ইলহাম এর সকল পোস্ট

আলাপন-২

আলাপন-২
……/ইলহাম

এখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। আদ্রিয়ান্না ইউনিভার্সিটিতেই আছে। এই মাত্র যে ক্লাসটি শুরু হোল সেই সাবজেক্টের নাম অর্গানাইজেশনাল বিহ্যাভিওর।
যিনি ক্লাস নিচ্ছেন উনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের এসোসিয়েট প্রফেসর।

যেহেতু এটা একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তাই অন্যান্য অনেক পাবলিক ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি এখানে এসে পার্ট-টাইম কিংবা কন্ট্র্যাক্টে ক্লাস নেন।

আজকের টপিকটা হচ্ছে “ম্যানেজিং স্ট্রেস এন্ড দ্যা ওরার্ক-লাইফ ব্যালেন্স”।

টিচার ইংলিশে লেকচার দিচ্ছেন কোন কোন কাজে বা কোন জবে সবচেয়ে বেশি স্ট্রেস থাকে সে বিষয়ে। উনি বললেন, “সমীক্ষায় দেখা গেছে সব চেয়ে বেশি স্ট্রেস হচ্ছে ইউ এস এ প্রেসিডেন্ট এর পদে এবং এই জবের স্ট্রেস স্কোর 176.6 এবং এর পরে স্ট্রেস বেশি হচ্ছে ফায়ার ফাইটারের জবে যার স্ট্রেস স্কোর 110.9 আর তৃতীয় স্থানে আছে সিনিয়র এক্সিকিউটিভের জব এবং এক্ষেত্রে স্ট্রেস স্কোর 108.6 তবে সবচেয়ে কম স্ট্রেসের জব হচ্ছে বুক কিপারের যার স্ট্রেস স্কোর মাত্র 21.5।

আদ্রিয়ান্না লেকচার শুনতে শুনতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেলো।
এম বি এ এর পাশাপাশি ও একটি মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে এক্সিকিউটিভ পদে জব করেছে। সেও একদিন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হবে।

আদ্রিয়ান্না ভাবতে লাগলো, কি দরকার জীবনে এতো স্ট্রেস নিয়ে? ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে গাড়ী, ফ্ল্যাট এবং এক কোটি টাকা লিকুইড মানি করতে হবে – এটা যেনো এই সময়ের ছেলে মেয়েদের জন্য একটা ফ্যশান হয়ে উঠেছে। অথচ আমার বাবার বয়স এখন ৬২ বছর। আমরা এখনও ভাড়া বাসায় থাকি। রিক্সায় চলাফেরা করি। বাবার এক কোটি টাকা লিকুইড মানি-তো অনেক দুরের কথা। বাবা সরকারি চাকুরী করতেন একটি উঁচু পদে। গতো বছর রিটায়ার্ড করেছেন। হয়তো পেনসন স্কিমে অল্প কিছু টাকা পেয়েছেন। তবে বাবার অনেক কলিগদের ছেলে-মেয়েদের দেখি দামী দামী গাড়ীতে চলা-ফেরা করে। ঢাকায় ওদের অনেকের দুই তিনটা বাড়ীও আছে। বাবার কলিগরা এতো কিছু করতে পারলে বাবা কেনো পারলেন না? আমারও কি এখন রিক্সায় না চলে ওদের মতো প্রাডো বা লেক্সাসে চলা-ফেরা করার কথা নয়? বাবার কলিগরা হয়তো চাকুরীর পাশাপাশি অন্য ব্যবসা করতেন অথবা কি করে এতো টাকা উনারা সংগ্রহ করেছেন কে জানে। কিন্তু এই যে এখনকার ছেলে-মেয়েরা দ্রুত ফ্ল্যাট-গাড়ীর মালিক হচ্ছে এটা কি করে হচ্ছে? বুঝলাম মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে অনেক স্যালারী কিন্তু এত দ্রুত এতো কিছু করা সম্ভব কি করে? চাকুরী করে শুধু স্যালারীর টাকা দিয়ে ঢাকায় থেকে বাসা ভাড়া দিয়ে, খেয়ে-পড়ে এত দ্রুত এতকিছু কি করে সম্ভব আমার মাথায় আসে না। আমার এক ফ্রেন্ডকে দেখেছি ব্যাঙ্ক থেকে চল্লিশ লাখ টাকা লোণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছে। অনেক ইন্টারেস্ট সহ বিশ বছরে টাকা শোধ করতে হবে। পঞ্চান্ন হাজার টাকা করে তাকে প্রতি মাসে ইন্সটলমেন্ট দিতে হয়। দু বছর ইন্সটলমেন্ট দেয়ার পর আর চালাতে পারলো না। ব্যাঙ্কের চাপে, নিলামে তোলার হুমকি আর আজে বাজে কথা সয্য করতে না পেরে অবশেষে ফ্ল্যাট টি বিক্রি করে ব্যঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছে। মাঝে দু বছর পঞ্চান্ন হাজার করে যে প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যাংক কে দিয়েছে সেটাই লস। ব্যাঙ্ক অনেক ধরণের জটিল অঙ্ক দেখায়। বলে আগে প্রিমিয়াম ইন্টারেস্ট শোধ হবে তারপর মূল টাকা পরিশোধ হবে। ১৪ লাখ টাকায় নাকি প্রিমিয়াম ইন্টারেস্ট এর অর্ধেকও শোধ হয় নি। আমার সেই ফ্রেন্ড আমাকে বলেছিলো, “আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। আমি লোন নিয়েছিলাম ৪০ লাখ। ৫৫ হাজার করে বিশ বছর দিতে হলে ৪০ লাখের পরিবর্তে আমাকে দিতে হতো ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা কারন ওরা কি কি সব হিসাব দেখায়। বলে টাইম ইজ মানি, ২০ বছরের ইভ্যালুয়েশনে ঐ টাকা (১ কোটি ৩২ লাখ) একটুও বাড়তি নয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।”
আমি অবশ্য এতো চাকচিক্য জীবন চাই না। সিম্পল লাইফই আমার কাছে ভালো লাগে।

-Can you tell me what the stress score of US President is?

মুহূর্তেই সজাগ হয়ে উঠ্লো আদ্রিয়ান্না, বুঝতে পারলো টিচার প্রশ্ন করেছেন। সামলে নিয়ে সে টিচারের দিকে তাকালো।
তাকানোর পর টিচার বললেন,

-Yes, please tell me Audrianna.
-Sir, this is 176.6
-Thank you.

ক্লাস শেষ করে আদ্রিয়ান্না বাসায় ফিরলো। হাত মুখ ধুয়ে খাওয়ার টেবিলে গে্লো।

কি রান্না করেছ মা? আদ্রিয়ান্না তার মাকে জিজ্ঞেস করলো
-বুটের ডালের খিচুড়ি, পটল ভাঁজি আর গরুর গোস
– তাড়াতাড়ি দাও খুব ক্ষুধা পেয়েছে
-একটু অপেক্ষা করো আমি দিচ্ছি

খাবার শেষ করে আদ্রিয়ান্না ওর রুমে গেল। হাই আসছে। বিছানায় শুয়ে পড়লো। কি যেন ভাবছিলো। হঠাৎ চোখ পড়ল বইয়ের শেলফে। মনে পড়লো সেই বইটির কথা। বইটির নাম “আলাপন”।
বইটি হাতে নিলো। লেখকের বৃত্তান্ত আরেকবার দেখে নিলো।
মনে মনে বললো, সেদিন আলাপন-১ পড়ে ভা্লোই লেগেছিলো। আজ দেখি আলাপন-২ তে লেখকটি কি লিখেছে।

আলাপন-২
একটি বালোক ঘুমিয়ে আছে।
হঠাৎ একটি শব্দ ভেসে এলো, কি ভাবছো হে বালোক?
বালোক টি হুড়মুড় করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো অন্ধকার কারণ লাইট অফ করা ছিলো। কিছু দেখা যাচ্ছে না। বালকটি বললো, কে কথা বলছে?
শব্দ: ভয় পেওনা। তুমি সব সময়য় যাকে নিয়ে ভাবো সে আমাকে পাঠিয়েছে।
বালোক: আমিতো স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবি। তুমি কে?
শব্দ: ধরো তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন
বা্লোক: কেনো পাঠিয়েছেন?
শব্দ: তোমার মনের ভেতোর যতো আজগুবি প্রশ্ন আছে তার উত্তর দিতে
বালোক: তুমি কি পারবে উত্তর দিতে?
শব্দ: চেষ্টা করে দেখি
বা্লোক: আমি স্রষ্টাকে দেখতে চাই
শব্দ: এটা তো খুব সহজ ব্যাপার
বালোক: কেমন করে বলো তো?
শব্দ: তার আগে বলো তুমি তাঁকে কি রূপে তাঁকে দেখতে চাও?
বা্লোক: তার মানে?
শব্দ: তুমি কি তাঁকে আলো রূপে দেখতে চাও নাকি আগুণ বা অন্য কোনও রূপে দেখতে চাও?
বালোক: না, আমি তাকে তাঁর নিজস্ব রূপে দেখতে চাই
শব্দ: ও হে বালক, তিনি-তো সবার স্বরূপ দিতে দিতে উনার সকল রূপ শেষ হয়ে গেছে। তাই নিজের রূপ এখন আর নাই।
বা্লোক: তাঁর নিজস্ব রূপ নেই?
শব্দ: না। সকল সৃষ্টির রূপ দিতে গিয়ে তাঁর নিজের আর কোনও রূপ অবশিষ্ট ছিল না। তাই তার নিজের আঁকার নাই। তিনি নিরাকার। কেমন করে তাঁকে তুমি দেখবে?
বালোক: তাকে কি আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি?
শব্দ: অনেকেই দেখেছে তবে প্রত্যেকেই কোনও না কোনও মাধ্যমে দেখেছে কারণ তাঁর নিজস্ব কোনও স্বরূপ বা আকার নেই।
বা্লোক: মাধ্যম গুলো কি কি?
শব্দ: এই ধরো আলো অথবা কোনও আগুণের আঁকার ধারণ করে কিংবা অন্য কোনও আকার ধারণ করে তিনি দেখা দিয়েছেন
বালোকঃ কিন্তু আমি তো জানি বেহেস্তে গেলে তিনি বেহেস্তবাসীদের সাথে দেখা দেবেন। তিনি নিরাকার হলে তখন কোন আকারে দেখা দিবেন?
শব্দঃ ও হে বালোক! তুমি তো এখনও বালোক আছো তাই বোঝো না। বেহেস্ত – দোজখ তো কেয়ামতের পরে হবে। তার আগেইতো সকল সৃষ্টি কূলের মৃত্যু হবে। আর সকল সৃষ্টি কুলের মৃত্যু হলেইতো তিনি তাঁর সকল স্বরুপ ফেরত পাবেন। তখন তিনি তাঁর আসল রূপেই দেখা দেবেন।
বালক: ও আচ্ছা
শব্দ: এখন বলো তুমি কোন রূপে দেখতে চাও।
বালক: আমি কোনও আলো বা আগুনের রূপে দেখতে চাই না
শব্দ: তাহলে কোন রূপে দেখতে চাও?
বালক: আমার নিজের রূপে। আমি আরেক জন আমাকে দেখতে চাই
শব্দ: ঠিক আছে। তুমি অতি স্বত্বর আরেক জন তোমাকে দেখতে পাবে

আলাপন-২ এখানেই শেষ হয়ে গেছে দেখে আদ্রিয়ান্না একটু বিরক্ত হলো।
সে ভাবলো এই লেখকটা কি পারতো না সম্পুর্ন লেখা লিখতে? কেনো যে আজকালের লেখকরা মাঝ পথে লেখা শেষ করে দেয় বুঝি না!

প্যারালাল ওয়ার্ল্ডের কথা আদ্রিয়ান্না শুনেছে কিন্তু সেটা কোথায় আছে জানে না। এই পৃথিবী যা যা আছে বা যতো প্রাণী বা মানুষ আছে সব হুবহু সব নাকি প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে আছে।

মনে মনে বললো, তাহলেতো আমি আদ্রিয়ান্নাও ওখানে আছি। আমার বাবা-মাও আছেন। কি অদ্ভূত ব্যাপার! ওখানে নাকি কারও মৃত্যু হয় না। আমার মনে হয় বিজ্ঞানীরা কোরআন পড়ে এনালাইসিস করে পরোকালকেই প্যারালাল ওয়ার্ল্ড বলতে চাইছে। কারণ ওখানে এই পৃথিবীতে যতো মানুষ এবং প্রাণী এসেছে এবং ভবষ্যতে আসবে সবাই ওখানে থাকবে এবং ওখানে কারও মৃত্যু হবে না। কর্মফল অনুযায়ী বেহেস্ত অথবা দোজখে থাকবে।

কবিতা! এখন তুমি কার?

কবিতা! এখন তুমি কার?

কবিতা! কেমন আছো তুমি?
কবিতা! এখন তুমি কার?

কতো দিন আমি খুঁজেছি তোমায়
শীতের ভোরে গভীর কুয়াশায়
নতুন আউশের টাটকা পিঠার
মিষ্টি সৌরভে খুঁজেছি তোমায়!

অলস দুপুরে ছোট্ট পুকুরের
পাড়ে বসে বসে গভীর মগ্নতায়
হারিয়ে গিয়ে খুঁজেছি তোমায়
মাছরাঙার মাছ ধরার শব্দে ভেঙ্গেছে চেতনা, হঠাৎ।

বর্ষণমুখর সন্ধ্যা গুলোতে
রজনীগন্ধা ফোঁটার মুহূর্ত গুলোতে
খুঁজেছি তোমায়!

বসন্তের কৃষ্ণচূড়ার সারিতে
বাসন্তী রঙের ফুলের মেলাতে
আকাশের গভীর নীলিমায়
গোধূলির তামাটে ধূসরতায়
ধুলো পড়া পুরনো ডাইরির পাতায়
মাঝ রাতে সিগারেট হাতে গভীর চিন্তার মগ্নতায়
শুধুই খুঁজেছি তোমায়!

কবিতা – তুমি কি বর্ষার নদী দেখেছো?
তুমি কি দেখেছো বৃষ্টিরা কিভাবে
নদীর বুকে মাথা লুকায়?
তুমি কি দেখেছো তখন চারিধারে
কেমন শব্দের ছন্দে মুখরিত হয়?

কবিতা – এখন তুমি কার?
কবিতা – এখন তোমার বয়স কতো?
তুমি কি চিরযৌবনা? চির অমর?
নাকি সুনীল গাঙ্গের ৩৩ বছর?

তুমি কি শেলির অজিমান্ডিয়াস?
নাকি তুমি মিল্টনের প্যারাডাইজ?

তুমি কি ভ্যালেরিয়ার কাছে
তলস্তয়ের ভালোবাসার পত্র?
নাকি তুমি রুদ্রের মানুষের মানচিত্র!

তুমি কি জীবনানন্দের বনলতা?
নাকি শামসুর রহমানের স্বাধীনতা!

তুমি কি সেক্সপিয়ারের এ লাভারস কমপ্লিয়ান্ট?
না কি তুমি টি এস ইলিওটের দ্যা ওয়েস্টল্যান্ড!

তুমি কি শেষের কবিতা, রবীন্দ্রনাথের?
তবে তুমি কি অগ্নিবীণা, নজরুলের?
নাকি তুমি পারে লয়ে যাও আমায়, ফকির লালনের!

তুমি কি এমিলির
উইদিন দাট লিটিল হাইভি?
নাকি তুমি রুমির মাছনাভি!

তুমি কি হোমারের অডেছি?
নাকি জন কিটসের অন দ্যা সী!

তুমি কি ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াৎ?
নাকি তুমি ওয়ার্ডসওয়ার্থের লিরিক্যাল বালাদ!

কবিতা! এখন তুমি কার?
হয়তো তুমি নয় কারোর
কিংবা সকল কবিতা প্রেমিকের
এবং অনাগত কবি লেখকের!
__________________________

www.youtube.com/watch?v=VedRtX_ntt4

আবৃত্তিকার : রাহিম আজিমুল।

ইলহাম এর ছোট গল্পঃ আলাপন-১

আলাপন-১

এক ভদ্রলোক রাতে শুয়ে আছে। ঘুম আসছে না। সে সাধারণত একা একা রাতে ঘুমায় না। একা থাকলে রাতে ঘুম আসতে চায় না। অশরীরী কিছু একটা এসে কথা বলে। আজ একা থাকতে হচ্ছে কারণ তার পরিবার বাপের বাড়ি গিয়েছে। ভুত-পেত্নী সে বিশ্বাস করে না কিন্তু জ্বীন বিশ্বাস করে।

তার জ্বীন হাসিলের খুব ইচ্ছা ছিলো। অনেক হুজুরের কাছে গিয়েছে। একেক জন একেক রকম পরামর্শ দেয়। সে আমল করে কিন্তু জ্বীন আসে না। একবার দবির হুজুর বললো, এশার নামাজের পরে মসজিদে বসে সুরা জ্বীন চল্লিশ বার চল্লিশ দিন পড়লে একটা জিন এসে হাজির হবে। আসার আগ মুহুর্তে গাছ-পালা নড়তে শুরু করবে। একটু ঝড় হবে। কস্তুরী আতরের ঘ্রাণ আসবে। হয়তো দেখবেন যে মসজিদে বসে আপনি সূরা জ্বীন পড়ছেন সেখানেই হঠাত তাকিয়ে দেখবেন একজন বসে আছে কিন্তু মাথাটা ছাদের সাথে লেগে গেছে। কিন্তু সব সময় পাকসাফ থাকতে হবে। আর জ্বীন দেখে ভয় পাওয়া যাবে না।

সে চল্লিশ দিন চল্লিশ বার করে সুরা জ্বীন এশার নামাজের পর পড়লো কিন্তু জিন আসলো না।

কিন্তু তার মনে প্রশ্ন জাগে, এই যে রাতে একা থাকলে অশরীরী কিছু একটা এসে তার সাথে কথা বলে এটা কি জিনিস? এই জিনিসটা আসার আগে সে টের পায়।
সেদিন ঘুম আসবে না। এপাশ ওপাশ করতে করতে অনেক রাত হবে। তারপর খালি পায়ে হাটার শব্দ শোনা যাবে। শরীর নাই কিন্তু হাটার শব্দ করে। আশ্চর্য জিনিস!
খালি পায়ে হাটার শব্দটা যখন তার ঘরের দিকে আসে তখন সে বোঝে জিনিসটা এখন ঘরে ঢুকেছে। কিন্তু হাটার শব্দটা কোথায় এসে শেষ হয় এটা বোঝা যায় না।
ওটা কি মাথার দিকে এসে থামে নাকি পায়ের দিকে নাকি বিছানায় উঠে বসে কে জানে।

লাইট জ্বালানো থাকলে এই জিনিসটা আসে না। তাই একা থাকার প্রয়োজন হলে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমায়। আজ লাইট অফ করা আছে। এখন উঠে আর জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না। খুব ক্লান্ত লাগছে। হাতের কাছে একটা লোহার রড নিয়ে শুয়েছে। আজ ওটা আসলে আচ্ছা মতো সাইজ করা হবে।

ভদ্রলোকের ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করছে। অনেক রাত হয়ে গেলো। হঠাৎ পায়ের শব্দ শোনা গেলো। ভদ্রলোকের মেজাজ খারাপ হয়ে গে্লো। ওটার সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না। অহেতুক প্যাঁচাল পারে। লোহার রড টা ডান হাতে ধরে আছে।

একটা মোলায়েম কণ্ঠ ভেসে এলোঃ

কি ভাবছো হে মানুষ?

ভদ্র লোক কোনও কথা বললো না।

হটাৎ খাটটা নড়ে উঠলো।

এ তো দেখছি সমস্যা ! দেখাইতো যায় না। কোথায় রড দিয়ে মারবো?
ওটা কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়।
তার চেয়ে বরং কথা বলে একে বিদায় করাই ভাল।

আবার কণ্ঠটি ভেসে আসলোঃ

কণ্ঠ: আমার কাছে একটি গাছ আছে
ভদ্রলোক: থাকলে থাক, আমার কি আসে যায়
কণ্ঠ: সেই গাছটা অনেক বড়
ভদ্রলোক: হোক বড় তাতে আমার কি
কণ্ঠ: অনেক পাতা
ভদ্রলোক: গাছ নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। আমি গাছ টাছ লাগাই না। তুমি চুপ করতে পারো?
কণ্ঠ: তোমার বয়স চল্লিশ না?
ভদ্রলোক: এই, তুমি কে? তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো?
কণ্ঠ: দেখতে পাবে
ভদ্রলোক: তোমার কথা শুনি অথচ দেখি না, সমস্যা না এটা?
কণ্ঠ: আমি দেখা দেবো সঠিক সময়ে
ভদ্রলোক: আমার বয়স জানো কীভাবে?
কণ্ঠ: সেটা পরে বলবো। আমার সেই গাছের প্রতিটি পাতায় নাম লেখা আছে
ভদ্রলোক: কিসের নাম?
কণ্ঠ: সবার নাম। যে পাতাটা হলুদ হয় আমার নজর সেটার দিকে
ভদ্রলোক: কেনো?
কণ্ঠ: পাতাটা যখন শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে যায়, আমি যাই তার কাছে
ভদ্রলোক: যেয়ে কি করো?
কণ্ঠ: তাকে নিয়ে আসি
ভদ্রলোক: কে তুমি?
কণ্ঠ: মুসলমানরা আমাকে আজরাইল নামে চেনে
ভদ্রলোক: হিন্দুরা তোমাকে কী নামে চেনে?
কণ্ঠ: যম
ভদ্রলোক: তোমার সাথে আমার কথা বলার দরকার নাই। তুমি এক্ষুনি চলে যাও
কণ্ঠ: তোমার নাম যে পাতায় লেখা আছে সেটা হলুদ হয়ে এসেছে
ভদ্রলোক: ভাই, ঐ টেবিলের জগে পানি আছে। আমাকে এক গ্লাস পানি দিতে পারবেন? গলাটা মনে হচ্ছে শুকিয়ে গেছে
কণ্ঠ: কাউকে পানি দেয়া আমার কাজ না। আমার কাজ একটাই

ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আচ্ছা! বুঝলাম। হলুদ না হলে কি তোমার ঐ গাছের কোনও পাতা ঝড়ে পড়ে?
কণ্ঠ: না, তবে অনেক পাতা বড় হওয়ার আগেই হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়ে
ভদ্রলোক: তোমার ঐ গাছের কোনও পাতায় কি তোমার নিজের নাম লেখা আছে?
কণ্ঠ: আছে
ভদ্রলোক: ঐ পাতাটার রঙ কি?
কণ্ঠ: সবুজ
ভদ্রলোক: ওটা কি কখন হলুদ হবে?
কণ্ঠ: হবে হবে
ভদ্রলোক: কখন?
কণ্ঠ: ওটা সবার শেষে হলুদ হবে
ভদ্রলোক: ওটা কি ঝড়ে পড়বে?
কণ্ঠ: পড়বে
ভদ্রলোক: তখন ঐ পাতাটা কে আনতে যাবে?
কণ্ঠ: সেটা কি তোমার জানা খুব প্রয়োজন?
ভদ্রলোক: হ্যাঁ, আমি জানতে চাই। আমার হাতে কিন্তু লোহার রড আছে। তোমার মাথায় মেরে আগে তোমার নাম লেখা পাতাটা হলুদ করে দেবো।
কণ্ঠ: ভয় নামক জিনিস টা আমাকে দেয়া হয় নি। আমরা ভয় পাই না।
ভদ্রলোক: ঠিক আছে বুঝলাম। আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। তোমার নাম লেখা পাতাটা ঝড়ে পড়লে ওটা কে আনতে যাবে?
কণ্ঠ: ঐ পাতাটাও আমিই আনবো
ভদ্রলোক: অর্থাৎ তোমার জান তুমি নিজেই কবোজ করবে?
কণ্ঠ: হ্যাঁ, আমিই করবো
ভদ্রলোক: জান কবোজ করার সময় মানুষ কেমন কষ্ট পায় তুমি জানো?
কণ্ঠ: কষ্ট নামক জিনিস টা আমাকে দেয়া হয় নি। আমার কাজ একটাই
ভদ্রলোক: আচ্ছা বলতো, তুমি একসাথে কতোগুলো পাতা নিতে পারো?
কণ্ঠ: ইসরাফিল শিঙায় ফুঁক দেওয়ার সময় যতগুলো পাতা থাকবে ততগুলো
ভদ্রলোক: কতো হতে পারে?
কণ্ঠ: পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতা য্তো
ভদ্রলোক: পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতা কতো?
কণ্ঠ: উনিশ-শত কোটি
ভদ্রলোক: এখন পৃথিবীতে সাত শো কোটি মানুষ আছে। যে হারে মানুষ বাড়ছে তাতে আগামি একশো বছরের মদ্ধ্যে যদি উনিশ শো কোটি মানুষ হয় তাহলে আর মাত্র একশো বছর পর কিয়ামত হবে?
কণ্ঠ: হিসাব নিকাশ করার কাজ আমাকে দেয়া হয় নি। আমার কাজ একটাই
ভদ্রলোক: তুমি যাওতো এখন, অযথা বকবক করো নাতো! হুদাই প্যাঁচাল পারে!
কণ্ঠ: ঠিক সময়ে দেখা হবে। তোমার নাম লেখা পাতাটা ঝড়ে পড়লেই আমি তোমার কাছে চলে আসবো। তখন তোমাকে দেখা দেবো। খোদা হা-ফেজ!

ভদ্রলোক খেয়াল করলো মোলায়েম কণ্ঠটা এখন আর শোনা যাচ্ছে না। পায়ে হাটার শব্দটাও এখন নেই। খুব পিপাসা লেগেছে পানি খাওয়া দরকার। শরীরটা পুরোই ঘেমে গেছে। ফ্যানের সুইচটা অন করা দরকার। কিন্তু উঠে লাইট জ্বালাতে হবে।
আবার কি পায়ের শন্দ শোনা গেলো নাকি? পানি-ফ্যান কিছুই লাগবে না। শরীর ঘামে ঘামুক। কাথা দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে দিতে হবে। ফজরের আযান না শোনা পর্যন্ত আর চোখ খোলাই ঠিক হবে না।