করলিয়ন এর সকল পোস্ট

করলিয়ন সম্পর্কে

সৃষ্টি নাকি স্রষ্টার প্রিয় জিনিস।তবে মৃত্যু কেন সৃষ্টির অনিবার্য।সৃষ্টিতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব এগুলো আমাকে স্রষ্টা থেকে দূরে বহু দূরে নিয়ে যায়।

দেবী

হে কৃষ্ণ কেশী,
তোমার ললাটে এখনো কি চন্দ্রিমার আলো চকমক করে?
রাত্রির ঝিঝিপোকারা কি এখনো তোমার গায়ে ফুল চন্দনের ঘ্রান খুজে?
এখনো কি খোলা মাঠের সবুজ ঘাস তোমার নগ্ন পায়ের স্পর্শ খুজে?
পড়ন্ত সূর্য এখনো কি তোমার রূপসা নদীর স্নানকে পুজা করে?
গ্রীষ্মের ঘামে ভেজা শরীরের গন্ধ এখনো কি দখিনা হাওয়া বয়ে নিয়ে চলে?
বর্ষার লগনে এখনো কি বৃষ্টির ফোটারা তোমায় স্পর্শ করবে বলে ব্যাকুল হয়ে থাকে?
এখনো কি হেমন্তের প্রথম ফুল তোমার স্পর্শের লজ্জাবতী হয়ে ওঠে?

একটি আত্মহত্যা

মাগো
আমি আর তোমায় ডাকতে পারব না
আমার কণ্ঠনালি যে চিরকালের জন্য স্তব্ধ আজ।
বাবার ক্লান্ত মুখখানি আর দেখতে পাব না মা।
দ্বিপ্রহরে আমার পথ চেয়ে নলিনী আর বসে থাকবে না।

মাগো
আমি অনেক চেস্টা করেছি,,, জানো!
আমি চিৎকার করে তোমাকে কত ডেকেছি,,,
মা মা
তুমি শুনতে পাও নি মা?

তিন দিন খাই নি
ক্ষুদা তৃষ্ণায় কাতর আমি।
তোমার উপর রাগ হয়েছে জানো?

যখন আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেল
সব কিছু
কেমন যেন অন্ধকার থেকে ঘোর অন্ধকার হতে লাগল।
ততক্ষনে আমার তৃষ্ণা মিটে গেল
আমি ছটফট করছি।

চারিদিকে কি নিষ্ঠুর নিস্তব্ধতা।
তুমি কোথায় মা?
আমার বড্ড ভয় হচ্ছিল।
শ্বাস নিতে কি যে কষ্ট
যেন সমস্ত শরীর আমার অসার হয়ে পরেছে।

আমার কানে কোন শব্দ আসছে না
মৃদু বাতাসের শব্দটুকুও নয়।
চাপা একটা বিশ্রী গন্ধ আসছে।
গন্ধে মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে।

পরক্ষণেই মনে হচ্ছে কেউ যেন ইচ্ছে করে আমার ভিতরের সমস্ত কিছু টেনে ছিড়ে নিচ্ছে।
শকুনেরা যেমন মাংস টেনে ছিড়ে খায় ঠিক তেমন।

আমার দুচোখ তোমায় খুজে মা,
হঠাৎ দেখি বিষন্ন মুখে তুমি দাঁড়িয়ে আছো।
আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে মা।
জগতের সমস্ত ঘুম এখন আমার চোখে।
আমি জোর করেও চোখ খুলতে পারছি না।
মনে হচ্ছে যেন কেউ  আমার চোখ টেনে বন্ধ করে দিচ্ছে।

যখন ঘুম থেকে উঠলাম
দেখি
দুজন কালো পোশাকের লোক।
দৃষ্টি ফিরে এসেছে পুরোপুরি।
সেই চাপা বিশ্রী গন্ধটা
আর নেই।
আমার নিথর শরীরটা শুধু পরে আছে।

জানো মা,
আমার কোন ব্যথা নেই।
তারা একে একে সমস্তকিছু বের করে নিল।
মাথা থেকে তলপেট অব্দি সমস্তই কাটা।
আমার চোখের পাতা বন্ধ।
কিন্তু তবুও আমি দেখতে পাচ্ছি।
সব সবকিছু

মা মাগো
শুধু তোমাকে দেখছি না,
তুমি কি লাশকাটা ঘরে নেই?

শুকতারা

যতবার দেখিয়াছি
বারংবার বিষ্ময়ে আবির্ভূত হয়েছি;
শুন্য বুকে হাপরের শব্দ কেবলি তাহারি আগমনে।

তুমি ভাল আছ প্রেয়সী?
সেই কৃষ্ণপক্ষের সময় তোমায় শেষবার দেখেছিলাম,
তারপর দিবারাত্রি এক করিয়া কত খোঁজেছিলাম
পায় নে তোমার দেখা।

ভুলিয়াছি শরতের শিউলে,
হাসনাহেনাদের গন্ধ
কিংবা শালিকের ডাক
কিন্তু তোমায়…

কত দেখেছি নব বধুদের
লাজুক চাহনি, চোখের কোণে সুখের জল,
হাতে কাচের লাল চুড়ি, বেণিতে লাল ফিতে।
তাহাদের কেউ নও তুমি।

দেখেছি বিমর্ষ মুখে বিধবারে,
বিবর্ণ বস্ত্রে প্রতিক্ষায় থাকা
নিস্তব্ধে ঘরে ফেরা হাঁসেরা,
শুন্য বুকে ব্যথার মেল।ক@

দেখেছি নব্য প্রসুতি মায়েদের,
রাত্রির আঁধারে বুকে জড়ানো ভালবাসা,
অসুখে বিনিদ্রা যাপন,
নিজেকে উপোস রাখা শালিক
তুমি কি ছিলে তাহাতে?

পঁয়ত্রিশের নারীদের আমি দেখেছি
স্বামীর গৃহ প্রস্থান
বধুর বুকে চাপা কষ্ট ;
নির্লজ্জ উৎকন্ঠা।
খুজেছি তাহাতেও।

বৃদ্ধাদের আমি দেখেছি
যৌবনের রূপ হারিয়ে আজ একেলা
হয়তো সে আজ অতীতে  খুজে বিভোর ।
স্পর্শ,প্রেম,লজ্জা,প্রতিক্ষা হয়তো সবই এখন মূল্যহীন
যাহা ছিল একসময়ের গৌড়।
তুমি ছিলে না তাহাতে।

তুমি হয়তো নেই কোথাও
হয়তো হারিয়েছ শিশিরকণায়,
না হয় বদলেছ রঙ ঋতুর মতন।
হয়তো গড়েছিলে নতুন সংসার,
পেয়েছিলে আপনজন।
কিন্তু আমি কি পেয়েছিলাম তোমায়!

আজ শতাব্দী পেড়িয়ে গেছে
তোমার কথা হয়তো থাকবে আমার চিঠির ভাজে।
আমার প্রতিটি কবিতার উৎসর্গ কেবলি তোমার তরে।
কেননা তুমিই ছিলে
আমার অপ্রাপ্ত বয়সের প্রথম প্রেম।