে,’’ তুমি কি কোন দিন আমাকে দেখতে আসবে!” আমার মত উদাসীন উজবুকের পক্ষে এ যে অভাবনীয় সে তুমিও টের পেয়েছিলে। অথচ দেখ সেই উজবুকই গতকাল সারারাত না ঘুমিয়ে তোমার দেশে হাজির হয়েছে। আমরা যখন ক্লাস শেষে একসাথে বাসায় ফিরতাম তুমি অনবরত কথা বলতে। তোমার এত গল্প ছিল আর এত সুন্দর তোমার বলা আমি কেবল শুনেই যেতাম। তাছাড়া এমনিতেই কথা বলি কম। গুছিয়ে কথা বলা শিখিনি কোন দিন। তাই তোমার কথাগুলো আমার কাছে যেন পুষ্প হয়ে ফুটত।

কাল যখন আর কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না, চেপে বসেছি মেইল ট্রেনে। মনে হচ্ছিল একদিন, শুধু এক সন্ধ্যায় যদি মুখোমুখি বসি। দরকার নেই নদীর ধার, কাশবন। দিগন্ত জোড়া কোন মাঠ, বটবৃক্ষ এসবও দরকার নেই কিছুতেই। শুধু একসন্ধ্যা, মুখোমুখি কোথাও। ফুটপাত, টং দোকান, আটপৌরে যেকোন জায়গায়।

সমস্ত বন বাদাড়, ধানক্ষেত পাড়ি দিয়ে সকাল বেলা নেমে সোজা তোমার ঠিকানায়। এসে দেখি আমার প্যারাডাইস লস্ট। তুমি নেই আর আগের ঠিকানায়।

21 thoughts on “শূণ্য বিষণ্ণ

  1. একা মানুষ একাই রয়ে গেল!
    মনের আকাশে অমাবাশ্যার আধার যেমন ছিল তেমই রয়ে গেল। মেইল ট্রেন পারলানা একাকীত্ব ঘোচাতে।

    1. এই গল্পে তাই দেখা যাচ্ছে।
      একাকিত্ব ঘোচানোর একদিন, একসন্ধ্যার চাওয়াটাও পুরন হলো না।
      আসলে মানুষের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে তো ফাঁক থাকেই। সেই ফাঁক কখনো কখনো ভরে যায় বাতাসে, সে বাতাস দীর্ঘশ্বাসের।

      অনেক ধন্যবাদ প্রিয়।

      1. আর কিছু পুরষ্কার দেয়ার মত নাই, দেখেন ইনারে পছন্দ হয় নাকি! তবে ইনি আপনেরে দারুন ভাল পাইছে, ভাব দেইখাই বুঝা যায়, তাই না?

      2. @ খালিদ ভাই। যা দিনকাল পড়ছে ঘরে দু-একটা কুস্তীগির বউ থাকা খারাপ না। সমস্যা হল আমি আবার ভীতু কিসিমের ( কাউরে কইয়েন না ব্যাপার টা)। তাই ভয়ে আছি আমার নাকের নকশা ঠিক থাকবে কিনা! পরে শেষে আপনিই আমারে চিনতে ভুল করেন।

        তাই চিন্তায় আছি।

      3. চিন্তার কোন কারণ নাই আনু ভাই, সকালে এক ভদ্র মহিলাও জনগনের দাবী তুলছিল কাজেই নেন মারদাঙ্গা কুস্তীগির বৌ এর চাইতে এই বাঘটা বাড়ির গেট এর পাশে রাইখা দিয়েন।

    2. @খালিদ উমর ভাই, একদিন দেখলাম উনারে বাজার থেকে বউ এনে দিচ্ছিলেন আজ দেখি আবার এক কুস্তিগির বউ এর ছবি দিচ্ছেন। নেপথ্যের ঘটনা জনগন জানতে চায় https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

      1. আহারে! আমি মনে করছিলাম আমরা আমরাই এখন দেখি জনগন পাবলিক সবাই আইসা পরছে। আসলে হইছে কি, আমি মনে করচিলাম উনি ব্যাচেলর মানুষ তাই একটু প্রস্তাব দিয়া উপকার করা, আর কিছু না। এর মধ্যে অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই। ইহা আমি হলফ করিয়াই বলিলাম।

  2. শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির–নির্মল শান্ত অচঞ্চল ধ্রুব-জ্যোতি
    অশান্ত এ চিত কর হে সমাহিত সদা আনন্দিত রাখো মতি।
    দুঃখ-শোক সহি অসীম সাহসে
    অটল রহি যেন সম্মানে যশে
    তোমার ধ্যানের আনন্দ–রসে
    নিমগ্ন রহি হে বিশ্বপতি।

    মন যেন না টলে খল কোলাহলে, হে রাজ–রাজ
    অন্তরে তুমি নাথ সতত বিরাজ, হে রাজ–রাজ!

    বহে তব ত্রিলোক ব্যাপিয়া, হে গুণী,
    ওঙ্কার–সংগীত–সুর–সুরধ্বনী,
    হে মহামৌনী, যেন সদা শুনি
    সে সুরে তোমার নীরব আরতি।
    _____________________

    শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির-নির্মল থেকে কাজী নজরুল শব্দবাণী মনে পড়লো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. আমার অতি প্রিয় গান। সেজন্য ধন্যবাদ জানাই https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

      কিন্তু, স্যার, গল্প/চিঠি নিয়ে তো কিছুই বললেন না।

    2. আপনি খুব বেশী সরব নন; আবার নিরবও নন …
      এমন একজন মানুষের কিছু কথার ডায়েরি হোক বা অথবা প্রকাশ হোক
      আমি যে একটি অক্ষরও বাদ দেবো না বলার অপেক্ষা রাখে না। মুগ্ধ হয়েছি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yes.gif

      1. অনেক কৃতজ্ঞতা স্যার।

        এটা আমার ডায়েরি বা প্রকাশিত অপ্রকাশিত কিছু নয়। কেবলি গল্প, একটা কাল্পনিক সিচুয়েশন।

  3. উদাস করা লেখা এক ধরনের হাহাকার তৈরি করে শেষ হল।
    উদাস পথিকের কথা আরো জানতে চাই…

    1. উদাস পথিকের বাকি কথা হলঃ

      জানে না সে কে তাহারে চাবে।
      উদাস পথিক ভাবে।

      বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে
      আঁধার মাথায় দিগবধূদের কেশে,
      ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে
      শৈলমূলে শৈলবালা নাবে –
      উদাস পথিক ভাবে।

      বাতি আনি রাতি আনার প্রীতি,
      বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি,
      বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি,
      একলা থাকার গানখানি সে গাবে –
      উদাস পথিক ভাবে।

      হঠাত্‍ তাহার পথের রেখা হারায়
      গহন বাঁধায় আঁধার-বাঁধা কারায়,
      পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায়
      আর কি পূবের পথের দেখা পাবে
      উদাস পথিক ভাবে।

      [নজরুল]

  4. তোমার কথাগুলো পুষ্পের ন্যায় পুটত,
    তোমার বত্লা ছিলো যেন অবিরত।
    শুনে মনে জাগত সীমাহীন চেতনা,
    যা তুলতো আলড়ন যা ভুলব না।

    সবটাই পড়লাম, ভাবলাম আর মনের সুখে লিখলাম। কলমের তীক্ষ্ণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাক এই দোয়া করি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. আপনার দোয়া আমাদের জন্য পথের ছায়া, পথ চলার প্রেরণা।
      অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাই। সব সময় ভাল থাকুন।

  5. তৃষ্ণার্ত পথিকের গল্প! ভালো লেগেছে আনু ভাই। শুভেচ্ছা সেইসাথে শুভ কামনা জানাই।

    আমার মনে হয়, আমরা নিজেদের আবিষ্কার করতে পারি নি— তাই এতো অপ্রাপ্তি নিয়ে ঘুরে বেড়াই!

    1. অনেক ধন্যবাদ প্রিয় মামুন ভাই।
      হ্যাঁ তৃষ্ণার্ত পথিকের গল্প।

      আর কি পূবের পথের দেখা পাবে
      বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।