মাহবুব আলী এর সকল পোস্ট

মাহবুব আলী সম্পর্কে

মাহবুব আলী দিনাজপুর, বাংলাদেশ। প্রভাষক। প্রকাশিত বই: ১. অস্তিত্বের পলায়ন (গল্প) ১৯৯২ ২. ছোটগল্পের নির্মাণশৈলী (সাহিত্য ও সাংবাদিকতা) ২০১৮ ৩. অস্তিত্বের পলায়ন (গল্প) (রিভাইজড ভার্সন) ২০১৮ ৪. ভয় (গল্প) ২০১৮ ৫. পিঙ্গল বিকেলের আয়নায় (গল্প) ২০১৮ ৬. অযোগ্যতার সংজ্ঞা (গল্প) ২০১৮ ৭. রাত পাহারা চোখ (গল্প) ২০১৮ ৮. গোপনীয়তার অলিগলি (বড়গল্প) ২০১৮

বাগানের ফুল তুলতে মানা

ফুলের বাগান। ফুল ফুটেছে। বসন্ত কাল। মাথা উঁচিয়ে ফুলেরা তাকিয়ে থাকে। রঙে রঙে বাতাস অস্থির। এর মধ্যে চোখে পড়ে সতর্ক বার্তা। ‘ফুলে হাত দেবেন না।’ ‘ফুল তুলবেন না। ফুল বাগানের সৌন্দর্য।’ তারপরও কেউ কেউ ফুল তোলে। ফুল তুলে ভালবাসা জানায়। গোলাপের রক্ত ঝরলেই কি আর কেউ কাঁদলেই কি! প্রকাশ তো করতে হয়। মানুষ ভালবাসা প্রকাশে ফুল দেয়। শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। মানুষ মরে গেলে মৃতদেহের বুকে ফুল তুলে দেয়। অথচ ফুল বাগানের সৌন্দর্য।

ফুল নিয়ে চমৎকার ব্যবসা আছে। ফুল চাষ হয়। ফুল বেচেই কেউ কেউ লাখপাতি। বাগান ছাড়াও ক্ষেতে ফুল আবাদ হয়। ক্ষেতে একটি গোলাপের মূল্য পড়ে দেড়-দু থেকে তিন টাকা। শহরের সাজানো দোকানে েএনে রাখলে পনেরো-কুড়ি-পঁচিশ। বিশেষ দিনগুলোয় ত্রিশ-পঞ্চাশ-একশ। তারপর যার কাছে যেমন ঠুকে নেয়া যায়। কাউকে উপহার দিতে দরদাম দেখলে চলে না। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে দর কষাকষি ক্ষুদ্র মানসকিতার লক্ষণ। কেউ ফুল পেয়ে ধন্য। কেউ খুশি। কেউ ধরে রাখে। গন্ধ শুঁকে। কেউ খোঁপায় গোঁজে। কেউ বইয়ের পাতায় রেখে দেয়। আবেগ আর আবেগ। ফলে ফুল বাণিজ্য কর্পোরেট বা সিন্ডিকেট ব্যবসার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

এই বাণিজ্যের কোনো যুক্তি আছে কি? কেউ কেউ তাই বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন। সিদ্ধান্ত আমার-আপনার। ফুলের পরিবর্তে অন্যকিছু মাধ্যম অনুসরণ করা যায় না? ধরুন একটি ছবি দিই। মাস্টারপিস। একটি কবিতার বই। একটি ভালো ছায়াছবি। ইত্যাদি। সে আপনার ভাবনা আপনার সৃজনশীলতা।

বাগানের ফুল বাগানে থাকতে দিন। আমাদের প্রকৃতি ফুলে ফুলে রঙে রঙে যে দৃশ্যছবি এঁকে যায়, যে সৌন্দর্য তুলে ধরে; সেটিকে অক্ষুন্ন রাখুন। ফুল তোলা নয়। মনের আকুতি দিয়ে অন্যকোনো উপহার বা প্রতীকি ব্যবহার করুন। শ্রদ্ধা জানাতে অর্থ বা অন্যকোনো অনুদান দিন। ফুলকে থাকতে দিন ফুলের জায়গায়। বাগানে সৌন্দর্য আসুক।

যখন গল্প মরে যায়

প্রতিটি মানুষের মধ্যে গল্প থাকে
প্রতিটি গল্পের ভেতর মানুষ
তারা গাছের ছায়ায় নদীর তীরে বসত গড়ে
তারা একজন আরেকজনকে আঁকড়ে ধরে
ভালবাসা বিরহকাতর রাত্রি জাগে
কান্নাহাসির দিগন্তরেখা ছায়াপথ
দৃষ্টিসীমায় হেসেখেলে যেতে যেতে
আগমীকে বপন করে মানুষের ভেতর
প্রেম অপ্রেমে কাতর উল্কাপাত।

মানুষ মানুষের কাছে যায়
শত প্রত্যাশায় ভালবেসে গল্প শোনে
গল্প শোনায় অব্যক্ত বিকেলের হলুদ আলোয়
সে গল্পের কোনোটি জেগে থাকে নক্ষত্রের জমিনে
গান যেমন কথা বলে বাঁশির সুরে সুরে বুকে স্বপ্নদোলা।

অনেক গল্পের ভিড়ে কারও গল্প হয় না শোনা
বলা হয় না বুকের দরজা খুলে আগলিয়ে জীবনপাঠ
কী হবে শত অভিযোগ আর প্রত্যাশার লাইন গুনে
প্রতারিত মরুপথ মরুদ্যান হোক তেপান্তর মাঠ
আর এভাবেই গল্পের ভেতর গল্প জেগে থাকে
গল্পের মধ্যে গল্প মরে যায় বদ্ধ নিশ্বাসে।