ইলহাম এর সকল পোস্ট

হামার আর লগাও যাওয়া হলো না

চম্পাকলি

পহেলা বৈশাখের বৈকালে
হামি এনা ছাদোত উটিছুনু চম্পাকলিক দেকপা

উটে দ্যাখো কি চম্পাকলি
হামার আগেই ওরগে ছাদোত উটে
হলদি শারী গাওত দিয়ে দ্যারে এছে

হামি অর মুখোত চায়ে আছি
উঁও হামার মুখোত চায়ে আছে

খানিক বাদে ঝড় উটলো বুজা পারিছিন?

দেওয়া আন্দার হলো
বিষ্টি নামবা লাগলো

হামিও ভেজোছি
উঁও ভেজোছে

হামি অক দ্যাকোছি
উঁও হামাক দ্যাকোছে

বিষ্টি থামলো
ওদ উটলো

হামাগের গাও ওদে শুকে গ্যালো
সোন্দা হয়ে গ্যালো

চম্পাকলি নামবে গ্যালো
হামিও নামবে ঘরোত আনু

হামার বাপ অ্যসে কোলো,
কিরে কোটে গেছুলু?

হামি কনু এনা ছাদোত গেছুনু

বাপ আগ হয়ে কোলো,
দিন তামান ওল্লাই করবু না পড়াশুনা করবু রে চ্যংরা?

পরদিন খবর পানু চম্পাকলির জর অ্যছে
ম্যাডিক্যালে ভর্তি হছে

হামি দেকপা যায়ে কপালত হাত দিনু
যেসসে গরম লয় বাপু

চম্পাকলি হামার হাত চিপে ধরে কোলো,
হামি ভালো হলে হামরা নিকা করে ফেলমো, কি কছিন?

হামি কনু, হয় হয়, নিকা করে
তোমাক লগাও বেরবা লে যামু

সকোন আত বারোটা কি অ্যকটা হোবে বুজা পারিছিন?

হামি শুতে আছুনু হামার ঘরোত

অ্যাডা ফোন অ্যালো
চম্পাকলি মোছে,উঁই অ্যার ব্যাচে নাই

অচমভিতি কুতপাহিনি বুকের ভিতর
অ্যাডা ব্যাঁদনা শুরু হোলো

সে ব্যাঁদনাত চোখোত পানি জমে উটলো

হামি কতা কবা চাছি
কিন্তুক হামি আও করা পাছি না

হামি খাটোত শুতে পন্নু
বাপোরে হামার আর লগাও যাওয়া হলো না।

মন্তব্য

আমার ফেসবুক জীবনের আলোকে এবং ব্লগিং জীবনের আলোকে মন্তব্য বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতার কথা আলোকপাত করতে চাই।
শব্দনীড়েরও একটি অপশন আছে যেটা হচ্ছে “মন্তব্য প্রদানের প্রকৃতি”।

আমি দেখেছি বিশেষ করে কবি/লেখকদের ক্ষেত্রে ফেসবুকে অনেকে শুধু মন্তব্যের কারণে অনেকদিনের পুরোন বন্ধুকে ব্লক করা হয়েছে এবং তাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্কে টানা পোড়েন শুরু হয়েছে। এটা কবি/লেখকদের ক্ষেত্রে হওয়াটা দোষের কিছু আমার কাছে মনে হয় নি। কারণ ফেসবুকে এমন অনেক কবি/লেখক আছেন যাঁদের বন্ধুর সংখ্যা ৫০০০ হয়ে গেছে। তারপর নতুন আইডি খুলতে হয়েছে। সেটাতেও ৫০০০ হয়ে গেছে। আমাদের বাংলাদেশে এমন কয়েকজন কবি/লেখক বন্ধু আছেন যাঁদের ৫টা আইডিতে ৫০০০ ফ্রেন্ড হওয়ার পর ৬ষ্ঠ আইডি ওপেন করতে হয়েছে। ভারতে আমার এক কবি বন্ধু আছেন যাঁর ৩টি আইডি ৫০০০ হওয়ার পর তিনি ৪র্থ আইডি ওপেন করেছেন। এগুলো তাঁদের করতে হয়েছে জনপ্রিয়তার জন্য।

একজন জনপ্রিয় কবি বা লেখকের কাছে যদি কেউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান আর তিনি যদি সেই ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এক্সেপ্ট না করেন তাহলে তিনি একজন অহংকারী কবি/লেখক হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন বিধায় তাঁরা এক্সেপ্ট করে থাকেন। তবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার ক্ষেত্রে তাঁরা অবশ্যই দেখে নেন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড হিসেবে কারা আছেন।

তাই ৩০,০০০ ফ্রেন্ড যাঁর আছে এবং যেহেতু তাঁর টাইমলাইন পাবলিক করা থাকে তাই কেউ তাঁর লেখায় মন্তব্য করলে কমপক্ষে ৪/৫ লাখ ভিউয়ার তা দেখতে পান। আর যদি সেই মন্তব্য এমন হয় যার কারনে উক্ত কবি/লেখক তার ইমেজ নষ্ট হবে বলে মনে করেন তাহলে তিনি উক্ত মন্তব্যকারীকে ব্লক করতেই পারেন।

ধরুন আপনি ভালো লিখতে পারেন এবং তার প্রমাণ বিভিন্ন ভাবে পাচ্ছেন। তখন আপনার মনে একটা আকাঙ্ক্ষা জাগতেই পারে যে, কোনও দিন হয়তো আপনার এই লেখালিখি আপনাকে বিশেষ একটি পর্যায় নিয়ে যেতে সক্ষম। এই ক্ষেত্রে ধরুন আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে ১৫০০ ফ্রেন্ড আছেন আর আপনার টাইমলাইন পাবলিক করা আছে তাহলেও আপনার লেখা ও মন্তব্য কমপক্ষে ১ লাখ ভিউয়ার দেখতে পারবে। এখন আপনার কবিতায় বা লেখায় কেউ যদি আক্রমনাত্মক মন্তব্য করে বা আপনার ভালো চায় না অথচ আপনার অনেক পুরোন দিনের বন্ধু আপনার অতীতের কিছু খারাপ দিক নিয়ে মন্তব্য করে বা তার ইংগিত দেয় যা আপনার লেখালিখির প্রতিভাকে পুরোপুরি বিনষ্ট করে দিতে পারে তাহলে আপনি কি করবেন?

পৃথিবীটা আসলে একটা অভিনয়ের মঞ্চ আর প্রতিটি মানুষ একেকটি ক্যারেক্টার। তাই মানুষকে জীবনের প্রয়োজনীয় মুহুর্তে বিভিন্ন ধরণের অভিনয় করতে হয়। অনেকে জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার আগে না বুঝে অনেক অসামাজিক কার্যকলাপ করে থাকতে পারেন। অনেকে সঙ্গদোষেও তা করে থাকতে পারেন। অনেকের বিভিন্ন ধরণের শারিরীক কিংবা মানসিক অসুস্থতা থেকে থাকতে পারে যা হয়তো এখন নেই অথবা চিকিৎসার কারণে কন্ট্রলে থাকতে পারে। আর এখন সেই আপনি আপনার নিজের সৃষ্টিশীলতা দিয়ে সামাজিক/আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত বা জনপ্রিয়তা পাবেন! তা হয়তো পুরনো বন্ধুদের অনেকেই নাও চাইতে পারে।

হয়তো বলতে পারে, “আরে! এই সেই বারাইক্যা না? হ্যাতে আবার কবি হইলো কবে?”

কিন্তু এখন বলবো, একটু ভিন্ন বিষয়ে আর তা হচ্ছে, আপনার পুরনো ইতিহাস জানেন না এমন অনেক কবি/লেখকের সাথে আপনার এখন পরিচয় হয়েছে আপনার সৃষ্টিশীলতা এবং মেধার কারণে। এর মধ্যে অনেকে থাকতে পারেন একটু সহজ সরল তাই তিনি হয়তো আপনার কবিতা বা লেখার অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন নি তাই তিনি মন্তব্য করে বসলেন, “আপনার কবিতা বুঝি নি”। উনি কিন্তু সরল মনেই বলেছেন কিন্তু আপনার কাছে এই মন্তব্য পছন্দ নাও হতে পারে। আমিও অনেক সময় সরল মনে বেশ কটি মন্তব্য করেছিলাম কিন্তু তাৎক্ষনিক লেখক রিঅ্যাক্ট করেছেন এবং এটাই স্বাভাবিক।

অথবা এমনও অনেক কবিতা আছে যা একেক সময় পড়লে একেক রকম অর্থ মনে হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে নেগেটিভ বা পজেটিভ বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য হতে পারে। আবার এমন অনেক পাঠক আছেন যাঁরা লেখালিখি করেন না কিন্তু কবিতা/গল্প পড়তে পছন্দ করেন এবং তাঁদের অনেকেই কবিতা না বুঝেও মন্তব্য করতে পারেন। এক্ষেত্রে আমরা যাঁরা লেখালিখির সাথে জড়িত তাঁদের মন্তব্য কেমন হওয়া প্রয়োজন?

আমরা অনেকে ভালো লিখে থাকতে পারি এবং সে কারণে এক ধরণের অহংকার জন্ম নিয়ে থাকতে পারে। যেমন মনে হতে পারে, “অন্যান্যদের চেয়ে আমিই সবচেয়ে ভালো লিখি এই সময়ে”। তাহলে বুঝতে হবে আপনি জ্ঞানের প্রথম স্তরে আছেন এবং এই স্তরটা অত্যন্ত ভয়ংকর। মানুষ যখন জ্ঞানের প্রথম স্তরে প্রবেশ করে তখন মনে করে আমি সব জেনে ফেলেছি। তখন সে অন্যান্যদের থেকে নিজেকে সেরা মনে করতে থাকে এবং এই স্তরে সে লেখালিখির জগত থেকে ছিটকে পড়ে যেতে পারে। জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করলে একটু শান্ত হয়, অন্যকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং নিজেকে জাহির করা থেকে বিরত থাকতে চায় কারণ যে তখন বুঝতে পারে তার আরও অনেক কিছু জানার বাকি আছে।

আর যখন তৃতীয় স্তর অর্থাৎ শেষ স্তরে প্রবেশ করে তখন নিজেকে রিয়েলাইজ করতে শুরু করে। এগুলো বই থেকে পড়ে বলছি, আমার কথা নয় কারণ আমি অবশ্য এখনো জ্ঞানের প্রথম স্তরের শুরুতেই ঢুকতে পারি নি। আসলে বলতে চাচ্ছিলাম, আমারা যাঁরা লেখালিখির সাথে জড়িত তাঁদের মন্তব্য অন্যান্য কবি/লেখকদের ক্ষেত্রে কেমন হওয়া প্রয়োজন?

এক্ষেত্রে মন্তব্য করতে গেলেও ঝুঁকি আছে আবার মন্তব্য না করলে আপনি অহংকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। ◾ অনেকে জাস্ট পছন্দের লাইন কোট করে চলে যান কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এটা লেখকের লেখার মান উন্নয়নে কতটুকু সহায়ক?

◾ অনেকে বেশ কবার পড়ে একটি মন্তব্য করেন। প্রশ্ন থেকে যায়, এখানে মন্তব্য ভেবে চিন্তে কৌশলে করা প্রয়োজন কি?

◾ অনেকে শুধু কিছু উৎসাহ মূলক কমোন কথা বলে চলে যান। প্রশ্ন থেকে যায়, এটার গ্রহন যোগ্যতা কতোটুকু?

◾ অনেকে সরল মনে যা বোঝেন তাই বলেন কিন্তু তা লেখকের পছন্দ নাও হতে পারে। প্রশ্ন থেকে যায়, এ ক্ষেত্রে কি করণীয়?

◾ অনেকে সরল মনে বলেই ফেলেন, আমি বুঝি নি। প্রশ্ন থেকে যায়, এমন মন্তব্য না করে চুপ থাকাই কি ভালো?

◾ আবার যে লেখাটি পড়তে কমপক্ষে ১০ মিনিট লাগার কথা সেই লেখায় অনেকে মাত্র ৩০ সেকেন্ডে মন্তব্য দিয়ে থাকেন। প্রশ্ন থেকে যায়, এ ক্ষেত্রে মন্তব্যকারী কি জানেন না উনি কয় মিনিট সময় নিয়েছেন এটা দেখা যায়?

◾ আবার কে কতো মন্তব্য করলেন, কে কতো রেটিং করলেন এদিকেও নজর রাখতে হয়।

তাহলে এ ক্ষেত্রে কি করার আছে?

আমার স্বল্প জ্ঞানে মনে হয় মন্তব্যে কৌশলী হওয়া প্রয়োজন এবং আমরা যাঁরা লেখালিখি করি তাঁদের গঠন-মূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানানো প্রয়োজন। আমি মনে করি এখানে অনেক অভিজ্ঞ ব্লগার আছেন উনারা হয়তো মন্তব্যের ঘরে উনাদের মতামত জানিয়ে সহায়তা করবেন এ আশা পোষন করছি।

শুভকামনা শব্দনীড়ের সকল নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত, কবি, লেখক ও পাঠকগনকে!

আলাপন- ৫

আলিফ আর ক্যাডাভিয়ার বিয়ে হয়েছে আজ দেড় বছর। তাদের ঘর আলো করে এসেছে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আলিফ যখন প্রথম দেখলো সে তাকিয়ে ছিল সন্তানের দিকে। সন্তানের পাশে শুয়ে থাকা ক্যাডাভিয়া আলিফকে বললো, ছোট বেলায় তুমি তোমার মাকে হারিয়েছিলে এখন দেখো তোমার মা আবার ফিরে এসেছে। কি, তুমি খুশি না?

আলিফ উত্তর দিলো না। কন্যা সন্তান কে বুকে নিয়ে আদর করতে লাগল। ক্যাডাভিয়ার চোখের কোনে একটু জল এলো। আলিফ তাকালো ক্যাডাভিয়ার দিকে। ক্যাডাভিয়া কাঁদতে কাঁদতে আস্তে করে আলিফের কানে কানে বললো, আমি তোমাকে পুত্র সন্তান দিতে পারলাম না!

আলিফ কিছু বললো না। মনে মনে ভাবছে, ও কাঁদছে কাঁদুক, এখন ওর কাঁদতে ইচ্ছে করছে, হয়তো ও পুত্র সন্তান চেয়েছিলো, আমিতো কখনও পুত্র সন্তান কিংবা কন্যা সন্তান এ বিষয়ে কিছুই ভাবিনি এবং ওকে কখনও কিছু বলিনি, সন্তান সন্তানই সে পুত্র হোক কিংবা কন্যা তাতে কি, পুত্র সন্তানও মানুষ কন্যা সন্তানও মানুষ, সন্তান স্রষ্টার নেয়ামত, এমন অনেকে আছেন যারা পুত্র সন্তান পেয়েছেন কিন্তু সুস্থ সন্তান নয়, অ্যাবনরমাল, আমার সন্তান কন্যা হলেও আল্লাহ আমাকে একটি সুস্থ সন্তান দিয়েছেন, এ জন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

আলিফের মনে প্রশ্ন জাগে, পুত্র সন্তান মানুষ কেন চায়? সে বড় হয়ে বাবা-মাকে খাওয়াবে? এটা আশা করা এক ধরণের অবিদ্যা। পুত্র বংশের বাতি জ্বালিয়ে রাখবে? বংশের বাতি মানে কি? আমার শুক্রাণু আর আমার স্ত্রীর ডিম্বাণু মিলে জাইগোট তৈরি হয়েছে এবং তা থেকে এই সন্তান জন্ম লাভ করেছে, জাইগোট তৈরি হতে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু দুটোই প্রয়োজন, শুধু শুক্রাণু দিয়ে-তো আর জাইগোট হয় না, তাহলে শুধু পুত্র সন্তান কি করে বংশের বাতি জ্বলায়? কন্যা সন্তানও বংশের বাতি জ্বালাতে পারে।

হঠাত আলিফের মোবাইল ফোন বেজে উঠলো।
– মিঃ আলিফ সাহেব বলছেন?
– জী বলছি
– আমেরিকার “গোল্ডেন গোল্ড” কোম্পানি থেকে লিকুইড গোল্ড ইম্পোর্টের জন্য আমার একটা এলসি ওপেন হওয়ার কথা ছিলো। হয়নি কেনো?
– দয়া করে কি বলবেন আপনি কে বলছিলেন?
– এস্টোনিসড! আমাকে তুমি চেনো না! পদ্মা, মেঘনা, যমুনা সবগুলোর গুরু আমি, আমাকে না চেনাটা তোমার অপরাধ হয়েছে এবং এর ভয়ানক শাস্তি হতে পারে
– স্যার! পদ্মা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ এবং যমুনা গ্রুপের এডমিন, কমার্শিয়াল এবং এম ডি সাহেবের ফোন নাম্বার তো আমার হ্যান্ড সেটে সেইভ করা আছে। আপনার কলটা একটা আন-নোন নাম্বার থেকে এসেছে তাই জানতে চেয়েছি
– আরে! ওরা চ্যালা-পুটি মাছ। রাঘব বোয়াল চেনো তুমি? সব গিলে খেয়ে ফ্যালে?এ দেশের সব গ্রুপই আমার
– স্যার! আমাদের বাড়ীতে একটা পুকুর ছিলো কিন্তু মাছের পোনা ছাড়লে পরে সেগুলো আর থাকতো না, রুই-কাতলাও উধাও হয়ে যেতো
– সো হোয়াট?
– তারপর আমরা পুকুরের পানি সেচে ফেলার পর অনেক বড় একটা বোয়াল মাছ পেয়েছিলাম, প্রায় ১৮ কেজি, তারপর ওটাকে কাটাকাটি করে পিয়াজ বেশি করে দিয়ে দোপেয়াজা করা হয়েছিলো, আহ! দারুণ টেস্ট ছিলো
– স্টপ! স্টপ! তুমি জানো না কার সাথে কথা বলছো
– স্যার! রাঘব বোয়াল নিজেও মাছ আর সে খায়ও অন্যান্ন ছোট মাছ
– হোয়াট ডু ইউ মিন?
– যে মাছ মানুষ খায় সেটাও আমি খেয়েছি
– হোয়াট? হাউ ডেয়ার ইউ গাই……
– স্যার! কথাটা শুনুন! ওটা ছিলো আফ্রিকান মাগুর, আমাদের খেতে ইচ্ছে হলো, বিশাল সাইজ, কেউ ওটা ধরে কাটার সাহস পেলো না, আমি ধরে নিয়ে বটিতে ধরে ঘ্যাচাং করে মাথাটা কেটে ফেললাম
– তুমি কিন্তু মাত্রা ছাড়িয়া যাচ্ছো, তোমাকে এক্ষুণি সেয়ানামি শিখিয়ে দিচ্ছি, তুমি ওখানেই দাঁড়াও
– স্যার! মাথাটা কেটে একটি প্লেটে রেখে দিলাম, তারপর মাছের বাকী অংশ, পেটি পিচ পিচ করে কেটে ফেললাম
– তোমার এসব মাছ কাটার গল্প শোনার টাইম নাই, টাইম ইজ মানি, ডু ইউ নো দ্যাট?
– স্যার! শেষে ঐ কাটা মাথাটাও ৩ পিচ করার জন্য হাতে নেয়ার আগে কাটা মাথাটার দিকে তাকালাম
– তোমার এম ডি কোথায়?
– স্যার! দেখলাম ঐ কাটা মাথাটার চোখ দুটোতে অগ্নি দৃষ্টি, আমিতো ধরেই নিয়েছি ওটা অনেক আগেই মরে গেছে
– সো?
– স্যার! আমি ডান হাত দিয়ে ঐ কাটা মাথাটা ধরতেই আমার বৃদ্ধাঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দিলো
– হোয়াট? ওয়াজ ইট আলাইভ?
– স্যার! একেবারে মরন কামড়! আমার হাত থেকে ওটা ছোটাতে অনেক দৌড়-ঝাঁপ দিতে হয়েছে, অবশেষে ছোটাতে পেরেছি কিন্তু আঙ্গুল থেকে রক্ত পড়ছিলো
– ও ও আছা! তারপর?
– ভালো মতই বসিয়েছিলো
– তাই নাকি!
-স্যার! পিরান হো চেনেন? অনেকটা রুপচাঁদা মাছের মতো, ওরাও মানুষকে কামড়ে কামড়ে খায় কিন্তু আমার কাছে পিরান হো মাছের ফ্রাই ভালোই লেগেছিলো
– অনেক শুনেছি, জাস্ট স্টপ ইউর স্টরি! লিকুইড গোল্ডের এল সি ওপেন হবে কবে?
-স্যার, আমি একটু ছুটিতে আছি কারণ আমার সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে তাই আমার স্ত্রী অসুস্থ।
-ওকে, সো হু গোনা টু রিপ্লাই মি????
-আপনি যদি অনুগ্রহ পূর্বক আমাদের এমডি স্যারকে কে একটু ফোন দেন তাহলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারবেন…… নাহ থাক আমিই বরং এম ডি স্যার কে আপনার নাম্বারে কল করতে বলছি
– ওকে। টেক কেয়ার অফ ইয়র বেবি এন্ড ওয়াইফ। টেল ইয়োর এমডি টু কল মি

আলিফ একটি ব্যাংকের ফরেন ট্রেডের এভিপি। এধরণের ফোন কল হ্যান্ডেল করে ও অভ্যস্থ।
ক্যাডাভিয়া জিজ্ঞেস করল, কে ফোন করেছিলো?
আলিফ কি উত্তর দিবে? একবার ভাবল বলবে, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, আবার ভাবল বলবে, রাঘব বোয়াল, কিন্তু সে বুঝলো তার স্ত্রীর এধরণের উত্তর শোনার সময় এটা নয়, তাই সে বলল, একজন ক্লায়েন্ট ফোন করেছিলো।

সপ্তাহ খানেক পর ক্যাডাভিয়াকে এপোলো থেকে রিলিজ দিলো।

বেশ কিছুদিন যাবত সাড়া বিশ্ব তোলপাড় চলছে। মূলত দ্বন্দ্ব চলছিল চীন এবং অ্যামেরিকার মধ্যে। মহাদেশ হিসেবে এ দ্বন্দ্ব এশিয়া বনাম আমেরিকা। আস্তে আস্তে সে দ্বন্দ্ব সাড়া বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। মাস খানেক যাবত বিভিন্ন পত্র পত্রিকা এবং টেলিভিশনে খবরে বলা হচ্ছে যে কোনও সময়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে।

ইতোমধ্যে দুই শক্তির বিন্যাস হয়েছে। তারা চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। পাকিস্তান চীনের পক্ষে ছিলো কিন্তু রোহিঙ্গা এবং বেশ কিছু জটিলতার কারণে আমেরিকার পক্ষ নিয়েছে। ভারত অ্যামেরিকার পক্ষেই ছিলো কিন্তু যেহেতু পাকিস্তান আমেরিকার পক্ষে গিয়েছে তাই ভারত চীনের পক্ষ নিয়েছে। উত্তর কোরিয়া চীনের পক্ষে আর দক্ষিণ করিয়া অ্যামেরিকার পক্ষে। ইংল্যান্ড এবং ইসরাইল সাপোর্ট করেছে অ্যামেরিকাকে আর রাশিয়া সাপোর্ট করেছে চীনকে।

জার্মানি এখনও কারও পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলেনি। ফ্রান্সের সাথে ভারতের ভালো সম্পর্কের ভিত্তিতে ফ্রান্স চীনের পক্ষ নিয়েছে। চীন ম্যায়ানমারকে দিয়ে মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা করলেও তুরষ্ক, ইরান এবং মুসলিম বিশ্ব চীনের পক্ষ নিয়েছে। বাংলাদেশ চীন নাকি আমেরিকার পক্ষ নেবে বুঝে উঠতে পারছে না।
তবে বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীরা মনে করছেন চীনের পক্ষ নেয়াটা ঠিক হবে কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মনে করছে আমেরিকার পক্ষ নেয়াই ভালো হবে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ চীনের পক্ষেই গেলো।

আলিফ অফিসেই ছিলো। হঠাত খবর এলো যুদ্ধ বেঁধে গিয়েছে। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দেশের উপর আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে। এইমাত্র খবর এলো পাকিস্তান কলকাতাকে টার্গেট করে পরমাণু বোমা বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে কিন্তু একটু ভুল প্রোগ্রামিং এর কারণে ক্ষেপণাস্ত্রটি কলকাতায় না এসে ঢাকার জিরো পয়েন্টে এসে পড়বে।

ওটা আসতে ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট সময় লাগবে। খবরে বলা হলো এই সময়ের মধ্যে সবাই যেন ঢাকা থেকে কমপক্ষে ৫০ মেইল দূরে চলে যায়। আলিফ লক্ষ্য করলো অফিস থেকে সবাই দৌড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সব অফিস এবং বাসা থেকে সব মানুষ বেরিয়ে যাচ্ছে। আলিফ ব্যাংকের লকারে টাকার বস্তা পরিদর্শন করছিলো। মুহূর্তে ব্যাঙ্ক ফাঁকা হয়ে গে্লো। সে ভাবছে এই টাকার বস্তা গুলোর কি হবে। একটা বস্তা নিয়ে গেলে কেমন হয়? সে এক বস্তা টাকা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো।

ক্যাডাভিয়াকে ফোন করে বলে দি্লো রেডি থাকতে। আলিফ বাসায় এসেই ক্যাডাভিয়া এবং তার সদ্য কন্যা সন্তানকে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো বাস স্ট্যান্ডের দিকে। কিন্তু বাস স্ট্যান্ডে এতো মানুষের ভীড় যে বাসে ওঠাই সম্ভব হচ্ছে না। অনেক কষ্টে আলিফ একটি বাসের হাতল ধরেছে ডান হাতে আর বাঁ হাত দিয়ে ক্যাডাভিয়াকে টেনে তুলেছে। ক্যাডাভিয়ার কোলে সদ্য কন্যা সন্তান। এদিকে আলিফ কোনও রকম ভাবে বাঁ হাত দিয়েই ধরে রেখেছে টাকার বস্তাটা। বাসটি চিটাগাঙে যাবে। ক্যাডাভিয়ার কোলে তার কন্যা সন্তান। ক্যাডাভিয়া বার বার জিজ্ঞেস করছে, ওটা কিসের বস্তা? ওটা ফেলে দাও। কিন্তু আলিফ কিছু বলছেওনা আবার বস্তাটাও ফেলছে না।

ক্যাডাভিয়া স্মার্ট ফোন ইউজ করে না। স্মার্ট ফোন থেকে নাকি ছবি চলে যায় পর্ন ছবিতে, এইসব ফোনে সেভ করে রাখা সব তথ্য চুরি হয়ে যায়। এমনও দেখেছে ফোনের আই এম ই নাম্বার চেঞ্জ হয়ে গেছে। তাই বাটন ওয়ালা নরমাল ফোন ইউজ করে। এ জন্য স্মার্ট ফোনের বিবিধ ব্যাবহার সম্পর্কে তার জ্ঞান একটু কম।
হঠাত আলিফের 50G স্যাটেলাইট মোবাইল সেটে একটি মেসেজ এলো। সে মেসেজে দেখলো, চীন এবং আমেরিকার মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তবে এখন কোনও মানুষ যুদ্ধ করছে না।

মানুষ যুদ্ধ করবে পরে। এখন যুদ্ধ করছে রোবট। আমেরিকান রোবট ভার্সেস চাইনিজ রোবট। ড্রোন যুদ্ধ করছে আকাশ পথে, পানি পথে যুদ্ধ করছে নেভাল রোবট। ভূমি থেকে ভূমি যুদ্ধ করছে ল্যান্ড রোবট। মাটির নিচেও যুদ্ধ চলছে। আন্ডার গ্রাউন্ড রোবটরা মিটির নিচে যুদ্ধ করছে। আলিফ 50G স্যাটেলাইট মোবাইল সেটে লাইভ যুদ্ধ দেখছে। চাইনিজ রোবট এয়ার জেট থেকে আমেরিকান রোবট এয়ার জেটে মিসাইল মারছে আবার আমেরিকান রোবট এয়ার জেট তা ঠেকাচ্ছে। আবার আমেরিকান রোবট মিসাইল মারছে এবং চাইনিজ রোবট এয়ার জেট সরে গিয়ে পাল্টা মিসাইল মারছে।

ক্যাডাভিয়া এগুলো দেখে বললো, তুমি কেমন মানুষ বলতো? যেখানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছে, পৃথিবী থাকবে নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে তার ঠিক নেই আর তুমি সেখানে মোবাইলে যুদ্ধের গেম খেলছো?

আলিফের হ্যান্ড সেটে আবার একটি মেসেজ এলো। এই মেসেজে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানিরা পরমাণু-বাহী সেই ক্ষেপণাস্ত্রটির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করেছিলো যেন সেটা ঢাকায় না পড়ে কিন্তু ঘটনা ঘটেছে ভিন্ন। গতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি এখন আর ঢাকায় পড়বে না ঠিকই কিন্তু ওটা এখন চিটাগাংয়ের দিকে যাচ্ছে। আর ৪৫ মিনিট পরে ওটা ঠিক ডামপারা গিয়ে পড়বে। আর বাস এখন ডামপারা থেকে মাত্র ২৫ কিঃমি দূরে।

বাসে অনেকের হাতেই 50G স্যাটেলাইট সেট ছিলো এবং সবাই এই মেসেজ পেয়েছে কারণ সবাই লাইভ যুদ্ধ দেখছিলো। সাথে সাথে সবাই ড্রাইভার কে বললো, বাস ঘুরিয়ে সিলেটের দিকে যেতে। কেউ কেউ বলছে, এখন সিলেটের দিকে যাবে কি করে? আট লেনের রাস্তায় তো সবাই ঢাকা থেকে চিটাগাংয়ের দিকেই যাচ্ছে। আট লেনের সব বাস, প্রাইভেট, মাইক্রোবাস চিটাগাংয়ে যাচ্ছে। বরং ২৫ কিঃ মিঃ ১০ মিনিটে ক্রস করে বাকী ৩৫ মিনিটে বান্দারবান কিংবা কক্সবাজারের কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব কি না দেখা প্রয়োজন।

বিভিন্ন মানুষের কথা শুনছে ড্রাইভার। একজন বলছে বাস ঘোরাও। কেউ বলছে বান্দারবান যাও। কেউ বলছে ১০০ কিঃমিঃ এর উপরে স্পিড তুলে কক্সবাজার যাও। এ সব শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে ড্রাইভার মুহূর্তেই ব্রেক করে বসলো। আকস্মিক ব্রেক কষতে গিয়ে যাত্রীরা সবাই এক বড় ধাক্কা খেলো। আলিফের বাঁ হাত থেকে ক্যাডাভিয়া, তার কন্যা সন্তান এবং টাকার বস্তা পড়ে গেলো। প্রথমে টাকার বস্তা পড়লো এবং বস্তার উপরে ক্যাডাভিয়া পড়লো, ক্যাডাভিয়ার কোলে কন্যা সন্তান পড়লো। তাই ক্যাডাভিয়া এবং তার সন্তান ব্যথা পায়নি।

বাসটি থেমে আছে। এখনি ঘুরিয়ে ফেলবে নাকি আবার ১০০ কিঃমিঃ স্পিডে চালাবে এই নিয়ে হট্টগোল চলছে। বাসটি হঠাত ব্রেক করার ফলে আলিফও পড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু কোনও রকমে সামলে নিয়েছে নিজেকে কিন্তু এখন এক পা বাসের গেটে রাখতেই কষ্ট হচ্ছে আর ডান হাত দিয়ে বাসের হ্যান্ডেল ধরে আছে।
সরাসরি হ্যান্ডেল ধরতে পারেনি। অন্য একজন হ্যান্ডেল ধরেছে এবং আলিফ সেই লোকের হাতের কবজি ধরে আছে। বাঁ হাত দিয়ে কিছু নিতে হলে হালকা কিছু নিতে হবে।

এখন আলিফকে জীবনের একটি কঠিন এবং জটিল সমীকরণ মেলাতে হবে। হাতে সময় নেই। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিচে রাস্তায় পড়ে আছে ক্যাডাভিয়া, কন্যা সন্তান এবং টাকার বস্তা। সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোনও একটি নিতে হবে, হয় ক্যাডাভিয়াকে তুলিতে হবে অথবা কন্যা সন্তান অথবা টাকার বস্তা। আলিফ ভাবছে কি করবে। যা করার খুব দ্রুত করতে হবে। একবার আলিফের মনে হলো জীবনে বেঁচে থাকলে টাকা আয় করা যাবে কিন্তু ক্যাডাভিয়াকে ফেলে রেখে গেলে সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারাবে এবং সদ্য কন্যাকে ফেলে রেখে গেলে আদরের সন্তান কে হারাবে। আবার মনে হলো, এই পৃথিবীতে কে কার প্রিয়তমা? কে প্রিয় আর কে অপ্রিয়? কে আদরের আর কে অনাদরের? এগুলো নির্ভর করে টাকার উপর। জীবনে টাকা থাকলে প্রিয়তমার অভাব হয় না। আদরের সন্তানেরও অভাব হয় না।

আলিফকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে কি তুলে নেবে। টাকার বস্তা নাকি ক্যাডাভিয়া নাকি সন্তান? বাস হর্ন দিচ্ছে এখুনি ঘুরিয়ে ফেলবে অথবা ১০০ কিঃমিঃ বেগে ছুটবে। আলিফ ভাবছে… সমীকরণ মিলছে না… ভাবতে ভাবতে তার মন চলে গেলো ছোট বেলায়। স্কুলের জীবনটা কত সুন্দর ছিলো! স্কুলের পড়ালেখা আর অবসরে গল্প-কবিতা পড়া। মনে আছে প্রতিবার বাঙলা একাডেমীর ২১শে বই মেলায় গিয়ে অনেক অনেক বই কিনে জমিয়ে রাখতো। ঈদের ছুটিতে যখন দাদার বাড়িতে যেত তখন বই গুলো পড়তো। তার স্পষ্ট মনে পড়ছে একদিন অনেক রাত জেগেছিলো একটি বই শেষ করতে। বইটির নাম আলাপন। হ্যাঁ এইতো হুবহু মনে পড়ে যাচ্ছে। যেনো চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। প্রথমে বইয়ের প্রচ্ছদ। তারপর লেখকের নাম এবং বায়োগ্রাফি।
তারপর সূচিপত্র। আলাপন-১, আলাপন-২, আলাপন-৩, আলাপন-৪, আলাপন-৫, হ্যাঁ সেদিন রাতে তো আলাপন-৫ই পড়ছিলো…
এখনও যেন আলিফের চোখে ভাসছে সেই গল্পের প্রতিটি লাইন…

আলাপন- ৫
একটি বালক ঘুমোবার চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। হটাত একটি শব্দ ভেসে এলো……
শব্দ: কি ভাবছো হে বালক?
বালক: আমি এখন ঘুমোব, কে তুমি কথা বলছো?
শব্দ: আমি সেই জন যার কথা তুমি এখন ভাবছো
বালক: আমিতো আল্লাহর কথা ভাবছি, তুমি কে? তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো?
শব্দ: ধরো তুমি যা ভাবছো আমি তাই
বালক: তাহলে তুমি দেখা দাও
শব্দ: সময় হয়নি দেখা দেয়ার। বলো তুমি কি জানতে চাও।
বালক: তুমিই-তো সব কিছু সৃষ্টি করেছো, ঠিক না?
শব্দ: হ্যাঁ করেছি
বালক: কোন জিনিসটা তুমি খুব সহজে সৃষ্টি করেছো?
শব্দ: কোনও জিনিসই সৃষ্টি করা আমার জন্য কঠিন নয়
বালক: সব কিছু সৃষ্টি করা তোমার কাছে একই রকম?
শব্দ: যে কোনও জিনিস আমি হও বললেই হয়ে যায়
বালক: ও আচ্ছা।
শব্দ: তবে একটি প্রজাতি সৃষ্টি করতে গিয়ে আমি একটু বেগ পেয়েছিলাম
বালক: কোন প্রজাতি সেটা?
শব্দ: মানুষ
বালক: কেনো?
শব্দ: মানুষ সৃষ্টি করার পর আমি বুঝলাম আমি নিজেকে বিভাজন করে ফেলেছি
বালক: কিভাবে?
শব্দ: প্রথমে আমি মানুষকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করলাম
বালক: তারপর?
শব্দ: আমি তার মুখে মুখ লাগিয়ে ফুঁ দিলাম এবং সে জীবন্ত হয়ে উঠলো
বালক: এতেই তুমি বেগ পেলে?
শব্দ: ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে আমার পবিত্র আত্মার কিছুটা মানুষের ভেতর ঢুকে গেলো
বালক: তাই নাকি?
শব্দ: আর মানুষ আমার মতো ক্ষমতা পেয়ে গেলো
বালক: তোমার মতো ক্ষমতা?
শব্দ: শুধু কিছু বিশেষ ক্ষমতা ছাড়া
বালক: কতটুকু ক্ষমতা পেয়েছে মানুষ?
শব্দ: যতটুকু আমার পবিত্র আত্মা ঢুকেছিলো ঠিক ততোটুকু ক্ষমতা পেয়েছে
বালক: মানুষ কি জানে সে তোমার কিছুটা ক্ষমতা পেয়েছে?
শব্দ: সবাই জানে না তবে অল্প কিছু মানুষ তা জানে
বালক: কিছুটা ক্ষমতা বলতে কতোটুকু ক্ষমতা পেয়েছে?
শব্দ: তুমি কি জানো, আমি যদি বলি, “হও” তাহলেই হয়ে যায়!
বালক: হ্যাঁ, জানি। “কূন ফায়া কূন”
শব্দ: অর্থাৎ আমি যা ইচ্ছে করি তাই হয়
বালক: হ্যাঁ, বুঝলাম
শব্দ: মানুষ, আমার এই ক্ষমতাটা পেয়ে গেছে
বালক: তাই নাকি?
শব্দ: হ্যাঁ, তবে জন্ম, মৃত্যু, মানুষ সৃষ্টি বা কোনও প্রাণী বা কোনও অপ্রাণী সৃষ্টি এবং আরও বেশ কিছু সুপ্রিম পাওয়ার আমি আটকে রেখেছি

বালক: তাহলে মানুষ যা চায় তা পায় না কেনো?
শব্দ: শোনো, চাওয়া আর ইচ্ছা এক জিনিস নয়, যারা চায় তারা পায় না কিন্তু যারা ইচ্ছা করে তারা পায়
বালকঃ ও
শব্দ: আমি কোনও কিছু চাই না, আমি শুধু ইচ্ছে করি আর হয়ে যায়
বালক: চাওয়া আর ইচ্ছের মদ্ধ্যে পার্থক্য কি?
শব্দ: চাইতে হলে নিজ ব্যাতিত অন্যকারও নিকট চাইতে হয়, আর ইচ্ছে হচ্ছে নিজ থেকে করা
বালক: বুঝলাম না
শব্দ: ধরো তুমি রাতে একটি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ম্যানহোলে পড়ে গেলে
বালক: তারপর?
শব্দ: তুমি যদি ওখান থেকে বাচঁতে চাও তাহলে চেচামেচি, কান্নাকাটি, ডাকাডাকি শুরু করবে
বালক: আর?
শব্দ: তুমি যদি ওখান থেকে বাঁচতে ইচ্ছে করো তাহলে চুপ থেকে আগে খুঁজবে এখান থেকে বের হওয়ার কি কি সম্ভাব্য পথ থাকতে পারে

বালক: তারপর?
শব্দ: তুমি তখন খুঁজতে খুঁজতে পথ পেয়ে যাবে, যদি সেই পথ পিচ্ছিলও হয় তবুও তুমি তার জন্য সতর্কতার পথও পেয়ে যাবে
বালক: তারপর?
শব্দ: এটা ধরে ওটা ধরে, এখানে পা রেখে ওটা ধরে ঠিকই তুমি ম্যানহোল থেকে মাথা বের করে বেরিয়ে আসতে পারবে
বালক: ও, আচ্ছা বুঝলাম চাওয়া আর ইচ্ছের মধ্যে পার্থক্য
শব্দ: তুমি যদি ইচ্ছে করো ডাক্তার হবে তাহলে হতে পারবে, যদি ইচ্ছে করো ইঞ্জিনিয়ার হবে তাও হতে পারবে, যদি ইচ্ছে করো পৃথিবীর ১ নম্বর ধনী হবে তবে তাই হতে পারবে
বালক: এগুলোতো সবাই চায়
শব্দ: এখানেই তো চাওয়া আর ইচ্ছের পার্থক্য, যারা চায় তারা হতে পারে না কিন্তু যারা ইচ্ছে করে তারা হতে পারে, তবে প্রতিটি বিষয়েই ইচ্ছে করার আগে শুধুমাত্র আমার কাছে তার ইচ্ছে পূরণের সাহায্য চাইলে আমি সাহায্য করে থাকি
বালক: বুঝেছি, মানুষ কোনও কিছু চাইতে হলে শুধু তোমার কাছেই চাইতে হবে, অন্য কোনও মানুষের কাছে নয় এবং তোমার কাছে চাওয়ার পর সেটা হবার ইচ্ছে থাকতে হবে
শব্দ: হ্যাঁ তুমি সঠিক ধরেছো, তবে যেহেতু মানুষ আমার এই ইচ্ছে ক্ষমতাটা পেয়ে গেছে তাই সে আমার কাছে ইচ্ছে পূরণের সাহায্য না চাইলেও মানুষ তার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে
বালক: তাহলে ইচ্ছে শক্তিই তো যথেষ্ট, তোমার কাছে ইচ্ছে পূরণের সাহায্য চাইতে হবে কেনো?
শব্দ: আমার কাছে সাহায্য না চেয়ে যারা সামাজিক এবং আর্থিক ভাবে বড় হয়, প্রতিষ্ঠা পায় বা খ্যাতি পায় তা ক্ষণস্থায়ী, একটি নির্দিষ্ট সময় পর বা তার মৃত্যুর পর সে হারিয়া যায় কারন তার খ্যাতি থাকলেও মানুষ মন থেকে তাদের ভালোবাসে না
বালক: তাই নাকি?
শব্দ: এখন পৃথিবীতে যারা আর্থিক ভাবে, সামাজিক ভাবে বা অন্য কোনও ভাবে খ্যাতিমান তাদের অনেককেই মানুষ মন থেকে ভালোবাসে আর অনেককে উপরে উপরে ভালোবাসে কিন্তু মন থেকে ঘৃণা করে
বালক: তাই নাকি?
শব্দ: এখন যারা খ্যাতিমান আছে এবং যাদেরকে মানুষ মন থেকে ভালোবাসে প্রয়োজনে তুমি তাদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে দেখতে পারো, তারা তদের ইচ্ছে পূরণের সাহায্য আমার কাছে চেয়েছিলো কি না
বালক: ও আচ্ছা। আমি আরেকটি বিষয় জানতে চাই
শব্দ: বলো কি জানতে চাও

বালক: তুমি কি ইতোমধ্যেই সব কিছু সৃষ্টি করে ফেলেছো নাকি আরও কিছু সৃস্টি করার বাকি আছে?
শব্দ: সৃষ্টি বলতে তুমি যা বোঝো তার সব কিছুই শেষ, বাকি নেই তবে…
বালক: তবে কি?
শব্দ: এখনও অনেক কিছুই সৃষ্টি করা বাকি আছে যা তুমি এখন বুঝবে না
বালক: কখন বুঝবো?
শব্দ: আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখো
বালক: কি করে তোমার সাথে যোগাযোগ রাখবো?
শব্দ: আমিই যোগাযোগ করবো
বালক: কেনো তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে
শব্দ: তুমি সব সময় আমাকে নিয়ে ভাবো তাই
বালক: আমার মনে হয় তুমি শয়তান
শব্দ: কেনো?
বালক: আল্লাহ বিভিন্ন নবী-রাসূলদের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন, আমি একজন সাধারণ বালক, আমার সাথে তোমার যোগাযোগের দরকার থাকার কথা না, সূতরাং তুমি শয়তান
শব্দ: আল্লাহ নবী-রাসূলদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন ওহীর মাধ্যমে
বালক: ওহী আসা তো শেষ নবীর পরেই বন্ধ হয়ে গেছে
শব্দ: ওহী বন্ধ হয়েছে তা ঠিক কিন্তু তাতে কি হয়েছে?
বালক: তার মানে?
শব্দ: ওহী ছাড়াও যোগাযোগের মাধ্যম আছে
বালক: সেটা কি?
শব্দ: সেই মাধ্যম এখনও আছে, কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না
বালক: কি সেই মাধ্যম?
শব্দ: এটা অনবরত এই পৃথিবীতে আসছে কিন্তু এক কোটিতে এক জন বুঝতে পারে
বালক: মাধ্যমটার নাম কি?
শব্দ: এই যে আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করছি
বালক: বুঝলাম। কিন্তু এই মাধ্যমটার নাম কি?
শব্দ: এই মাধ্যমটার নাম “ইলহাম”
বালক: আমার সাথে তোমার যোগাযোগ করার দরকার নেই
শব্দ: তুমি আমাকে নিয়ে ভাবা বাদ দিলেই আমি তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেবো

বালকটি আর কোনও শব্দ শুনতে পেলো না। সে ভাবতে লাগলো ইলহামের মাধ্যমে এখনও আল্লাহ যোগাযোগ করেন? তা আবার এক কোটিতে ১ জন বুঝতে পারে?একজন ভালো আলেম সাহেবের কাছে যেতে হবে, আসলেই ইলহাম নামক কোনও যোগাযোগের মাধ্যম আছে কি না জানতে হবে। হাদীস-কোরানে দেখতে হবে এর কোনও ভিত্তি আছে কি না। না থাকলে এটা বোধহয় শয়তান এসেছিলো। শয়তান তারাতে হলে “লা হাওলা ওয়ালা ক্যুয়াতা ইল্লা বিল্লা” পড়তে হয়। তা ছাড়া আযান দিলে শয়তান দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর ঐ শব্দ আসলেই বালক আযান দেবে বলে মনস্থির করেছে।

আলাপন-৪ (একটা ইন্টার্ভিউঃ লক্ষ্যস্থীর)

আসগর পড়ালেখা শেষ করেছে আজ চার বছর হয়ে গেলো। তার ইচ্ছে ছিলো সরকারী চাকুরী করা। ডিফেন্স ছিলো তার প্রাথমিক লক্ষ্য কিন্তু সেটা যখন হলো না তখন টার্গেট নিলো বি সি এস।

এটাও যখন হলো না তখন সে সিদ্ধান্ত নিলো সরকারী চাকুরীর পিছনে ছুটে লাভ নেই এই দেশে। তাই প্রাইভেট চাকুরী প্রতি আগ্রহ নিয়ে এপ্লিকেশন করা শুরু করলো কিন্তু এখানে এসে দেখলো আরেক জটিলতা আর সেটা হচ্ছে প্রাইভেট চাকুরী পেতে হলে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। সে কয়েকটা সেক্টরে চেষ্টা করে ব্যার্থ হলো। ভাবতে লাগলো, চাকুরী যদি শুরুই করতে না পারি তাহলে অভিজ্ঞতাটা আসবে কোথা থেকে? এগুলো এসব প্রাইভেট কোম্পানির এম ডি/ডিরেক্টরেরা কি বোঝে না? এক্ষেত্রে সে একটি বিষয় দেখলো, যাদের আত্নীয় স্বজন বড় বড় পজিশনে আছেন তাদের চাকুরী অভিজ্ঞতা ছাড়াই হয়ে যায়। কিন্তু আসগরের মনে পড়ে না তার কোনও আত্নীয় প্রাইভেট কোম্পানিতে বড় কোনও পজিশনে আছেন কি না।

অবশেষে অভিজ্ঞতা ছাড়াই একটা চাকুরী পেয়ে গেলো। এটা হচ্ছে একটা মার্কেট রিসার্চ ফার্ম। এরা বিভিন্ন সময়ে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে চুক্তি ভিত্তিক কাজ নিয়ে উক্ত ক্লায়েন্টের প্রডাক্ট মার্কেটে কি অবস্থানে আছে এবং কি করলে মার্কেট ধরতে পারবে তার সোট এনালাইসিস (SWOT analysis) করে একটা হাইপোথেটিক্যাল রিপোর্ট ক্লায়েন্ট এর কাছে প্রেজেন্ট করে। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের মার্কেট প্রমোশনাল কোয়েশ্চেনারি আছে। আসগরের ডেজিগনেশন হচ্ছে FS (ফিল্ড সুপারভাইজার)।

এই রিসার্চ ফার্ম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে। তার কিছু হচ্ছে ভোগ্য পন্ন (Consuming product) আর কিছু প্রোজেক্ট আছে সোসিয়াল রিসার্চ। অর্থাৎ যখন যে ক্লায়েন্টের কাছে থেকে যেমন কাজ পায় তাই করে। এবারের প্রোজেক্টটা হচ্ছে লক্ষ্য স্থির বিষয়ক। তার আন্ডারে ২০ জন ছেলে-মেয়ে কাজ করে। সে এগুলোর ফিল্ড সুপারভাইজিং করে।

আজ ফিল্ড সুপার ভাইজিং এর একটি বিশেষ অংশ হিসেবে তাকে নিজেকেই ইন্টারভিউ নিতে হচ্ছে। সে রাস্তায় বের হয়ে দেখলো এক ভদ্রলোক একটি বাগানের পাশে বসে বৃদ্ধাঙ্গুল এবং শাহাদাত আঙুল নিচের ঠোটের একটু নিচে ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। আসগরের কাছে মনে হলো, এইতো পেয়ে গেছি একটা বলদ টাইপের লোক যার লক্ষ্যস্থির নেই। এমন লোকইতো প্রয়োজন।

আসগর আস্তে আস্তে হেটে ভদ্রলোকের কাছে গেলো কিন্তু ভদ্রলোক একই ভাবে মাটির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। আশেপাশে কে আসলো আর কে গেলো তার খবর নাই। আসগর জিজ্ঞেস করলো, ভাই আপনার নাম জানতে পারি?

ভদ্রলোক এবার আসগরের দিকে তাকিয়ে বললো, ধ্যনাত্মা আসগর বললো, ভাই আপনার নামটা কি একটু লিখে দেবেন? ভদ্রলোক বললেন, কেনো?

আসগরঃ আপনার নামটার উচ্চারণ বুঝতে পারি নি
ভদ্রলোকঃ গৌতম বুদ্ধের নাম শুনেছেন?
আসগরঃ হ্যাঁ, শুনেছি
ভদ্রলোকঃ উনি ধর্ম প্রচারের আগে কি করেছিলেন?
আসগরঃ ডুমুর গাছের নিচে দীর্ঘদিন ধ্যান করেছিলেন
ভদ্রলোকঃ ধ্যান এর সাথে একটা আত্মা যোগ করলে কি হয়
আসগরঃ ধ্যান-আত্মা
ভদ্রলোকঃ এটাই আমার নাম
আসগরঃ আপনি কি একটু আগে ধ্যান করছিলেন?
ভদ্রলোকঃ আপনার পরিচয় দিন
আসগরঃ আমি সোমরা নামক একটি মার্কেট রিসার্চ ফার্মে এফ এস হিসেবে কাজ করছি
ভদ্রলোকঃ ও আচ্ছা, তা এখন কি কাজ করছেন
আসগরঃ আমাদের এবারের প্রজেক্ট হচ্ছে, লক্ষ্যস্থীর নিয়ে কাজ করা
ভদ্রলোকঃ আপনারা কি ভাবে কাজ করছেন
আসগরঃ আমরা বিভিন্ন কোয়েসচারিনির মাদ্ধ্যমে বাংলাদেশে কতজন মানুষের জীবনের লক্ষ্যস্থীর আছে আর কতজন লক্ষ্যহীনভাবে চলছে তার জরিপ করছি
ভদ্রলোকঃ আপনার জীবনের লক্ষ্য কি ছিলো
আসগরঃ আর্মি চিফ হওয়া
ভদ্রলোকঃ তাহলে এই সব ফালতু জব করছেন কেনো?
আসগরঃ আমি আর্মিতে রিটেনে টিকে গেলাম, আই এস এস বি তেও ভালো করলাম, ভাইভা-বোর্ডে এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এক জটিল প্রশ্ন করলেন
ভদ্রলোকঃ কি প্রশ্ন?
আসগরঃ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বললেন, “আমি যদি আপনার মা কে নিয়ে পালিয়ে যাই তাহলে আপনি কি করবেন?
ভদ্রলোকঃ বুঝেছি, উনারা আপনার আই কিউ টেস্ট করেছেন, দেশে যুদ্ধ বাঁধলে যেকোনও পরিস্থিতিতে আপনার আই কিউ কেমন হবে সেটাই বোঝার চেষ্টা করেছেন। যাইহোক, আপনি কি উত্তর দিয়েছিলেন?
আসগরঃ আমি উনাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম
ভদ্রলোকঃ কি প্রশ্ন?
আসগরঃ আমি প্রশ্ন করেছি, “আপনার সন্তান কয়টি?”
ভদ্রলোকঃ উনি কি উত্তর দিলেন?
আসগরঃ উনি বললেন, ” আমার একটিই মেয়ে বিবিএ পড়ছে এন এস ইউ ইউনিভার্সিটিতে
ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ আমি তখন বললাম, ” আপনি যদি আমার মা কে নিয়ে পালিয়ে যান তাহলে আমি আপনার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাবো”
ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ উনি একটু ভ্রু কুচকালেন
ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ বোর্ডের অন্যান্নরা তখন বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলেন
ভদ্রলোকঃ বুঝেছি, পরে আপনার আর চাকুরী হয় নি, তাইতো?
আসগরঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন
ভদ্রলোকঃ কিন্তু আপনি পারফেক্ট উত্তর দিয়েছিলেন তাতে আপনার চাকুরী হওয়ার কথাই ছিল, যাইহোক, তারপর কি করলেন
আসগরঃ তারপর লক্ষ্য পরিবর্তন করে বিসিএস দিলাম, টার্গেট ছিলো ফরেন এফেয়ার্স।
ভদ্রলোকঃ বিসিএস এ হলো না কেনো?
আসগরঃ এম সি কিউ থেকে শুরু করে রিটেন, ভাইভা সবই ভালো করেছিলাম কিন্তু হয় নি
ভদ্রলোকঃ ভাইভা-বোর্ডে কি জানতে চেয়েছিলো
আসগরঃ যেহেতু আমার একটাই চয়েজ ছিলো ফরেন এফেয়ার্স তাই প্রশ্ন করেছিলো, ” অ্যামেরিকার চীন নীতি সম্পর্কে কি জানুন বলুন”।
ভদ্রলোকঃ কি বললেন?
আসগরঃ আমি জানতে চাইলাম, বুশ প্রশাসন নীতি বলবো নাকি সিক্স প্রেমিসেস নীতি বলবো?
ভদ্রলোকঃ উনারা বললেন, সিক্স প্রেমিসেস এর কি জানেন?
আসগরঃ আমি বললাম, প্রেমিসেস#১ হচ্ছেঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়া তার জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য চীন থেকে আসা স্থিতিশীলতার ধরন থেকে উপকার লাভ করতে পারে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (পিআরসি) বড় সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে দেশটিতে দুর্ঘটনা ঘটবে এবং এই অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুতর সমস্যা দেখা দেবে।
ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ চীন নিয়ে বুশ প্রশাসনের যে কোনও একটি নীতি জানতে চাইলো
ভদ্রলোকঃ কি বলেছিলেন?
আসগরঃ আমি বললাম, বুশ প্রশাসন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত, চীনের নীতি আমেরিকান জনসাধারণের আলোচনার মাধ্যমে চীনের অনিবার্য বিকাশের ফলে দুটি বিকল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে: একটি শক্তিশালী, বিরোধপূর্ণ চীন (চীন হুমকি) এবং একটি সফল, সমবায় চীন (একটি গঠনমূলক কৌশলগত অংশীদার)।

ভদ্রলোকঃ তারপর?
আসগরঃ ভাইভা বোর্ডের লোকজন একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাতাকি করে আমাকে বললো, আপনার ভাইভা ভালো হয়েছে, রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করুন
ভদ্রলোকঃ রেজাল্টে আপনার নাম, ক্রমিক নং এবং পদবী দ্যাখেন নি, তাইতো?
আসগরঃ জ্বী, এই চাকুরীটাও হলো না
ভদ্রলোকঃ এখন বলেন, আমার কাছে কি জানতে এসেছেন
আসগরঃ আপনি কি করেন?
ভদ্রলোকঃ আগে জব করতাম এখন ব্যাবসা করছি
আসগরঃ আর কিছু করেন?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ করি
আসগরঃ সেটা কি
ভদ্রলোকঃ সোসাল মিডিয়াতে সময় দেই
আসগরঃ ও, এটা মনে হয় রিক্রিয়েশন
ভদ্রলোকঃ না
আসগরঃ তাহলে?
ভদ্রলোকঃ লেখালিখি করি
আসগরঃ কি লেখেন
ভদ্রলোকঃ কবিতা/গল্প/প্রবন্ধ/সমসাময়ীক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি
আসগরঃ ও আচ্ছা! আপনি কবি! হা হা হা !!!
ভদ্রলোকঃ এতো হাসির কি হলো
আসগরঃ আপনি কি জানেন বাংলাদেশে কাকের সংখ্যা বেশি নাকি কবি’র সংখ্যা বেশি?
ভদ্রলোকঃ নাহ
আসগরঃ আমরা জরিপের কাজ করি, আমাদের কাছে সব হিসেব আছে
ভদ্রলোকঃ কেমন হিসেব?
আসগরঃ এ দেশেতো এখন জনসংখ্যা ১৬ কোটি, যদি প্রাপ্ত বয়ষ্ক ৮ কোটি হয় এবং এর এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ যদি ২ কোটি কবি হয় তাহলেওতো ২ কোটি কাক এ দেশে নেই

ভদ্রলোকঃ হুম
আসগরঃ কোন সোসাল মিডিয়ায় লিখেন?
ভদ্রলোকঃ ফেসবুক/টুইটার
আসগরঃ ফেসবুকেতো নিজের টাইমলাইন ছাড়াও অনেক গ্রুপ আছে
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ নিজের টাইমলাইন ছাড়াও ১০৫০টি গ্রুপে এড আছি
আসগরঃ আর কোথাও লেখেন?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ বিভিন্ন ব্লগে লিখি
আসগরঃ আপনার কি নিজের ব্লগও আছে নাকি
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ আছে এটা গুগোল ফ্রী ব্লগ
আসগরঃ ইউটিউব চ্যানেল আছে?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ আমার নিজের ১০টা ইউটিউব চ্যানেল আছে
আসগরঃ আর কোথাও সংযুক্ত আছেন?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ প্রফেশনাল মিডিয়া লিঙ্কডিন এ আছি
আসগরঃ আর কিছু করেন?
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ অনলাইন সাংবাদিকতা করি
আসগরঃ আর কিছু করেন নাকি
ভদ্রলোকঃ হ্যাঁ ফ্রিল্যন্সিং করি
আসগরঃ কোন বিষয়ে?
ভদ্রলোকঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন
আসগরঃ আর কোনও গ্রুপে?
ভদ্রলোকঃ মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসএপ, ইমো, উইচ্যাট, লাইন এই ধরণের অনেক এপ্সের গ্রুপেও এড আছি
আসগরঃ হুম। একটা প্রশ্ন রাখতে চাই
ভদ্রলোকঃ জ্বী বলুন
আসগরঃ আপনার জীবনের লক্ষ্য কি
ভদ্রলোকঃ তার মানে?
আসগরঃ মানে জানতে চাচ্ছি আপনি কিসে সফল হতে চান? আপনি কি আপনার লক্ষ্যস্থির করেছেন?
ভদ্রলোকঃ একটু ভেঙ্গে বলুনতো, কি জানতে চাইছেন।
আসগরঃ ব্যাবসা/কবি/লেখক/ইউটিউবার/সাঙ্গবাদিকতা/ব্লগার/ফ্রিল্যান্সিং – এর মধ্যে আপনি কোনটাতে সফল হতে চান?
ভদ্রলোকঃ আপনি কি জানেন সুনীল গাঙ্গোপাধ্যায়ের পেশা কি ছিলো?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ জীবনানন্দ দাসের পেশা ছিল শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতা
আসগরঃ আচ্ছা

ভদ্রলোকঃ হুমায়ুন আহমেদের পেশা ছিলো শিক্ষকতা
আসগরঃ হ্যাঁ তা জানি
ভদ্রলোকঃ মাইকেল মধুশুদন দত্তের পেশা ছিলো শিক্ষকতা
আসগরঃ বুঝলাম
ভদ্রলোকঃ সূনীল গাঙ্গোপাধ্যায় সাংবাদিক ছিলেন কিন্তু সফল হয়েছেন কিসে?
আসগরঃ কবি/লেখক হিসেবে
ভদ্রলোকঃ জীবনানন্দ দাস কি শিক্ষকতায় সফল হতে পেরেছিলেন?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ হুমায়ুন আহমেদ রসায়ন শিক্ষকতায় খ্যাতি পেয়েছেন নাকি লেখক হিসেবে?
আসগরঃ লেখক হিসেবে
ভদ্রলোকঃ মধুসূদন দত্তও কি শিক্ষকতায় খ্যাতি পেয়েছেন?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ উনাদের সময়ে ফেসবুক/টুইটার/ইউটিউব/ফ্রিল্যন্সিং থাকলে উনারাও এগুলোতে যুক্ত থাকতেন
আসগরঃ উনাদের পেশা ভিন্ন থাকলেও উনাদের কিন্তু লক্ষ্য স্থির ছিল
ভদ্রলোকঃ ভাইরে, এটা আখেরী জামানা, এখানে কোনও লক্ষ্য টক্ষ্য স্থির রাখা যায় না
আসগরঃ আখেরী জামানা তো কি হয়েছে?
ভদ্রলোকঃ আইয়ামে জাহেলিয়াতের নাম শুনেছেন?
আসগরঃ সেটাতো ছিল ১৫০০ বছর আগে নবীজির সময়, এখন সাইন্স মানুষকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে
ভদ্রলোকঃ এই আখেরী জামানা, আইয়ামে জাহেলিয়াতের চেয়েও ভয়ংকর
আসগরঃ কেনো?
ভদ্রলোকঃ আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে কাফেররা আল্লাহ-নবী বিশ্বাস করতো না কিন্তু তা প্রকাশ করতো
আসগরঃ এখন?
ভদ্রলোকঃ এই আখেরী জামানায় মুসলমানরা যে আল্লাহ-নবী বিশ্বাস করে না তা কিন্তু প্রকাশ করে না, মানুষের কাছে ভালো সাজার জন্য লোক দেখানো নামাজ-রোজা-হজ্জ্ব করে
আসগরঃ বুঝতে পারলাম। আমার হাতে সময় কম। আপনি একটু বলেন, ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে, ১০৫০টি গ্রুপে, বিভিন্ন ব্লগে, নিজের ব্লগে, ১০টি ইউটিউব চ্যানেলে, লিংকডইনে,ফ্রী ল্যন্সিং এ, সাংবাদিকতায় এবং আপনার ব্যাবসায় কখন কোথায় কতটুকু সময় দিয়ে থাকেন?
ভদ্রলোকঃ আমি কি আপনাকে এগুলো বলতে বাধ্য
আসগরঃ না

ভদ্রলোকঃ আপনি নিজেওতো লক্ষ্যস্থীর করেছিলেন আর্মি চিফ হবেন, আবার লক্ষ্য পরিবর্তন করেছেন বি সি এস এ ফরেন এফেয়ার্সে সেকশন অফিসার হবেন, তাতেওতো সফল হতে পারেন নি
আসগরঃ হ্যা ভাই আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আইয়ামে জাহেলিয়াতে ছিলো ঈমানদার এবং মোনাফেক। আর এখন কিছু ঈমানদার আছে বটে আর বাকিরা মোনাফেকের চেয়ে ভয়ঙ্কর।
ভদ্রলোকঃ এখন জ্যাক অব অল ট্রেড বাট মাস্টার অফ নাথিং এর যুগ
আসগরঃ কেন ভাই?
ভদ্রলোকঃ সব অপশন রাখতে হয়, বলাতো যায় না কোনটা ক্লীক করবে
আসগরঃ ও
ভদ্রলোকঃ যে কোনও একটা ক্লীক করলেই বাকি সব বন্ধ, তারপর ঐ একটা নিয়েই খেলা শুরু। শুরু তো শুরু। শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। শুরুও নেই শেষও নেই। সবখানেই শুরু আবার সবখানেই শেষ। পিছু ফিরে তাকাবার সময় আর কোথায়?
আসগরঃ শুরু শেষ এসব কি বলে চলেছেন, কিছুইতো বুঝতে পারছি না
ভদ্রলোকঃ ঐ যে উপরে তাকান, ঐ আকাশটার শুরু কোথায় আর শেষ কোথায় বলতে পারবেন?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ একটা বৃত্ত আঁকার জন্য প্রথমে একটা বিন্দু থেকে শুরু করে আবার সেই বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়ে অন্য একজনের কাছে যেয়ে যদি বলেন, এর শুরু কোথায় আর শেষ কোথায়? উনি বলতে পারবেন?
আসগরঃ না
ভদ্রলোকঃ আমি যদি বলি যেখান থেকে শুরু সেখানেই শেষ
আসগরঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন
ভদ্রলোকঃ যদি বলি শুরু-শেষ কিছুই নাই
আসগরঃ তাও ঠিক
ভদ্রলোকঃ যদি বলি সব বিন্দুতেই শুরু আবার সব বিন্দুতেই শেষ
আসগরঃ এটাও ঠিক
ভদ্রলোকঃ বৃত্তের ভিতরে কি থাকে
আসগরঃ ফাঁকা
ভদ্রলোকঃ বৃত্তের বাহিরে কি থাকে
আসগরঃ কিছুই থাকে না
ভদ্রলোকঃ চক্র বোঝেন? চক্রের শুরু কোথায় শেষ কোথায়?
আসগরঃ না ভাই, আমি এগুলো বুঝি না, আমি এখন যাই
ভদ্রলোকঃ সরি! মিস্টার! আপনি এক কদমও এখান থেকে যেতে পারবেন না
আসগরঃ কেনো ভাই?
ভদ্রলোকঃ আপনি যে এই স্টাইল করে দাঁড়ি রেখেছেন, এগুলো কারা রাখে জানেন তো?
আসগরঃ অনেকেই তো রাখে, এটা তো এই যুগের ফ্যাশান
ভদ্রলোকঃ দুঃখিত! আমার মনে হয় আপনি জঙ্গি, এদিকে তাকান আপনার একটা ছবি তুলি
আসগরঃ কেনো ভাই?
ভদ্রলোকঃ পেপারে দেবো
আসগরঃ ভাই, আমার ভুল হয়ে গেছে,কাক আর কবির হিসেব আপনাকে দেয়া ভুল হয়ে গেছে ভাই, মাফ চাই
ভদ্রলোকঃ আমি মাফ করি না
আসগরঃ ভুল করলেতো স্বয়ং আল্লাহ তালাও মাফ করে দেন
ভদ্রলোকঃ তিনি মহাণ, অতিশয় দয়াময়। আমি আল্লাহ না। আমি মানুষ। আমি মাফ করি না
আসগরঃ ভাই আমি হাত জ্বোড় করছি, আপনার পায়ে পড়ছি, আমাকে মাফ করে দেন
ভদ্রলোকঃ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন, এসব ফালতু জব ছেড়ে দিন
আসগরঃ ভাই আমি একটা মার্কেট রিসার্চ কোম্পানিতে নতুন চাকুরী নিয়েছি। কোয়েশচেনারির মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে লক্ষস্থির জরিপের কাজ দিয়েছে। ভাই বিশ্বাস করুন এতো জটিল কাজ আর ভালো লাগছে না।
ভদ্রলোকঃ ঐ সব ফালতু চাকুরী ছেড়ে দিন
আসগরঃ তাহলে কি করবো ভাই? কতো চেষ্টা করলাম কোনও চাকুরী পেলাম না
ভদ্রলোকঃ এই যে আমি যা করছি তাই করবেন
আসগরঃ আপনার মতো এতো যোগ্যতাতো আমার নাই ভাই
ভদ্রলোকঃ শুনুন, যোগ্যতা একটা ভুয়া ব্যাপার। আপনি আমাকে দেখানতো বড় বড় পজিশনের যোগ্য চেয়ারগুলোতে কয়টা যোগ্য ব্যাক্তি বসে আছে?
আসগরঃ আমাকে জরিপের কাজে উনাদের কাছে যেতে হয়েছিলো, উনাদের অনেক বড় বড় ডিগ্রী আছে
ভদ্রলোকঃ ডিগ্রী হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতা আর এসব ডিগ্রী টাকা থাকলে অনেক কিনতে পাওয়া যায়
আসগরঃ ভাই, তাইলে ক্যামনে কি!
ভদ্রলোকঃ ডিগ্রী ফিগ্রী কিচ্ছু নাই এমন অনেকে আছে যারা অনেক বড় বড় পজিশন হোল্ড করছে, এগুলো আপনি জানেন?
আসগরঃ না তো! তাহলে উনারা কি করে টিকে আছেন!
ভদ্রলোকঃ এগুলো আত্নীয় স্বজন, টাকার ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক পোষ্ট
আসগরঃ তাহলে উনারা এতো বড় বড় দায়িত্ব পালন করেন কি করে?
ভদ্রলোকঃ তারা দামী গাড়ীতে চলে্ন, অনেক স্যলারি পান এবং নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে বেড়ান
আসগরঃ কাজ করেন কি করে?
ভদ্রলোকঃ তাদের পায়ের নিচে অনেক শিক্ষিত এবং যোগ্য মানুষের ঘাড় থাকে। ঐ সব ঘাড়ে পা রেখে উনারা চলেন
আসগরঃ ও
ভদ্রলোকঃ আপনার বয়স কম! নতুন পাশ করে বেরিয়েছেন। এগুলো বুঝতে সময় লাগবে
আসগরঃ হ ভাই ঠিক কইছেন
ভদ্রলোকঃ এখন যান। এই নিন আমার কার্ড। যোগাযোগ রাখবেন
আসগরঃ ঠিক আছে ভাই, আসসালামুয়ালাইকুম!
ভদ্রলোকঃ ওয়ালাইকুম।

কবিতা : তুমি কি কিছুই দ্যাখো না! …”আবৃত্তি সংযুক্ত”

আমার বাবা ছিলেন বর্গাদার
অন্যের জমি আদি নিয়ে ফসল ফলাতেন
আমার বয়স যখন তিন
ঠিক তখনি আমার মা এর মৃত্যু হলো

কিছু দিন পর বাবা বিয়ে করে আনলেন
এক নতুন মা
ভালোই চলেছিলো কিছু দিন
তারপরই শুরু হলো সৎ মায়ের নির্মম অত্যাচার!
শুরু হলো মারধোর আর বকাবকি!

একদিন সৎ মা আমার বাবাকে
বিড়বিড় করে কি যেনো বোঝালেন
পরদিন বাবা আমাকে মেরে পিটে
বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে দড়জা আটকে দিলেন
তখন প্রায় শেষ বিকেল
আমি দড়জায় বসে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
“বাবা দড়জা খোলো! আমাকে কেনো বের করে দিলে! আমার কি অপরাধ!”

কিন্তু কেউ দড়জা খুললো না!
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো
নিকটের জঙ্গল থেকে শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছিলো
আর আমি ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম!

আমি ছোট্ট একটি মেয়ে
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না
ভোর হতেই আমার সৎ মা আমাকে ডেকে তুললেন
নিয়ে গেলেন বাজারের বাস স্ট্যান্ডে
তুলে দিলেন একটি বাসে
আর বললেন, তোমার নানার বাড়ী পাঠালাম, সেখানে ভালোই থাকবে।

অনেক রাতে বাসের লোকেরা আমাকে নামিয়ে দিলো একটি বড় শহরে
আর বলে গেলো, এই পৃথিবীতে কাজ করে খেতে হয়, তুমি কাজ করে খাও।

আমি ছোট্ট একটি মেয়ে খালি পায়ে হাটতে হাটতে আলো ঝলমলে একটি বাড়ী দেখলাম
ওখানে যেয়ে বারান্দায় আশ্রয় নিলাম
বসে থাকতে থাকতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম

সকালে গৃহকত্রী এসে সব শুনে বললেন, আজ থেকে তুমি এখানে থাকবে, এখানে খাবে, শুধু ঘর মুছবে আর কাপড় কাচবে।

উনারা প্রতিদিন মাছ মাংস দিয়ে ভাত খেতেন টেবিলে বসে
আর আমি ক্ষুদার্থ পেটে বসে থাকতাম রান্না ঘরে
উনাদের খাওয়া শেষ হলে,
গৃহকত্রী একটি প্লেটে একটু ভাত আর একটু শাক ভাজি দিয়ে বলে গেলেন, ঐ খানে লবণ আছে, জলদি খেয়ে কাপড় কাচতে যা।

একদিন সন্ধায় গৃহকত্রী ডেকে বললেন, বাথরুমের কাপড় গুলো ধুয়ে বেলকনির গ্রীলে ছড়িয়ে দিয়ে দে

আমি গিয়ে দেখি অনেক গুলো কাপড়!
আট দশটা জিন্সের প্যান্ট আর অনেক গুলো শার্ট
কাপড় কাচতে কাচতে কখন যে উঠে এসে ঘরের মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না

সকালে এ অবস্থা দেখে গৃহকত্রী একটা কাঠের টুকরা নিয়ে আসলেন
দেখে মনে হলো কাঠের চেয়ারের একটা ভাঙ্গা পায়া
কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি ওটা দিয়ে স্বজোরে আমার পিঠে আঘাত করলেন
সাথে সাথেই আমার দম আটকে গেলো
আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না!
চোখে শুধু অন্ধকার দেখছিলাম!
মুহুর্তেই তিনি তীব্র বেগে আবার আমার পিঠে আঘাত করলেন।
আমি মেঝেতে পড়ে গেলাম!
চিৎকার করতে করতে গৃহকত্রীর দু পা চেপে ধরে বললাম,
“আমাকে আর মারবেন না! আর মারলে আমি বাচবো না, আপনি আমার মায়ের মতো, আমি এক্ষুনি সব কাপড় কেচে দিচ্ছি!!!!!”

একদিন বাসায় অনেক বড় একটা ইলিশ মাছ এলো
এতো বড় ইলিশ মাছ আমি কখনো দেখিনি
উনারা চেয়ার টেবিলে বসে সেই মাছের তরকারী দিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন,
আর আমি ক্ষুদার্থ পেটে রান্না ঘরে বসে সেই সুঘ্রাণ পাচ্ছিলাম
একটু পরে গৃহকত্রী আমাকে শুধু মিষ্টি কুমড়োর ভাজি দিয়ে ভাত দিয়ে গেলেন।

আমি ছোট ছিলাম
তাই না বুঝে সেই রাতে ফ্রিজ খুলে এক টুকরা মাছ খেয়েছিলাম
আমি ভূল করেছিলাম

সকালে গৃহকত্রী আমাকে রান্না ঘরে ডেকে নিলেন
বললেন, আমি রাতে গুনে রেখেছি এগার পিচ আর এখন দশ পিচ মাছ?
তারপর বললেন, জামা খোল
আমি জানতে চাইলাম, কেনো খালা আম্মা?
তিনি বললেন, যা বলছি কর হারামজাদী!
জামা খোলার পর বললেন, দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়া
তখনো আমি খেয়াল করিনি তার গ্যাসের চুলোয় একটি খুন্তি জ্বলতে জ্বলতে লালা হয়ে গেছে
মুহুর্তেই তিনি অগ্নি-লাল খুন্তিটি আমার পিঠে চেপে ধরলেন!
আমি অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে তার হাত থেকে ছুটতে চাইলাম!
কিন্তু তিনি তার পা দিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরেছিলেন!

আমি দাপাদাপি করতে করতে ছূটে গিয়ে দৌড়ে পালাতে গেলাম
কিন্তু রান্না ঘরের দড়জার ছিটকিনি যে উপরেরটা লাগানো!
আমি ছোট তাই আমার হাত ওখানে পৌছুতে পারে নি!
তিনি আমাকে টেনে এনে আমার বুকে লাথি মাড়লেন!
আমি চিত হয়ে আবার মেঝেতে পড়ে গেলাম!
গৃহকত্রী আমার বুকে আবার লাল খুন্তি চেপে ধরে বললেন, বল আর কোনো দিন ফ্রিজ খুলে কিছু খাবি নাকি!
আমি চিৎকার করে বললাম, আমি আর ফ্রিজ খুলবো না! আপনারা যা দেবেন আমি তাই খাবো!

তিনি আমাকে মেঝেতে ফেলে রেখে চলে গেলেন
আমি জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই মনে হলো কে যেনো সব কিছু দেখেছেন!
আমার দু চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝড়তে লাগলো!

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,
হে আকাশের মালিক!
হে পৃথিবীর মালিক!
তুমি কি কিছুই দ্যাখোনা!
তুমি কি কিছুই শোন না!………… তুমি কি কিছুই দ্যাখোনা!

https://www.facebook.com/voicemultimedia/videos/640516262967974/

হুমায়ুন আহমেদ এর কিছু উক্তি …

হুমায়ুন আহমেদ দুই বাংলার জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। বাংলা কথা সাহিত্যে তিনি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আজ তাঁর কিছু উক্তি/বাণী এখানে তুলে ধরছি যদিও অধিকাংশ পাঠক এগুলো জানেন তবুও মুলত আমার সংগ্রহে রাখার জন্যই শেয়ার করছি। আশা করি অনেকেরই ভালো লেগে থাকবে:

১. ভদ্র ছেলেদের জন্য মেয়েদের মনে কখনো প্রেম জাগে না। যা জাগে তা হল সহানুভূতি।

২. একজন মানুষকে সত্যিকারভাবে জানার উপায় হচ্ছে তার স্বপ্নটা জানা।

৩. মেয়েদের স্বভাবই হচ্ছে হালকা বিষয় নিয়ে মাতামাতি করা।

৪. দুঃসময়ে কোনো অপমান গায়ে মাখতে হয় না।

৫. এই পৃথিবীতে প্রায় সবাই, তার থেকে বিপরীত স্বভাবের মানুষের সাথে প্রেমে পড়ে।

৬. মেয়েদের দুটি জিনিস খুব খারাপ, একটি হচ্ছে অত্যাধিক সাহস অন্যটি গোয়ার্তমি।

৭. যে মানুষ নিঃশব্দে হাসে তার বিষয়ে খুব সাবধান, দুই ধরণের মানুষ নিঃশব্দে হাসে – অতি উঁচু স্তরের সাধক এবং অতি নিম্নশ্রেণীর পিশাচ চরিত্রের মানুষ।

৮. দরিদ্র পুরুষদের প্রতি মেয়েদের একপ্রকার মায়া জন্মে যায়, আর সেই মায়া থেকে জন্মায় ভালোবাসা।

৯. বোকা মানুষ গুলো হয়তো অন্যকে বিরক্ত করতে জানে কিন্তু কাউকে ঠকাতে জানে না।

১০. ভালো মানুষের রাগ থাকে বেশী। যারা মিচকা শয়তান তারা রাগে না। পাছায় লাথি মারলেও লাথি খেয়ে হাসবে।

১১. মেয়েরা এমনিতেই সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত হয়। পেটে সন্তান থাকা অবস্থায় সন্দেহ রোগ অনেক গুনে বেড়ে যায়।

১২. সব গ্রেটম্যানরাই কোনো না কোনো সময় বাড়ী থেকে পালিয়েছেন। একমাত্র ব্যাতিক্রম রবি ঠাকুর।

১৩. মানব জাতির স্বভাব হচ্ছে সে সত্যের চেয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিরাপদ মনে করে।

……/হুমায়ুন আহমেদ।

শুন্যতা কল্পনা বাস্তবতাঃ স্বপ্ন

যে বাস্তবতা এসেছে কল্পনা থেকে
এবং যে কল্পনা এসেছে শূন্যতা থেকে
সেই বাস্তবতা আসলে স্বপ্ন!

আজ এই অবেলায় এসে প্রশ্ন জাগে মনের মাঝে
মানুষ কি সত্য?

মানুষ সত্য হলে নিজেকে সৃষ্টি করতো
মানুষ সত্য হলে মৃত্যুকে জয় করতো।

তিনিই একমাত্র সত্য যিনি মানুষ সৃষ্টি করেন
তিনিই পরম সত্য যিনি জন্ম-মৃত্য নিয়ন্ত্রণ করেন

গুণীজনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে
আমার উপলব্ধি বলে যেতে চাই!
ত্রিভুবনে সবার উপরে স্রষ্টাই সত্য
তাঁর উপরে নাই!

যে অতীত একদিন ভবিষ্যৎ ছিলো
সেই ভবিষ্যৎ যে বর্তমান হয়ে আবার অতীতে মিলেছিলো
তার সবই স্বপ্ন!

আবারও এই অবেলায় এসে প্রশ্ন জাগে মনের মাঝে
মানুষের জীবন কি সত্য?

মানুষের জীবন সত্য হলে জন্ম সত্য হতো
জন্ম সত্য হলে মৃত্যু মিথ্যে হয়ে হতো
জন্ম আসলে স্বপ্ন!

আমরা ঘুম দিয়েছি জন্মের আগেই
আর তারপর থেকে চলছে শুধু স্বপ্ন

আমরা সবাই স্বপ্ন দেখছি এই পৃথিবীতে
স্বপ্নের ভেতরে খাই
স্বপ্নের ভেতর ঘুমাই
স্বপ্নের মাঝে স্বপ্ন দেখি
স্বপ্নের মাঝেই অন্যকে স্বপ্ন দেখাই!

এই পৃথিবীতে মৃত্যুই চির সত্য, ভাঙ্গবার এ স্বপ্ন!
গুণীজনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে
আমার উপলব্ধি বলে যেতে চাই
মৃত্যু হলেই এ স্বপ্ন ভেঙ্গে
জেগে উঠবো আমরা চির বাস্তবতায়!

আমি ঘুমতে পারি না

আমি ঘুমতে পারি না

আমার ঘুম আসে না
আমি ঘুমতে গেলে
একটি কুকুর করুণ শব্দে কেঁদে ওঠে
সেই কান্না শুনে মনে হয়
সে ভয়ংকর কিছু দ্যাখে
যা আমি দেখতে পাই না।

আমার ঘুম আসে না
আমি ঘুমতে গেলে
একটি প্যাঁচা ভাংগা কণ্ঠে চেঁচিয়ে ওঠে
আমি আতঁকে উঠি
ঘুম আর গুম গুলিয়ে ফেলি।

আমার ঘুম আসে না
একটু তন্দ্রা এলে
স্বপ্নে দেখি অজস্র সদ্য কলিগুলো
ফুল হয়ে ফোটার আগেই
দুমড়ে মুচড়ে হ্যাঁচকা টানে ছিড়ে ফেলা হচ্ছে
আমি লাফিয়ে উঠে পড়ি
জানালার ফাঁকে আকাশ দেখি
এ রাত কি পোহাবে না?
ভোর হতে আর কতো বাকী!
নতুন সূর্য কি আর উঠবে না?

আমার ঘুম আসে না
আমি ঘুমতে গেলে
কোটি কোটি হৃদয় অন্তর-দহনে পোঁড়ার গন্ধ পাই
অন্তর কষ্টের আর্তনাদ! হাহাকার! বোবা কান্না শুনি
আমি জেগে জেগে রাত কাটাই।

আমি ঘুমতে পারি না
আমি ঘুমতে গেলে
হায়েনার পায়ের আওয়াজ শুনি
আমি চমকে উঠি।

আমার ঘুম আসে না
আমার ঘুম আসে না
আমি ঘুমতে পারি না।।

বাবার কাছে লেখা এক সন্তানের চিঠি

তারিখঃ ঢাকা। ২৪ এপ্রিল ২০১৩ ইং।

প্রিয় বাবা,

এটাই হয়তো তোমার কাছে আমার শেষ চিঠি
এ চিঠি তোমার হাতে পৌঁছুবে কিনা আমি জানি না
আমি হয়ত একটু পরেই মারা যেতে পারি বাবা!

গতকাল রাতে যে সুন্দর স্বপ্নটি দেখেছিলাম
আজ সকালে কাজে আসার আগে তোমাকে বলেছিলাম
কিন্তু তা আর সম্ভব হল না!

আজ সকালে আমাদের কারখানায় এক দুর্ঘটনা ঘটেছে!
তারপর!

তারপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম!
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন চারিদিকে মানুষের বেঁচে থাকার আর্তনাদ! হাহাকার!! চীৎকার!!!
আমাদের অফিসের বিল্ডিংটা আজ ভেঙ্গে পড়েছে!
আমি দোতালায় কাজ করছিলাম কিন্তু এখন কোথায় আছি বুঝতে পারছি না বাবা!

বাবা!
আমার মাথায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে!
আমার মাথার উপরে একটা সেলাই মেশিন খুব শক্তভাবে আটকে আছে!
আর সেলাই মেশিনের উপরে ভেঙ্গে পড়েছে ছাদ।
মনে হচ্ছে সেলাই মেশিনের সুচের কিছুটা অংশ মাথায়!
মাথায় ঢুকে গিয়েছে!

বাবা!
আমার মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে
আমার গলা, বুক, শার্ট সব রক্তে ভিজে গেছে
আমি একটুও নড়তে পারছি না বাবা!!!

বাবা!
আমার শার্টের পকেটে এক টুকরা কাগজ ছিল আর কলম
আমি এখন সেই কাগজে তোমার কাছে চিঠি লিখছি
কিন্তু বাবা!
এই কাগজটাতে আমার মাথা থেকে রক্ত পড়ে কিছুটা ভিজে গিয়েছে
আমার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে বাবা!

দূরে কোথাও অনেক মানুষের কথা শোনা যাচ্ছে
মনে হয় উনারা উদ্ধার কর্মী
ওরা কি আমাকে খুজে পাবে?
আমিতো জোরে ডাকতে পারছি না বাবা!
আমিতো চিৎকার করে বলতে পারছি না, “আমি এখানে আটকা পড়ে আছি! তোমরা এদিকে এসো!! আমাকে বাঁচাও!!!”

বাবা!
সোনালীর পেটে আমার সন্তান এসেছে সেই সু সংবাদটা তোমাকে দেয়াই হয় নি
ও গতকাল রাতেই আমাকে বলেছিলো
সোনালীর প্রতি যত্ন নিও বাবা!
মাকে কাঁদতে নিষেধ করো বাবা!
মাকে আর নতুন শাড়ি কিনে দেয়া হলো না!
আমি তোমাকে আর ঔষধ কিনে দিতে পারব না বাবা! আমাকে ক্ষমা করে দিও!

আর পারছি না বাবা!
আমি মনে হয় মারা যাচ্ছি!
কত মানুষ মারা গেছে শুনেছি, দেখেছি কিন্তু কোনও দিন বুঝিনি মৃত্যু কি!
মৃত্যু মানে কি বাবা? আমি কোথায় যাচ্ছি বাবা!
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে বাবা!
বাবা! বাবা!
বাবা!!!!………

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাললা………

বাবার কাছে লিখা এক সন্তানের চিঠি

আমার যে ইদানীং কি হয়েছে কিছু বুঝি না

স্ত্রী কে রেখে এসেছি আমার বাবাকে দেখাশোনা করতে
রেখে এসেই বাসায় ঢুকে প্রথমে ছাদে উঠলাম
পতাকা টানালাম।
না। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল বা জার্মানীর পতাকা নয়
আমি টানিয়েছি স্বাধীনতার পতাকা।

হ্যা। বাংলাদেশ তো সেই কবেই স্বাধীন হয়েছে
আজ পঁয়তাল্লিশ বছর পর কেনো স্বাধীনতার পতাকা?

না। আমি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পতাকা টানাইনি
আমি টানিয়েছি মুক্তির পতাকা
স্ত্রী নেই! আমি স্বাধীন! আমি মুক্ত! সেই স্বাধীনতার পতাকা।

এখন কেউ বলার নেই, “এতো রাতে ল্যাপটপে কী করো?”
কেউ টাকার হিসেবের অঙ্ক কষতে বসে না এখন
কেউ সকাল সাতটায় ঘুম থেকে ডেকে টেনে তোলে না
আমি স্বাধীন! আমি মুক্ত!

কিন্তু ইদানীং যে আমার কী হয়েছে না!
কিছু বুঝি না।

এইতো গতোকাল রান্না ঘরে গিয়েছিলাম
ল্যাপটপ রেখে মাছ মাংস রান্না বড্ড ঝামেলা মনে হয়
কিছু চাল ডাল মিশিয়ে তেল নূন পেঁয়াজ মরিচ পাতিলে তুলে
পানি দিয়ে গ্যাসের চুলো অন করে আবার ল্যাপটপে বসে পড়লাম।

একটা কবিতার আবৃত্তি শুনছিলাম
তারপর কি যেনো লেখাযোখা করছিলাম
হঠাৎ একটি পোড়া গন্ধ পেলাম!

রান্না ঘরে দ্রুত যেয়ে দেখি খিচুড়ি পুড়ে গেছে
একটুও পানি নেই
দ্রুত চুলা থেকে নামিয়ে সিঙ্কে নিয়ে কল ছেড়ে পানি দিলাম
চুলোয় তুলে দিয়ে আবার ল্যাপটপে
আবার পোড়া গন্ধ!
রাগ করে চুলা থেকে নামিয়ে রেখে
আবার এসে বসলাম ল্যাপটপে।

একটু পর খেতে গিয়ে দেখি খিচুড়ির রঙ কালো
আর পোড়া গন্ধ!
একটা ডিম ভেঁজে নিয়ে ওটাই খেলাম
কৈ মন্দ লাগেনিতো!
শুধু পোড়া গন্ধ লাগছিলো।

আমার যে ইদানীং কি হয়েছে না!
কিছু বুঝি না।
ল্যাপটপে বসে সিগারেট টানতে টানতে
সিগারেটের ছাই এস্ট্রেতে না ফেলে পানি ভর্তি গ্লাসে ফেললাম।

আমি যে কয়েকদিন সূর্য দেখলাম না!
হঠাৎ ল্যাপটপের ঘড়িতে দেখি রাত সাড়ে তিন টা
দৌড়ে গিয়ে ওয়াইফাই, ল্যাপটপ, মোবাইল বন্ধ করে বিছানায়।

আমার যে ইদানীং কি হয়েছে না!
কিছু বুঝি না।
অনেক রাতে লোরকা, পাবলো নেরুদা, তলস্তয় এসে কথা বলে
কথা বলে জীবনান্দ, সুকান্ত আরও অন্যান্নরা।

আমার যে কি হয়েছে!
আজ সকালেই ল্যাপটপে বসে থাকতে থাকতে
একটা বড়ই মুখে দিলাম
মুহুর্তেই বুঝলাম ওটা ছিলো একটা আস্ত বোম্বাই মরিচ!

আলাপন-৩

ক্যাডাভিয়া আজ ভোর পাঁচটায় উঠেছে। ফজরের আযান শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আর ঘুম এল না। এভাবে অহেতুক শুয়ে থাকার কোনও মানে হয় না। ভোরে যখন উঠেই গেছে তাই আগে নামাজ পড়ল। তারপর ভাবল একটু হাটাহাটি করে আসলে কেমন হয়?
ক্যাডাভিয়া হাটতে বের হল।
আহা! কি অপূর্ব ভোরের বাতাস! কতদিন যে ভোরের আলো দেখাই হয়নি! হাঁটতে হাঁটতে সামনে একটি শিউলি ফুলের গাছ পড়ল। ফুল ফুটে গাছ ভরে আছে। গাছের নিচে অনেক ফুল পড়ে আছে। কি যে অপরূপ লাল-শাদার মিশ্রণ। চোখ জুড়িয়ে যায়। রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। মাঝে মাঝে কেউ কেউ জগিং করতে করতে যাচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে বেশ কজন গল্প করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে।

এখন শীতের দিন। ক্যাডাভিয়া একটি র‍্যাংলার ব্র্যান্ডের নিটেড ট্রাউজার পড়েছে আর গায়ে নর্থফেস ব্র্যান্ডের জ্যাকেট। পায়ে একজোড়া রিবক কেডস।
হঠাৎ ওর প্রিয় মানুষটির সাথে দেখা হয়ে গেল। এম বি এ ক্লাসমেট।

ছেলেটিকে যখন কেউ নাম জিজ্ঞেস করে আর তখন যদি সেখানে ক্যাডাভিয়া থাকে তাহলে সে একটু অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকে।
কারণ যিনি নাম জিজ্ঞেস করেন উনি নাম শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ করে কি যেন ভাবেন। এই ফাঁকে ক্যাডাভিয়া অন্য প্রসঙ্গ তুলে আলাপচারিতা শেষ করে।
ক্যাডাভিয়া তাঁকে অন্য নামে ডাকে। এই নামটি ক্যাডাভিয়াই দিয়েছে। ক্যাডাভিয়ার দেয়া নামটি হচ্ছে “আলিফ”।
ক্যাডাভিয়া যখন “এই আলিফ!” বলে ডাক দেয় তখন সে যত ব্যস্তই থাকুক ক্যাডাভিয়া ডাকে হুড়মুড় করে আরবি আলিফ হরফের মতো সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
ছেলেটি ক্যাডাভিয়া খুব প্রিয় হওয়ার একটা কারণ যে, ক্যাডাভিয়া আলিফ কে যা বলে সে তাই বিশ্বাস করে এবং শোনে।
একদিন ক্যাডাভিয়া জিজ্ঞেস করেছিল, আমি যা বলি তাই তুমি ঠিক মনে কর কেন? আমি কি ভুল বলতে বা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারি না?
আলিফ উত্তরে বলেছিল, আমি তোমাকে অন্ধের মতো ভালোবাসি, এখন তুমি যদি ভালবাসার অন্ধ মানুষকে গর্তে ফেলে দাও আমি প্রস্তুত, ভালবেসে মানুষ কত কিছুই না করেছে।

আলিফ নামক এই ছেলেটি ট্যালেন্ট কিন্তু বুদ্ধি খাটায় না। এস এস সি এবং এইচ এস সি দুটোতেই গোল্ডেন এ প্লাস। তারপরও কেমন যেন একটু ভাবুক ধরণের।
পড়ালেখায় ভালো বৈষয়িক জ্ঞানও ভাল কিন্তু তার ধ্যান ধারণা একটু ভিন্ন ধাচেঁর।
কি সব সৃষ্টি-স্রষ্টা-পৃথিবী-সময় এগুলো নিয়ে ভাবে। কে আমি? কোথা হতে আসলাম। কেন আসলাম। কোথায় যাব। আসলাম যদি তাহলে কেন যাব। মৃত্যু কি? এসব আজগুবি ভাবনায় ডুবে থাকে।
একবার ক্যাডাভিয়া এবং আলিফ এক রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিল। দুপুরের খাবার। কাচ্চি বিরিয়ানির অর্ডার দেয়া হয়েছিল।
বিরিয়ানি দেয়ার আগে হোটেল বয় সালাদ, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ এবং গাঁজর টেবিলে রেখে গেল।
আলিফ কি যেন ভাবতে ভাবতে একটা কাঁচা মরিচ তুলে নিয়ে কামড় বসিয়ে দিল।

এই ধরনের অনেক কাণ্ড সে করেছে। এর কোনও কারণ ক্যাডাভিয়া খুঁজে পায়না। তারপরও এই ছেলেটিকে ক্যাডাভিয়া খুব পছন্দ।

আলিফ ক্যাডাভিয়া্র কিছুটা দূর সম্পর্কের আত্নিয়।
একবার আলিফ ক্যাডাভিয়াদের গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিল। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্যাডাভিয়া খুঁজতে গিয়ে দ্যাখে লেবু বাগানে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ক্যাডাভিয়া ডাকল কিন্তু তার কোনও সাড়া নেই।
ক্যাডাভিয়া আলিফের চোখের দিকে তাকিয়ে তারপর বরাবর আকাশের দিকে তাকাল। দেখল বিশাল আকৃতির পূর্ণিমা চাদের চারপাশ দিয়ে শাদা শাদা মেঘ উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে। আলিফ নিষ্পলক তাকিয়ে আছে ওদিকেই।
কিছুক্ষণ পর ক্যাডাভিয়া জিজ্ঞেস করল, কি দেখছ?

এবার আলিফ মুখ খুললঃ
কেন এই বিশাল পূর্ণিমা? শাদা মেঘেরা কোথা থেকে আসছে? কোথায় যাচ্ছে? কেন যাচ্ছে? কেন এই দিন, রাত, সূর্য, আকাশ? কেন এই পৃথিবী? কেন পৃথিবীতে মানুষ আসে? কেন আবার চলে যায়? কোথায় যায়???????
বলতে বলতে চেঁচিয়ে উঠল আলিফ।
ক্যাডাভিয়া আলিফের দুহাত ধরে একটা ঝাঁকুনি দিল। তারপর আলিফ স্বাভাবিক হল এবং বাসায় ফিরে গেল।

আজ শিউলি গাছের পাশে মর্নিং ওয়াকে ওদের দেখা হয়েছে। কিন্তু আলিফ শিউলি ফুলের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিল।

-এই আলিফ! ক্যাডাভিয়া একটু জোরে ডাক দিল।

হুড়মুড় করে নড়েচড়ে উঠল আলিফ আলিফ হরফের মত সোজা হয়ে গেল। তারপর ক্যাডাভিয়া দিকে তাকাল।
-তুমি কি প্রতিদিন মর্নিং ওয়াক করো? ক্যাডাভিয়া জানতে চাইল।
– হ্যাঁ! তুমি?
– মাঝে মদ্ধ্যে। তবে এখন থেকে নিয়মিত করব ভাবছি।
– আজকে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের ক্লাস আছে, আসবে না?
-হ্যাঁ আসব। এই ক্লাসটা তো করতেই হবে।
-আচ্ছা, দেখা হবে ক্লাসে। আমার অফিস টাইম হয়ে যাচ্ছে। চলি।
-খোদা হাফেজ। ভাল থেক।

আলিফ চলে গেল। ক্যাডাভিয়া বাসায় ফিরতে শুরু করেছে কারণ ওর অফিসও ৯টায় শুরু হয়।
ক্যাডাভিয়া সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অফিস করে তারপর এম বি এ ক্লাসে যায় কারণ ও ইভনিং এম বি এ করে। ক্লাস শুরু হয় ছয়টা থেকেই কিন্তু ও ক্লাসে পৌঁছায় সাড়ে ছয়টায়।
আলিফ! – এই নামটা আসলে ক্যাডাভিয়া দিয়েছে। ওর আসল নাম “গৌতমমূসা মোহাম্মদ কৃষ্ণঈসা”। এই নামটা যিনি শোনেন তিনি চুপ করে কয়েক মুহূর্ত কি যেন ভাবেন।
ক্যাডাভিয়া একবার জিজ্ঞেস করেছিল, তোমার নাম এমন বিচিত্র কেন?
আ্লিফ জবাব দিয়েছিল, আমিও একই প্রশ্ন আমার বাবাকে করেছিলাম এবং তিনি বলেছিলেন, “এগুলোতো সবই মানুষের নাম, আই ডিডিন্ট কীপ ইয়োর নেম ফ্রম আনিম্যালস, আই কেপ্ট ইয়োর নেম ফ্রম হিউম্যান, হোয়াটস রঙ হিয়ার?”
আলিফ উত্তরে তার বাবাকে বলেছিল, তুমি সব পয়গম্বরদের নাম একত্রীকরণ করে আমার নাম রাখলে কেন?
আলিফের বাবা বলেছিল, গৌতম কি মানুষের নাম নেই? মূসা নামেও অনেক মানুষ আছে, মোহাম্মদ নাম অনেক সাধারণ মানুষের আছে আর আমরা মুসলমানরা নামের আগে মোহাম্মদ যুক্ত করি, এই নামের অর্থ প্রশংসিত, অনেক মানুষের নাম কৃষ্ণ আছে, আর ঈসা আপটেকিন একজন পলিটিক্যাল লিডার ছিলেন, ঈসা সেলেবি ছিলেন অটোম্যান প্রিন্স, ঈসা কাইয়ুম ছিলেন তার্কিস ফুটবলার, ঈসা টেঙ্গব্ল্যাড সুইডিশ গায়ক।
আলিফ বলেছিল, বাবা নাম কিন্তু একটা অনেক বড় ফ্যাক্টর। আমি “গৌতমমূসা মোহাম্মদ কৃষ্ণঈসা” এই নামে একটি কবিতার বই ছাপিয়েছিলাম। বইয়ের ভেতরে কি আছে তা মানুষ দেখতেই চায় নি শুধু নামের জন্য। নাম দেখেই আর ঐ বইতে হাত দেয় নি। তুমি বাংলাদেশের মানুষ হয়ে বাঙ্গালিদের মানসিকতা না বুঝলে কি করে হবে?
আলিফের বাবা উত্তর দিয়েছিলো, ও সব বইটই ছাপিয়ে কি হবে? বিখ্যাত হতে চাস? বিখ্যাত হওয়ার দরকার নেই। আমিতো প্রথমে তোর নাম রেখেছিলাম, “লী জেমস চার্লস গার্নিয়ে রুশো শাহিন মোহাম্মদ শাহরিয়ার নিয়াজ সুমন” কিন্তু তোর মা বলল এতো বড় নাম রাখলে মানুষ মনে রাখতে পারবে না, তাই এই ছোট নাম রেখেছি।
আলিফ আর কথা বাড়ায় নি সেদিন।

আজ আলিফ একটু আগেই ক্লাসে চলে এলো। এসে দ্যাখে এখনও ক্যাডাভিয়া আসেনি তাই যে সিটে আলিফ বসল তার পাশের সিটে ওর ব্যাগ রেখে দিল। অফিস শেষ করে ক্যাডাভিয়া ক্লাসে এলো।

আজ প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্টের যে বিষয়ের উপর লেকচার হচ্ছে তা হোল, Basic Phases of Project Management.
টিচার এই ইউনিভার্সিটিরই প্রোফেসার। ইউএসএ এর ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে পি এইচ ডি করেছেন।

লেকচার চলছে………
There have 5 basic phases of the project management and these are accordingly 1) Project conception and initiation
2) Project definition and planning 3) Project launch or execution 4) Project performance and control and 5) Project close.

একটানা ৪৫ মিনিট লেকচার চলল। ক্যাডাভিয়া দুটি বিষয় ঠিকমত বুঝতে পারেনি। সেটা হল Project close point এর এক্ষেত্রে Project complete হওয়ার পর Client এর Approval এর বিষয়টি
এবং Project evaluation process কিন্তু আলিফ তাকে বুঝিয়ে দিল।

ক্যাডাভিয়া বাসায় ফিরল। অফিস এবং ক্লাস দুটোই যেদিন করতে হয় সেদিন বেশ ক্লান্ত লাগে। দ্রুত খেয়ে বিছানায় ঘুমতে গেল। কিন্তু কেন যে ঘুম আসছে না সেটা বুঝতে পারছে না।
সেলফের দিকে তাকাতেই চোখ পড়ল “আলাপন” বইটির দিকে। উঠে হাত বাড়িয়ে বইটি বের করল। আলাপন-১ এবং আলাপন-২ তো পড়া হয়েছে। আলাপন-৩ এ কি আছে একটু দেখা দরকার।

“আলাপন-৩”
একটি যুবক ঘুমবার চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। অনেকক্ষণ কেটে গেল। ঘুম আসছে না। বেশ রাত হয়েছে। ঘর অন্ধকার কারণ লাইট অফ।
হঠাৎ একটি মোলায়েম কণ্ঠ ভেসে এলো।

-কি ভাবছ হে যুবক?

যুবকটি চোখ খুলে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। লাইট টা অন করবে কিনা ভাবছে। সুইচটা একটু দূরে আছে। বিছানা থেকে নেমে গিয়ে অন করতে হবে কিন্তু একটু ভয় ভয় লাগছে।
আবার কণ্ঠস্বর টি ভেসে এলো।
-ভয় পেয়ো না হে যুবক
-কে কথা বলে?
-আমাকে তিনিই পাঠিয়েছেন যার কথা তুমি সর্বদা ভাব
-আমিতো স্রষ্টার কথা ভাবি, তুমি কে?
-ধরো তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন
-কেন পাঠিয়েছেন?
-তোমার মনে যে সব প্রশ্ন জমে আছে তার উত্তর দেয়ার জন্যচ
-আচ্ছা বলতো মানুষ কেন পৃথিবীতে আসে?
-আল্লাহর কাজ করার জন্য
-আল্লাহর কাজ কি?
-নামায, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত ইত্যাদি
-হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান – এরাতো নামায-রোজা করে না। এরা কেন আসে?
-তারাও আল্লাহর কাজই করতে আসে
-তারা তাদের যেসব ধর্মিয় কাজ করে ঐগুলোও কি আল্লাহর কাজ?
-অবশ্যই আল্লাহর কাজ
-তাহলে কাজের ধরণে পার্থক্য কেন?
-ওটা আল্লাহই ভাল জানেন।
-আচ্ছা বলতো মানুষ মরার পর কোথায় যায়?
-ওটাতো কেউ গিয়ে দেখে আসেনি
-আমিতো একবার মারা গিয়েছিলাম কিন্তু কিছুইতো দেখলাম না
-সেটা কেমন?
-আমার একবার কি এক অসুখ হয়েছিল। আমি বিছানায় শুয়েছিলাম
-তারপর?
-আর কিছু মনে নেই শুধু মনে আছে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম
-তারপর?
-আসলে কিন্তু আমি বুঝিনি যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম এবং সাথে সাথেই আমার মৃত্যু হয়েছিল
-তারপর?
-হঠাৎ আমার জ্ঞান ফিরে এল
-এটা কি করে সম্ভব?
-আসলে মানুষের হৃৎপিন্ড যতক্ষণ চালু থাকে ততোক্ষণ সে জীবিত
-আচ্ছা
-এই হৃৎপিন্ড চলা বন্ধ হয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত বলে
-বুঝলাম
-বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃৎপিন্ড আবার কোনও কারণে চালু হয়ে যেতে পারে
-ও
-আমার বেলায়ও তাই হয়েছিল
-তারপর?
-আমার জানাযার জন্য আমাকে গোসল করানো হচ্ছিল
-তারপর?
– ঠিক তার কিছুক্ষন আগে আমার হৃদপিন্ড চালু হয়েছিল এবং মনে হয় প্রায় ৫ মিনিটের মদ্ধ্যেই আমার জ্ঞান ফিরে আসল
-তারপর?
-জেগে অনুভব করলাম শরীরে খুব ব্যথা আর খুব ঠাণ্ডা লাগছিল
-তারপর?
-দেখলাম আমি আমাদের বাথরুমে শুয়ে আছি আর শাওয়ার ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমার শরীর ভিজে চ্যাপচ্যাপা
-তারপর?
-একটু উঠে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলাম
-কি বুঝলে?
-দেখলাম এক মধ্য বয়স্ক লোক শাদা দাড়ি মাথায় টুপি। উনি সাবান দিয়ে আমার শরীর পরিষ্কার করছেন
-তারপর?
-আমি কথা বলার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারছিলাম না। অনেক কষ্টে ভাঙ্গা গলায় কথা বললাম
-কি কথা?
-উনাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি আমাকে গোসল করাচ্ছেন কেন?
-তারপর?
-লোকটি এদিক ওদিক তাকিয়ে লা-হাওলা ওয়া কুয়াতা ইল্লাবিল্লা বলে আবার সাবান লাগাতে শুরু করল
-তারপর?
-আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম আপনি কে? আমাকে গোসল করাচ্ছেন কেন?
-তারপর?
-লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে দেখল আমি উঠে বসে আছি
-তারপর?
-আমি তখন ভাঙ্গা গলায় বললাম আপনি কে?
-তারপর?
-লোকটি বড় বড় চোখ করে একলাফে দাঁড়িয়ে গেল
-তারপর?
-দুই কানে আঙ্গুল চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলল “লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ”
-তারপর?
-দৌড় দিল
-তারপর?
-আমি আস্তে আস্তে গোসল সেরে বাথরুম থেকে বের হলাম,বাথরুমের সাথেই আমার বেডরুম তাই জামা কাপর পড়ে নিলাম
-তারপর?
-খুব ক্লান্ত লাগছিল আর খুব ক্ষুধা পেয়েছিল
-তারপর?
-পাশের রুমে এসে দেখি বেশ কজন কোরান শরীফ পড়ছেন
-তারপর?
-ওরা আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াল এবং লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন বলতে বলতে দৌড় দিল
-তারপর?
-পাশের রুমে এসে দেখি মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন, বাবা এবং ডাক্তার সাহেব মা’র পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন
-তারপর?
-আমি বাবাকে বললাম আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে
-বাবা কি করলেন?
-বাবা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন কিন্তু ডাক্তার সাহেব এসে আমাকে ধরলেন এবং বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললেন আমি খাবার আনছি, তুমি একটু শুয়ে থাকো
-তারপর?
-আমার ঠাণ্ডা লাগছিল বুঝতে পেরে বাবা আমার শরীরে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলেন
-তারপর?
-ডাক্তার সাহেব এসে আমার হাত ধরে পালস দেখলেন এবং শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে দিলেন কিন্তু আমি বললাম আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে
-খাবার দিয়েছিল?
-না। ডাক্তার সাহেব বললেন, তুমি এখন অসুস্থ তাই এখন মুখ দিয়ে কিছু খেতে পারবে না, যে স্যালাইন দিয়েছি দশ মিনিট পর আর ক্ষুধা থাকবে না, এটাই আপাতত তোমার খাবার
-তারপর?
-ধীরে ধীরে আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম কিন্তু প্রতিদিন বাসায় প্রচুর লোক আসত আমাকে দেখতে, সাংবাদিক এবং টিভি ক্যামেরা সবসময় থাকত, আমি বিরক্ত হয়ে উঠলাম
-তারপর?
-বাবা আমাকে ইন্ডিয়া নিয়ে গেলেন উনার এক বন্ধুর বাসায় এবং কোলকাতায় এক স্কুলে ভর্তি করে দিলেন
-তারপর?
-কোলকাতায় একদিন এক হোটেলে চা খেতে ঢুকলাম
-তারপর?
-আমি যে টেবিলে বসলাম সেই টেবিলেই দেখলাম সেই মধ্য বয়স্ক দাড়ি টুপি পড়া লোকটি চা খাচ্ছে যিনি আমাকে গোসল করাচ্ছিলেন
-তারপর?
-আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আমাকে গোসল করাচ্ছিলেন কেন?
-উনি কি বললেন?
– আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল লা বলতে বলতে চা’এর কাপ ফেলে দৌড় দিলেন
-তারপর?
-হোটেলের ভেতরে থাকা কয়েকজন মানুষ এসে আমাকে বলল কি হয়েচে দাদা বলুনতো
-তুমি কি বললে?
-আমি বললাম, কি হয়েছে তা তো বলতে পারব না, দেখলাম উনি চা খাচ্ছিলেন, কি যেন মনে হল হঠাৎ দৌড় দিলেন, এই যে দেখুন আমার শার্টে চা’এর দাগ লেগে আছে
-তারপর?
-শান্তভাবে চা শেষ করে বিল দিয়ে চলে আসতে চাইলাম।
-তারপর?
-হোটেল কতৃপক্ষ আমাকে আসতে দিলেন না, আটকে রেখে সিসি ক্যামেরা রিপ্লে করে কি যেন দেখছিলেন
-তারপর?
-একজন বলল, এই ছেলেটাকেতো চেনা চেনা লাগছে, কোথায় যেনো দেখেছি
-তারপর?
-বাবা, আগেই আমাকে বলে দিয়েছিলেন দাড়ি সেভ না করতে তাই আমার বেশ বড় বড় দাড়ি হয়েছিলো
-তারপর?
-হঠাত পুলিশ এসে হাজির হল
-তারপর?
-পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে গেল
-তারপর?
-ওসি সাহেব একটি পত্রিকা বের করে আমাকে দেখিয়ে বললেন, এটা আপনার ছবি না?
-তুমি কি বললে?
-বললাম, হ্যাঁ আমার ছবি
-পুলিশ কি করল?
-পুলিশ বলল, আপনার ব্যাপারটা এখন ঐ হোটেল কতৃপক্ষ জেনে গেছে এবং আজ দিনের মদ্ধ্যে পুরো কোলকাতা জেনে যাবে
-তারপর?
-ওসি সাহেব আমার বাবাকে ফোন করে বললেন, ব্যাপারটাতো জানাজানি হয়ে গেছে তবে আপনি চিন্তা করবেন না ও আমাদের হেফাজতে আছে, আমরা আজ রাতেই গোপনে ঢাকায় পাঠিয়ে দেব
-হুম, তোমার বিষয়টাতো বেশ জটিল দেখছি, আচ্ছা একটা কথা বলতো?
-কি?
-তুমি আমার কাছে জানতে চাইলে মানুষ মারা গেলে কোথায় যায়, তুমিতো নিজেই মারা গিয়েছিলে, তুমি কিছু দ্যাখনি?
-নাহ।
-কেন?
-জানি না, মৃত্যুর পরে মানুষ কোথায় যায় সেটা আমি দেখলে কি আর তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম?
-ঠিক আছে যুবক তুমি এখন ঘুমাও, আমি এখন যাই।
-না। তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে যেতে পারবে না
-কিছুদিন পর আমি আবার এসে তোমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাব, তুমি এখন ঘুমাও, অনেক রাত হয়েছে। আমি যাই
-এর আগেও তুমি অনেকবার এসেছ কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারনি
-দেব, উত্তর দেব
– উত্তর দিতে না পারলে কিন্তু অহেতুক আসবে না, তোমাকে কি করে শায়েস্তা করতে হয় তা আমার জানা আছে
-ঠিক আছে যুবক! উত্তর নিয়েই আসব, ভাল থেকো, খোদা-হাফেজ।

ঘুমন্ত যাত্রী

ঘুমন্ত যাত্রী আমি এই মহাবিশ্ব যানে!
একটু পরেই নামবে তোমারা সামনের ঐ স্টেশনে।।

দুচোখ আমার বাড়ী ফেরার স্বপ্নে ভরা!
জাগাও আমায় জেগে আছো তোমরা যারা।।

নইলে রয়ে যাবো আমি এই মহাবিশ্ব-যানে!
হয়তো হারিয়ে যাবো কোনও এক নিস্তব্ধ অজানার পানে।।

হয়তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে
ফিরবো আবার এ পথেই!
হয়তো বাড়ি ফেরার স্বপ্ন আমার
রয়ে যাবে শুধু স্বপ্নেই!

উঠবে কতো নতুন যাত্রী!
হবে কতো নতুন মৈত্রী!
রেযোয়ান আর সাবিত্রী!
ছেড়ে যাবে অনেকেই ধরিত্রী!
শুধু রয়ে যাবো আমি ঘুমন্ত এক যাত্রী।।

হয়নি যখন সৃষ্টি বায়বীয়-তরল-কঠিন!
হয়নি সৃষ্টি কিছুই বাঁধেনি জমাট
ছিল শুধুই শূন্য – মহাশূন্য চারিধার।।

আবার শূন্যতার আগেও যে ছিল আঁধার!
সে আধাঁরেরও আগে!
সেই যে সময় শুরু হওয়ার আগে থেকে!
চলেছি শুধুই ঘুমিয়ে থেকে।।

মহাজগৎ ঘুরে ঘুরে!
জন্ম-মৃত্যুর স্টেশন পেরিয়ে!
শুরু আর শেষের বৃত্ত ভেঙ্গে!
বৃত্তের বাহিরের বৃত্ত ছাড়িয়ে!
জন্ম থেকে জন্মান্তরে!
চক্র থেকে চক্রান্তরে!
যাত্রার মাত্রায় সিক্ত আমি ঘুমন্ত এক যাত্রী।।

সহস্র জীবন ধরে ধাবমান এ যাত্রা শেষ করে!
ফিরে যেতে চাই আমার অস্তিত্বের উৎস-মন্দিরে।।

দুচোখ আমার বাড়ী ফেরার স্বপ্নে ভরা!
জাগাও আমায় জেগে আছো তোমরা যারা।।

একদিন দশটা দশ মিনিটে

তোমরা আমাদের বন্দী করে রাখছো
অথচ আমাদের ব্যবহার করে করে
উঠে যাচ্ছো তোমরা অনেক ওপরে
আর তোমাদের স্বার্থ হাতিয়ে আনছো!

আমাদের বন্দী করে রেখে দিয়েছো দোয়াতের ভিতরে
আর বন্দী করে রেখে দিয়েছো কলমে আর বল-পেনে ভরে ভরে!

বন্দী করে আমাদের
কলমে কলমে!
বঞ্চিত করছো ওদের
অনিয়মের নিয়মে!

অথচ শুনে রাখো……

হঠাৎ একদিন আমরা সবাই দশটা দশ মিনিটে
পৃথিবীর সকল অঞ্চল থেকে বীরের মতো দাপটে
একসাথে লাফিয়ে বে্রিয়ে পড়বো সমস্ত দোয়াত থেকে
নষ্ট করে দেবো তোমাদের সকল দলীল দস্তাবেজ
ছিটকে বেরিয়ে পড়বো সব ধরনের কলম এবং বলপেন থেকে
নষ্ট করে দেবো তোমাদের দেহে পরিহিত পরিচ্ছন্ন শার্টের পকেট!

ইনশাআল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহঃ

ইনশাআল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহঃ

উপরিউক্ত শব্দের মধ্যে কোন টা কোন সময়ে বলা প্রযোজ্য তা অনেকে সময় আমরা মিলিয়ে ফেলি। আমি এক দোকানে জিজ্ঞেস করেছিলাম, চিনিপাতা দৈ আছে? উনি বললেন, ইনশাআল্লাহ আছে। ইনশাআল্লাহ শব্দটার যে কতো বড় শক্তি তা বুঝতে পারলে হয়তো ঐ দোকানী এমন উত্তর দিতেন না।

আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে এক ইহুদী এসে বলেছিলো, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি এখন যে প্রশ্ন করবো তার উত্তর দিতে পারবেন। আর মিথ্যে নবী হলে এর উত্তর দিতে পারবেন না।

ইহুদী প্রশ্ন করেছিলো, “বলুন রুহ কি?”

নবী (সাঃ) যেহেতু আল্লাহর ওহী ব্যাতিরেকে নিজ থেকে কিছু বলতেন না তাই তিনি ওহীর জন্য অপেক্ষা করে ইহুদীকে বললেন, “আগামীকাল বলে দেবো”। কিন্তু নবী (সাঃ) ইনশাআল্লাহ শব্দটি বলতে ভুলে গিয়েছিলেন।

এর পর ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেলো। নবী (সাঃ) ঐ ইহুদী র প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিলেন না। ১৭ দিন ওহী আসা বন্ধ ছিলো।

তারপর ১৫ দিন কিংবা ১৭ দিন পর আল্লাহ ওহী নাযিল করলেন।

“ইনশাআল্লাহ না বলিয়া কখনোই তুমি কোনও বিষয়ে বলিও না – আমি উহা আগামীকাল করিবো।” (সূরা কাহাফ, আয়াতঃ ২৩-২৪)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ভবিষ্যৎ এ আমরা যা করবো সেই ক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ বলা আবশ্যক আর যা বর্তমানে হচ্ছে বা বর্তমান আছে এবং অতীত এ হয়ে গেছে সেই ক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ বলা আবশ্যক।

আমি এখন আমার জানা মতে একটি ইতিহাস বলবো। এটা যদি কেউ রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দ্যাখেন তাহলে দেখতে পারেন কিন্তু আমি বলছি ঐতিহাসিক দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে।

বাংলাদেশের এক মহান রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পুর্ব মুহুর্তে হাজার হাজার জনতার সামনে উনার ভাষনের শেষে বলেছিলেন, “এ দেশ কে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ! ”

মূলতঃ এই ইনশাআল্লাহ বলার কারনেই তখন আল্লাহর সাহায্য নেমে এসেছিলো। আম জনতা তাদের অন্তরের ভেতরে আল্লাহ প্রদত্ত এক দূর্বার সাহস পেয়েছিলো।

সেই স্বাধীনতা যুদ্ধেও বাংলাদেশের পক্ষে আল্লাহর সাহায্য ছিলো বলেই আমার বিশ্বাস।

পশ্চিম পাকিস্তান তখন সামরিক শক্তিতে পুর্ব পাকিস্থান এর চেয়ে অনেক শক্তিশালী ছিলো।
আমি শুনেছি অনেকের মুখে ভারত এবং রাশিয়া বাংলাদেশ কে অস্ত্র দিয়েছিলো। আমার প্রশ্ন, আল্লাহর ইশারা না থাকলে সবচেয়ে পরাশক্তি আমেরিকা পশ্চিম পাকিস্তান এর পক্ষ হয়ে বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ করতে চেয়েও কেনো যুদ্ধ করতে পারলো না। কেনো সপ্তম নৌ বহর আসতে পারলো না। অনেকে বলেন যে ইন্দিরা গান্ধী সপ্তম নৌ বহর আটকে দিয়েছিলেন। যে কারণে অনেকে মনে করেন ইন্দিরা গান্ধী নৌ বহর আটকে দিয়েছিলেন সে কারণ তখন আমেরিকার কাছে ম্যানেজ করা কঠিন কিছু ছিলো না। এই সেই আমেরিকা যে সৌভিয়েত ইউনিয়ন কে ভেংগে টুকরা টুকরা করে দিয়েছিলো কিন্তু কারোর কিছুই করার ছিলো না।

যিনি বলেছিলেন, “এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।”
হয় তিনি সূরা কাহাফের বর্ননা এবং উক্ত হাদীস শুনেছিলেন অথবা নিজেই পড়েছিলেন। মোট কথা তিনি জানতেন ইনশাআল্লাহ শব্দটির শক্তি।

যাইহোক, বলছিলাম ইনশাআল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহ আমাদের বুঝে শুনে বলা প্রয়োজন কারণ এ শব্দ দুটির অসীম শক্তি আছে।

এই জনমের আগে

ক্যাডাভিয়া

শীতের মধ্য রাত!
রাত জাগা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দে ঘুম ভেংগে যায়!
মনে পড়ে যায় এই দেশে – এই পথে!
এসেছিলাম এর আগে!
এই জনমের আগে!
আরও একবার-শতবার কিংবা সহস্রবার!

এই আনাচেঁর ক্ষেত!
এই ধুন্দল! মটর! মশুর ডালের ক্ষেত পেরিয়ে!
এই জলাশয়ে জাগ দেয়া পাট শুকাঁনোর গন্ধ নিয়ে!
এই গোধুলী সন্ধায় ধোঁয়াটে কুয়াশা-চাঁদোরের মাঠ দেখতে দেখতে!
এই বড়াল ব্রীজ! চাটমোহর! ঈশ্বরদী পেরিয়ে!
চলে গেছি সুদুর দিনাজপুরে!

দেখা হয়েছিলো সেখানে ক্যাডাভিয়ার সাথে!
কথা হয়েছিলো তার সাথে! তাহার সাথে!
রেখেছিলো সে তার মুখ আমার বুকের মাঝে!
উষ্ণ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেছিলো সে আমারে!
এক পৃথিবী ভালোবাসা দিলাম আজ তোমারে!

সেই রাতে ডানা ঝাপটিয়েছিলো এক রাত জাগা পাখি!
দেখেছিলাম আমরা মেলে আমাদের চারিটি আঁখি!
ভয় পেয়েছিলো সে রাতে আমার ক্যাডাভিয়া!
চারিদিকে ছিলো অন্ধকারের বিমুর্ত ছায়া!
তাকিয়েছিলো ক্যাডাভিয়া সে রাতের নক্ষত্রের পানে!
কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিলো আমার কানে কানে!
চলে যেয়োনাকো তুমি আমায় ছেড়ে!
কেউ যেনো তোমায় নেবে আমার থেকে কেড়ে!

রাখতে পারি নি আমি সে কথা তার!
তাইতো ফিরে আসি বার বার!
বহু দেশ খুঁজেছি ঘুরে ঘুরে তারে!
পাইনিকো দেখা তার! তাহারে!

হয়তোবা কোনও এক বলাকার বেশ ধরে!
মনে পড়ে যায় এই দেশে – এই পথে!
এসেছিলাম এর আগে!
এই জনমের আগে!
আরও একবার-শতবার কিংবা সহস্রবার!

youtu.be/XYUWfBiCAwo

কবিতা ও আবৃত্তি- এই জনমের আগে
কবি- ইলহাম। আবৃত্তি- রাহিম আজিমুল।