মোকসেদুল ইসলাম এর সকল পোস্ট

করাতকল

সোমবার এলেই বাড়তে থাকে দীর্ঘশ্বাস।
করাতকলের মতো ঘ্যাষ ঘ্যাষ শব্দ
তীক্ষ্ণধারে কাটছে ধানি জমির ফসল।

জানা আছে সেই মন্ত্র – ভাঙ্গলেই আয়ু শেষ
বিঁধে থাকি – পাছে পড়ে যাই যদি –
অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ।

তবু ডাক দিয়ে যায় নিষিদ্ধ করাতকল
সানগ্লাস– ধরে রাখে চোখ
পুরুষ্টু আঙুলে ছুঁয়ে দেখি করাতকলের রক্তবমি।

আনন্দ– একটা সিনেমার টিকেট!
অতঃপর– ট্রাফিক সিগন্যাল! কারফিউ!
অবাক বিস্ময়– করাতকল!

ফেউ

আকাশে ছড়িয়ে যাক একথালা ভাত
বুভুক্ষু মানুষগুলো চোখ মেলে থাক
বিত্তশালীরা কতোবড় দানশীল!
বুঝুক এইবার বস্তির যতীন।

মানুষ খেতে না পাক পড়ে থাক রাস্তায়
তারা কথা বলে বড় বড় হপ্তায় হপ্তায়
বানের জলে ভেসে যাক বানভাসী মানুষ
আমরাতো শহরে উড়াই রঙিন ফানুস।

কথায় নয় শুধু চাটুকারে ভরা
লাশবাহী গাড়িটা যাচ্ছে একা
আমরা যেমন থাকি ভাবছে না কেউ
নিরন্ন যারা তারা নয় এদেশের ফেউ।

১০০৮২০১৬

ইতিহাস

ধরো পৃথিবীর মধ্যভাগে রাখা হলো তোমাকেই
সাগর কিংবা মহাশূন্য পাড়ি দিতে হবে না।

পার হয়ে এসেছ হোমো স্যাপিয়েন্স-দের যুগ
আহ্নিক গতি – বার্ষিক গতি কি জানা নেই
উত্তর মেরু – দক্ষিণ মেরু সম্পর্কেও তুমি অজ্ঞ

প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, জিনতত্ত্বের মতো জটিল বিষয়
নিয়ে চিৎকার করছে ফারাও খুফুর পিরামিড
কান বন্ধ – দৃষ্টি অন্ধ, তুমি একজন বোবামানুষ

হায়ারোগ্লিফিকে লেখা মিশরীয়দের কৃতিত্ব, আদ
কিংবা সামুদ জাতির ইতিহাস মনে রেখেছে কয়জন?

পকেট উপুড় করে ফেলতে চাচ্ছি সব ইতিহাস
পৃথিবীর একটা অচেনা অন্ধ গুহায়
দৃশ্যের ভেতর যখন জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য পাপ, নরকাগ্নি।

.
১৪০৬২০১৮

বিশ্বাস

নিজের ওপর নজর রেখো
চুরি হতে পারে হরিণী চোখ
গোলাপি ঠোঁট
দুরন্ত ইচ্ছে
পাখি মন।

নিজের ওপর নজর রেখো
নষ্ট হতে পারে জীবন
কষ্ট পেতে পারে মন।
বিশ্বাস বাঁচিয়ে রেখো
যে হাত ধরেছো তুমি সে হাত মানুষের।

আমি হিংসা পূজারী নই
নিরীহ পাখির মতো যার স্বভাব
নষ্ট পথের ধুলি তাঁর জন্যে নয়।

ফ্রিকোয়েন্সি শূন্য হলে

সূর্য অস্ত যাচ্ছে
শহর জুড়ে ভাসমান অন্ধকার
আর আমরা প্লাস্টিক ফুলগুলো সাজিয়ে রাখি
খুঁটে নিতে যৌথ আলোর নির্যাস
গভীর রাতে ক্ষীণ-আলোয় জমে ওঠে কথোপকথন

একদম শাল থেকে আম বৃক্ষ পর্যন্ত
বিষদৃষ্টি যতোসব মানুষের চোখ
এভাবে ফ্রিকোয়েন্সি শূন্য হতে থাকলে
আমরা আঁধারের বুকে ঘুমিয়ে পড়ি।

খণ্ডিত সময়ের চিত্র

স্মৃতিগুলো ধরে রেখো
দ্বন্ধ আর দ্বেষে সময়গুলো পেরিয়ে যাচ্ছে।

পরম বিশ্বাসী বন্ধু আমার
রাজপথে নামার আগে মানুষ চিনে নিও।

সময়ের প্রতিনিধি অনেকেই হতে চায়
সৃষ্টি ও শিল্পমননে নিবেদিত যে তার দিকে বাড়িয়ে দিও হাত।

এ পৃথিবী বিশাল রণক্ষেত্র
নৈরাশ্য ঘিরে ধরার আগেই বোধদয় হোক সবার।

স্বতন্ত্র স্বত্ত্বায় জেগে ওঠো
জঙ্গম পাথরে বেঁধেছে যে প্রাণ ভালোবাসা তারই প্রাপ্য জেনো।

যৌক্তিক আবরণ খুলে রাখো তবে
রহস্য নিয়ে তর্ক করি না আর পৃথিবীটা যখন হয়েছে আমক-শ্মশান।

তৃতীয় রাত

দূরত্ব হাজার মাইলের চেয়েও বেশি। তবুও তোমাকে কাছে পাবার কী তীব্র ইচ্ছে পুষে রেখেছি বুকে! ঘুমভাঙ্গানী গান, একপকেট চাঁদের আলো বুকের ভেতর ঢুকতে চায় আশ্চর্য মধ্যরাত। এইসব গন্তব্যহীন ষ্টেশানে সরল আশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকে বয়ঃসন্ধির কাল। ধানক্ষেতের আইল ধরে ছুটে চলেছে কৃষকের নগ্নচুম্বন। দু’চোখে তার সোনালি ধানের আড়ত। অথচ মহাকাল বয়ে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের হিংসা স্রোত। ভূ তত্ত্বের গঠন প্রণালি নিয়ে আমাদের আর কোন কথা নেই। মসৃণ নাভিপথ ধরে নেমে আসছে তৃতীয় রাত। জিভের আগায় ধরে রেখেছ তৃষ্ণার্থ জল। প্রশ্নটা চলে আসছে সেই আদিকাল থেকেই – নারীর নাভি এতো সুন্দর কেন? রাত ঋতুবতী হলে অন্ধকার খুলে ফেলে স্বীয় বসন। পেটের নদী শুকিয়ে গেলে যে ক্ষুধা জাগে তার পোস্টমর্টেম করে নাই কেহ। রক্ত যখন ঝরছে আঁচড় কেটেছে কোথাও। এখন ঝুলন্ত সময়। ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় বাড়ছে দূরত্ব। অতঃপর বিলীন হয়ে যাবো উদভ্রান্ত কোন এক তৃতীয় রাত্রে।

৩০.০৪.২০১৮

অগ্নিশলাকা

পোড়াতে ভালো লাগে
কাক প্রতীক্ষার মতো সময়
অগ্নিশলাকায় ছুঁয়ে দেয়া ঠোঁট

আজকাল পূণঃপৌণিক হারে শিখে নিচ্ছি
নিজবৃত্তে বন্দি থাকার সমূহ কৌশল

ভুল জায়গায় অন্ধকারের ছায়া পড়লে
সওদাগরী জাহাজ ভুলে যায় পথ
বাড়ছে শুধু শখের ঝোলাটার ভার
সূর্যদুয়ারে দাঁড়িয়ে গেছি এক পৃথিবীর দেনা নিয়ে

এখন পুড়তে ভালে লাগে
অগ্নিশলাকার মতোই শুধু সাবলীল অপেক্ষা।

বেলা শেষের গান

493

গহন চৈত্রের দিনে দহন চিরস্থায়ী হলে
একদিন হারিয়ে যাব
আগমন নিষিদ্ধ কর হে পুত
এখানে বিছিয়ে দিয়েছি শামুক জীবন
নিরুদ্ধ অন্ধকার – মুখোশের দিন
দূর অরণ্যে মিশে গেছে মায়াবী গল্পের কথন

পৃথিবীর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে এখন
কে রাখে কার খোঁজ
ফুরিয়ে আসছে আগুনের দিন
সঘন মেঘ – অরণ্য সারি সারি
দৃশ্যের ভেতর জন্ম নিচ্ছে শৈশব
পৃথিবী যেন একটা অচেনা গুহা

একদিন হারিয়ে যাব
পাশে পড়ে থাকবে ব্যথিত মুখ
হাহাকার – পরিত্যক্ত হবে দেহ
অসমাপ্ত কাহিনী আর লিখবে না কেউ
একা বসে নৌকায় – শেষ যাত্রী আমি
একা মাঝি গায় ধল প্রহরের গান।

আহা সেইসব দিন

দূরত্ব এতোটাই বেড়ে গেছে যে
আমাদের মাঝে শোভাবর্ধন করছে মৃত্যুফাঁদ
অথচ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে অন্য কথা
ধূলোমাখা সেইসব অতীতের দিন, নিরেট মৃত্যু ঘ্রাণ
সাঁতরে গেছি কৈশোর বয়োঃসন্ধিকাল
আহ যৌবনের নগ্নতা! প্রহসনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল আমায়।

এমন কতো বিরুদ্ধ স্রোত চলে গেছে
জন্মের ফাঁদে আটকে গেছে যাযাবর জীবন
ফিনফিনে দুঃখ দ্বারা ভরেছি লাভের ব্যাগ
আলতো ছোঁয়ায় এঁকেছি যে দেহের ছবি
সেতো ছিল এক ভুলের ক্যানভাস
লাটিমের মতো ঘুরে ঘুরে শুধুই বাড়িয়েছি পথের দেনা
রাতের জরায়ুতে লেগে থাকে মাতৃত্বের ঘ্রাণ।

আহ্ গোপন উল্লাস
পেঁচার চোখ নিয়ে একপাশে পড়ে থাকে ক্ষুধা
আর একপাশে পড়ে থাকে শিল্পকলার মুগ্ধবোধ
অনিবার্য টানে মাঝেমধ্যে ছুটে যাই যুবতী আকাশ পানে
যেনো শঙ্খডানার চিল।

অবয়ব

শান্ত ঠোঁটে নেমে আসছে নিস্তব্ধতা
একটা নিষিদ্ধ আবেদন কর্ষণ শেষে
ধীরে খুলছে মনের আগল
এমন প্রকাশ্য বেদনাহীন মৃত্যু কে না চায়?

টুকে রাখ ছুটি দিনের ঠিকানা
আমরা ভ্রমনে যাচ্ছি
ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক ঠেলে দূরে
মুখোমুখি বসে চাঁদ পুকুরের পাড়ে
লিপিবদ্ধ করি একে অন্যের মুখ।

প্রাণবীজ

সামাজিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
তবুও তুমি লিখছ – নিরন্তর
তোমার চিঠি পেলাম গতকাল
হলুদ খাম – সংসারী হতে চাও
কামনার ভ্রু উল্টে নতুন করে
শিখছ শরীরবিদ্যা – প্রণয় বুলি

ঘন নিঃশ্বাস ফেলে শূন্যে ঝুলিয়েছ ফানুস
সতর্ক সাইরেন – নারী কামনার ঘোর

উত্তর দিলাম –আমাকে অস্থির করো
মদ্যপানের ন্যায় মিইয়ে আসা রক্তঘুম
অন্ধ সৈনিকের ন্যায় অমিত সম্ভাবনার আবেগ
আমার প্রলম্বিত যৌবনের ধ্যান তোমার জন্যে

নিঃশ্বাস ভরা জল থিরথির ভালোবাসা
লাল খাম –ভেতরে দু’জনার প্রাণবীজ।

ডুব

পানির নিচে এতোটা অন্ধকার –
অথচ আমরা দিব্যি ডুবে আছি
নৈয়ায়িকের সব ভাষা এখানে স্থির।

পলল গন্ধে টেনে নেয়া শ্বাস –
আধো ঘুম রাত্রি যাপন
ক্ষয়ে যাচ্ছে পলিমাটি দেহ।

না ঝিনুক না মুক্তো তবুও
দৃঢ় প্রত্যয়ী আশা থরে থরে সাজিয়ে রাখি
কী নিশ্চিত জীবন!

বুকের ভেতর অপেক্ষমান নদী
থৈ থৈ জল। ডুবছে কামনার চোখ
মেটাফোর জীবন।

আঙুলে ঘষে তুলছি শিল্প রং
মৃত্যুর মতো শান্ত আশ্চর্য সেই ডুব;
চুপ! চুপ! সব হচ্ছে কালের বিবর্তন।

জলনৌকা

বিসর্গ বেলায় শুকিয়ে নিচ্ছ শরীর
সোনা সোনা রোদ – ভাদ্রের দুপুর
অনেকগুলো মুখের কোরাস
পাখির ডানায় লেখা ভ্রমন সূচী
নিভছে অন্ধের দিনলিপি

যজ্ঞ শেষ
সবার চোখে পলল ঘুম
উছলে ওঠার সময় এখন
চৈতন্যের দিন আর নেই বাকি
না হয় চোখে ভাসুক
একটা জলনৌকার প্রতিচ্ছবি।

জলভূগোল

তুমি পড়েই যাচ্ছ অক্ষাংশ – দ্রাঘিমাংশ
আর আমি ঘুরছি সুমেরু – কুমেরু
হিম সময়ে মেলে দিয়েছি কাশ্মীরী শালের ওম
অনবরত নাচছে সেথায় ভালোবাসার সবুজদানা

আমার ভূগোল – যাচ্ছে ঢুকে তোমার ভেতর
রোদ পোহাচ্ছে কমলালেবু ঠোঁটের ওপর
নিরক্ষরেখায় হাঁটছি আমি সন্ধ্যা – সকাল
পথগুলো সব হারিয়ে যাচ্ছে ’ম্যাপ’এর ভেতর।

ছড়িয়ে দিয়েছি ভূগোলরেখা শরীরের ওপর
রুক্ষ ঝড়ে ছলছল করে জলাবায়ু অঞ্চল
কুমন্ত্রণা দিচ্ছে জল বদলের এই বায়ুটা
দুজন মানুষ এক হলে, জলের কেন ভূগোল লাগে?