আর মাত্র কয়েকদিন পরই আমাদের কোমলমতি শিশুরা নতুন নতুন বই হাতে স্কুলে যাবে। আহা নতুন বইয়ের নতুন পাতার গন্ধ কতইনা অসাধারণ ! শৈশব কালের কথা মনে পড়ে যায়। এত আনন্দের ভেতরে নিরানন্দ এসে ভর করে যখন নিয়মের ব্যতিক্রম হয়। সরকারি প্রাইমারী স্কুল বাদে সারাদেশের স্কুল বা কিন্ডার গার্টেন গুলোতে শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলামের বাইরের বই অর্থাৎ স্কুল কর্তৃপক্ষের কারিকুলামের বই। অথচ শিক্ষা বোর্ড বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছরই প্রজ্ঞাপন জারি করে থাকে এজন্য যে, স্কুলে এনসিটিবি কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অন্য কোন বই পড়ানো যাবে না। যথারীতি এবারও তাই করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবারের মতো এবারও ক্লাসে পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোন বই পড়ানো যাবে না মর্মে প্রজ্ঞাপন – প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখের স্মারক নং: ৩৮.০১.০০০০.১৪০.০৯৯.০২৫.২০১১-৩৩৭/৬৪৫(৩) জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন সমূহের স্মারক নং ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এ প্রজ্ঞাপন কেবল এবারই নয় আগেও এই কাজটি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইতোপূর্বে যে প্রজ্ঞাপন সমূহ জারি করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
(ক) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখের স্মারক নং –৩৮.০০.০০০০.০০৮.৯৯.০২৮.১৮.৮৯৯
(খ) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও ৩১/১২/২০১৭ তারিখের স্মারক নং–প্র.শা.৫৫৮/০৯/১৯৬৪/১(৯) এবং (গ) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখের স্মারক নং: ৩৮.০১.০০০০.১৪০.০০৬.০১৩.২০১৩-১৫(৬৪৫)
এবার চলতি ২০১৮ সনে যা হয়েছে :
(ঘ) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখের স্মারক নং: ৩৮.০১.০০০০.১৪০.০৯৯.০২৫.২০১১-৩৩৭/৬৪৫(৩)
কিন্তু ক’জনে তা মানছে। কোন একটি স্কুল বা কিন্ডার গার্টেন তা মানছে না। এর পেছনে একটি কারণ আছে অবশ্যই। আর তা হলো কমিশন। বই মান সম্মত হোক বা না হোক প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো স্কুল গুলোর সাথে যোগাযোগ করে মোটা অংকের ডোনেশন দেয় যাতে তাদের বই পাঠ্য করে দেয়া হয়। সে বিষয়টি স্কুলের টিচারদের জন্য ভালো হলেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য মোটেও ভালো নয়। এতে তাদের উপর বিশাল চাপের সৃষ্টি হয়। সরকারি পাঠ্যবইয়ের বাইরে সাত থেকে আটটি বই ব্যাগভর্তি নিয়ে যাবার সময় ছোট ছোট কোমলমতি ছাত্র–ছাত্রীরা কুঁজো হয়ে যায়। এত এত্ত পড়া তথা স্কুলের পড়া,হাউজ টিউটরের পড়া সব মিলিয়ে বাচ্চাদের উপর এতটাই শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় যে তারা খেলাধূলার সময়টুকু পায় না। অথচ পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধূলা অত্যন্ত জরুরী। শিশুদের শারীরিক মানসিক বিকাশে খেলাধূলা গুরুত্বপূর্ণ। আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ হলেও স্কুলগুলোর সুবিধার্থে অতিরিক্ত চাপদিয়ে তাদের মেধাকে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। ফলে বিপুল পরিমান ছেলে মেয়ে পড়াশুনার স্কুলগন্ডি পেরুবার আগেই ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়ে। যা জাতির জন্য খুব ক্ষতিকর। বিগত পিএসসি ও জেএসসি দুটি পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়নি। যা খুব একটা ভালো লক্ষন নয়।
এখনই সময় কোচিং সেন্টারগুলোর মতো কিন্ডার গার্টেন গুলোর দিকে নজর রাখা এবং বিগত সময়ের ভুলগুলো সংশোধন করা। এখনই সময় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট এই সার্কুলার বা প্রজ্ঞাপনটির যথাযথ বাস্তবায়ন করা। একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ ও দেশ গড়তে শিশুদের প্রতি নজর দেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ আর এই কোমলমতি ছোট শিশুরাই একদিন এই দেশার হাল ধরবে।