মোকসেদুল ইসলাম এর সকল পোস্ট

আশাহত

শুধুমাত্র শেকড়ের টান
এইযে ফিরে আসা পায়ের চিহ্নটুকু ফেলে
ঠুকরে খাওয়া সময়ের গান- দগদগে ক্ষত
তবুও আঁকড়ে থাকার শেষ চেষ্টা

ঢেউ তোলা শাড়ির আঁচল
ঝুলে থাকা বিজ্ঞাপনের মতো করে
আকুতি জাগাও প্রাণে
তবে কি সব শূন্যতার কোরাস

সারি সারি আলো শুষে নিচ্ছে অন্ধকার
ওদিকে দরজায় দাঁড়িয়ে এক আশাহত মা
নিভু আঁচে পুড়ছে তার রঙিন স্বপ্ন।

দুটি কবিতা

ডাকহরকরা
..
কোথা থেকে একজোড়া চোখ উড়ে এসে বসলো
তারপর থেকেই শুরু আলোর খ্যাপ
বিসর্গদিনে বাড়ছে দৈনিক খরচের হিসেব
দেখে যারে অনুপম কুয়োতলার ব্যাঙ এসে
নিচ্ছে ভালো মন্দের খবর!

জীবন যেমন
..
মানুষ লিখতে গিয়ে লিখে ফেলি জীবন
জীবন ‍মূলত সুখ! সুখ! খেলা
দুঃখ – কষ্ট – যতো নষ্টের মেলা
চুঁইয়ে পড়ছে আঙুলে ধরে রাখা সুখ
ওদিকে মাটি খুঁড়ে বাবা তুলে আনছেন স্মৃতি
মা বসে থেকে দিচ্ছেন ধৈর্য্য পরীক্ষা।

মা (১৫)

অতঃপর দিন শেষে গল্পের থালাগুলো তুলে রেখে দিতেন মা
তারপর
বিকাল
সন্ধ্যা
রাত
পেরিয়ে ভোর!
গল্পের থালাগুলো নামানোর মতো আর কোন মানুষ নেই!
মা
আমার
নিজেই
গল্প হয়ে
আছেন জীবনে।

একটি শহরের চালচিত্র

prot

ফুটপাত!
অভিমানী শিকড় গেঁড়েছে পুরনো কাপড়
হৈ চৈ! হাঁক ডাক!
একদাম! একশো! একশো!
গায়ের গন্ধে আগুন উত্তাপ
যেনো পুড়ে যাচ্ছে দিগন্ত বুনা ফসল।

রাজপথ!
রোদ্দুরে পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে ঠাঁয়
সংশয়ী দৃষ্টি মেলে – অনন্তকাল অপেক্ষা
নিষ্ফল হাতগুলো তবু ডাক দিয়ে যায়
সাবধানে থেকো! সবকিছু ধ্রুবসত্য নয়।

অতঃপর!
ভুল অংক মেলাতে গিয়ে আত্মঘাতী পিছুটান!
ওদিকে রাত বাড়ছে! কান্নার ভঙ্গিতে ভিজে যায়
কালো অক্ষর! কালো অক্ষর!
লাল দাগে ভরে যায় শহরের পিচঢালা পথ।

বৃষ্টিজলে নাচতে এসো

rain flows down from a roof down

আড়াল হলেই মৃত্যু ঘিরে ধরে
হিম সময়
নষ্ট প্রহর

অপেক্ষা – মূলত এক অসুখের নাম
তবুও নদীর মতো বয়ে চলে জীবন।
আমার কষ্ট বেলা

দেখেছি মাঝি জীবন
নৌকা বিহীন
বেঁচে থাকার নামে – মাছের লড়াই
ডুবছে সবই।

আড়াল হলেই মৃত্যু এগিয়ে আসে
তার চেয়ে বৃষ্টিজলে নাচতে এসো
বর্ষা তবু বাঁচতে শেখায়।

পথের ডাক

uM

আমরা হেরে যাচ্ছি, বদলে যাওয়া মুখ দেখে প্রতিনিয়ত মরে যাচ্ছে বেঁচে থাকার সাধ।
গল্পের থালাগুলো শূন্য পড়ে আছে, নৈঃশব্দের ঘরে ঘরে না পাওয়ার হাহাকার।
স্মৃতিগুলো ফেলে দিতে পারিনি যেভাবে তুমি ফেলে দিয়েছো সুখের রাত।
হেরে যেতে চাই বলে জিতে যাওয়ার কোন আয়োজনই করিনি।
শুধুই বিষাক্ত নখের আঁচড়ে আহত হয়েছে নির্বোধ প্রেম।

পৌষের হিমেল রাতে বৃদ্ধ দাদুর মত ইদানিং আমারও মৃত্যু চিন্তা হয়,
বয়সী কুনোব্যাংঙের মতো শীত নিদ্রায় যেতে চায় অশান্ত মন ।
পারিনা, সব সময় যা মন চায়‘ নিয়তির উল্টো ঘড়ির
পিঠে সওয়ার হয়ে চলে যাই অজানা-অচেনা পথে।
নিবিড় আলিঙ্গনে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পথ ডাকে,
অতৃপ্তের হাতছানিতেও ভরে ওঠে মন।

মানুষ ভালো থাকুক উষ্ণ আলিঙ্গনে

আঙুলের টিপে মেরে ফেলি তারে
ভেবেছিলাম সে বুঝি দেবী
সমস্ত আরাধনা তাঁরই প্রাপ্য
অথচ শূন্য হতে হতে এখন আমি নাই হয়ে গেছি।

কোন কোন ভবিষ্যৎ ডুবে থাকে তরল নীরবতার মাঝে
যা হয়েছে গত আমরা তাকে ধরে নিই ঈশ্বর

হিসেবের খাতায় কলম চালিয়ে হই মহাজ্ঞানী
যতটুকু আয়োজন তার সবটুকু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্যে নয়
মদটুকু ঘোলা করে শূন্য গেলাস ঠোঁটে ধরে পান করি পৃথিবীর সুগন্ধ।

জ্বর উঠুক হাওয়ার কম্পাসে
উষ্ণ আলিঙ্গনে ডুবে থাক দুনিয়ার তামাম মানুষ।

অনিঃশেষ ইচ্ছে

বেশ্যাদের হাসিটা নান্দনিক হয়
তাদের মুখ থেকে যেসব পবিত্র ভাষা বের হয়ে আসে
আমরা ধরে নিই সেগুলো নৈঃশব্দ্যের শৈল্পিক বাঁধন
মাটির সোঁদাগন্ধ – তন্দ্রালু সুখ।

সুদীর্ঘকাল এক কুঁড়েঘরে বাস
চোখে বাসা বাঁধে পতঙ্গের জল
দৃষ্টিরর সীমায় যে সুখপাখি নাচে
তার পুচ্ছে লিখে রাখা বেদনার ইতিহাস।

নিঃসঙ্গ শিকারির মত অচেনা মানচিত্রে বাস
বড়শিতে গেঁথে রাখা পাপের টোপ মুখে নিয়ে
মুগ্ধতার ছাই হবার অনিঃশেষ ইচ্ছে।

বিবিধ রাত্রির গল্প

নির্বান্ধব জীবনযাপন করতে গিয়ে
অনেকের ডাকনাম ভুলে গেছি
কেবল বিষণ্ন মুখে চেয়ে থাকে নিরন্তর হাঁটা আইল
আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে বিবর্ণ সময়

রংচটা ঘাস – দুঃখ বিকেল
চুপচুাপ দাঁড়িয়ে গেলে টের পাই
প্রতীক্ষায় চক্ষু বন্ধ করেনি যে নারী তার চোখে কান্নার জল।
দিগন্ত রেখার মতো একা থাকতে গিয়ে
কোথাকার কোন যদু-মধু জড়িয়ে গেছে জীবনে

কালো স্লেটে শুধুই অন্ধকার হাসে
প্রগাঢ় শূন্যতায় মিলিয়ে যাচ্ছে ছায়া মুখ
সারা রাত্রি জুড়ে শুধু ভাষণ
পৃথিবী যেনো একটা যুদ্ধঘাঁটি
অস্ত্র তার একমাত্র মুখ।

মা (৮)

পাহাড় থেকে ছিটকে পড়ে গেলে
মা আমাদের শোনাতে আসতো বরফের গল্প
আমরা নাকি বালক বালক লাগি
অবশ্য তখনো আমাদের মুখে দাড়ি ওঠে নাই
কেবল গলার স্বরটা ভাঙছে মাত্র।

নদীতে নাইতে গেলেই মায়ের সাবধান বাণী
দেখিস খোকা! সাবধান! ডুবে যাবি
মা যদিও জানে- দুরন্ত সাঁতার জানি
ডুবে মরে যাবার বয়সটাও পেরিয়ে এসেছি অনেক আগে
দিকচিহ্ণহীন ধূসর পৃথিবীতে তবুও ভয় জাগে
কী রাত – কী দিন।

মাকে হারিয়েছি সেই কবে!
এখন বন্ধনহীন – দিব্যি চলছি-ফিরছি!

মায়ের কথা মনে হলেই শীতের মতো চুপসে যাই
তখন মাথায় তিনশত পয়ষট্টি ডিজিটের
একটা ক্যালকুলেটরের হিসেব আসে
যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ শেষে ফলাফল হিসেবে যা পাই
দেখি শুধু মা আর মা।

এই তিনশত পয়ষট্টি দিনই যে আমায়
আগলে রাখতেন, তাকে ছাড়া এখন কেমন দিব্যি বেঁচে আছি!
ভাবতেই গায়ের রোম শিউরে ওঠে
মন খারাপের একখণ্ড কালো মেঘ ঘিরে ধরে সারাবেলা।

জানুয়ারি ১৮, ২০১৭

প্রশ্নের মুখোমুখি

দুয়ার খুলে দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু
ঘৃণার আগুনে পুড়ছে মাংসকষা চাহিদা
রুচির হাটের কসম!
জরায়ু ছিঁড়ে যে বৃষ্টি নামে তার নাম দিয়েছি
সৃষ্টিশীল মা

তীব্র বেদনায় ঝরে গেছে কামনার ফুল
আমার দ্বিধাহীন ভালো লাগার রমণী
জীবনদাবি নিয়ে যে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে
তাকে কি বলে বিদায় দেবে তুমি?

দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু
সময় খুব কম।

শূন্য পৃথিবী

ঘেন্নার আকাশ
আমরা বসে তার ছায়ায়
পাপীরা হাঁটে
চারদিকে আগুনের ঘ্রাণ

বড় হচ্ছি
বোকা যুবকের মতো
ঈশ্বর! বেরিয়ে আসুন
গুহামুখ বড় অন্ধকার

ফুল! ফুল ভর্তি পৃথিবী
তবু বৃথা যায় রাতপ্রার্থনা
জল-জন্মের গান
শুধু বোকারাই বাঁচতে জানে

জ্বলছে -সোনালী লণ্ঠন
শুধুমাত্র মদের গ্লাসই চির সত্য নয়
একটা নগ্ন হাত ডাক দেয়-
শূন্য! শূন্য পৃথিবীর ভেতর।

দূর্বিসহ জীবনের ভাবনা

জলের ধারা নামার আগেই ভেঙ্গে যায় দুপুরের ভাতঘুম
আর আমি সন্ধ্যা নামবে জেনে দ্রুত পাহাড় থেকে নেমে পড়ি
তোমার তো আবার পাহাড়কে বড্ড ভয়।
কিছু কথা পড়ে থাকে একলা রাতের চরাচরে
রপ্তানীযোগ্য পণ্যের মতো ভাবনারা ঘিরে ধরে আমায়
বেঁচে থাকা! সেতো এক দূর্বিসহ জীবনের নাম।

কিছু কিছু ভাবনারা মাঝেমধ্যে নদী হয়ে যায়
সেখানে দিব্যি খেলা করে হতাশ মাঝির জাল
অথচ তুমি বিকেলের ভাবনায় স্নান সেরে নিচ্ছো
বেঁচে থাকার এতোই তেষ্টা যখন পেয়েছে তোমার
তবে দেয়াল ভাঙ্গো, ঠোঁট দুটো ভেজা থাকুক
শুধু ঈশ্বর যেন বুঝতে না পারে।

সময়

পুরনো কাগজ মুড়ে একটা বল বানানোর পর
বলটিকে লালঘোড়ার পায়ের সঙ্গে বেঁধে দিলাম
বল গড়িয়ে যাচ্ছে – ঘোড়া দৌড়াচ্ছে
ঘোড়া দৌড়াচ্ছে – বল গড়িয়ে যাচ্ছে
আমিই শুধু চোখ বন্ধ করে বসে আছি।

সময়-২
সেই যে হামাগুড়ি দেয়ার পর থেকেই চলা শুরু
তখন থেকেই আঁকছি জীবন ছবি
দেয়ালে – রাস্তায় – বৃক্ষ – ব্রীজে
শুধু মানুষের বুক ছাড়া
সেখানে শান দেয়া ছুরির ধার।

সময়-৩
তোমার চোখ অন্ধ
শব্দ আর ধ্বনি ছাড়া সবকিছু কালো দেখ
ঝকঝকে রোদ, উজ্জ্বল জোছনা – শাদা ঘোড়া
হিংস্র হায়েনা নখর – অসংখ্য মৃত্যু
সবকিছুই তোমার কাছে বালির মতো নরম
তুমি অন্ধ – শুধু সময়ের চোখে।

সময়-৪
দৃশ্যত সঙ্গম ছাড়া কিছুতেই মোক্ষ লাভ হয় না
ঋতুমতী নারীই বল আর যুবতীই বলনা কেন
আপেলের দিন ফুরিয়ে এলে প্রত্যেকেই
বিড়াল ডাকে ম্যাঁও – ম্যাঁও – ম্যাঁও – ম্যাঁও।

সময়-৫
আধিকারিক যারা তারা দুর্বল
সময় কিংবা শরীরেই হোক না কেন
সংযোগ বাড়াতে গেলে হতে হয় বুনো শুয়োর
সব দৈব-বাণীও নয়
আঁজলায় ভরে তুলতে চাও যদি রূপের মোহ
তবে শুদ্ধি অভিযান চালাও শরীরের ভেতর।

১১০৭২০১৮

জীবন সূত্র

রাত্রি নিবিড় হলে জনতার চোখ ঢুলুঢুলু
কাপালিক তন্ত্র, ডাকিনি বিদ্যা আর ছিনালি সময়
পরিত্যক্ত ঘোষনা করে দুপুরের মখমলে রোদ
দেখ পতনের বিছানায় সূর্য করে রাত্রি ভ্রমন

মাটির শরীরে বসন্ত সুখ
ছাইচাপা আগুনে পুড়ছে প্রচলিত মুদ্রাদোষ
তবুও সহজে মেলে না সরল অংকের উত্তর
ভুলে ভরা যখন পাটিগণিতের প্রথম অধ্যায়।