মিতা এর সকল পোস্ট

মিতা সম্পর্কে

দিন ফেলে রাতে দৌড়াই; রাত ফেলে দিনে। শরীর ফেলে মনে দৌড়াই; মন ফেলে শরীরে।সব পাই,আবার কিছুমাত্রও পাই না। স্বপ্ন ঊড়ে বারে বারে,তবুও স্বপ্ন দেখি লেখাপড়া ক্লাস ফাইভ ।

বইয়ের গল্প

দুই দিন আগে আমার এক বন্ধু আমার কাছে ৫ টি বইয়ের নাম জানতে চেয়েছিলেন “যে বই পড়ে আমার মনে হয়েছে অন্যেরও পড়া উচিত”। আমি খুব ভাবনায় পড়ে গেলাম। আমি সব ধরনের বই পড়ি, পড়তে ভালোবাসি।

পাঠ্য থেকে অপাঠ্য সব বই- ই। স্কুল জীবনে পাঠ্য বইয়ের ভিতরে লুকিয়ে অপাঠ্য বই পড়েছি। রোমেনা আফাজের “দস্যু বনহুর”। কাজী আনোয়ার হোসেন এর “মাসুদ রানা “।

ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের, হাসনাত আব্দুল হাই, সমরেশ বসু, সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আবুল বাসার, বুদ্বদেব গুহ …। পড়েই চলেছি …। সমরেশ মজুমদারের “বাঙ্গালীর নষ্টামী” নামের বই এ কয়েকটি বইয়ের নাম উল্লেখ আছে, উনার মতে এই বই গুলোই বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ট লিখা।

সুতরাং আপনার সন্তানকে পড়তে বলুন। পাঠ্য থেকে অপাঠ্য সব। পাঠ্য – এর চেয়ে অপাঠ্যই কাজে লাগে বেশী, মনেও ধরে। পাঠ্য আর অপাঠ্য এটা কি ভাবে নির্ধারিত হয়। আমার পরিচিত কিছু মানুষ আছেন তাঁরা যখন অপাঠ্য বই পড়তে শুরু করেন তখন উনাদের কাছে সব লিখাই অসাধারন মনে হয়। উনাদের এই অনুভুতি খুব ভালো লাগে … আবার এমন কাউকে দেখেছি যিনি পড়তে ভালো বাসেন না কারন তিনি মনে করেন “অনেক পড়ার সমস্যা হচ্ছে আমার আগে একথা কেউ লিখে ফেলেছে”। খুব মজার তাই না।
অপাঠ্য বলে কোন বই আছে কিনা জানি না।

বঙ্কিমের কমলা কান্তের দপ্তর ,রবীন্দ্রনাথের চতুরঙ্গ, শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত, তারাশঙ্করের হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, বিভূতিভূষণের আরণ্যক, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি, সমরেশ বসুর টানাপোড়েন, অদ্বৈত মল্ল বর্মনের তিতাস একটি নদীর নাম, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পারাপার, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে, প্রফুল্ল রায়ের কেয়াপাতার নৌকা, মুজতবা আলির দেশে বিদেশে, আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুনীল গাঙ্গুলির সেই সময়।

কোনো শিক্ষিত বাঙালির সঙ্গে আলাপ হলেই এই লিষ্টের একটি কপি তাঁর হাতে তুলে দিয়ে বলতাম, -দয়া করে এই কয়েকটা বই পড়ে ফেলুন, তামাম বাংলা সাহিত্য পড়তে হবে না, শুধু ওই কটি; না পড়লে আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার খুব লজ্জা করবে। কতটা কাজ হয়েছিল জানি না, তবে কেউ কেউ আমার মস্তিস্কের সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। যাঁদের তালিকা দিতাম তাঁরা কিন্তু আমাকে দেখলেই এড়িয়ে চলতেন।

—– সমরেশ মজুমদারের “আকালচার” ( বাঙালির নষ্টামি)

আমার মুক্তিযুদ্ধ

1a286-300x195যখন মুক্তিযুদ্ব শুরু হয় তখন আমি চার ,যখন শেষ হয় তখন আমার পাঁচ চলছে ।ছেলেবেলার একটা কথা আমার খুব মনে পড়ে আমি এখনো বুঝতে পারি না আসলে কি তা ঘটেছিল নাকি শুনতে শুনতে সে ভাবে নিজের মধ্যে গল্প হয়ে গেছে ?
গল্পটা হচ্ছে -রাজাকার আসল বলে আমারা বাচ্চারা ধানের ক্ষেতে লুকিয়ে থাকতাম ।
আমি যে স্কুলে মাধ্যমিক স্তরে পড়াশুনা করেছিলাম সে স্কুলে সে সময় কোন শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ ছিল না ,কেন জানি না ।
মুক্তিযুদ্ব সম্পর্কে অনেক লেখা পড়া হয়েছে । যে দুটি বই আমার মনে দাগ কেটেছে তার একটি জাহানারা ইমামের “একাত্তুরের দিনগুলি ” ।পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিলো আমি যেন কোন উপন্যাস পড়ছি অথচ তা ছিলো একটি পরিবারের মুক্তিযুদ্ব । যেখানে গল্প আছে জীবনের ,পরিবারের, একজন মায়ের ,একজন স্বামীর । কি অসাধারন লিখেছেন নিজের একান্ত প্রিয় মানুষের বিয়োগ বেদনা ।একটি পরিবারের মধ্যেই যেন সমস্ত মুক্তিযুদ্ব । “রুমি ” তোমাকে মনে পড়ে ।
অন্য লেখাটি রফিকুল ইসলামের “লক্ষ প্রানের বিনিময়ে ” । একজন মুক্তিযোদ্বা হিসাবে এই লেখাটি ঐতিহাসিক মুল্য অপরিসীম । খালেদ মোশারফ সম্পর্কে এ বইয়ে যে জেনেছি সেভাবে আর কোথাও পড়া হয় নি ।আমরা অনেক কিছুই জানি না এতো বড় একজন মুক্তিযোদ্বা সম্পর্কে যেমন জানি মেজর জিয়া সম্পর্কে ,হয়তো রাজনীতিক কারনেই । এরকম অনেক অকথিত ইতিহাস শুধু রাজনৈতিক কারনেই বিতর্কিত করা হচ্ছে । এ কে খন্দকার এর লেখা “১৯৭১ ভেতরে বাইরে” বইয়ের কিছু বিষয় আওয়ামী লীগের পছন্দ হয় নি সে কথা গুলো অল্প কিছু হলেও তার উল্লেখ আছে “লক্ষ প্রানের বিনিময়ে ” তে ।
যারা যুদ্ব করেছেন,যুদ্ব দেখেছেন তাঁদের কাছে অনেক দায় আছে ।সঠিক ইতিহাস লিখে যাওয়ার । তিনি যা দেখেছেন অথবা করেছেন । একটা জাতির জন্য এ খুব প্রয়োজন । স্বাধীনতার একহাজার বছর পর যখন সে সম্পর্কে কেউ জানতে চাইবে তা যেন শুধু কোন দল বা ব্যক্তিতে সীমাবদ্ব না থাকে তারই জন্য ।
যখন যুদ্ব শুরু হয় তখন সবাই যুদ্বে যায় না । কেউ কেউ যুদ্বটাকে দেখেও ,ডক্টর জিভাগোর মতো !

কান্নার মতো গভীর তো আর কিছুই নেই

1209188_10202099263672067_1892385830_nআমি খুব অবাক হই…
নিজের কষ্ট, নিজের দুঃখ কত সহজে মানুষ অন্যের কাছে বলে ফেলতে পারে । সবার সামনে কাঁদতে পারে কত সহজে । সামাজিকতা রক্ষার জন্যেও কতজনকে কাদতে দেখেছি ।
আমি পারলাম না ,পারি না ।
তোমার কাছেই শোনা, অনেক বছর আগে একদিন তোমার মা নাকি আমার মনটা পাথর দিয়ে গড়া বলেছিলেন ।
হতে পারে ,সব মানুষের মন কি এক ধাতুতে গড়া। আমারটা না হয় পাথরেই গড়া হলো ।
আমার যখন কষ্টের কথা মনে আসে আমি সেসব কথা নিজের সাথে নিজেকে বলি।
যখন কাঁদতে ইচ্ছে করে তখন ঘরের সব বাতি নিভিয়ে অন্ধকারে কাঁদি ।কেদে কেঁদে কতো রাত ভোর করেছি । জাপানী ভাষায় একটা কথা আছে “ছেলে মানুষের কাঁদতে নেই ” । আমার জীবনে এ পর্যন্ত দুজন মেয়ে মানুষকে কাঁদতে দেখিনি ।আমি মাঝে মাঝে ভাবি কাঁদলে ওদের কেমন দেখাবে। কান্নার মতো গভীর তো আর কিছু নেই । একের দুঃখ অন্যকে স্পর্শ করে না কিন্তু একজনের কান্না অন্যকে শিক্ত করে যায় ।
গান শুনতে ইচ্ছে করলে হেয়ার ফোন দিয়ে গান শুনি , কি জান এভাবে গান শুনলে গানের প্রতিটি কথা হৃদয়ের গভীরে পৌছায় ।আমাদের অনেকেই নিজের চেয়ে অন্যকে শোনানোর জন্য গান শুনে । আমার ভালো লাগার সাথে অপরের ভালো লাগা গুলিয়ে ফেলি আমরা অথবা এক করে নেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করি । তোমার যদি কখনো সময় হয় রাত গভীর হলে ছাদের এক কোনে বসে চোখ বন্ধ করে হেয়ার ফোন কানে লাগিয়ে তোমার প্রিয় গান গুলো শুনে দেখ । দেখবে এর আগে শোনা একই গান গুলো অদ্ভুত ভালো লাগায় তোমাকে ভরিয়ে দেবে ।
আমি আমার মতো …।
ভালো থেকো, সুস্থ থেকো,সুন্দর থেকো । শুধু নিজের জন্যে ।
মিতা