বলন কাঁইজি এর সকল পোস্ট

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপারে বলন কাঁইজির ভবিষ্যদ্বাণী

(Bolon Kaiji’s prediction about the Third World War)

বলন কাঁইজির ভবিষ্যদ্বাণী (The prophecies of Bolon Kaiji)
বলন কাঁইজি গত ২০০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে ১০টি ভবিষ্যদ্বাণী করেন। অতঃপর; তাঁর জ্ঞানশিষ্যগণ তা লেখে রাখেন। গত ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর জ্ঞানশিষ্যদের উদ্যোগে কাঁইজির গ্রন্থিত প্রায় ৫০০ বলন সংকলিত হয়। অতঃপর; উক্ত বলন হতে ৩১৩ বলন সংকলন করে ‘বলন তত্ত্বাবলী’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ঐ গ্রন্থের ২৮ পৃষ্ঠায় ‘বলন কাঁইজির ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ’ উপশিরোনামে নিচের এই ভবিষ্যদ্বাণীটি ছাপা হয়। এটি এক নং ভবিষ্যদ্বাণী।

পরবর্তীকালে কাঁইজির আরেক জ্ঞানশিষ্য নাগর কাঁইজি (ছিদ্দিক কাঁইজি) ‘বলন কাঁইজির সংক্ষিপ্ত জীবনী’ গ্রন্থ নির্মাণ করেন। এই গ্রন্থটি এখনও প্রকাশিত হয় নি। এই গ্রন্থেও কাঁইজির ভবিষ্যদ্বাণীগুলো স্থান পেয়েছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিষয়ক জ্ঞানার্জনে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে বলে আমরা আশা করি।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ (The third world war)
মানুষের নিকট এমন এক সময় অতিক্রম করবে; যখন বিশ্ব দুই বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এক পক্ষে থাকবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য দল এবং অপর পক্ষে থাকবে বৃহৎ শক্তিশালী মাত্র ২টি দল। উক্ত দল দুটির প্রধান লক্ষণ হলো; তাদের এক দলের বসন হবে সাদা এবং অপর দলের বসন হবে কালো। তারা অভেদ্য দূর্গের মধ্যে কঠিনভাবে অবস্থান করবে। বর্তমান বিজ্ঞানের নির্মাণ কোন যন্ত্রই তাদের গোপন দূর্গের সন্ধান করতে পারবে না। তারা সেখান থেকে স্বয়ংকৃত অস্ত্রের সাহায্যে তুমুল যুদ্ধ করবে এবং সারা বিশ্বে অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘঠিত করবে। এ যুদ্ধে নিরপেক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলোও বাঁচতে পারবে না। উক্ত দল দু’টি গোপনে গোপনে এত শক্তি অর্জন করে বসে থাকবে যে; বিশ্ববাসী তা টের করতেও পারবে না। এ যুদ্ধে এমন সব আধুনিক মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে; যা পূর্বে একবার হয়েছিল। তবে; পূর্বে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির চেয়ে অনেক শক্তিসম্পন্ন যন্ত্রাংশ এ যুদ্ধে ব্যবহৃত হবে।

দেশ দু’টি ১০ ধাতু যোগে দূরপাল্লার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এমন সব বিমান নির্মাণ করবে; যা নাকি একবার মাত্র ব্যবহার হবে। বিমানগুলো মৌমাছির মত ঝাঁকে ঝাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা নির্ভুলভাবে অভিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে। তারা যেখানে আঘাত হানবে; তা চিরতরে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। সাথে সাথে বিমানটিও বিধ্বস্ত হবে। যেখান হতে যেটিকে পাঠান হবে; তা আর কোনদিন দূর্গে ফিরিয়ে আনা হবে না। যেমন; তীরন্দাজ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত তীর একবার ছুড়ে দিলে আর ফিরে আসে না। আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক শক্তিশালী যন্ত্রও সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিমানগুলোকে প্রতিহত করতে পারবে না। বিশ্বের সব বিজ্ঞানী একত্র হয়েও উক্ত দেশ দু’টির গোপন দূর্গগুলো চিহিৃত ও ধ্বংস করতে পারবে না। অথচ; দূর্গগুলো থাকবে তাদের দূর্গের সামনেই। এমনভাবে; দুর্ভেদ্য ভাসমান দূর্গ তারা নির্মাণ করবে; যা সহজে স্থানান্তর করা যাবে। যেখান থেকে যুদ্ধ করা হবে; তা চিহিৃত হলেই তারা তা জানতে পারবে। শত্রুপক্ষ আক্রমণ পরিচালনা করার পূর্বেই তারা উক্ত ভাসমান দূর্গগুলো অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিবে। তাদের এ অভিনব যুদ্ধ কৌশল দেখে সেদিন সারা বিশ্ববাসী হতবাক ও বিস্মিত হবে। তাদেরকে লক্ষ্য করে যেসব অস্ত্রাদি নিক্ষেপ করা হবে; তাতে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উক্ত দেশ ২টির তেমন কোন ক্ষতিই হবে না।

অবস্থান (Location)
উক্ত দেশ দু’টির অবস্থান হবে ভূভাগের মধ্য ভাগের পশ্চিমে। দেশ দু’টি খনিজ সম্পদ ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে অত্যন্ত অগ্রসর হবে। তারা নৈতিক আচরণেও বিশ্বের সেরা হবে। যুদ্ধোত্তর ৩ দশকে তারা নিজেরাই ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।

সূচনা (Start)
সামান্য একটি ভূখণ্ডের পুনরুদ্ধারকে কেন্দ্র করে এ ধ্বংসশীল মহাযুদ্ধের সূচনা হবে। যুদ্ধটি এমন সময় আরম্ভ হবে; যখন উক্ত দেশ দু’টি ব্যতীত সারা বিশ্ববাসী একজনকে বিশ্ববরেণ্য ও মহাশক্তিশালী নেতা রূপে গ্রহণ করবে।

স্থায়িত্বকাল (Stability)
মহাধ্বংসশীল এ যুদ্ধটি নয় মাস স্থায়ী হবে।

ক্ষয়ক্ষতি (Damage)
মরণঘাতি এ মহাযুদ্ধে বিশ্বের তিন ভাগের দুই ভাগ লোকই মারা যাবে। সর্ব প্রকার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বিকল হবে। আধুনিকতা বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এমনকি; মাত্র ২৮ মাইল দূরে কোন সংবাদ পাঠাতে পুরো একদিন সময় লাগবে। কিন্তু উক্ত যুদ্ধবাজ দেশ দুটির তেমন কোন ক্ষতি হবে না।

সূচনাকাল (Start time)
যে মাসের ৩ তারিখ শনিবার হবে; সে দিনই যুদ্ধ আরম্ভ হবে। তা যে কোন সময় হতে পারে।

আত্মরক্ষার উপায় (Bulwark)
যদিও; আত্মরক্ষার কোন উপায় থাকবে না। তবুও; একমাত্র কুকুর প্রিয় লোকগণ আত্মরক্ষা পাবে। বেঁচে যাওয়া অধিকাংশ পুরুষ তাদের পুরুষত্ব হারিয়ে নারীত্ব বরণ করবে। রাস্তাঘাটে নারীদের একচেটিয়া উপদ্রপ হবে। নারীরা যত্রতত্র সমর-সংগ্রাম সৃষ্টি করবে। চিকিৎসাবিদ্যা প্রায় বিলুপ্ত হবে। চিকিৎসার অভাবে অবশিষ্ট লোকের অধিকাংশই মারা যাবে।

সূত্রতথ্য;
বলন তত্ত্বাবলী;
লেখকঃ বলন কাঁইজি
আনন্দ পাবলিশার্স; ৩৮/৪ক, বাংলাবাজার, ঢাকা- ১১০০
প্রকাশকাল; ২৯ ফাল্গুন, ১৪১৪ বঙ্গাব্দ; ১২ মার্চ, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ।

বলন কাঁইজির জীবনী; লেখকঃ নাগর কাঁইজি (ছিদ্দিক কাঁইজি)

কিভাবে নববর্ষ পেয়েছি? (How we got New Year?)

প্রতি বছর নববর্ষ এলেই; নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানের বৈধাবৈধতা নিয়ে যতো আলোচনা ও ফোতোয়াবাজি হয়; এর উৎস, উৎপত্তি, নির্মাণ ও ক্রমবিবর্তন নিয়ে ততো আলোচনা হয় না। এখন সময় এসেছে ঐসব পুরাণ বা পৌরাণিক চরিত্রের (mythological character) মূলক উদ্ঘাটন করার। সময় এসেছে সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক সমর-সংগ্রাম ও সংঘর্ষ হতে বিরত থাকার।

খ্রিস্টাব্দ নির্মাণের ইতিবৃত্ত (Christian era reformation history)
প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ সূর্য দেখে সময় গণনা করতো। কিংবা বলা যায়; তারও আগে মানুষ বুঝতই না সময় কী? জানা যায়; প্রথম মিশরীয়রা সূর্য দেখে বছর গণনা করতে আরম্ভ করে। তারা এর নাম দেয় সৌরবর্ষ। অন্যদিকে; চাঁদ দৃশ্যাদৃশ্য হওয়া দেখে মাস ও বছরের নির্ধারণ করা হয়। একে বলা হয় চান্দ্রবর্ষ। কিন্তু সমস্যা হলো চান্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তারপর; আবার গুণতি বছরগুলোর স্মরণ রাখা একান্ত প্রয়োজন। এ প্রয়োজন হতেই সুমেরীয়রা বর্ষপঞ্জিকা আবিষ্কার করে। তারপর; গ্রিকরা বর্ষপঞ্জিকা আবিষ্কার করে। স্মরণীয় যে; মানবসভ্যতার উন্নয়নে গ্রিক ও রোমানদের অনেক অবদানের কথা সর্বজনবিধিত।

গ্রিকদের কাছ থেকে বর্ষপঞ্জিকা পেয়েছিল রোমানরা। তারা কিন্তু ১২ মাসে বছর গুণতো না। তাদের বছরে ছিল মাত্র ১০ মাস। রোমানরা বছর গুণতো ৩০৪ দিনে। তারা শীতকালকে বছরের মধ্যে গুণতো না। তারাই মার্চের ১ তারিখে নববর্ষ উৎযাপনের রীতি চালু করে। পরবর্তীকালে রোমের সম্রাট নুমা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মারসিডানাস নামে ৩টি মাসকে ইংরেজি বর্ষপঞ্জির অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন; ১ জানুয়ারি ও ১ মার্চ এ দুইদিন ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হতো। ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমানরা প্রথম ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করেছিল বলে জানা যায়। সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিশরীয় বর্ষপুঞ্জিকা সংস্কার করে ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন ঘটান। তিনি মিশরের জ্যোতির্বিদদের সঙ্গে পরামর্শ করে; সে বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মাঝে ৬৭ দিন ও ফেব্রুয়ারির পর ২৩ দিন যুক্ত করে; নতুন পুঞ্জিকা সংস্কার করেন। এটিকে বলা হয় জুলিয়ান পঞ্জিকা।

জুলিয়ান পঞ্জিকায় ফেব্রুয়ারি মাসকে ২৮ ধরে; মার্চ, মে, অক্টোবর ও কুইন্টিলিস মাস ৩১ দিনে এবং জানুয়ারি ও সেক্সটিনিস মাসের সঙ্গে ২ দিন করে গণনা করা হয়। প্রতি ৪ বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে ১দিন যুক্ত করা হয়। এভাবেই সৃষ্টি হয় লিপইয়ার। রোমানদের আগের বর্ষপঞ্জিকা ছিল চন্দ্রবর্ষের। সম্রাট জুলিয়াস সৌরবর্ষ পুঞ্জিকা প্রবর্তণ করেন। দেবতা জানুসের নামানুসারে; রোমানদের ফটক বা ঘরের দুয়ারে জানুয়ারি মাসের নাম লেখে রাখা হতো। তাই সম্রাট জুলিয়ান জানুয়ারিকে বছরে ফটক বা প্রথম মাস রূপে গ্রহণ করেন। তার সময় হতেই আনুষ্ঠানিকভাবে ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন আরম্ভ হয়। আর পরে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জুলাই। আরেকজন বিখ্যাত রোমান সম্রাট অগাস্টিনের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম হয় অগাস্ট।

আরো জানা যায়; মধ্যযুগে ইউরোপের খ্রিস্টানরা ২৫ মার্চ নববর্ষ উদযাপন করতে আরম্ভ করে। এর কারণ রূপে তারা বর্ণনা যে; ২৫ মার্চ যিশুখ্রিস্টের মা মেরী তার দৈবদূত গ্যাব্রিয়েলের (Gabriel) কাছ থেকে তার কুমারী অবস্থায় গর্ভবতী হওয়ার শুভ সংবাদ লাভ করেন। এ সময় এ মতবাদের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়ভাবে সামান্য সামান্য নববর্ষ পালিত হতো। এরপর; ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রি অব্দ গণনা করার জন্য খ্রিস্টাব্দকে একটি নির্দিষ্ট গণনায় স্থাপন করার কাজ আরম্ভ করে। তিনি কল্পিত উৎস রূপে (mythological source) গ্রহণ করেন যিশুখ্রিস্ট (mythological character of Bible) এর জন্ম দিবসকে। অবশেষে; বাইবেলের বিভিন্ন উৎস অনুসন্ধান করে; তাঁর গবেষণার সময় হতে ৫৩২ বছর পূর্বে গিয়ে যিশুখ্রিস্টের জন্ম দিবস স্থাপন করেন। অর্থাৎ; জন্মলগ্নেই খ্রিস্টাব্দের বয়স হলো ৫৩২ বছর।

১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ নিয়ে জুলিয়ান পুঞ্জিকা আবার সংশোধন করেন। ঐ বছরেই অর্থাৎ ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে গ্রেগোরিয়ান পুঞ্জিকায় ১ জানুয়ারিকে আবার নতুন বছরের প্রথম দিন নির্ধারণ করা হয়। সাথে সাথে লিপইয়ারের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়। পোপ গ্রেগরি ঘোষণা করেন যে; যেসব শতাব্দি ৪০০ দ্বারা বিভক্ত হবে; সেসব অব্দ অবশ্যই লিপইয়ার রূপে গণ্য হবে। এভাবেই; নির্মিত হয় গ্রেগরিয়ান পুঞ্জিকা। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের বর্তমান রূপটিই হচ্ছে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সংস্কার। (তথ্যসূত্রঃ সহযোগীতা নেওয়া হয়েছে; বাংলাদেশ সময়, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ)।
—————————————————-
কলেবর দীর্ঘায়িত হলেও আরো ২টি সঙ্গত বিষয় হলো হিজরী ও বঙ্গাব্দ নির্মাণ।

হিজরী নির্মাণের ইতিবৃত্ত (Hijri reformation history)
হিজরী সন নির্ধারণ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হলে আগে সাম্প্রদায়িক মুসলমান মনীষীদের কিছু কিছু রূপকথার বেড়া ভাঙ্গা একান্ত প্রয়োজন। যেমন; কেউ বলেন; “এদিকে আল্লাহ তাঁর হাবিবকে নির্দেশ করলেন, হে নবী! মক্কার মানুষ আপনাকে চায় না, মদিনার মানুষ আপনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, মদিনায় আপনি হিজরত করেন। মহানবী আল্লাহর এ ঘোষণা পাওয়ার পর ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ২৭ সফর মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মোতাবেক ৮ রবিউল আওয়াল কোবায় পৌঁছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মোতাবেক ১২ রবিউল আওয়াল মদিনায় পৌঁছেন মহানবী। এ হিজরতেরই স্মৃতিবহন করে আসছে হিজরী সন। হিজরী গণনা বিক্ষিপ্তভাবে আরম্ভ হয় মূলতঃ মহানবীর জামানা থেকেই। তবে; ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (৫৭৭-৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ খেলাফত) শাসনকালে ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় এর সুনির্দিষ্ট রূপ ইত্যাদি।

হযরত মোহাম্মদের (সাঃ) জন্মের ৫০ দিন আগে আবরাহার হস্তী বাহিনীর পতন ঘটে এবং এ থেকেই হস্তী সন প্রবর্তন ও প্রচলনের যাত্রা আরম্ভ হয়। (তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ইছামতি, বুধবার # ০৫ আগস্ট ২০১৫ # ২১ শ্রাবণ ১৪২২ # ১৯ শাওয়াল ১৪৩৬ # বর্ষঃ ২৫ # সংখ্যাঃ ০৩০)।

হিজরী সনের প্রবর্তন ও প্রচলনের আগে মহানবীর জন্মকাল থেকে জন্মবর্ষ, জন্মসন, নবুওয়াতে পরবর্তীকাল থেকে নবুওয়াত বর্ষ ইত্যাদি গণনার রেওয়াজ ছিল প্রাক ইসলাম যুগে। ব্যাপক ভিত্তিক কোন সাল বা সন ছিল না। — (তথ্যসূত্রঃ ঐ)। হিজরী নির্ধারণের আগে মুসলমানেরা বিশেষ বিশেষ ঘটনার ভিত্তিতে বছরগুলোর নামকরণ করতো। যথা; অনুমতির বছর, ভূমিকম্পের বছর, বিদায়ের বছর প্রভৃতি। (তথ্যসূত্রঃ দৈনিক খবরপত্র, ঢাকা, বুধবার, ০৫ আগস্ট ২০১৫, ২১ শ্রাবণ ১৪২২, ১৯ শাওয়াল ১৪৩৬)।

এসব হলো সাম্প্রদায়িক মুসলমান মনীষীদের সাম্প্রদায়িক প্রভাব ও অন্ধবিশ্বাসযুক্ত অভিমত। প্রকৃত বিষয় সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন; পারসিক ও আরব্যদের পুরাণ বা পৌরাণিক সাহিত্যে বর্ণিত; রূপক চরিত্রের জন্মদিবস হতে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস খ্রিস্টাব্দ গণনা আবিষ্কার করেছেন। আর খ্রিস্টাব্দের জন্মলগ্নেই তার বয়স দিয়েছেন ৫৩২ বছর। অন্যদিকে; মোঘল সম্রাট আকবরের আদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি হিজরীর মাথার ওপর পা রেখে ফসলী (বঙ্গাব্দ) গণনা আবিষ্কার করেছেন। আর ফসলীর জন্মলগ্নেই তার বয়স দিয়েছেন খ্রিস্টাব্দের গণনায় ১,৫৪৪ বছর ও হিজরীর গণনায় ৯২২ বছর। তাই হিজরী গণনা পদ্ধতি আবিষ্কার করা বা হওয়ারও এমন ঘটনা থাকা অসম্ভব নয়। সাম্প্রদায়িক মুসলমান মনীষীদের অধিকাংশের বর্ণনা মতেও হিজরীর জন্মলগ্নেই ১৬ হতে ১৭ বছর বয়স যে দেওয়া হয়েছে তা সর্বজন স্বীকৃত।

বঙ্গাব্দ নির্মাণের ইতিবৃত্ত (Bepoch reformation history)
(বঙ্গ = Bengal, অব্দ = epoch; সন্ধিযোগে বঙ্গাব্দ, Bengal+ epoch; অতএব বঙ্গাব্দ = Bepoch)
বঙ্গাব্দ নির্মাণ ও সূচনার ক্ষেত্রে এ যাবৎ ২টি মত জানা যায়।
প্রথমটি হলো; ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে মোঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর; সম্রাটরা হিজরী সন অনুসারে কৃষি পণ্যের কর গ্রহণ করতে আরম্ভ করে। কিন্তু হিজরী সন চন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল হওয়াই তা শস্যাদি উৎপাদনের সময়ের সাথে মিলতো না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে কর পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হতো। কর গ্রহণের সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মোঘল সম্রাট আকবর (১,৫৪৩-১,৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) বাংলা ফসলী প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে (খ্রিস্টাব্দ ও হিজরী) সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতো তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী (পুরা নাম আমির ফতেহউল্লাহ খান সিরাজী) খ্রিস্টাব্দ ও হিজরী অব্দের ওপর ভিত্তি করে বাংলা অব্দ গণনার নতুন নিয়ম নির্মাণ করেন।

প্রায় চারশ বছর আগে হিজরী সনের সঙ্গে মিল রেখে ফসলী অব্দ রূপে বঙ্গাব্দের প্রচলন ঘটিয়েছিলেন।
তিনি অবশ্য খ্রিস্টাব্দের চেয়ে হিজরীকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। এর কারণ ছিল; যেভাবে খ্রিস্টাব্দের কাঁধের ওপর পা দিয়ে; হিজরী নির্মাণ করা হয়েছে; সেভাবে এবার হিজরীর মাথার ওপর পা দিয়ে; বঙ্গাব্দ নির্মাণ করতে হবে। স্মরণীয় যে; ৬২২ খ্রিস্টাব্দের কাঁধের ওপর ১ হিজরী স্থাপন করে নির্মাণ করা হয়েছিল হিজরী সন। যা আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি। এবার একদিকে গণনার সুবিধা ও অন্যদিকে অব্দান্তর সুবিধার দিকটি বিবেচনা করে ফতেউল্লাহ ও অন্যান্য গবেষকগণ ৯২২ হিজরীকে ১ ফসলী গণনা করার পরামর্শ দেন। সাথে সাথে অব্দাদি পরিবর্তনের নিচের সূত্রাদিও উপস্থাপন করেন। যদিও নিচের সূত্রাদি অবিকল না-ও হতে পারে। তখন তাদের কাছে হয়তো অন্যান্য সূত্র ছিল।

হিজরী থেকে ফসলী (Bepoch from Hijri)
ফসলী = হিজরী – (হিজরী – ৯২২)
————————————————————
৩৬

অথবা ফসলী = {হিজরী – (হিজরী – ৯২২)} ÷ ৩৬
ফসলী থেকে হিজরী (Hijri from Bepoch)
হিজরী = ফসলী + (ফসলী – ৯২২)
———————————————————–
৩২

অথবা হিজরী = {ফসলী + (ফসলী – ৯২২)} ÷ ৩২
হিজরী থেকে খ্রিস্টাব্দ (Christian era from Hijri)
খ্রিস্টাব্দ = (হিজরী × ৩২) + ৬২২
———————————————————
৩৩

অথবা খ্রিস্টাব্দ = {(হিজরী × ৩২) + ৬২২} ÷ ৩৩
খ্রিস্টাব্দ থেকে হিজরী (Hijri from Christian era)
হিজরী = (খ্রিস্টাব্দ – ৬২২) × ৩৩
———————————————————-
৩২
অথবা হিজরী = {(খ্রিস্টাব্দ – ৬২২) × ৩৩} ÷ ৩২}

অবশেষে; সম্রাট আকবর ১৫৪৪ খ্রিস্টব্দের কাঁধের ওপর ও ৯২২ হিজরীর মাথার ওপর ১ ফসলী স্থাপন করতে আদেশ দেন। এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ থেকে বাংলা অব্দ গণনা আরম্ভ করা হয়। তবে; এ গণনা পদ্ধতি কার্যকর করার সময় নির্ধারণ করা হয় মোঘল সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ) থেকে। প্রথমে এ নির্ধারণীর নাম ছিল ফসলী। পরে একে বঙ্গাব্দ বা বাংলাবর্ষ নামে অভিহিত করা হয়। উল্লেখ্য; ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৯৬২ হিজরীতে গবেষণা, সিদ্ধান্ত, সমাধান ও আদেশ প্রদান করা হলেও এর মূলভিত্তি ধরা হয় ১৫৪৪ খ্রিস্টাব্দ ও ৯২২ হিজরীকে।

বঙ্গাব্দের সঙ্গে হিজরী সনের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। ৯৬২ হিজরীতে (কারো কারো মতে; ৯৬৩) ফসলী জন্মলাভ করে। জন্মলগ্নেই বাংলা ফসলীর বয়স হয় খ্রিস্টাব্দ অনুযায়ী ১৫৪৪ বছর এবং হিজরী অনুযায়ী ৯৬২ বছর। তাই অনেক গবেষক হিজরীকে বাংলা ফসলীর ভিত্তি বলে উল্লেখ করে থাকেন। যেহেতু; চান্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষের মধ্যে ১১ দিনের পার্থক্য রয়েছে; এজন্য; পরবর্তীকালে হিজরী এবং ফসলীর মধ্যে সমতা রাখা সম্ভব হয়নি। কারণ; আবিষ্কারের দিক থেকে হিজরী চান্দ্রবর্ষভিত্তিক এবং ফসলী সৌরবর্ষভিত্তিক। চান্দ্রমাস হয় ২৯ দিন ১২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে। এজন্য; এক চান্দ্রবর্ষ হয় ৩৫৪ দিন ৯ ঘণ্টায়। অন্যদিকে; সৌরবর্ষ হয় ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে। প্রত্যেক সৌরবর্ষ চান্দ্রবর্ষ থেকে ১১ দিন অধিক। ফলে; প্রতি সাড়ে ৩২ বছর পর এক চান্দ্রবর্ষ বৃদ্ধি পায়। এ পর্যন্ত হিজরী (চান্দ্রবর্ষ) ফসলী (সৌরবর্ষ) থেকে ১৩-১৪ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে; সমতা-অসমতার মাঝে চলে আসছিল দীর্ঘ সময়। গণনার সমস্যার তরী বেয়ে চলে আসা বাংলা অব্দের সংস্কার করার সাহস করেনি কেউ।

অনেক পরে ১৯৬৩ খ্রিস্টব্দে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে বঙ্গাব্দ সংস্কার আন্দোলনে একটি পরিষদ গঠন করা হয়। গবেষণা পরিষদ ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। বর্তমানে প্রচলিত বঙ্গাব্দ ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে কার্যকরী হয়। হিজরী থেকে বঙ্গাব্দের আবিষ্কার এবং অনেক পরে এসে বঙ্গাব্দকে পূর্ণতা প্রদানের সর্বক্ষেত্রেই মুসলমানদের অবদান ছিল সর্বাধিক; ইতিহাস সে কথাই বলে। বাঙালীজাতি রূপে আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে; আমাদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি আছে। নিজেদের বাংলা অব্দ আছে এবং বছরের প্রথমে বর্ষবরণের আয়োজন ও আনন্দ-উৎসব আছে। অব্দ গণনা করেই এদেশের মানুষ শস্য রোপণ করে; ঘরে নতুন শস্য তোলে; হালখাতা করে এবং ব্যবসায় নতুন অংক কষে। এতে প্রতীয়মান হয় যে; বঙ্গাব্দ মুসলিম সংস্কৃতিরই একটি অঙ্গ। সুতরাং ১ বৈশাখ উদযাপনও মুসলিম সংস্কৃতি অনুযায়ী হওয়াই বাঞ্ছনীয় (তথ্যসূত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ, ১৩ এপ্রিল, ২,০১৪ খ্রিস্টাব্দ)।

মোঘলদের তৃতীয় সম্রাট আকবর নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তবে; তাঁর পুরা নাম ছিল জালালউদ্দিন মুহম্মদ আকবর। মাত্র ১৩ বছর বয়সে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করে; মোঘল সাম্রাজ্যের অনেক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সবার নজরে আসেন। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি আজকের যে বাংলা নববর্ষ পালন করছে, সেটিও বলা যায় তারই চেষ্টার ফসল।

মোঘল সম্রাট আকবর প্রাচীন ভারতীয় ও বিদেশী সালের পাশাপাশি কয়েকটি নতুন সালের প্রচলন করেন। বঙ্গদেশের জন্য বাংলা, উড়িষ্যার জন্য আমলি, মহারাষ্ট্রের জন্য খুরাশান এবং রাজ্য সাল রূপে ইলাহি সাল। চন্দ্র সালে চন্দ্রের অস্থিরতার কারণে সম্রাটের কর্মচারীরা প্রতি বছর নির্দিষ্ট ঋতুর খাজনা আদায়ে বেশ সমস্যায় পড়ে যেতো। সম্রাট আকবর এ সমস্যার কথা ভেবে; অব্দ প্রবর্তণের জন্য, নতুন একটি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এর দায়িত্ব পড়ে সম্রাটের রাজস্ব কর্মকর্তা আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীর ওপর। সিরাজী হিজরী চান্দ্র মাসের সঙ্গে, সম্রাটের সিংহাসনে আরোহণের বছর এবং ভারতীয় সৌরবর্ষের সমন্বয়ে বাংলা ফসলীর প্রবর্তণ করেন।

আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী কর্তৃক বাংলা ফসলী প্রবর্তণের আগে বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অব্দ প্রবর্তিত ছিল। ওই সালগুলোর মধ্যে বিক্রম সম্বৎ, শকাব্দ, পালাব্দ এবং লক্ষণ সম্বাৎ ছিল উল্লেখযোগ্য। বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে হিজরী সাল ব্যবহৃত হলেও; প্রশাসনের বাইরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অব্দগুলো ব্যবহৃত হতো। এ অব্দগুলো সৌর বছরের মাধ্যমে প্রচলিত থাকলেও সৌর মাসের প্রচলন ছিল না। ফলে; সম্রাটের আদেশে ফতেহউল্লাহ সিরাজী তার উদ্ভাবিত বাংলা ফসলীতে সৌর মাস প্রবর্তণ করেন।

সিরাজী তার উদ্ভাবিত বাংলা ফসলীতে মাসের নামগুলো রেখেছিলেন শকাব্দ মাসের নাম থেকে প্রায় অভিন্ন করে। যেমন; বাংলা বৈশাখ, শকাব্দ বৈশাখ, ব্যুৎপত্তি বিশাখা নক্ষত্র। এরূপ; জ্যৈষ্ঠ, জেষ্ঠ, জেঠা নক্ষত্র ইত্যাদি।

শকাব্দ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন নাম। আনুমানিক ৭৮ খ্রিস্টাব্দে শালিপহন নামক একজন রাজার স্মৃতিকে সামনে রেখে শকাব্দের প্রচলন করা হয়। অনেকের মতে; শকাব্দ রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালের ১৩৫ বছর পর থেকে আরম্ভ।

বাংলা ফসলী ও ইলাহি সাল হিজরী সালকে ভিত্তি করে একই বছরে নির্মাণ করা হলেও; এগুলোর গণনা একই দিন থেকে আরম্ভ করা হয়নি। ইলাহি সালের যাত্রা হয় ৯৬৩ হিজরীর ২৮ রবিউস সানি। সে মোতাবেক ইংরেজি ১৫৫৬ সালের ১০ বা ১১ মার্চ। আর সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন ১৫৫৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ৯৬৩ হিজরী থেকে বাংলা ফসলীর কার্যক্রম আরম্ভ হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করে ৯৯২ হিজরীতে।

আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী ৯৬৩ হিজরী সালকে বাংলা ফসলীর ৯৬৩ বছর ধরে সেখান থেকেই পরবর্তী বছরের গণনার রীতি নির্ধারণ করেন। যদিও বাংলা ফসলী ও হিজরী সালের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এর কারণ সিরাজী ৯৬৪ হিজরী থেকে বাংলা সালে কিছুটা পরিবর্তন এনেছিলেন। হিজরী সাল তার গতিপথে পরিচালিত হলেও বাংলা সালের যাত্রা শুরু হয়েছে সৌর পদ্ধতিতে। ফলে বাংলা সাল ১০/১১ দিন পিছিয়ে গিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৪ বছর পিছিয়ে গেছে। যেমন; আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীর অসাধারণ প্রজ্ঞায় বাংলা সাল একটি ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক, তেমনই; লোকজীবনের সাংস্কৃতিক ধারারও অন্যতম বাহক (তথ্যসূত্রঃ হারুনুর রশিদ শাহীনের ব্লগ)।

দ্বিতীয়টি হলো; প্রাচীন বঙ্গদেশের গৌড় রাজা শশাঙ্ক (রাজত্বকাল আনুমানিক ৫৯০-৬২৫ খ্রিস্টাব্দ) বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন। সপ্তম শতাব্দির প্রারম্ভে শশাঙ্ক বঙ্গদেশের রাজচক্রবর্তী রাজা ছিলেন। আধুনিক ভারতের বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার অধিকাংশ অঞ্চল তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনুমান করা হয় যে; জুলিয়ান ক্যালেণ্ডারের সোমবার ১২ এপ্রিল ৫৯৪ এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডারের সোমবার ১৪ এপ্রিল ৫৯৪ বঙ্গাব্দের সূচনা হয়েছিল। (তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট, কোরাম)।

সারকথা হলো; বাইবেলের কেন্দ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র যিশুখ্রিস্টের কাল্পনিক জন্মদিন আবিষ্কার করেছেন ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস।তাও সেটি করেছেন তাঁর সময়কাল থেকে ৫৩২ বছর পূর্বে। এর ওপর ভিত্তি করে পারসিকরা নির্মাণ করেছে সারা মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত চাঁদের ফাঁদে পতিত গোলকধাঁধার হিজরী। হিজরী নির্মাণ চাতুরীতে বলা হয়েছে- ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদের জন্ম। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর স্থানান্তর। অতঃপর ৬৪০ খ্রিস্টাব্দ হতে হিজরী সন গণনা আরম্ভ। (৫৭০-৫৩২ = ৩৮) মাত্র ৩৮ বছরে ঐ সময়ে কোন তথ্য সুদুর ইউরোপ হতে এশিয়ায় আসা যুক্তিযুক্ত নয়।

আবার কিছু কিছু গবেষকের মতে ৬৩৮ বা ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ হতে হিজরা সন গণনা আরম্ভ হয়েছিল। এছাড়াও; সাম্প্রদায়িক মুসলমান মনীষীদের অধিকাংশের বর্ণনা মতেও হিজরীর জন্মলগ্নেই ১৬ হতে ১৭ বছর বয়স যে দেওয়া হয়েছে তা সর্বজন স্বীকৃত।

অন্যদিকে; জন্মলগ্নেই খ্রিস্টাব্দের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৩২ বছর। অনুরূপভাবে; জন্মলগ্নেই বাংলা ফসলীর বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল খ্রিস্টাব্দ অনুযায়ী ১৫৪৪ বছর এবং হিজরী অনুযায়ী ৯৬২ বছর।

অধিকাংশ গবেষকের ধারণা হলো; হিজরী সন নির্মাণ করা হয়েছিল ৯০০ হতে ৯০২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। তবে; এখনও এর সঠিক তথ্য প্রকাশিত হয়নি। অর্থাৎ জন্মলগ্নেই হিজরীর বয়স দেওয়া হয়েছিল ২৮০ বছর। আর এখান থেকেই নির্মাণ করা হয়েছে মুহাম্মদের হিজরত (৬২২ খ্রিস্টাব্দ), নবুয়তলাভ (৬১০ খ্রিস্টাব্দ) এবং জন্ম (৫৭০ খ্রিস্টাব্দ)। এখান থেকেই নির্মাণ করা হয়েছে সব যুদ্ধের সন। এসব কাজ করেছেন জারির তাবারী (২২৪– ৩১০ হিজরী; ৮৩৯ –৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ)।

পরিশেষে বলতে হয়। মিথের ওপর মিথের জন্ম। কল্পনার ওপর কল্পনার জন্ম। বিশ্বের সবাই ইচ্ছায় অনিচ্ছায় করে মান্য। এসব গুরুত্বপূর্ণ দিবস উদযাপন করাকে অনেক মানুষ পুণ্যও মনে করে। আর সাম্প্রদায়িকরা তো রীতিমতো মারামারিও করে। কেউ পালন করে তাদের দেবতার জন্মদিন মনে করে। কেউ পালন করে তাদের অবতারের জন্মদিন মনে করে।আর কেউ পালন করে তাদের ঐশিদূতের জন্মদিন মনে করে। কিন্তু কিভাবে ঐসব দিন নির্মাণ করা হয়েছে; বেচারারা জানেও না। যেমন; ঠাক-পুরুৎরাও জানে না; তেমনই মোল্লা-মুন্সিরাও জানে না। ফলে তাদের অনুসারীরাও জানে না।

তথ্যসূত্রঃ মিথোলজি টু থিওলোজি
লেখকঃ বলন কাঁইজি

উপদেশনামা ১ (Advices 1)

“ﺍَﻟﺪُّﻨْﻴَﺎ ﺤَﺮَﺍﻢُ ﻋَﻟٰﻰ ﺍَﻫْﻞِ ﺍﻻَﺨِﺮَﺓِ ﻮَ ﺍﻻَﺨِﺮَﺓُ ﺤَﺮَﺍﻢُ ﻋَﻟٰﻰ ﺍَﻫْﻞِ ﺍﻟﺪُّﻨْﻴَﺎ ﻮَ ﻫُﻤَﺎ ﺤَﺮَﺍﻤَﺎﻦِ ﻋَﻟٰﻰ ﺍَﻫْﻞِ ﺍﻟﻟّﻪِ” “আদ্দুনিয়া হারামুন আলা আহলিল আখিরাতি, ওয়াল আখিরাতু হারামুন আলা আহালিদ দুনিয়া, ওয়া হুমা হারামানি আলা আহালিল্লাহ।” অর্থ; “পরকার (সন্তান) প্রত্যাশীদের জন্য পার্থিবতা নিষিদ্ধ, পার্থিবতা প্রত্যাশীদের জন্য পরকাল (সন্তান) নিষিদ্ধ এবং কাঁইজিদের জন্য (সন্তান ও পার্থিবতা) উভয় নিষিদ্ধ।” (আলহাদিস)

দুনিয়া [ﺪﻨﻴﺎ] (রূপ)বি পার্থিবতা, ইহকাল, সংসার, বিশ্ব, জগৎ, ব্রহ্মাণ্ড, ভূমণ্ডল, বিশ্বজগৎ, পার্থিবতা, সৃষ্টিজগৎ, বর্তমানজীবন (শ্ববি) ১ খাদ্য ২ পানীয় ৩ বসন ৪ সুগন্ধি ৫ বাহন ৬ নারী ৭ স্নান ৮ ঘুম ৯ আড্ডা ও ১০ অলসতা; এ দশটি বিষয়বস্তুর সমষ্টি বা এসব বিষয়স্তুর সাথে সংশ্লিষ্ঠ থাকাকে পারসিক দরবেশ (درویش) বা অলিগণ (ﻭﻟﻰ) দুনিয়া বলে থাকেন {আ}

আখিরাত [ﺍﺧﺭﺖ] (রূপ)বি পরলোক, ভবিষ্যৎকাল, উত্তরকাল, পরকাল (শ্ববি) প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, প্রতিকৃতি, দেবমূর্তি (গ্রিপ) offspring, progeny, statue, figure (ইপু) আওলাদ (আ.ﺍﻮﻻﺪ), ‘আ.ﺬﺭﻴﺔ’ (জুররিয়া), ‘আ.ﺍﺒﻨﺎﺀ’ (আবনাউ), ‘হি.ﭙﺗﻼ’ (পুতলা), ‘ফা.ﻔﺭﺰﻨﺩ’ (ফরজন্দ), ‘আ.ﺸﺭﻴﻚ’ (শরিক), ‘আ.ﺤﺸﺭ’ (হাশর) (দেপ্র) এটি; শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘সন্তান’ পরিবার প্রধান ও শ্বরবিজ্ঞানের একটি ‘পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১ সাধারণত; জীবের পুনর্জন্মকে সন্তান বা আখিরাত (ﺍﺧﺭﺖ) বলা হয় ২ শ্বরবিজ্ঞানে; পিতা-মাতার পুনর্জন্মকে সন্তান বা আখিরাত (ﺍﺧﺭﺖ) বলা হয় (ছপ) অপত্য ও পরকাল (চাপ) শৈবাল ও সঞ্জীব (উপ) প্রতিমা (রূপ) মূর্তি (মূল) সন্তান {আ}

প্রথম পর্ব জিবরাইল (First episode Gabriel/ (جبريل))

‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল)
বলন/ Gabriel (গ্যাবরিয়েল)

এটি; শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘ইঙ্গিত’ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘চারিত্রিক পরিভাষা’। এর মূলক ‘ইঙ্গিত’, রূপক পরিভাষা ‘প্রত্যাদেশ’, উপনাম পরিভাষা ‘ঐশিবাণী, দৈববাণী ও প্রতিভাস’, অন্যান্য চারিত্রিক পরিভাষা ‘গীর্বাণ, বলন ও সুবোল’ ও ছদ্মনাম পরিভাষা ‘অবতার, ঐশিদূত ও দীপন’।
গ্রিক পুরাণ বা পৌরাণিক সাহিত্যে বর্ণিত রূপক পরিভাষা Gabriel (গ্যাবরিয়েল) হতে আরবি ‘جبريل’ (জিবরীল) ও পরে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) নামক রূপক পরিভাষাটির উদ্ভব হয়েছে।

টীকা (Annotation)
স্মরণীয় যে; গ্রিক পুরাণে (Greek mythology) Gabriel বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) প্রতীতিকে প্রলয়ক্ষণের শিঙ্গাবাদক বা বংশীবাদক প্রতীতি বলা হয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের পারস্য পুরাণ (Persian mythology) বা ইসলামী পুরাণে (Islamic mythology) Seraphim (সের‌্যাফিম) বা ‘اسرافيل’ (ইস্রাফিল) প্রতীতিকে প্রলয়ক্ষণের শিঙ্গাবাদক বা বংশীবাদক বলা হয়।
অন্যদিকে; গ্রিক পুরাণে (Greek mythology) Michael (মাইখেল) বা ‘ميكائيل’ (মিকাইল) প্রতীতিকে ঐশিবাণী বাহক প্রতীতি বলা হয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের পারস্য পুরাণ (Persian mythology) বা ইসলামী পুরাণে (Islamic mythology) Gabriel বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) প্রতীতিকে ঐশিবাণী বাহক প্রতীতি বলা হয়।
এটি ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) প্রতীতির আলোচনা। এজন্য; এখানে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) প্রতীতিকে ঐশিবাণী বাহক প্রতীতি ধরে আলোচনা অগ্রসর করা হলো। পাঠককুলকে রূপক বর্ণনা বিভ্রান্তির মহাবিপদ হতে রক্ষা করার জন্যই বিষয়টি আগেই স্মরণ করানো হলো।

Gabriel এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotes of the Gabriel)
১ “And I heard a man’s voice between the banks of the Ulai, and it called, “Gabriel, make this man understand the vision.” (Daniel 8:16, English Standard Version (ESV).
২ “And the angel answering said unto him, I am Gabriel, that stand in the presence of God; and am sent to speak unto thee, and to shew thee these glad tidings.” (Luke 1:19, New Testament).
৩ “In the sixth month of Elizabeth’s pregnancy, God sent the angel Gabriel to Nazareth, a town in Galilee.” (Luke 1:26 New International Version (NIV).
৪ “Yea, whiles I was speaking in prayer, even the man Gabriel, whom I had seen in the vision at the beginning, being caused to fly swiftly, touched me about the time of the evening oblation.” (Daniel 9:21, King James Version (KJV)).

Gab [গ্যাব] n ১.কথা, বাচন, কহন, আলাপ, আলাপন, আলাপ-আলোচনা, গল্প, বৃথা গল্প, বকবকানি, জল্পন, জল্পনা ২.চাপা, চোপা (চাপাবাজি) ক্রি জল্পনা করা, বৃথা গল্প করা, talk, speculation, prate, utterance, discussion {ই}
Gabble [গ্যাবল] v ১ বলা, বকা, কথা বলা, কথোপকথন করা ২ বকবক করা, তুচ্ছ আলাপ করা, অসার কথা বলা, চুপিসারে কথা বলা, আবোল-তাবোল বলা, বিড়বিড় করা, অস্ফুট স্বরে বলা ৩ হড়বড়ানি, হড়বড় করে বলা, দ্রুত ও অস্পষ্ট স্বরে কথা বলা 1.talk 2.tattle, maunder, blab, blether, blather, blither, babble, jabber, patter, footle, blah-blah {ই}
Gabriel [গ্যাবরিয়েল] n বাগ্দেবতা, কণ্ঠপ্রতীতি, স্বর্গীয় সংবাদবাহক (a divine messenger), ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) (প্র) ১ হিব্রু রূপকারদের সৃষ্টি প্রধান ৪ জন প্রতীতির মধ্যে একজন ২ ঐশিবাদী (Semitic) শাস্ত্রীয় মনীষীদের রূপক বর্ণনা মতে যে প্রতীতি স্বর্গীয়বাণী মর্ত্যবাসী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে থাকে ৩ (বাইবেলের রূপক বর্ণনা অনুযায়ী) যে শ্রেষ্ঠ শ্রেণীর দেবদূত কুমারী মেরীকে যিশুর জন্ম ব্যাপারে আগাম সংবাদ দিয়েছিলেন (লূক ১: ২৬-৩৮)। এছাড়াও যিনি দীক্ষাদাতা জোহনের পিতা জাকারিয়া এবং ড্যানিয়েলের নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন ৪ (ইসলামী পুরাণ বা পৌরাণিক সাহিত্যের রূপক বর্ণনা অনুযায়ী) সেই প্রতীতি যিনি বসিধের নিকট ত্রিতয় অবতীর্ণ করতেন ((in the Bible) the archangel who foretold the birth of Jesus to the Virgin Mary (Luke 1:26–38), and who also appeared to Zacharias, father of John the Baptist, and to Daniel; (in Islam) the archangel who revealed the Koran to the Prophet.) (পরি) ১ কণ্ঠপ্রতীতি, বাক্প্রতীতি, জীবের কণ্ঠে বসে কথা বলেন যিনি, যে প্রতীতি বোবার কণ্ঠে না থাকার কারণে বোবা কথা বলতে পারে না ২ মানুষের মুখের কথা, স্বর্গরূপ মনে উদিত ভাব সপ্তকর্মরূপ সপ্তাকাশ অতিক্রম করে মুখ দ্বারা যিনি প্রকাশ করেন (ব্য্য) মুখের কথার চেয়ে শক্তিশালী ও মর্মঘাতী আর কিছু নাই বলে শ্বরবিজ্ঞানে মুখের কথাকে অধিক শক্তিশালী বলা হয় (শ্ববি) বাক্, কথা, ভাষণ, speak, ক্বওল (আ.ﻗﻮﻞ) (আপ্রশ) ইঙ্গিত, কম্পন, স্পন্ধন, গীর্বাণ, গীষ্পতি (আপ) যবান (ফা.ﺯﺒﺎﻦ), ইরশাদ (আ.ﺍﺮﺸﺎﺪ), ইলহাম (আ.ﺍﻟﻬﺎﻢ), এলান (আ.ﺍﻋﻼﻦ), পয়গাম (ফা.ﭙﻴﻐﺎﻢ), ফরমান (ফা.ﻔﺭﻤﺎﻦ), হাদিস (আ.ﺤﺪﻴﺚ) (ইদৈ) orator, speaker (সংজ্ঞা) ১ ঐশিবাদী (Semitic) শাস্ত্রীয় মনীষীদের মতে যে প্রতীতি স্বর্গীয়বাণী মর্ত্যবাসী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় তাকে Gabriel (গ্যাবরিয়েল) বলা হয় ২ জীবের কণ্ঠে বসে কথা বলে যে প্রতীতি তাঁকে Gabriel (গ্যাবরিয়েল) বা বলন বলা হয় (দেপ্র) এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘ইঙ্গিত’ পরিবারের ‘চারিত্রিক পরিভাষা’ ও শ্বরবিজ্ঞানের একটি প্রতীতি বিশেষ (ছনা) অবতার, ঐশিদূত ও দীপন (চাপ) গীর্বাণ, বলন ও সুবোল (উপ) ঐশিবাণী, দৈববাণী ও প্রতিভাস (রূপ) প্রত্যাদেশ (মূল) ইঙ্গিত {ই}

ইংরেজি Gab (গ্যাব) অর্থ কথা, বচন ও কহন ইত্যাদি। Gab (গ্যাব) হতে Gabble (গ্যাবল) পরিভাষাটির উদ্ভব হয়েছে। Gabble (গ্যাবল) অর্থ অস্পষ্ট স্বরে কথা বলা, ফিসফিস করে কথা বলা। অতঃপর; গ্রিক পুরাণে (Greek mythology) এসে Gabble (গ্যাবল) Gabriel (গাবরিল) হয়েছে। তারপর; গ্রিক পুরাণ (Greek mythology) হতে পারস্য পুরাণে (Persian mythology) এসে এটি ‘جِبْرِيل’ (জিবরিল) হয়েছে। পরবর্তীকালে এটি ইসলামী পুরাণে (Islamic mythology) এসে ‘جِبْرِيل’ (জিবরিল) ও ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিবরাইল) ইত্যাদি হয়েছে।
গ্রিক ও ইসলামী মিথোলজিতে Gabble, Gabriel, ‘جِبْرِيل’ (জিবরিল) ও ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিবরাইল) যাই বলা হোক না কেন; এর অর্থ যে মুখের কথা এতে কোন সন্দেহ নেই। শ্বরবিজ্ঞানে যেহেতু; মূলককে রূপক পরিভাষার আড়ালে রেখে আলোচনা করা হয়, বিধায় এখানে কথার আলোচনার মূল হচ্ছে; যার সাহায্যে জীব কথা বলে। অর্থাৎ; বাক্প্রতীতি, বাগ্দেবতা, কণ্ঠপ্রতীতি, কণ্ঠদেবতা, কণ্ঠেশ্বর, কণ্ঠপতি, বাগ্মী, দেবী সরস্বতী, সরস্বতী দেবী। অর্থাৎ; কণ্ঠে বসে কথা বলেন যিনি। বোবার কাছে মুখ ও মুখগহব্বর থাকার পরও; যে প্রতীতি না থাকার কারণে সে কথা বলতে পারে না। এককথায় কণ্ঠপ্রতীতি। একে বাংলায় ‘বলন’, ইংরেজি ভাষায় Gabriel (গ্যাবরিল) ও আরবিতে ‘جبريل’ (জিবরীল) বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) বলা হয়।

জিবরিল (ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ) এর ওপর কুরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি
(Some highly important quotes of the Gabriel of the Holy Quran)
১ “ قُلْ مَن كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ نَزَّلَهُ عَلَىٰ قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللَّهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَبُشْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ” উচ্চারণঃ ‘কূল্ মান্ কা-না ‘আদুওয়্যাল লিজিবরীলা, ফাইন্নাহূ নাঝ্ঝালাহূ ‘আলা- ক্বলবিকা বিইয্নিল্লাহি মুসোয়াদ্দিক্বল্ লিমা-বাইনা ইয়াদাইহি অহুদাওঁ অবুশরা লিলমু‘মিনীন।’ অর্থঃ “বলো, ‘যে বলনের শত্রু হয় (সে অনুশোচনায় মরুক), কেননা নিশ্চয় বলন তা কাঁইয়ের অনুমতিতে তোমার অন্তরে অবতীর্ণ করে থাকে, তার সামনে থাকা গ্রন্থের সমর্থক, পথনির্দেশ ও বিশ্বাসীদের জন্য সুসংবাদরূপে।” (কুরান, সুরা বাক্বারা- ৯৭)।
২ “مَن كَانَ عَدُوًّا لِّلَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِّلْكَافِرِينَ” উচ্চারণঃ ‘মান্ কা-না ‘আদুওঁ অলিল্লাহি অমালা-য়িকাতিহী অরুসুলিহী অজিবরীলা অমীকা-লা, ফাইন্নাল্লা-হা ‘আদুওয়্যাল্লিল্ কা-ফিরীন।’ অর্থঃ “যে শত্রু হবে কাঁইয়ের, তাঁর প্রতীতিদের, তাঁর সাঁইগণের, বলনের ও বরুণের- তবে নিশ্চয় কাঁই যবনদের শত্রু।” (কুরান, সুরা বাক্বারা- ৯৮)।
৩ “ إِن تَتُوبَا إِلَى اللَّهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا ۖ وَإِن تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَٰلِكَ ظَهِيرٌ ” উচ্চারণঃ ‘ইন্ তাতূবা ইলাল্লাহি ফাক্বদ্ সোয়াগাত্ কুলূবুকুমা- অইন্ তাজোয়া-হার ‘আলাইহি ফাইন্নাল্লা-হা হুওয়া মাওলা-হু অজিবরীলু অসোয়া-লিহুল্ মু’মিনীনা অল্মালা-য়িকাতু বা’দা যা-লিকা যোয়াহীরু।’ অর্থঃ “যদি তোমরা উভয়ে কাঁইয়ের কাছে সন্তাপ করো। কারণ তোমাদের উভয়ের অন্তর বাঁকা হয়েছে, তোমরা যদি তার বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করো, তবে কাঁইই তার অভিভাবক এবং বলন ও সৎকর্মশীল বিশ্বাসীরাও। তাছাড়া অন্যান্য প্রতীতিরাও তার সাহায্যকারী।” (কুরান, সুরা তাহরিম- ৪)

জিবরিল [جِبْرِيل], জিব্রাইল [ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ] (রূপ)বি ১ বলন, সুবোল (সাঅ) অত্যন্ত কঠিন, অধিক শক্তিশালী (ভাঅ) স্বর্গীয় বার্তাবাহক, স্বর্গীয় বাণীবাহক (প্র) কুরানী মনীষীদের রূপক বর্ণনা মতে; যিনি স্বর্গীয়বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে থাকেন, যিনি স্বর্গধাম হতে মর্ত্যধামের মানুষের নিকট স্বর্গীয়বাণী নিয়ে অবতরণ করে থাকেন (পরি) ১ কণ্ঠপ্রতীতি, বাক্প্রতীতি, জীবের কণ্ঠে বসে কথা বলেন যিনি, যে প্রতীতি বোবার কণ্ঠে না থাকার কারণে বোবা কথা বলতে পারে না ২ মানুষের মুখের কথা, স্বর্গরূপ মনে উদিত ভাব সপ্তকর্ম রূপ সপ্তাকাশ অতিক্রম করে মুখ দ্বারা যিনি প্রকাশ করেন (ব্য্য) মুখের কথার চেয়ে শক্তিশালী ও মর্মঘাতী আর কিছু নাই। এজন্য; শ্বরবিজ্ঞানে মুখের কথাকে অধিক শক্তিশালী বলা হয় (শ্ববি) বাক্, কথা, ভাষণ, speak, ক্বওল (আ.ﻗﻮﻞ) (আপ্রশ) ইঙ্গিত, কম্পন, স্পন্ধন, গীর্বাণ, গীষ্পতি (আপ) যবান (ফা.ﺯﺒﺎﻦ), ইরশাদ (আ.ﺍﺮﺸﺎﺪ), ইলহাম (আ.ﺍﻟﻬﺎﻢ), এলান (আ.ﺍﻋﻼﻦ), পয়গাম (ফা.ﭙﻴﻐﺎﻢ), ফরমান (ফা.ﻔﺭﻤﺎﻦ), হাদিস (আ.ﺤﺪﻴﺚ) (ইদৈ) orator, speaker (সংজ্ঞা) ১ ঐশিবাদী (Semitic) শাস্ত্রীয় মনীষীদের রূপক বর্ণনা মতে; যে প্রতীতি স্বর্গীয়বাণী মর্ত্যবাসী মানুষের কাছে পৌঁছে দেন তাকে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) বলা হয় ২ যে প্রতীতি জীবের কণ্ঠে বসে কথা বলেন তাঁকে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) বা বলন বলা হয় (দেপ্র) এটি; শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘ইঙ্গিত’ পরিবারের ‘চারিত্রিক পরিভাষা’ ও শ্বরবিজ্ঞানের একটি ‘প্রতীতি’ বিশেষ (ছনা) অবতার, ঐশিদূত ও দীপন (চাপ) গীর্বাণ, বলন ও সুবোল (উপ) ঐশিবাণী, দৈববাণী ও প্রতিভাস (রূপ) প্রত্যাদেশ (মূল) ইঙ্গিত {আ}
জিবরাইল

বাংলায় এর আরো অনেক সুন্দর সুন্দর রূপক নাম রয়েছে। নিচে শ্বরবিজ্ঞানের মূলকের আভিধানিক, রূপক, উপমান, চারিত্রিক ও ছদ্মনাম বিষয়ক কয়েকটি পরিভাষা তুলে ধরা হলো;
মূলক সদস্যঃ ইঙ্গিত।
আভিধানিক প্রতিশব্দঃ আভাস, ঠার, শাট, সংকেত, সংবাদ ও সন্দেশ।
রূপক পরিভাষাঃ প্রত্যাদেশ।
উপমান পরিভাষাঃ ঐশিবাণী, কথা, দীপন, দৈববাণী, বাণী, বারতা, ভাষণ ও ভাষা।
চারিত্রিক পরিভাষাঃ গীর্বাণ, গীষ্পতি, প্রণব, বলন১, বাগীশ, বাগ্মী, লক্ষণ, স্বনিত ও সুবোল।
ছদ্মনাম পরিভাষাঃ অবতার, ঐশিদূত, কথন, কুশল, দেবনাগরী, দেববাক্য, দেবভাষা, দেবাদেশ, দৈববাণী, প্রতিভাস, প্রত্যাদেশ, বচন, বাক্, বাক্য, বাক্যনবাব, বাক্যবাগীশ, বাক্যবিশারদ, বাক্যবীর, বাচন, বোল২, ভাষক, রাজভাষা, রেহা, স্বন, স্বনন, স্বর, স্বর্গীয়বাণী ও হরবমবম।

জিব্রাইল (ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ) এর সংজ্ঞা (Definition of Gabriel)
ঐশিবাদী (Semitic) শাস্ত্রীয় মনীষীদের মতে; যে প্রতীতি স্বর্গীয়বাণী মর্ত্যবাসী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় তাকে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) বলে।
জিব্রাইল (ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ)এর আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theological definition of Gabriel)
যে প্রতীতি জীবের কণ্ঠে বসে কথা বলে তাঁকে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) বলে।

জিব্রাইল (ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ) এর প্রকারভেদ (Classification of Gabriel)
জিব্রাইল (ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ) দুই প্রকার। যথা; ১ উপমান ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) ও ২ উপমিত ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল)।
১ উপমান ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) (Analogical Gabriel)
ঐশিবাদী (Semitic) শাস্ত্রীয় মনীষীদের মতে যে প্রতীতি স্বর্গীয়বাণী মর্ত্যবাসী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় তাকে উপমান ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) বলে।
২ উপমিত ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) (Compared Gabriel)
যে প্রতীতি জীবের কণ্ঠে বসে কথা বলে তাঁকে উপমিত ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) বলে।

জিব্রাইল (ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ) এর কাজ (Gabriel’s work)
ঐশিবাদী (Semitic) শাস্ত্রীয় মনীষীদের রূপক বর্ণনা মতে ঐশিবাণী, ঐশিবার্তা বা স্বর্গীয়বাণী মর্ত্যবাসীর নিকট পৌঁছে দেওয়াই Gabriel বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) প্রতীতির প্রধান কাজ। এছাড়া; মর্ত্যধামের মানুষের সুখ-দুঃখের সংবাদ ও মনোনীত প্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় বিষয়-আশয় স্রষ্টার নিকট পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) প্রতীতির কাজ। ইসলামী পুরাণে (Islamic mythology) আরো বর্ণিত আছে যে; Gabriel বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) প্রতীতির ৭০,০০০ পাখা আছে। তিনি চোখের পলকে বিশ্ব পরিভ্রমণ করতে পারেন।

জিব্রাইল (ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ) এর পরিচয় (Identity of Gabriel)
এটি; শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘ইঙ্গিত’ পরিবারের অধীন একটি ‘চারিত্রিক পরিভাষা’ বিশেষ। সাধারণত; ঐশিবাদী (Semitic) শাস্ত্রীয় মনীষীদের রূপক বর্ণনা মতে; স্বর্গীয় বার্তাবাহক বা বাণীবাহক প্রতীতিকে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) বলা হয়।

ভারতীয় পুরাণে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) (Gabriel at the Indian mythology)
ভারতীয় পুরাণে Gabriel বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) প্রতীতির কোন অস্তিত্ব নেই। কারণ; ভারতীয় পুরাণগুলো অবতারবাদ (Non-semitism/ incarnationalism) নির্ভর।
উল্লেখ্য; সারা বিশ্বে শাস্ত্রীয় বা সাম্প্রদায়িক মতবাদ দুই প্রকার। যথা; ঐশিবাদ (semitism) ও অবতারবাদ (Non-semitism)। যে মতবাদে ঈশ্বর নিজে অবতরণ না করে তাঁর মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে মর্ত্যধামে ঐশিবাণী প্রচার করেন তাকে ঐশিবাদ বলে। অন্যদিকে; যে মতবাদে ঈশ্বর সরাসরি মানুষ রূপে অবতরণ করে মর্ত্যধামে স্বর্গীয়বাণী প্রচার করেন তাকে অবতারবাদ বলে। ভারতীয় পুরাণ মতে; মর্ত্যধামকে পাপমুক্ত করার জন্য, যুগে যুগে ঈশ্বর মানুষ রূপে অবতরণ করেছেন। যেমন; রাম অবতার ও কৃষ্ণ অবতার। তাই; ভারতীয় পুরাণী দর্শনে স্বর্গীয়দূত বা ঐশিদূতের কোন প্রয়োজন, ব্যবহার ও নাম নেই।
স্মরণীয় যে; মহামতি ‘নারদমুনি’ বা ‘নারদ’ যদিও এক দেবতার কথা অন্য দেবতার নিকট ও একস্থানের সংবাদ অন্যস্থানে বহন করেন, তবুও; তাঁকে জিবরাইলের সমপর্যায় গণ্য করা যায় না।

মানবদেহে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) এর অবস্থান (Gabriel’s position in the human body)
আত্মতাত্ত্বিক মনীষীদের বাস্তববাদী আত্মদর্শন অনুযায়ী; জীবের কণ্ঠে বসে যে প্রতীতি কথা বলেন তাকে Gabriel বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) বলা হয়। জীবের কণ্ঠে দু‘জন প্রতীতি বাস করেন। একজন অন্ন গ্রহণ করেন এবং অন্যজন কথা বলেন। বোবার কাছে Gabriel বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) নেই। এজন্যই; সে কথা বলতে পারে না।
সারা বিশ্বের আত্মতাত্ত্বিক মনীষীদের মতে ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) হলো মুখের কথার (Saying)/ (قول) ‘রূপক পরিভাষা’। আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের সূত্র হলো; বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্যের যে কোন মূলকের রূপক নামকরণ করলে তা প্রতীতিতে (Angel)/ (ملاك) পরিণত হয়। এ সূত্র অনুযায়ী (Saying)/ (قول) কে রূপক নামকরণ করে Gabriel বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) প্রতীতি নির্মাণ করা হয়েছে।

পৌরাণিক শূন্যক সংখ্যা সূত্র (Mythological zeros number formula)
“মূলক সংখ্যায় শূন্য (০) হ্রাস-বৃদ্ধি করলে; গাণিতিকভাবে দশগুণ পরিবর্তন হয়, কিন্তু; শ্বরবিজ্ঞানে মূলক সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না।” (“The zero (0) decrease-increase in the radical-number; although mathematically tenfold is to change but does not change the radical-number in the theology.”)

এ সূত্র অনুসারে ৭০,০০০ হতে ০০০ তুলে দিলে মাত্র ৭০ থাকে। এটি হলো মানুষের গড় হৃদকম্পন (Heartbeat)। বিশ্ব বলতে মানবদেহ। তিনি চোখের পলকে বিশ্ব পরিভ্রমণ করতে পারেন এটি পুরাণ বা পৌরাণিক সাহিত্যের অলঙ্কার। মস্তিষ্ক রূপ স্বর্গে সৃষ্টি ইঙ্গিত দেহ রূপ মর্ত্যে কথা রূপে প্রকাশ করাকেই স্বর্গের বাণী মর্ত্যে প্রচার বলা হয়েছে। পরিশেষে বলা যায় যে; ঐশিবাদী (Semitic) বা অবতারবাদী (Non-semitic) পুরাণ বা পৌরাণিক সাহিত্যে বর্ণিত স্বর্গীয় দূত Gabriel বা ‘ﺠﺑﺮﺍﺌﻴﻞ’ (জিব্রাইল) হচ্ছেন মানুষের কথা বলার ক্ষমতা বা বাকশক্তি (Tongun/ Power of speech)।

৭০,০০০ (সত্তর হাজার) পৌরাণিক সংখ্যা
ভূমিকা (Introduction)
বিশ্বের বিভিন্ন শ্বরবিজ্ঞান, পুরাণ, মরমী গীতি, আধ্যাত্মিক, আত্মতাত্ত্বিক, সাম্প্রদায়িক, পারম্পরিক ও শাস্ত্রীয় পুস্তক-পুস্তিকায় ৭০,০০০ এর সহগ পরিভাষা রূপে সর্বাধিক ব্যবহৃত পরিভাষাগুলো তুলে ধরা হলো। যথা; সত্তর হাজার কর্ম-ইন্দ্রিয়-মাস, সত্তর হাজার পর্দা, সত্তর হাজার বছর, সত্তর হাজার ও সত্তর হাজার সাল ইত্যাদি।

প্রস্তাবনা (Preamble)
৭০,০০০ (সত্তর হাজার) বিশ্বের বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক, পারম্পরিক, মরমী, আত্মতাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক সম্প্রদায়ের শ্বরবিজ্ঞান, পুরাণ ও শাস্ত্রীয় পুস্তক-পুস্তিকায় বহুল ব্যবহৃত একটি পৌরাণিক সংখ্যা। সংখ্যাটির দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি বের করতে হবে।

পৌরাণিক সাংখ্যিক পরিচয় (Mathematical numeric identity)
এখানে লক্ষণীয় যে; পৌরাণিক সংখ্যা ৭০,০০০ এর ডানের শূন্য তুলে দিলে এটি ‘৭ (সাত)’ হয়। আর শ্বরবিজ্ঞানের ‘সপ্তকর্ম’ মূলক সংখ্যার সাংখ্যিক প্রতীক (Numeric symbol) ‘৭ (সাত)’। যেহেতু; উপরোক্ত পৌরাণিক সংখ্যাটির ডানের শূন্য তুলে দেওয়ার পর; এটি শ্বরবিজ্ঞানের ‘সপ্তকর্ম’ মূলক সংখ্যার সাংখ্যিক প্রতীক ‘৭ (সাত)’ এর সাথে মিলে যায়; সেহেতু; স্পষ্টভাবে বলা যায় যে; ৭০,০০০ সংখ্যাটি একটি ‘পৌরাণিক সরল শূন্যক রূপক সংখ্যা’।

ব্যাখ্যা (Explanation)
এখানে ৭০,০০০ একটি পৌরাণিক সরল শূন্যক রূপক সংখ্যা। সংখ্যাটির দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি বের করার জন্য; প্রথমে সংখ্যাটির গাণিতিক কমা (যদি থাকে) তুলে দিতে হবে। তারপর; মূলক সংখ্যা ও শূন্যের মাঝখানে স্থাপক কমা দিয়ে ডানের শূন্য তুলে দিতে হবে। তারপর, (তিনের অধিক সংখ্যা থাকলে) গাণিতিক কমা দিতে হবে। সর্বশেষে; দ্বিতীয় বন্ধনীর মধ্যে মূলক সহগ পরিভাষা লেখতে হবে। যেমন; ৭০,০০০ = ৭০০০০ = ৭,০০০০ = ৭ = {৭ কর্ম}। যারফলে; ৭০,০০০ পৌরাণিক সরল শূন্যক রূপক সংখ্যারটির দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি ৭ (সাত) পাওয়া গেল।
আমরা জানি যে; শ্বরবিজ্ঞানের ‘সপ্তকর্ম’ মূলক সংখ্যার সহগ সংখ্যা ‘৭ (সাত)’। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে; শ্বরবিজ্ঞানের ‘সপ্তকর্ম’ মূলক সংখ্যার ‘৭ (সাত)’ এর ডানে এক বা একাধিক শূন্য স্থাপন করে ৭০০০০ সংখ্যা সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর; গাণিতিক কমা দিয়ে ৭০,০০০ রূপে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন; {৭ কর্ম} = ৭ = ৭,০০০০ = ৭০০০০ = ৭০,০০০। অর্থাৎ; ৭০,০০০ পৌরাণিক সরল শূন্যক রূপক সংখ্যারটির দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তিগত মূলক সংখ্যা (Theological etymological radical number) {৭ কর্ম}।

গাণিতক সমাধান (Mathematical solution)
৭০,০০০
= ৭০০০০
= ৭,০০০০
= ৭
= {৭ কর্ম}।

ব্যুৎপত্তি (Etymology)
৭০,০০০ = ৭০০০০ = ৭,০০০০ = ৭ = {৭ কর্ম}।
নির্মাণ (Formation)
{৭ কর্ম} = ৭ = ৭,০০০০ = ৭০০০০ = ৭০,০০০।

৭০,০০০ এর মহাগ্রন্থিক প্রমাণ (Epical evidence of seventy thousand)
১ “গাছের ছিল চার ডাল,
রইল সেথা সহস্র সাল,
একেক ডাল কত দূরে,
সত্তর হাজার সাল ধরে,
গাছের পরে সাধন করে,
বারিতা’লার হুকুম করে,
নূর দ্বারা দুনিয়া সৃষ্টি করে।” (পবিত্র লালন- ৫৮৪/২)

২ “সাধু চরণ পরশিলে
সত্তর হাজার পর্দা খুলে
সাঁই আসে সাধুর নাগালে
বলন কয় ভেদখানা।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৯৩)
—————————————————
তথ্যসূত্রঃ ‘আত্মতত্ত্ব ভেদ’ (১ম হতে ৮ম খণ্ড)
—————————————————
প্রথম পর্ব জিবরাইল (First episode Gabriel/ (جبريل))
দ্বিতীয় পর্ব মিকাইল (Second episode Michael/ (مايكل))
তৃতীয় পর্ব ইসরাফিল (Third episode Seraphim/ (سيرافيم))
চতুর্থ পর্ব আজরাইল (Fourth episode Archangel/ Reaper/ (عزرائيل))