বাড়ির সবাই কাজে ব্যস্ত। ছোট বউয়ের খালি কোন কাজ নেই। এদিকে যায় সেদিকে যায়, কি করে ভেবে পায় না। আশে পাসের মানুষ ভাবে ঢঙী মাইয়ার ঢঙ দেখে আর বাঁচি না, ননদ শাশুড়ি খাইটা মরে, আর তিনি উলালে বেড়ান। কোন কাজ কাম না পেয়ে শেষ মেস ছোট বউ ভাঁড়ার ঘরে গিয়ে চাল আর ডাল বের করল। সেটা একসাথে মেশাল। এবার বসে বসে চাল ডাল আলাদা করতে লাগল। আশে পাসের মানুষ দেখল, বউটা কত কাজের।
সেই বউ এখন কোথায়?
বাংলাএকাডেমীতে।
ব্যাকরণ ভাষা তৈয়ার করে না। ভাষা ব্যকরণ তৈরি করে। ভাষার মধ্যে সহজাত যে শৃংখলা থাকে সেটার প্রাতিষ্ঠানিক বা লিখিত রূপ হল ব্যকরণ। তাই ব্যকরণ নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যত্তিক। কিন্তু ভাষার নিজস্ব গতি আছে। সে গতিপথ ভাষা নিজেই ঠিক করে নেয়। ব্যাকরণের কিংবা কোন একাডেমীর দেখানো পথে হাঁটা ভাষা পছন্দ করে না।
ভাষার উপর এ ধরনের আরোপিত বিষয় হল এক ধরনের ফ্যাসিবাদ। বিদেশী শব্দ উচ্চারণে দীর্ঘ ঈ দরকার হয় না এই ধরনের কথাবার্তা কূপমণ্ডূকতা প্রকাশ করে। সে কূপমণ্ডূকতা যখন আপনার আমার উপর চাপিয়ে দেখা হবে সেটা হল ফ্যাসিবাদী মনোভাবের বহিপ্রকাশ।
ভাষা কোন জাতির সংস্কৃতির মূল স্তম্ভ গুলির একটি। কিন্তু আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে ধারন বা বহন না করে বৈদেশিক সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে ব্যাস্ত। তাতে নিজ সংস্কৃতি বাচুক বা মরুক আধুনিকায়ন তো হচ্ছে !
এটাই নীতিনির্ধারকদের কৃতিত্ব।
নেই কাজ তো খই ভাজ !
ইদানিং খি ভাজা লোকদের পরিমান বেশি হয়ে গেছে। এবং খই ভাজার জন্য আছে প্রভূত পুরষ্কার। বাংলাএকাডেমী যা করছে তা যদি ভাষাকে সহজ করার জন্য করত তা হলেও মানা যেত। কিন্তু এরা তো শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করছে। কিছু কিছু জায়গা আছে বিভিন্ন বানান প্রচলিত হয়ত সেখানে সহজ করার নিয়ম কানুন করতে পারে। যে সব বিষয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে সেখানে আইসা পন্ডিতি ফলানোর তো দরকার নাই।
ই ঈ … শব্দ বা উচ্চারণ ব্যবহারে আমার মাথা আছে কিন্তু ব্যথা নেই।
সহস্রাব্দে যা এতকাল মানুষের কণ্ঠের সাথে মিশে গেছে তাতে যদি ভুলও থাকে; তার কোন আছর অথবা মাগরিব কোনটাই পড়বে না জনমানসে। বরং যারা ব্যাখ্যাকে অতি ব্যাখ্যায় মঞ্জরিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে চলেছেন, তাদের অবস্থা ঐ ছোট বউ এর মতো।
হ্যাঁ, ঠিক তাই
অতি সংযোজন :
আমি ‘ঈদ’ ও ‘শহীদ’ বানানের পক্ষে। এভাবেই লিখে যাবো।
Swakrito Noman দাদার লিখাটি তুলে ধরলাম :
আরবিতে ঈদ লেখা হয় এভাবে : عيد
অর্থাৎ ঈদ বানান আরবি হরফ ‘আইন’ দিয়ে শুরু, মাঝে ‘ইয়া’, তারপর ‘দাল’। আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী, শব্দের দ্বিতীয় অক্ষর যদি ‘ইয়া’ হয়, তার উচ্চারণ সবসময় দীর্ঘ হয়ে থাকে। সুতরাং অনিবার্যভাবেই আরবি عيد-এর উচ্চারণ ‘ঈদ’ হবে, কোনোভাবেই ‘ইদ’ নয়। ইদ হতো, যদি ‘আইন’-এর নিচে ‘জের’ দিয়ে তারপর ‘দাল’ দেওয়া হতো।
আমরাও ‘ঈদ’ লিখতে অভ্যস্ত। কিন্তু কেউ যদি ‘ইদ’ লেখেন, তাও ভুল হবে না। কারণ আরবি শব্দকে আমরা পুরোপুরি ‘মাখারাজ’ বা ব্যাকরণ মেনে বাংলায় উচ্চারণ করি না। করতে আমরা বাধ্য নই। কেননা আরবের উপনিবেশ নয় বাংলাদেশ। বেশিরভাগ আরবি শব্দকে আমরা আমাদের মতো উচ্চারণ করি।
যেমন ‘রহিম’ নামে আরবিতে কোনো শব্দ নেই। আছে ‘রাহীম’। আরবির রাহীম বাংলায় রহিম হয়ে যায়, আরবির কামারুজ্জামান বাংলায় কামরুজ্জমান, আরবির রাফিক বাংলায় রফিক, আরবির কারীম বাংলা করিম, আরবির রামাদান বাংলায় রমজান, আরবির আল্লাহু আকবার বাংলায় আল্লাহু আকবর, আরবি দেলাওয়ার বাংলায় দেলোয়ার হয়ে যায়। এরকম বিস্তর উদাহরণ দেওয়া যাবে।
অতএব, ‘ঈদ’ ও ‘ইদ’ দুটোই সঠিক।
তবে সর্বজনগ্রাহ্য ও প্রচলিত রীতিকেই প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে।
উদ্ধৃত বক্তব্যের সাথে আমার কিছু পরিমার্জন আছে। আরবী রহিম, আকবর, দেলোয়ার এই সব শব্দের সাথে ঈদ বানান মেলালে কিছুতেই হবে না। কারন এই প্রকৃতি আলাদা। আলাদা কিভাবে সেইটা আমাদের বুঝতে হবে ঠিকমত। রহিম, রহমান এই সব শব্দ বছরের পর বছর এইভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এবং এভাবেই বাংলায় গৃহীত হয়ে গেছে।
কিন্তু ঈদ এর ক্ষেত্রে এই রকম কোন ব্যপার নাই। কেননা ঈদ বছরের পর বছর ঈদ লিখে এবং বলে আমরা অভ্যস্ত। সেখানে নতুন বানান তৈরি করে নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি করার মানে নেই।
যেমন নতুন করে কেউ যদি বলে এখন থেকে রহিম বা রব না লিখে রাহীম বা রাব লিখতে হবে তা যেমন বেমানান হবে তেমনি ঈদ না লিখে ইদ লিখতে বলাটা একইভাবে বেমানান হবে।
কোনো-কোনো বিষয়ে পারিবারিক বিরোধ থাকতে পারে। মতভেদ আলোচনায় দূর হবে। কিন্তু অভিভাবক তো একজনকে মানতেই হবে।
এইখানে তো কোন পারিবারিক বিরোধ নাই। বরং যাকে অভিভাবক মানা যাবে সেই বিরোধ উস্কিয়ে দিতেছে। এটা হল নিজের অভিভাবকত্ব জিইয়ে রাখার গ্রাম্য মাতব্বরি স্টাইল।
আমি ইদ বা ঈদ নিয়ে ইদ বা ঈদের আনন্দ নষ্ট করতে চাই না
—লেখাটা এখন পড়তে পারিনি পরে পড়ে মন্তব্য করছি।
—-ব্যাকরণ ভাষা তৈয়ার করে না। ভাষা ব্যকরণ তৈরি করে।
—ভাষার উপর এ ধরনের আরোপিত বিষয় হল এক ধরনের ফ্যাসিবাদ। বিদেশী শব্দ উচ্চারণে দীর্ঘ ঈ দরকার হয় না এই ধরনের কথাবার্তা কূপমণ্ডূকতা প্রকাশ করে।
বিষয় দুু’টো আমার কাছে পরস্পর বিরোধী মনে হয়েছে! কারণ ভাষাও কখনই এমনিতে তৈরী হয়নি। আরোপিত প্রথা থেকেই ভাষা পরিবর্তন হচ্ছে। বিদেশী শব্দে ‘ই’ কার ব্যবহার করার বিষয়টা আনা হয়েছে সম্ভবত ভাষাকে সহজ করার জন্যই।
*ঈদ মোবারক আনু ভাই। ঈ ব্যবহারের জন্য বোনাস চাই!
